শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫

মালয়েশিয়ায় বেড়েই চলেছে নারী-খতনা

লিখেছেন নিলয় নীল

কুয়ালালামপুরের একটি মেগামলে দেখা হলো ১৯ বছরের এক তরুণীর সাথে। মালয়া সংস্কৃতিতে ইসলামের আধুনিকীকরণ হয়েছে জানতাম, তবে এতটা যে হয়েছে, ভাবতেও পারিনি। মালয় মেয়েগুলো যেন পাশ্চাত্য পুঁজিবাদের সুফল ভোগ করা ইসলামি আধুনিকীকরণের এক উজ্জ্বল সংমিশ্রণ। আলাপের খুব তাড়াতাড়ি কোনো ইসলামি চিন্তাভাবনার মেয়ে যৌনতা নিয়ে এভাবে কথা বলতে পারে, তা বিস্ময়কর মনে হচ্ছে। একটি মেয়ে গর্বের সাথে জানালো যে, সে সারকামসাইজ (খতনা) করিয়েছে। 

মেয়েটি জানায়, নারীদের এই খতনা নাকি ইসলামে ওয়াজিব। তার সকল বান্ধবীরাও খতনা করিয়েছে, এবং এর মাধ্যমে আসলেই কোনো ক্ষতি হয় না। মালয়েশিয়ায় মহামারী আকারে বেড়ে গেছে নারীদের এই ধরনের খতনা। ২০১২ সালে ডক্টর মাজনাহ দাওলুই-এর নেতৃত্বে এক গবেষণায় জানা যায়, ৯৩ শতাংশ মুসলিম তরুণী বর্তমানে কোনো না কোনোভাবে ফিমেল জেনিটাল মিউটিলিশনের সম্মুখীন হচ্ছে। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, মালয়েশিয়ার প্রায় প্রত্যেকটা প্রাইভেট ক্লিনিকে দক্ষ প্রফেশনাল ডাক্তাররা বর্তমানে এই কাজ করছে বলে তা হচ্ছে আরও সূক্ষ্ম এবং ব্যথামুক্ত।


নারীদের ক্লিট্রিসের অংশটি কেটে ফেলার এই চর্চা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সর্বসম্মতিক্রমে এই ধরণের খতনাকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বলে অভিহিত করা হয়। কিন্তু নারী যদি নিজেই এই সহিংসতাকে বরণ করে নেয়, তখন আর কীই বা করার থাকতে পারে? মালয়েশিয়ার অধিকাংশ মুসলিম নারীই বর্তমানে হাজেমের কাছে ক্লিট্রিস কাটার বদলে আধুনিকভাবে সারজিকালভাবে বিশেষজ্ঞের কাছে এফজিএম করতে আগ্রহী। এভাবেই নারীদের খতনা দিন দিন বেড়েই চলছে মালয়েশিয়ায়।

মালয়েশিয়ায় জেনিটাল মিউটিলিশন নিষিদ্ধ না হলেও সরকারী হাসপাতালের সার্জনদের তা করার ক্ষেত্রে একটা নিষেধাজ্ঞা ছিল। ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ ইসলামিক রিলেজিয়াস এফেয়ার ফতোয়া জারি করে যে প্রতিটা ধর্মপ্রাণ মুসলিম নারীর অবশ্যই এই খতনা করা উচিত, এবং সে জন্য সরকারের সহযোগিতা করা উচিত। 

মালয়েশিয়ার সবাই যে ওপরের ফতোয়া কমিটির বক্তব্যকে সমর্থন করে, এমন নয়। তেমন একজন হলেন নারী অধিকার কর্মী সিরাফাতুল আদিবা। তিনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন, মালয়েশিয়ায় ইসলামের নামে যে-জঘন্য নারী খতনা মহামারী আকারে বেড়ে চলছে, তার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আদিবা বিভিন্ন জায়গায় কোরআন-হাদিসের নিয়ে আলোচনা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন যে, ইসলাম এই ধরনের হিংস্রতাকে সমর্থন করে না, কোরআন-হাদিসের কোথাও এটি নেই। কিন্তু আদিবার কথা শোনার মতো মুসলমান দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়াতে। 

(সাংবাদিক Marta Kasztelan এর Female Circumcision Is Becoming More Popular in Malaysia শীর্ষক লেখার অনুকরণে, মূল লেখার লিংক এখানে)

* ধর্মকারীর বক্তব্য:
কোরানের কোথাও নারী-খতনার কথা বলা হয়নি বটে, তবে কয়েকটি হাদিসে এ বিষয়ের স্পষ্ট উল্লেখ আছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন