লিখেছেন জুলিয়াস সিজার
চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষিকা অঞ্জলি দেবীর কথা মনে আছে? নার্সের পেশাদার পোশাকের পরিবর্তে হিজাব পরার বিরোধিতা করেছিলেন তিনি। তখন অনলাইনে বাঁশের কেল্লা এবং অন্যান্য জামাতি পেইজগুলোতে তাঁর ছবি দিয়ে ঢোল বাজানো হয়েছিল: "হিন্দুরা এত সাহস পায় কীভাবে? মুসলমানের দেশে হিজাব নিয়ে কথা বলে!"
জামাত-শিবিরের এই অনলাইন প্রচারণার ফসল উঠেছে বছর খানেক পর। গত ১১ই জানুয়ারী সকালবেলা অফিস যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার এলাকায় অঞ্জলি দেবীকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। তাঁর অপরাধ কী ছিল?
- অন ডিউটিতে হিজাব পরতে মানা করেছিলেন।
আপনার যদি এতই ধর্ম করার ইচ্ছে থাকে, তাহলে বাসায় বসে ধর্ম করুন অথবা নিজে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে সেখানে বসে ধর্ম করুন। নার্সিং একটি পেশা এবং এই পেশার জন্য নির্দিষ্ট পেশাদার পোশাক আছে। আপনি ব্যাংকে চাকরি করলে, সুপারমার্কেটে চাকরি করলে সেখানকার নির্ধারিত পেশাদার পোশাক পরেই চাকরি করতে হবে। এটাই পেশাদারিত্ব!
উদাহরণস্বরূপ - কিছুদিন আগে কানাডার একটা আদালতে বিচারক (মহিলা) এক কুয়েতের মহিলার বক্তব্য না শুনেই বের করে দিয়েছেন তিনি হিজাব পরে গিয়েছেন বলে। ঐ মহিলার এই কথা ঐ কথা, কিন্তু বিচারক স্থির তাঁর বক্তব্যে। বিচারকের বক্তব্য ছিলো:
"কোর্ট একটি সেক্যুলার জায়গা। আপনি এখানে যে-কোনো ধর্মের যে কোনো ধরনের ধর্মীয় পোশাক পরে আসতে পারেন না। এটাই কানাডার আইন। যদি আপনাকে কানাডায় থাকতে হয়, তাহলে কানাডার আইনই মানতে হবে। আপনি স্বাভাবিক পোশাকে আসুন। আমি সব অভিযোগ অবশ্যই শুনব।"
অঞ্জলি দেবীর কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার এবং কানাডার আদালতের এই ঘটনার প্রসঙ্গ টানার কারণ কিছুদিন আগে আবদুল গাফফার চৌধুরীর দেওয়া বক্তব্য। সেখানে তিনি বোরকা-হিজাব নিয়ে কথা বলেছেন। অনলাইন নিউজের নিচে কমেন্টে আবদুল গাফফার চৌধুরীকে গালাগালি এবং কল্লা ফেলে দেওয়ার হুমকি ছিলো যথারীতি। এই বোরকা-হিজাবেই বাংলাদেশের ইসলাম নীহিত। নিজের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।
রমজান মাসে পর্দা টাঙানো হিন্দু হোটেলগুলোতে কখনো গিয়ে দেখেছেন। বোরকা-হিজাবওয়ালীদের ভিড়ে নিজে বসারই জায়গা পাবেন না। দাদাদের লইট্টা মাছ আর পাতলা মসুর ডাল গোগ্রাসে গিলছে। তারপর খাওয়া শেষ করে আবার বোরকায় ঢুকে গেলেন। রাস্তায় বের হলেই তো আদর্শ মুসলিম নারী!
শহরের ছয়তলা-সাততলায় সাইবার ক্যাফেগুলো বিশেষ উদ্দেশ্যে খোলা হয়, এটা জানা ছিল না। একবার চকবাজারে ছয়তলার ওপরে একটা সাইবার ক্যাফেতে গিয়েছিলাম। তাড়াহুড়ো করে ঢুকে গেলাম আর ঢুকেই পড়লাম আপদে! ছেলেমেয়েরা শরীর-মন দিয়ে চরম পর্যায়ের নেট ব্রাউজ করছে। প্রত্যেক ডেস্কেই বোরকা টাঙানো। শেষে আমাকে বিব্রতকর অবস্থা থেকে রক্ষা করেন ক্যাশিয়ার। বলেন, ভাই একদম শেষে একটা ডেস্ক সিঙ্গেল আছে। আপনি সেটায় বসুন। তাড়াহুড়ো করে ৩০ মিনিট নেট ব্রাউজ করে আমি চম্পট দিলাম এবং দুই তলার ওপরে আর কোনো সাইবার ক্যাফেতে উঠব না প্রতিজ্ঞা করে নিলাম।
পতেঙ্গায় সী-বিচে পাথরের একটু গভীর খোঁপ কিংবা গর্তে বাই চান্স চোখ গেলেও বোরকা-হিজাবের অতি উত্তম ব্যবহার দেখতে পাবেন। রিকশায় রোমান্স শেষে বাসার গলিতে ঢোকার আগেই মাথায় নেকাব আর হিজাবটা পরে নেয় ভালো মেয়েরা!
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ২০০১ সালে ফিল্মি স্টাইলে গোলাম হোসেন এবং নুরুল করিম নামের দুজন আওয়ামী লীগের নেতা খুন হন। জোড়া খুন দেশে হরহামেশাই হয়, কিন্তু এই খুন সারা দেশেই আলোচিত হয়েছিল খুন করার স্টাইলের কারণে। আওয়ামী লীগের একদম ঘাঁটির ভেতরে গিয়ে দিনের বেলায় খুনিরা ব্রাশ ফায়ার দিয়ে খুন করে চলে যায়। তারা এসেছিল বোরকা পরে। পালাতে কোনো অসুবিধেই হয়নি তাই।
এসবই বোরকা-হিজাবের ব্যবহার। এসব নিয়ে কোনো কথা হবে না। শুধু কেউ বোরকা-হিজাবের অপব্যবহার নিয়ে কথা বললেই তার কল্লাটা ফেলে দাও! ইসলাম চলে গেল! ইসলামের শত্রু! পেশাদার কাজে পেশাদার পোশাক না পরে হিজাব পড়তে হবে। শুধু তারাই ধার্মিক! আর সেটা নিয়ে কথা বললেই প্রাণ যাবে। ধর্মানুভূতি বলে কথা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন