মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫

পরিসংখ্যান তৈরির ইছলামী তরিকা

প্রথম আলোর "সারা বিশ্ব" পাতায় বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা একটি সংবাদে চোখ আটকে গেল। শিরোনাম: "ব্রিটেনে ইসলাম গ্রহণের হার এক দশকে দ্বিগুণ।" তথ্য উপস্থাপনার ধরনটি লক্ষণীয়। ১ যখন ২ হয়, সেটিও দ্বিগুণ, আবার ১ কোটি ২ কোটিতে পরিণত হলে সেটিও দ্বিগুণ। 

মার্ক টোয়েন তাঁর নিজের জন্ম প্রসঙ্গে স্বভাবসুলভ রসিকতার ধরনে লিখেছিলেন: I was born there in 1835. The village contained a hundred people and I increased the population by 1 per cent.

তাঁর অনুকরণে উপরোক্ত খবরের শিরোনামে "শতকরা একশো ভাগ বৃদ্ধি" বললে তা আরও বেশি গুরুত্ববহ মনে হতো। 

ওপরের খবরটির বিশ্লেষণ পড়লে ইছলামী হিসেবের ভেতরের শুভঙ্করের ফাঁকটি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। খবরে দাবি করা হয়েছে, প্রতি বছর গড়ে ৫২০০ জন ইসলাম গ্রহণ করেছে। এখন দেখা যাক, সংখ্যাটি কীভাবে পাওয়া গেছে।

এক ইছলামী চিন্তাচৌবাচ্চা, মানে থিংক ট্যাংক, (লক্ষ্য করুন, কোনও নিরপেক্ষ সংস্থা নয়) লন্ডনের মসজিদগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। তাতে দেখা গেছে, গত বারো মাসে ১৪০০ জন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।

একে তো সংখ্যাটি পরীক্ষিত নয়, তার ওপরে সেটি কেমন জানি সন্দেহজাগানিয়া। ঠিক ১৪০০? ১৩৯২ বা ১৪৩৮ নয়? আচ্ছা, তবু মেনে নেয়া যাক। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, পুরো ব্রিটেনে ৫২০০ জন - এই সংখ্যাটি কোনও জরিপ বা হিসেবের ফল নয়। স্রেফ কল্পনা করে নেয়া হয়েছে লন্ডনের ১৪০০-কে ভিত্তি হিসেবে ধরে। কীভাবে? তা তাদের আল্যা মালুম!

আর এ কথাও সত্য, ইছলাম গ্রহণকারীদের একটি বড়ো অংশ মোছলমান ভাই-বেরাদরদের অমুসলিম স্ত্রী, যারা বিয়ের সময় মসজিদে গিয়ে "লা ইলাহা" পড়ে নামেমাত্র মুছলিম হয়। এছাড়া জেলখানার কয়েদিদের মধ্যেও ধর্মান্তরিত হয়ে নূরের পথে আসে অনেকে। তাদের অনেককেই বলপ্রয়োগ করে বা ভীতিপ্রদর্শন করে মুসলমান বানানো হয়। কেউ কেউ মুসলমান হয় আলাদা সুবিধালাভের জন্য। সাম্প্রতিক এক খবর পড়ুন: সিরিয়াল কিলার ইছলাম গ্রহণ করেছে মশলাযুক্ত খাবারের লোভে।

পক্ষান্তরে, ইছলামত্যাগীদের সংখ্যা বাড়ছে আশাব্যঞ্জক গতিতে, যদিও সে কথা মূলধারার পত্রিকায় আসে না বড়ো একটা। অবশ্য তাঁদের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা দুষ্কর, কারণ তাঁরা সচরাচর সরব এবং প্রকাশ্য নন। ইছলাম ত্যাগকারীকে হত্যার বিধান ইসলামে আছে জেনেও প্রাণের ঝুঁকি নিতে চাইবে ক'জন? তবু দুঃসাহসী কিছু প্রাক্তন মুছলমান নিজেদের পরিচয় গোপন রাখছেন না। প্রবণতাটি শুভ।

(৭.১.১১ তারিখে ধর্মকারীতে প্রকাশিত।)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন