হিন্দু ধর্মের চারটি বর্ণের মধ্যে তথাকথিত শ্রেষ্ঠ হল ব্রাহ্মন। তারা নিজেদেরকে বর্ণশ্রেষ্ঠ বলে দাবি করে। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নাকি এমনটাই বলে গিয়েছেন। যাক, আমরা বরং একটু আলোচনা করি যে, তারা কেন এই শ্রেষ্ঠ পদের দাবীদার।
ব্রাহ্মণরা মাটির দেবদেবীর মূর্তি গঠন করে মন্ত্র পড়ে চক্ষু দান করে তার প্রাণপ্রতিষ্ঠা করে থাকে। তারা কত ক্ষমতার অধিকারী। এদেরকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পথিকৃৎ বলা চলে। কিন্তু মাটির দেবদেবীর চক্ষু দান করতে পারলেও তারা কেন অন্ধ লোকের দৃষ্টিদান করতে পারে না, তা বুঝি না।
চক্ষুদান করার পরে এই দেবদেবীরা চোখে কিছু দেখতে পান কি না, তা শুধু ব্রাহ্মণরাই জানেন। প্রাণপ্রতিষ্ঠা করার পর কোনো মূর্তিকে বোধহয় কেউ নড়াচড়া করতে বা কথা বলতে দেখেনি।
এদের আরও অনেক বিস্ময়কর ক্ষমতা রয়েছে।
ব্রাহ্মণরা গঙ্গাজল দিয়ে সবকিছু পবিত্র করতে পারে। তাদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হল, গঙ্গাজল আনতে তাদের গঙ্গা নদীতে যেতে হয় না বা পাসপোর্ট করে ভারতেও যেতে হয় না। কেননা গঙ্গাদেবি তো ব্রাহ্মণদের মুখেই। যে কোন নদী, খাল, বিল, পুকুর, ডোবার জল একটি পাত্রে রেখে মন্ত্র পড়লেই হল। এরা, মনে হয়, মন্ত্র দ্বারা ড্রেনের জলও গঙ্গাজলে পরিণত করতে পারে।
হিন্দু ধর্মমতে পাপ করলে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়। এই প্রায়শ্চিত্ত করার ব্যাপারেও তাদের একতরফা সুবিধা।
মনুসংহিতা অনুযায়ী, ব্রাহ্মণ যদি গোমাংসও ভোজন করে, তাহলে এক দিবারাত্র উপবাস করলে তার প্রায়শ্চিত্ত হয়। কিন্তু অব্রাহ্মণদের জন্য তা এত সহজ নয়। তাদের জন্য তপ্ত ঘৃত পান করে অথবা তুষানল করে প্রাণত্যাগ করা একমাত্র প্রায়শ্চিত্ত।
মনুসংহিতা অনুযায়ী, তুষানল মানে হলো গোবর ও তুষ মিশিয়ে ১ ইঞ্চি পুরু করে শরীরে লেপন করে শুকিয়ে নিয়ে ঘি ঢেলে অগ্নিসংযোগের পর তার মৃত্যু হবে।
একই অপরাধের অপরাধী শূদ্র বা স্ত্রীলোক হলে যেখানে মৃত্যুদণ্ড হয়, সেখানে ব্রাহ্মণ হলে একটি মাত্র লোম কর্তন বা এক দিবারাত্রি উপবাস করলে সে মৃত্যুর হাত হতে রক্ষা পেতে পারে।
প্রশ্ন হল: ধর্ম তার এক এক অনুসারীকে এক এক বিধান বা নিয়ম কেন দেবে। আইন সবার জন্য সমান হলে ধর্ম কেন সবার জন্য সমান হবে না?
(২৯.৪.১১ তারিখে ধর্মকারীতে প্রকাশিত )
(২৯.৪.১১ তারিখে ধর্মকারীতে প্রকাশিত )
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন