নাস্তিক-ব্লগার নিলয় নীলকে হত্যা করে মদিনা সনদ বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ এগোলো বাংলাদেশ। বস্তুত প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় পেয়েই ইছলামীরা ব্লগারহত্যাযজ্ঞ উদযাপন করে চলেছে একের পর এক। ইছলামীদের ঘাঁটানোর সাহস আসলে নেই কোনও প্রশাসনেরই। বরং প্রশাসন এদেরই আজ্ঞাবহ। হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটনের ধরন ও হত্যাপরবর্তী প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও প্রকট উদাসীনতা সে-কথাই প্রমাণ করে।
দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুছলিমদের নিরঙ্কুশ সমর্থনও রয়েছে ইছলামীদের পেছনে। এবং থাকাটাই স্বাভাবিক। এমন হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণভাবেই ফরজ ও সুন্নত বিধায় শতভাগ ইছলামসম্মত। অতএব যারা এমন হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে, তারা মানুষ পদবাচ্য না হলেও নিশ্চিতভাবেই খাছ মুছলিম, আর যারা সমর্থন করে না, তারা কোনওভাবেই মুছলিম নয়।
কেন? জেনে নিন।
শান্তির ধর্মের আসমানী কিতাব কোরান থেকে কয়েকটি শান্তিকামী আয়াত:
আর তাদেরকে হত্যা কর যেখানে পাও সেখানেই।
(২:১৯১)
খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো।
(৩:১৫১)
যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।
(৫:৩৩)
যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন।
(৯:১৪)
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম।
(৯:২৯)
হে নবী, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ (ইংরেজি অনুবাদে - strive hard) করুন এবং মুনাফেকদের সাথে তাদের সাথে কঠোরতা অবলম্বন করুন।
(৯:৭৩)
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাও এবং তারা তোমাদের মধ্যে কঠোরতা অনুভব করুক আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে রয়েছেন।
(৯:১২৩)
আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়।(৮:১২)
এবার দেখা যাক, কয়েকটি হাদিসে ইছলামের নবী কী বলেছে:
আমি সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছি।(বুখারি ৫২:২২০)
তরবারির ছায়ার নিচে বেহেশত।
(বুখারি ৫২:৭৩)
অবিশ্বাসীকে হত্যা করা আমাদের জন্য একেবারেই ছোট্ট একটি ব্যাপার।
(তাবারি ৯:৬৯)
এ ছাড়া, আল্যা-রসুলকে স্বীকার না করা পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেয়া আছে বুখারী ৮:৩৮৭-এ ও মুসলিম ১:৩৩-এ।
ইবন ইসহাক/হিশাম ৯৯২-এ পাওয়া যাচ্ছে নবীজির নির্দেশনা:
যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করে, তাদেরকে হত্যা করো।
আসুন, এখন ইছলামের ইতিহাস থেকে জেনে নেয়া যাক কয়েকটি ঘটনা:
১. নবী ও তার অনুসারীদের আগ্রাসী নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মৌখিক প্রতিবাদ ও সমালোচনা করেছিলেন বলে ১২০ বছর বয়সী অতি বৃদ্ধ ইহুদী কবি আবু আফাককে নবীর আদেশে হত্যা করে তার অনুসারীরা।
২. আবু আফাক-কে হত্যার পর আসমা-বিনতে মারওয়ান তাঁর বিদ্বেষ প্রকাশ করলে নবীর নির্দেশে রাতের অন্ধকারে ঘুমন্ত নিরস্ত্র এই জননীকে নৃশংসভাবে খুন করে নবীজির এক চ্যালা। ঘাতক যখন এই জননীকে খুন করে, তখন এই হতভাগা মা তাঁর এক সন্তানকে বুকের দুধ পান করাচ্ছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রত্যুষে খুনী তার প্রিয় নবী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর সাথে একত্রে সকালের নামাজ (ফজর) আদায় করে।
৩. কাব বিন আল-আশরাফ নামের এক ব্যক্তি আল্লাহর নবীর কাজের নিন্দা করা শুরু করেন ও বদর যুদ্ধে যাদেরকে খুন করার পর লাশগুলো গর্তে ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন কবিতা আবৃতির মাধ্যমে। তাঁকেও নির্দয়ভাবে খুন করে নবীর উম্মতেরা।
আমরা কি এই হত্যাকাণ্ডের উপযুক্ত বিচার চাইবো? চেয়ে কী লাভ! মুছলিমদের ধর্মানুভূতিতে আঘাতকারীকে হত্যা করেছে যে ইছলামী বীরেরা, তাদের সঠিক বিচার হবে মদিনা সনদের দেশে?
আর সম্ভাব্য বিচার বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা এই যে, নবীর নির্দেশে ফরজ ও সুন্নত পালনকারী ইছলামী জিহাদিদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে বিচারকরা নিজেদের পারলৌকিক ইন্দ্রিয়পরায়ণ জীবনযাপনের সম্ভাবনাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলার মতো নির্বোধ নিশ্চয়ই নন। হুরসঙ্গমস্বপ্ন তো তাঁদেরও আবিষ্ট রাখে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন