লিখেছেন পুতুল হক
আজকাল ধনী মডারেট মুসলিম পরিবারের গৃহিণীরা “তালিম পার্টি” নামে এক নতুন ধরণের পার্টির প্রচলন করেছেন। সপ্তাহের বিভিন্ন দিন ঘুরে-ফিরে এরা এক-একজনের বাড়িতে যায়। টক-ঝাল-মিষ্টি নানান প্রকরণের খাবারদাবার চলে। সাথে সাথে চলে ইসলামী আলাপ। তখন সেই পরিবারের গৃহপরিচারিকাদের বারোটা বাজে। বেগম সাহেবরা সারাদিন বাজার আর রান্নাবান্নার তদারকিতে ঘরবাড়ি উত্তপ্ত করে ফেলেন। সবাই ধর্মপালন শেষে চলে গেলে এসি ছেড়ে রেস্ট নেন।
আমার আগ্রহ ছিল, এই বিলাসী তালিম পার্টিতে কী বিষয়ে আলাপ হয়। কথা শুনে যা মনে হল, পোশাকের নতুন ইসলামী স্টাইল, আরবের রন্ধনপ্রণালী শেয়ার, হজ্জ-উমরাহ্ করতে গিয়ে শপিং-এর ফিরিস্তি ইত্যাদি পার্টি আলোচনার মূল বিষয়।
এদের প্রায় সবার ছেলেমেয়ে পশ্চিমে লেখাপড়া করে। স্বামীগুলো হয় ব্যবসায়ী নয়তো ঘুষখোর আমলা। কিটেন পার্টি, সোশ্যালওয়ার্ক পার্টি বা এনজিও পার্টির মত আর একটি নতুন পার্টি এই তালিম পার্টি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ে পরকীয়া রোগে আক্রান্ত। এরা কোরআন-হাদিসের অর্থ জানে না, জানতে চায়ও না। নিরাকার আল্লাহকে নিজেদের পছন্দমত একটি আকার দিয়ে তারা পার্টি করে।
এই সমস্ত মডারেট মুসলমান এতিমখানা এবং মাদ্রাসাগুলোতে অকাতরে দান করে। গরীব পরিবারের সন্তান মাদ্রাসায় তাদের দয়ায় পড়বে, ভিক্ষুক হবে আর পরকালের জন্য তারা সওয়াব কামাবে। হুমায়ুন আজাদকে এরা কাফের বলে। রাজিব, অভিজিৎ, বাবু আর অনন্তের হত্যাকে বৈধ মনে করে। আমেরিকাকে ইসলামের প্রধান শত্রু মনে করলেও এদের লক্ষ্য থাকে - ছেলেমেয়েরা আমেরিকায় বা পশ্চিমা কোনো দেশে সেটেলড হোক। ইসলামকে এরা ততটুকু চায়, যতটুকু বা যেভাবে ইসলাম তাঁদের কাজে লাগতে পারে। মৌলবাদী কট্টোর মুসলমানকে তবু একটা নির্দিষ্ট ছাঁচে ফেলা যায়, কিন্তু এই বহুরূপী মডারেটদের কোনো নির্দিষ্ট আকার নেই। এরা এদের নিরাকার আল্লাহ্র মত ক্ষণে ক্ষণে নিজেদের পাল্টায়।
সমাজ পরিবর্তনে এই তালিম পার্টিওয়ালাদের কোও ভূমিকা থাকে না, কিন্তু পরিবর্তনের সুফল এরাই সবার আগে ভোগ করে। লোভী আল্লাহকে অর্থের বিনিময়ে নিজেদের দাস বানায়। একটা সময় পর্যন্ত কবিতা, উপন্যাস বা রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ছিল তারা, কিন্তু এখন রবীন্দ্রনাথকে হিন্দু বলে ত্যাজ্য করে। মুসলমানরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করলে বালির মধ্যে মুখ গুঁজে থাকে, কিন্তু কোথাও বিধর্মীদের হাতে মুসলমান মারা গেলে ইসলাম প্রেমে আরেকটি পার্টির আয়োজন করে। সারা পৃথিবীতে মুসলমানদের কুকর্মের জন্য ইহুদি-নাসারাদের দায়ী করে। হাঁচি-কাশি হলে দিল্লীর ইন্দ্রপুরীতে চলে যায় চেকআপের জন্য, বছরে অন্তত দু'বার নর্থ-সাউথ ইন্ডিয়া ঘুরে শাড়ি কিনে আনে তারপর ঘরে ফিরে ইন্ডিয়ার পিন্ডি চটকায়।
দেশের মানুষ ধর্মান্ধ থেকে যাক, পিছিয়ে পড়ুক, এরা সেটাই চায়। নিজেরা অর্থের জোরে পশ্চিম থেকে আধুনিক বিলাস কিনে আনে। দেশের ভেতর বা বাইরে এরা মিউজিয়াম বা আর্ট গ্যালারিতে যায় না। এদের ইতিহাস শুরু হয় নিজেদের মুসলিম জাহির করার সময় থেকে। পৃথিবীর ইতিহাস শুরু হয় নবী মোহাম্মদের ইসলাম প্রচারের সময় থেকে। ইসলামী জঙ্গিরা মসজিদ ভাঙলে এরা নিন্দা না জানিয়ে চুপ করে থাকে বা ‘ইহা সহি ইসলাম নয়’ বলে চিঁহিঁ রব তোলে, কিন্তু মন্দির ভাঙলে নিজেদের উল্লাস চেপে রাখতে পারে না।
ইসলামী বাংলাদেশের সব চাইতে বড় চানেওয়ালা এই সমস্ত নিরাকার মডারেট মুসলমান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন