নবীর প্রথম স্ত্রী খাদিজার মেয়ের নাম ফাতেমা। ফাতেমার স্বামীর নাম আলী। মুহাম্মদের মৃত্যুর পর যারা ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাঁদের বলা হয় খলিফা। আলী হলেন তাঁদের একজন এবং তিনি ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলিফা। ইসলামের প্রথম খলিফার নাম আবু বকর এবং তিনি ছিলেন মুহাম্মদের ছোট স্ত্রী আয়েশার পিতা। প্রসঙ্গত বলে রাখি, খলিফা শব্দের অর্থ - রাষ্ট্রপ্রধান এবং হযরত শব্দের অর্থ - সম্মানিত ব্যক্তি।
মুহাম্মদের মৃত্যুর পরের দিন থেকেই খলিফা নির্বাচনে বিরাট সমস্যা দেখা দেয়। নবীর মেয়ে ফাতেমার স্বামী আলী ছিলেন খলিফা হওয়ার অন্যতম দাবিদার। আবার মুহাম্মদের অন্য দুই মেয়ে রোকেয়া এবং কুলসুমকে বিয়ে করেছিলেন উসমান। তাই উসমানও খলিফা হওয়ার দাবি রেখেছিলেন।
ঘটনা এতই জটিল হয়ে ওঠে যে, হযরত মুহাম্মদ মারা গেলেন - এই কষ্টের ঘটনা থেকেও বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠল, কে হবে খলিফা অর্থাৎ রাষ্ট্রের প্রধান। এমন সময় উমর ঘোষণা দেন, আবু বকর হবেন ইসলামের প্রথম খলিফা। উমরের আবু বকরকে খলিফা ঘোষণার বিষয়টির চরম বিরোধিতা করল অনেকেই, যাদের দু'জন হলেন নবীর মেয়ে ফাতেমা এবং তার স্বামী আলী। মূলত এই বিরোধিতা থেকেই জন্ম নেয় শিয়া-সুন্নি মতবাদ। আলীর পক্ষে যারা ছিলেন, তাঁরা হলেন শিয়া।
নবীর সব থেকে কনিষ্ঠ স্ত্রী আয়েশার পিতা অর্থাৎ ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর রাষ্ট্রের প্রধান হওয়ার পর নির্দেশ দিলেন নবীর মেয়ে ফাতেমা এবং তার স্বামী আলীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের। আলী পালিয়ে ছিলেন, কিন্তু আহত হয়ে মারা গেলেন ফাতেমা। প্রিয় পাঠক, প্রসঙ্গত বলে রাখি, এই ঘটনা ঘটেছিল নবীর মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে। তাহলে দেখুন, ইসলামের প্রথম থেকেই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা ছিল।
ইসলামের প্রথম চার খলিফার মধ্যে তিনজন নিহত হয় নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার কারণে। এমনকি মজার বিষয় হল, ইসলামে উটের যুদ্ধ নামে একটি যুদ্ধের ইতিহাস আছে। এই যুদ্ধটি হয়েছিল নবীর ছোট স্ত্রী আয়েশা এবং নবীর মেয়ের জামাই আলীর মধ্যে।
খলিফা আলী, খলিফা উসমান, খলিফা উমর সবাই নিজেদের মধ্যে কোন্দলের ফলে খুন হন। মুহাম্মদের সব থেকে কাছের মানুষ ছিলেন মুয়াবিয়া, তাঁর পুত্রের নাম ইয়াজিদ। তিনিও মুসলমান ছিলেন, অথচ নির্মম সত্য হলো - মুহাম্মদের বংশের সবাই মারা যায় ইয়াজিদের হাতে।
ইসলামের বিশাল ইতিহাসের এই কথাগুলি সহজভাবে বলার চেষ্টার কারন হল, যাঁরা মনে করেন, দেশে ইসলামী শাসন কয়েম হলেই দেশ সম্পূর্ণ শান্তিতে থাকবে, তাঁরা আসলে বিশাল ভুলের মধ্যেই আছেন। ইসলামের ইতিহাসের শুরু থেকেই এক ইসলামী জাত অন্য ইসলামী জাতকে পছন্দ করতো না, যা আজও আছে। যে কারণে আজও পাকিস্তানে, ইরাকে, সিরিয়ায় শিয়া মসজিদে সুন্নি বোমা ফাটায়, সুন্নি মসজিদে ওয়াবি তাণ্ডব চালায়। এমনকি সৌদি আরবেও বোমা হামলা হয়।
বাংলাদেশেও সেইদিন খুব দূরে নয়। একধিক মতাদর্শের জঙ্গি বাংলাদেশে আছে। একদল চাইবে অন্যদল থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে। গোয়েন্দা শব্দটির আধুনিক জঙ্গি রূপ হল স্লিপার সেল। বাংলাদেশে স্লিপারসেলের সংখ্যা বাংলাদেশে আর্মির সমান। তাই সময় থাকতেই সচেতন হতে হবে, না হলে বাংলাদেশের অবস্থা ইরাক বা পাকিস্তানের থেকেও খারাপ হবে...
তবে আমার মনে হয়, বাংলাদেশের জন্য খুব খারাপ দিন আসছে। খুবই খারাপ দিন...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন