▼
বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
ঈশ্বরের অনৈশ্বরিক কর্মকাণ্ড - ৩
লিখেছেন সমকোণী বৃত্ত
কুরান, হাদিস ও ইসলামিস্টদের মতে - এই জীবনটা হল পরীক্ষা, পৃথিবী হল পরীক্ষার হল আর আল্লাহ হল পরীক্ষক। আল্লাহ মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। কে আল্লাহ-নবীর কথা মত চলল, আর কে চলল না, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, আচরণ এসবের ওপরই পরীক্ষা। এর ফলাফল জানা যাবে রোজ হাশরের দিনে।
আল্লাহ যেহেতু পরীক্ষক, তাই পরীক্ষা যেন সুষ্ঠ হয়, সেই দায়ভার আল্লাহরই ওপরে। যে যেরকম পারে, সেরকমই পরীক্ষা দেবে। এখানে যদি পরীক্ষক কোনো ছাত্রকে সাহায্য করে, তাহলে সেটা হয় পক্ষপাতিত্ব এবং এর ফলে পরীক্ষা সুষ্ঠ হয় না এবং পরীক্ষকও অসাধু বলে আখ্যায়িত হয়। তেমনি ডিস্টার্ব করলেও তাই।
তাহলে আসুন দেখা যাক, আল্লাহ তাঁর দায়িত্ব পালনে কতটা নিষ্ঠাবান। সকলকে সমান চোখে দেখে আল্লাহ কি সবাইকে যার যার মত করে পরীক্ষা দিতে দিয়েছে? না। যেমন,
ক) আল্লাহ নুহকে সৎপথে পরিচালিত করেছিলেন (সূরা আনাম: ৮৪)! আল্লাহ কেন পরীক্ষার হলে হস্তক্ষেপ করে কাউকে সুযোগ করে দেবেন? স্বজনপ্রীতি দেখালে কি পরীক্ষা সুষ্ঠ হয়?
খ) আল্লাহ না চাইলে ইসলাম গ্রহণ আকাশে আরোহনের মত কঠিন। এবং তিনি যাকে পথ দেখাতে চান, তার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দেন (আনাম :১২৫)! তাহলে ইসলাম মানা অর্থাৎ পরীক্ষা শুধু ছাত্র চাইলেই ভাল হবে না, পরীক্ষকের ওপরও নির্ভর করে!
গ) সূরা আল আন-আম:১২৩ - "আর এমনিভাবে আমি প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য কিছু সর্দার নিয়োগ করেছি-যেন তারা সেখানে চক্রান্ত করে।" আল্লাই যদি অপরাধ বৃদ্ধির জন্য সর্দার নিয়োগ করে, তাহলে অপরাধীদের শাস্তি দিলে মুলহুতা আল্লাহকেও শাস্তি দিতে হয়!
ঘ) আল্লাহ কাফেরদের নিধনের জন্য মুসলিমদের পক্ষে এক হাজার ফেরেশতারা লাগিয়ে দিয়ে কাফিরদের পরাজিত করে (সুরা আনফাল: ৯)
তাহলে পরীক্ষা কীভাবে সুষ্ঠ হয়? কাফেরদের আল্লাহ কেন পরীক্ষার হলেই শাস্তি দিয়ে দিলেন? তারা কি মরতো না? মরার পর অর্থাৎ পরীক্ষার ফলাফলের পরে কি শাস্তি দেয়া যেত না? নুহের সময় অনেককেই ডুবিয়ে মারলেন পরীক্ষার হলেই ও পরীক্ষা শেষ হবার আগেই।
পরীক্ষার সময় শেষ হবার আগেই কেন কিছু ছাত্রের খাতা নিয়ে নেবেন? হয়ত বলতে পারেন, হলে খারাপ আচরন করলে খাতা নেওয়া যায়। কিন্তু আল্লাহ এক্ষেত্রে পারবেন না, কেননা পরীক্ষাই হচ্ছে আচরণের। আবার ভাল-খারাপ দুটোই করার ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছে। তাহলে অন্যদের কেন ডুবিয়ে মারলো পরীক্ষা শেষ না হতেই? আবার হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে কেন কাফিরদের মারা হল পরীক্ষা শেষ হবার আগেই?
যদি বলেন, "কাউকে সাহায্য করার জন্য আল্লাহ ওদের মারেনি, ঐ কাফেরদের মৃত্যু ওভাবেই হবে লেখা ছিল। আর আল্লাহ পরীক্ষার হলে সাহায্য বা ডিস্টার্ব করেন না।" - তাহলে কি আল্লাহ নবীকে সাহায্য করার জন্য ফেরেশতা পাঠাযননি? আল্লাহকে আমাদের মিথ্যা বললেন কেন যে, তিনি বিভিন্ন নবীকে যেমন ইউনুসকে সাহায্য করেছেন মাছের পেট থেকে উদ্ধার করে? হলে মানে দুনিয়াতে তিনি যদি কাউকে সাহায্য না করেন, তাহলে 'দুয়া ইউনুসের অনেক ফজিলত'-এর এর কী হবে? আল্লাহ সাহায্য না করলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে সময় নষ্ট করবো কেন?
এর পরও যদি মুমিন উত্তর দিতে পারে, "ভাল কাজের জন্য সাহায্য চাইলে আল্লাহ সাহায্য করবেন।" - এটাও ঠিক না, কারণ চোরও ত আল্লার কাছে সাহায্য চায় যেন সে ধরা না পড়ে। এবং আল্লাহ তো তাকেও সফলভাবে চুরিতে সাহায্য করেন, করেন না?
"আরে না,আল্লাহ চুরির ক্ষেত্রে সাহায্য করেন না।" - তাহলে আল্লার সাহায্য ছাড়াই শুধু নিজ শক্তিতেই চোর সফল হয়ে যায়?
"আরে না,চোর ত ধরাও পড়ে।" - তাই নাকি? তাহলে যেক্ষেত্রে ধরা খেয়েছে, সেক্ষেত্রে আল্লাহ জয়ী, কারণ তিনি সাহায্য করেননি, তাই ধরা পড়েছে। আর যেক্ষেত্রে ধরা পড়েনি, সেক্ষেত্রে চোর জয়ী, কেননা আল্লাহর সাহায্য ছাড়াই সফল।
"আল্লাহই জানেন!" - মোদ্দাকথা হল, আল্লাহ সাহায্যই বা করতে যাবেন কেন? নিজের মত করে পরীক্ষা দিতে দিক।
এবার আসি ঝামেলা করার প্রসঙ্গে। আল্লাহ পরীক্ষায় ঝামেলা করার জন্য স্থায়ীভাবে ইবলিশকে নিযুক্ত করেছেন (গত পর্বে প্রমাণ করেছি, ইবলিশের চেয়ে দোষ আল্লার বেশি এক্ষেত্রে) মানুষকে পরীক্ষায় ডিস্টার্ব করার জন্য। এবার ধরুন, একটা দৌড় প্রতিযোগিতা চলার সময়ই কোনো দৌড়বিদকে আটকে রেখে কিছুক্ষণ পর ছাড়লেন। তারপর সে যদি পুরস্কার না পায়, তাকে কিন্তু দোষ দেওয়া যায় না। তাহলে মানুষের পরীক্ষা চলার সময়ে ইবলিশ কেন ডিস্টার্ব করবে? তাহলে তো পরীক্ষা সুষ্ঠ হল না।
এখন যদি বলেন, "আল্লাহ এটাই পরীক্ষা করছে, আমরা আল্লাহর দেখানো পথে চলি নাকি ইবলিশের দেখানো পথে চলি?" - সবচেয়ে বড় প্যারাডক্সটা তো এখানেই। কীভাবে কেউ বুঝবে, কোনটা আল্লার দেখানো আর কোনটা ইবলিশের দেখানো কাজ?
আল্লাহ ও ইবলিশ দু'জনই তো একই ছাঁচে গড়া। তাই দু'জনই কাজকে শোভন করে দেখায়। যেমন,
সূরা আল আন-আম: ১০৮ - "তোমরা তাদেরকে মন্দ বলো না, যাদের তারা আরাধনা করে আল্লাহকে ছেড়ে। তাহলে তারা ধৃষ্টতা করে অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহকে মন্দ বলবে। এমনিভাবে আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে তাদের কাজ কর্ম সুশোভিত করে দিয়েছি।"
এবার শয়তানের ক্ষেত্রে... সূরা আল-আনফাল: ৪৮ - "আর যখন তাদের কাজকে শোভন করে দিল শয়তান তাদের দৃষ্টিতে এবং বলল যে, আজকের দিনে কোন মানুষই তোমাদের উপর বিজয়ী হতে পারবে না আর আমি হলাম তোমাদের সমর্থক।"
ঋতুকাল: নারী যখন 'অশুচি ও অপবিত্র'
সব ধর্মই নারীদের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছে, সে তো আমরা জানিই। তবে ধর্মগুলোর কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সম্মান তারা পায় তাদের ঋতুকালে। কয়েকটি নিদর্শন:
এই সময়টায় নারীরা অশুচি ও অপবিত্র (সুরা ২: ২২২-২২৩) - শুধু এ কথা বলেই বলেই ক্ষান্ত হয়নি ইছলাম, তাদেরকে নামাজ-রোজা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছওয়াব কামানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে বিশেষ সম্মানিতও করেছে।
এই সময়টায় নারীরা অশুচি ও অপবিত্র (সুরা ২: ২২২-২২৩) - শুধু এ কথা বলেই বলেই ক্ষান্ত হয়নি ইছলাম, তাদেরকে নামাজ-রোজা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছওয়াব কামানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে বিশেষ সম্মানিতও করেছে।
হিন্দুধর্মমতে: "যেদিন প্রথম রজঃদর্শন হবে সেদিন থেকে তিন রাত্রি পর্যন্ত রমণী সবকিছু পরিত্যাগ করে ঘরের মধ্যে সর্বদা আবদ্ধ থাকবে। যাতে অন্য কেউ তাকে না দেখতে পায়। স্নান করবে না, অলংকার পরবে না। এক বস্ত্র পরিধান করবে। দীনাভাবে মুখ নিচু করে বসে থাকবে। কারো সাথে কোন কথা বলবে না। নিজের হাত, পা ও চোখ থাকবে স্থির। দিনের শেষে মাটির হাড়িতে তৈরি করা ভাত সে খাবে এবং ভূমিতে সাধারণভাবে শয্যা করে নিদ্রা যাবে।" এছাড়া মনু সংহিতায় আছে: "রজস্বলা নারীতে যে পুরুষ সঙ্গত হয় তার বুদ্ধি, তেজ, বল, আয়ু ও চক্ষু ক্ষয় পায়।" (মনু সংহিতা ৪:৪১)
এদিকে বাইবেলে বলছে: "যে স্ত্রী রজঃস্বলা হয় সে সাতদিন অশৌচ থাকবে, যে তাকে স্পর্শ করে সেও সন্ধ্যা পর্যন্ত অশুচি থাকবে এবং অশৌচ কালে যে পুরুষ তার সাথে শোয় ও তার রজঃ যদি পুরুষটির গায়ে লাগে, সে পুরুষও সাত দিন অশুচি থাকবে।" (লেবীয় পুস্তক: ১৫)
ঋতুকালে নারীদের অধিকার নেই বিভিন্ন ধর্মের উপাসনালয়গুলোয় (মসজিদ হিসেবের বাইরে, যেহেতু এমন অবস্থায় মুছলিমাদের জন্য উপাসনাই নিষিদ্ধ) প্রবেশ করার। রীতিমতো সাইনবোর্ড লটকিয়ে এমন ঘোষণা দেয়ার গৌরবময় ধর্মীয় ঐতিহ্য পালিত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে।
সর্বমোট ঊনিশটি ছবি দেখুন।
উগ্র নাস্তিক
লিখেছেন সৈকত চৌধুরী
মজুমদার সাহেব চোখের ডাক্তারের কাছে গেছেন।
ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সমস্যা কী, জানতে পারি?
- আমার নিজের কোনো সমস্যা নাই। সকল সমস্যাই ঐ উগ্র নাস্তিকগুলো। কিন্তু বউ বললো তো!
- একটু ডিটেইলস বলেন।
- মানে চতুর্দিকে কেবল উগ্র নাস্তিক দেখতে পাই।
- আচ্ছা, আপনি কি দূরের জিনিস ঠিকমত দেখতে পান?
- হ্যাঁ, এক্বেরে ফকফকা, দূরের উগ্র নাস্তিক কাছে দেখতে পাই।
- কাছের জিনিস দেখতে পান?
- কাছের উগ্র নাস্তিক আরো কাছে দেখতে পাই, মনে হয় চাপাতি নিয়ে এই মাত্র আমাকে মেরে ফেলে।
ডাক্তার সাহেব অবস্থা গুরুতর দেখে ইমার্জেন্সিতে যোগাযোগ করে তাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন। মানসিক রোগের ডাক্তার এবার মজুমদার সাহেবকে দেখতে এসেছেন।
ডাক্তার জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সমস্যা কী?
- চতুর্দিকে কেবল উগ্র নাস্তিক ঘোরাঘুরি করে।
ডাক্তার চিন্তিত হয়ে বললেন, কবে থেকে এই সমস্যা?
- কিছু উগ্র নাস্তিক মারা যাওয়ার পর থাইক্যা।
- কারা মেরেছে ওদের?
- ইসলামি জঙ্গিরা।
- কোনো নাস্তিক কি আপনাকে কখনো আঘাত করেছে?
- হ্যাঁ, ডাক্তার সাব। এইটাই তো কেইস। আমার ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছে উগ্র নাস্তিকরা।
- ধর্মানুভূতি?
- কিচ্ছু জানে না নাস্তিক ডাক্তার! আরে পাগল, ধর্মানুনুভূতি থাকে এইখানে, ঈমানদণ্ডের একদম গোড়ায় (প্যান্ট খুলতে গেলে ডাক্তার বাধা দিলেন)।
- বুঝলাম, কোনো নাস্তিক আপনাকে আঘাত করেনি। তবে এরকম কখনো কি দেখেছেন, নাস্তিকরা অন্য কাউকে আঘাত করেছে?
- করেনি, তবে করবে। একখান চাপাতি ওদের দিলেই করবে।
- মানে উগ্র নাস্তিকরা চাপাতি চেনে না, হাতে নিতে পারে না?
এরকম চরম অযৌক্তিক কথাবার্তা শুনে মজুমদার সাহেব প্রচণ্ড রেগে গেলেন। ডাক্তারকে চিৎকার করে বললেন, আপনি একটা উগ্র নাস্তিক, আপনার হাতে চাপাতি।
ডাক্তার সাহেব মৃদু হেসে তার হাতে থাকা কলম পকেটে রেখে দিলেন।
মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
কোপাবো না
কালীপ্রসন্ন ঘোষ-এর 'পারিবো না' কবিতার প্যারোডি করেছেন নাস্তিকথন
'কোপাবো না' - এ কথাটি বলিও না আর
কেন কোপাবে না তাহা ভাব একবার;
জঙ্গি কোপায় যাহা,
তুমিও কোপাবে তাহা,
ঈমানী দায়িত্বে তুমি দিও নাকো ছাড়
একবার ফেল মারিলে কোপাও শত বার।
কোপাবে না বলে মুখ করিও না ভার,
নাফারমানি কথা মুখে না শুনি তোমার,
ইমানহীন নিফাকি যারা
কভু কোপায় না তারা,
তোমায় তো দেখি নাকো তাদের আকার
'কোপাতে পারবো না' কেন বল বার বার?
জলে না নামিলে কেহ শিখে না সাঁতার
হাঁটিতে শিখে না কেহ না খেয়ে আছাড়,
কোপানো শিখিতে হলে
চাপাতিটি হাতে তুলে
কলাগাছ করিয়া লক্ষ্য, কোপাও বারে বার
আল্লাহুয়াকবার বলে হও আগুসার।
সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
উকুন-উন-নবী
আমরা জানি, এই পৃথিবী ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আল্যাফাক সৃষ্টি করেছে ইছলামের নবীর উছিলায়। কারণ নবী মুহাম্মদ আল্যার সবচেয়ে পেয়ারের বান্দা ও দোস্ত। নবীর নানাবিধ নীচতা, ইতরামি ও খবিসী খায়েশকে বৈধতা দিতে যথাসময়ে জুতসই আয়াত সরবরাহ করেছে আল্যাই। যুদ্ধের সময় ফেরেশতার দলও পাঠিয়েছে দোস্তকে সাহায্য করতে।
সেই আল্যা তার প্রিয়তম বন্ধুর মাথা উকুনভর্তি করে রেখেছিল কেন, সে হিসেব কিছুতেই মেলানো যায় না। তবে হাদিস ও অন্যান্য ছহীহ ইছলামী তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়, তার মাথা ছিলো সত্যিই উকুনআকীর্ণ এবং নাম-জানা ও অজানা অনেক নারীই নবীর মাথার উকুন বেছেছে।
অনেকেরই ধারণা, বিষাক্রান্ত হয়ে নবীর মৃত্যু হলেও উকুনজনিত typhus রোগও তার মৃত্যুর প্রভাবক হিসেবে সক্রিয় ছিলো। বস্তুত অবস্থা এতোটাই গুরুতর ছিলো যে, নবীত্বের সম্মান রক্ষা করতে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে বিষক্রিয়াপীড়িত তাকে খোঁড়া অজুহাত দেখাতে হয়েছিল এই কথাগুলো বলে: "কোনও কোনও নবীকে উকুন পীড়া দেয় মৃত্যু পর্যন্ত।"
কৌতূহলোদ্দীপক এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের স্লাইড শো দেখুন অথবা স্লাইড শো থেকে বানানো পিডিএফ ডাউনলোড করে নিন।
সাইজ: ৩.৩ মেগাবাইট
ডাউনলোড লিংক (গুগল ড্রাইভ)
ডাউনলোড লিংক (ড্রপবক্স)
মুসলমানিত্ব যখন শুধু লুঙ্গির তলে
লিখেছেন শহীদুজ্জামান সরকার
বাংলাদেশের হাজার হাজার মানুষ নিজেদের ধার্মিক মুসলমান দাবি করে। আসলে কি এরা ধার্মিক মুসলমান? মুসলামান হতে গেলে শুধু এক আল্লার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলে হয় না। নবীর ওপর বিশ্বাস ও নবীর জীবনদর্শন মেনেও চলতে হবে। নবীর মত ১৪ টা বিয়ে করতে হবে। ৬ বছর বয়সী আয়েশার মত কোনো কন্যাকে বিয়ে করতে হবে, আবার ৪০ বছরের খাদিজার মতো কাউকেও বিয়ে করতে হবে। তারপর অসংখ্য দাসী বাদী তো রাখতেই হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য হাজার হাজার মানুষ মারতে হবে। শত শত যুদ্ধ করতে হবে। জিহাদের নামে মানুষ খুন করতে হবে। হিন্দু অথবা ভিন্ন ধর্মের মানুষ তথা কাফেরদের গলা কাঁটতে হবে। হিন্দুদের বাড়িঘর সম্পদ লুট করতে হবে, যেটা আসলে গনিমতের মাল ভোগ।
ইসলামে এই কথাটা স্পষ্ট উল্লেখ আছে - নারী নেতৃত্ব হারাম। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা কী দেখছি? এখানে নারী নেতৃত্ব আরাম। আর এই নারীকে আসনে বসিয়ে রেখেছে কে? এই যে আপনাদের মত নিজেকে মুসলমান দাবি করা মানুষগুলোই। আর এই নারী ক্ষমতায় এসে ইসলামের বারোটা বাজাচ্ছে। নারীদের চাকুরি করা, ব্যবসা করা, রাস্তায় বোরখা ছাড়া ঘোরাফেরা করা, পরপুরুষের সাথে সাক্ষাৎ তো দুরে থাক, কথা বলাও হারাম। ইসলামে আরও একটি কথা স্পষ্ট বলা আছে: নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, এগুলো ঠিকমতো আদায় করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের নিজেকে ধার্মিক মুসলমান দাবি করা কত জন লোক এই কাজগুলো করে?
ছোটকাল থেকে একটি কথা শুনে আসছি - কোনো ব্যক্তি যদি পরপর তিন জুম্মার নামাজ মিস করে, তাহলে সে আর মুসলিম থাকলো না। শুধু নুনু কেটে মিলাদ পড়ালেই মুসলিম হওয়া যায় না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যে শুধই নুনু-কাটা মুসলমান, তার জন্য একটা ঘটনার কথা বলি: একবার এক লোক অপরিচিত জায়গায় মারা যায়, স্থানীয় লোকজন লাশের কোনো কুল-কিনারা মানে কোন ধর্মের এটা না বুঝতে পেরে শেষ অবধি লুঙ্গি উচিয়ে দেখে নিল নুনু কাটা আছে কি না। যখন তারা নিশ্চিত হলো, তখন তাকে মুসলমানী কায়দায় দাফন করা হলো।
যদি লোকটার মুখে দাড়ি থাকতো, তাহলে আর এই ন্যাক্কারজনক কাজটা করতে হতো না। বাংলাদেশে মুসলিম দাবিকারীদের মুখে দাড়ি কই? কিন্তু এরা আবার বুড়াকালে ঠিকই দাড়ি রাখে। আবার ইসলামে এই কথাটাও স্পষ্ট বলা আছে, যুবক বয়সের একদিনের এবাদত ৭০ বছরের এবাদতের সমান। কিন্তু কোথায়? কে এই নিয়মগুলো ঠিকঠাকভাবে পালন করছে? কাফেরদের গলা কাটা হচ্ছে, আর আপনি, নিজেকে মুসলমান দাবিকারী ব্যক্তি, ওপরের একটা নিয়মকানুনও মানেন না, অথচ চিৎকার করে বলছেন, ওরা সহি মুসলিম না! উহা সহি ইসলাম নয়।
ইট'স টুউ ফানি, ম্যান! আপনার ধর্ম সম্পর্কে একটু খোঁজ নিন। বুঝতে পারবেন, আইসিস ও অন্য ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোই খাঁটি ইসলাম মানে। আর আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে মুততে মুততে বলছেন, "এরা জঙ্গি, মুসলমান নয়। আইসিস আমেরিকার তৈরি" ও ইত্যাদি বালছাল। নিজেকে শুধু হাওয়ার পোলা দাবি করেছেন, কিন্তু কোনো নিয়মনীতিই মানছেন না। তাহলে কিসের বালের মুসলমান আপনি?
অনেক ইসলামী ব্লগার আর ইসলামী ছাত্র শিবিরদের দেখছি, যারা ক্লিন শেভ করে, জিন্স টি-শার্ট পরে। জুব্বা-পাঞ্জাবী যে কী জিনিস, বোঝেই না। এরা আবার গলা ফুলিয়ে বলে, তুমি ইসলামের কী বালটা জানো? এরকম মডারেট মুসলিমদের কথা শুনলেই আমার হাসি পায়। আর যারা ইসলামের নিয়মনীতি মেনে চলে ইসলাম কায়েম করার জন্য কাফের হত্যা, হিন্দুদের সম্পত্তি লুট, ইহুদি নাছারাদের ধ্বংস করা ও নারীদের বস্তাবন্দীর কাজ করে যাচ্ছে, জিহাদ করছে, তাদের আপনারা বলছেন - সহি মুসলিম না। হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা...
না, আপনাদের কথা শুনে হাসি আটকাতে পারছি না। আসলে আপনি বছরে দু'বার ঈদের নামাজ পড়া আর নুনু-কাটা মুসলমান ছাড়া কিছুই না। যাদেরকে জঙ্গি বলে আখ্যা দিচ্ছি, তারাই আসল মুসলিম। তারাই রিয়েল। তারা প্রমাণ করছে, ইসলাম কতটা শান্তির বর্বরতা। কে যেন বলেছিল, বাংলাদেশে শরিয়া আইন পাস করলে দেখা যেত, ক'জন মুসলিম বাংলাদেশে থাকতো। আমিও চাই বাংলাদেশে শরীয়া আইন হোক। মডারেট হাওয়ার পোলারা তখন লুঙ্গি খুলে প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে: "এই যে, আমি মুসলিম! আমার গলা কাটবেন না, প্লিজ।"
বনি কুরাইজা গণহত্যা – ৮: কেন এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড?: কুরানে বিগ্যান (পর্ব- ৯৪): ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ – আটষট্টি
লিখেছেন গোলাপ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২ > পর্ব ২৩ > পর্ব ২৪ > পর্ব ২৫ > পর্ব ২৬ > পর্ব ২৭ > পর্ব ২৮ > পর্ব ২৯ > পর্ব ৩০ > পর্ব ৩১ > পর্ব ৩২ > পর্ব ৩৩ > পর্ব ৩৪ > পর্ব ৩৫ > পর্ব ৩৬ > পর্ব ৩৭ > পর্ব ৩৮ > পর্ব ৩৯ > পর্ব ৪০ > পর্ব ৪১ > পর্ব ৪২ > পর্ব ৪৩ > পর্ব ৪৪ > পর্ব ৪৫ > পর্ব ৪৬ > পর্ব ৪৭ > পর্ব ৪৮ > পর্ব ৪৯ > পর্ব ৫০ > পর্ব ৫১ > পর্ব ৫২ > পর্ব ৫৩ > পর্ব ৫৪ > পর্ব ৫৫ > পর্ব ৫৬ > পর্ব ৫৭ > পর্ব ৫৮ > পর্ব ৫৯ > পর্ব ৬০ > পর্ব ৬১ > পর্ব ৬২ > পর্ব ৬৩ > পর্ব ৬৪ > পর্ব ৬৫ > পর্ব ৬৬ > পর্ব ৬৭ > পর্ব ৬৮ > পর্ব ৬৯ > পর্ব ৭০ > পর্ব ৭১ > পর্ব ৭২ > পর্ব ৭৩ > পর্ব ৭৪ > পর্ব ৭৫ > পর্ব ৭৬ > পর্ব ৭৭ > পর্ব ৭৮ > পর্ব ৭৯ > পর্ব ৮০ > পর্ব ৮১ > পর্ব ৮২ > পর্ব ৮৩ > পর্ব ৮৪ > পর্ব ৮৫ > পর্ব ৮৬ > পর্ব ৮৭ > পর্ব ৮৮ > পর্ব ৮৯ > পর্ব ৯০ > পর্ব ৯১ > পর্ব ৯২ > পর্ব ৯৩
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা মদিনার বাজারে গর্ত খুঁড়ে সেই গর্ত পাশে বনি কুরাইজা গোত্রের সকল প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সদস্যদের (৬০০-৯০০ জন) দলে দলে ধরে এনে এক এক করে গলা কেটে হত্যা করার পর কী নিয়মে মুহাম্মদ তাঁদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন, এই সম্পদের কী পরিমাণ হিস্যা তিনি একাই গ্রহণ করেছিলেন, কোন ঐশী বাণী অবতারণার মাধ্যমে তিনি এই লুটের মালে জীবিকা অর্জনের বৈধতা প্রদান করেছিলেন (পর্ব: ২৮), কীভাবে তিনি তাঁদের মা-বোন-স্ত্রী-কন্যাদের নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়ে যৌনদাসীতে রূপান্তরিত করেছিলেন ও রায়হানা নামের এক সুন্দরী রমণীকে তিনি তাঁর নিজের জন্য মনোনীত করেছিলেন, পরবর্তীতে এই যৌনদাসীদের অনেককে কীভাবে তিনি বিক্রি করেছিলেন, সেই বিক্রয়লব্ধ উপার্জনের মাধ্যমে তিনি কী খরিদ করেছিলেন - ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
আদি উৎসের ইসলামে নিবেদিতপ্রাণ মুসলিম ঐতিহাসিকদের খন্দক যুদ্ধের বর্ণনার (পর্ব: ৭৭-৮৬) পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে যে-বিষয়টি সুস্পষ্ট, তা হলো - বনি নাদির গোত্রের বিরুদ্ধে আরোপিত অভিযোগের মতই বনি কুরাইজা গোত্রের বিরুদ্ধে আরোপিত মুহাম্মদের অজুহাত সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বনি নাদির ও বনি কুরাইজা গোত্রের লোকেরা ছিলেন নিরপরাধ ও নির্দোষ।
প্রশ্ন হলো, কী উদ্দেশ্যে মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ নিরপরাধ বনি কুরাইজা গোত্রের লোকদের ওপর এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলেন?
মুহাম্মদের স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ (Psycho-biography) কুরান ও আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই লিখিত ‘সিরাত’ (মুহাম্মদের জীবনী) ও হাদিস-গ্রন্থে বর্ণিত "বনি কুরাইজা গণহত্যা পূর্ববর্তী"মুহাম্মদের নবী জীবনের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে মুহাম্মদের মনস্তত্ত্ব ও এই প্রশ্নের সঠিক জবাব আমরা অতি সহজেই নির্ধারণ করতে পারি।
বনি কুরাইজা গণহত্যা-পূর্ববর্তী মুহাম্মদের নবী-জীবনের ঘটনার সংক্ষিপ্তসার:
আদি উৎসে বর্ণিত বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই লিখিত মুহাম্মদের জীবনীগ্রন্থে মুহাম্মদের নবুয়ত পূর্ববর্তী ৪০ বছরের ঘটনার বর্ণনা যৎসামান্য। (পর্ব- ৪৫) ৪০বছর বয়সে একদিন মুহাম্মদ হেরা পর্বতের গুহা থেকে প্রত্যাবর্তন করে তাঁর স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুয়ালিদকে জানালেন যে, গুহায় অবস্থানকালে তিনি এক 'অলৌকিক অভিজ্ঞতার' সম্মুখীন হয়েছিলেন। মুহাম্মদের কাছ থেকে এই ঘটনাটি শোনার পর খাদিজা মুহাম্মদকে অবহিত করান যে, মুহাম্মদ নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন ও ব্যাপারটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নওফল বিন আসাদের কাছে গমন করেন এবং ঘটনাটি তাকে খুলে বলেন। ওয়ারাকা ছিলেন বাইবেল পণ্ডিত এক ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান। ঘটনাটি শুনে ওয়ারাকা খাদিজাকে জানান, "হে খাদিজা, যদি তুমি আমাকে সত্য বলে থাকো, মুহাম্মদের কাছে যে-এসেছিল, সে হলো সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিবরাইল। এর আগে মুসার কাছেও সে এসেছিল, জেনে রাখো, সে হলো এই জাতির নবী (If thou hast spoken to me the truth, O Khadija, there hath come on to him the greatest Namus (Tabari: 'meaning Gabriel') who came to Moses afore-time, and lo, he is the prophet of this people.--)।" [1]
অর্থাৎ মুহাম্মদ তাঁর সেই কথিত অলৌকিক উপলব্ধির ব্যাখ্যা ও কে তাঁর সাথে কথা বলেছিল, সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অজ্ঞ। যে-ব্যক্তিটি তাঁকে তা জানান ও ঘোষণা দেন যে, "তিনি" একজন নবী, সে হলো খাদিজা। ওয়ারাকা বিন নওফল তা সমর্থন করেন ও অতিরিক্ত যে-তথ্যটি তিনি যোগ করেন, তা হলো - মুহাম্মদের কাছে যে সত্তাটির আগমন ঘটেছিল, সে ছিল "ফেরেশতা জিবরাইল"।
সোজা ভাষায়, "মুহাম্মদ যে একজন নবী" এই পরিচয়পত্রটি (Certificate) মুহাম্মদ পেয়েছিলেন খাদিজা ও ওয়ারাকার কল্যাণে। মুহাম্মদের "নবীযাত্রার শুরু" হয়েছিল এই দুই ব্যক্তির দেয়া পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে!
এই ঘটনার পর প্রায় তিন বছর যাবত মুহাম্মদ তার তথাকথিত 'নবুয়তের বাণী' প্রচার করেন গোপনে। অতঃপর তিনি প্রথমে তাঁর নিকট-আত্মীয়দের মধ্যে তাঁর তথাকথিত নবুয়তের বাণী প্রচারের জন্য আদেশপ্রাপ্ত হন। এরই ধারাবাহিকতায়, তিনি তাঁর নিজেরই চাচা ও চাচীকে অভিশাপ বর্ষণ করেন!
অতঃপর মুহাম্মদ প্রকাশ্যে তাঁর প্রচারণা (পর্ব-১৬) শুরু করেন ও সুদীর্ঘ দশ বছর (৬১৩-৬২২ সাল) যাবৎ তিনি আল্লাহর নামে কুরাইশদের দেব-দেবী ও পূর্বপুরুষদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য-হুমকি-শাসানী-ভীতি-প্রদর্শন ও অসম্মান অব্যাহত রাখেন। (পর্ব: ২৬-২৭) আল্লাহর নামে তিনি তাঁকে অবিশ্বাসকারী ও তাঁর সমালোচনাকারীদের শোনাতে থাকেন 'পূর্ববর্তীদের উপকথা' (পর্ব: ১৭-১৯),উল্টাপাল্টা কথাবার্তা (পর্ব: ২০-২২), অবৈজ্ঞানিক উদ্ভট প্রলাপ ও যথেচ্ছ শাপ-অভিশাপের বার্তা (পর্ব: ১-১৩)।
মুহাম্মদের এহেন গর্হিত কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ কুরাইশরামুহাম্মদের কাছে বহুবার বহুভাবে তাঁর নবুয়তের প্রমাণ হাজির করতে বলেন। তাঁদের দাবি বেশী কিছু ছিল না! তাঁরা মুহাম্মদের কাছে দাবী করেছিলেন যে, মুহাম্মদ যেন তাঁরই বর্ণিত পূর্ববর্তী নবীদের অনুরূপ কোনো একটি "মোজেজা (অলৌকিকত্ব)' তাঁদের সামানে হাজির করেন। মুহাম্মদ তা করতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন। তাঁদের সেই ন্যায্য দাবির জবাবে তিনি তাঁদের সাথে করেন অবান্তর বাক্যবিনিময় ও আল্লাহর নামে নিজেই নিজের যথেচ্ছ ভূয়সী প্রশংসা, তাঁদেরকে করেন যথেচ্ছ হুমকি-শাসানী ও ভীতি প্রদর্শন! (পর্ব: ২৩-২৫)।
অতিষ্ঠ কুরাইশরা মুহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। মুহাম্মদ তাঁর ধর্মরক্ষার প্রয়োজনে তাঁর অনুসারীদের বিভিন্ন প্রলোভন ও হুমকির মাধ্যমে তাদের পরিবার ও পরিজনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে প্রথমে আবিসিনিয়ায় ও পরবর্তীতে মদিনায় দেশান্তরিত (হিজরত) হতে বাধ্য করেন; মুহাম্মদ নিজেও তাঁর ধর্মরক্ষার প্রয়োজনে মদিনায় হিজরত করেন। (পর্ব: ৪১-৪২) মদিনায় আসার পর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা জীবনের এক কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হন। মদিনায় স্বেচ্ছানির্বাসনের সাত মাস পর জীবিকার প্রয়োজনে মুহাম্মদ ও তাঁর মক্কাবাসী অনুসারীরা (মুহাজির) 'ডাকাতি কর্মে'লিপ্ত হন। পর পর সাতটি ডাকাতি চেষ্টা হয় ব্যর্থ। (পর্ব: ২৮)।
অতঃপর একের পর এক উপর্যুপরি সাফল্য!
মুহাম্মদের আদেশে তাঁর অনুসারীরা নাখলা নামক স্থানে বাণিজ্য-ফেরত একজন নিরীহ কুরাইশকে খুন ও দুইজনকে বন্দী করে ধরে এনে তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করেন। (পর্ব: ২৯)।
নাখলার এই নৃশংস ঘটনার ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় বদর যুদ্ধ! (পর্ব: ৩০-৪৩) মুহাম্মদের আগ্রাসী আক্রমণ, খুন ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কুরাইশদের সর্বপ্রথম প্রতিরক্ষা যুদ্ধ। অধিকাংশ কুরাইশ গোত্রের যুদ্ধে অনিচ্ছা, মুহাম্মদ ও তাঁর সহচরদের প্রতি (যারা ছিল কুরাইশদেরই আত্মীয়-স্বজন) কুরাইশদের মানবিক দুর্বলতা ও কুরাইশদের প্রতি মুহাম্মদের দীক্ষায় দীক্ষিত নব্য মুসলমানদের সীমাহীন ঘৃণা, আক্রোশ ও অমানুষিক নৃশংসতায় এই যুদ্ধে মুহাম্মদের অপ্রত্যাশিত বিজয় ঘটে। (পর্ব- ৩৪) কিন্তু, মুহাম্মদ তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশে ঘোষণা দেন যে, এই সফলতার প্রকৃত কারণ হলো, তাঁদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও ফেরেশতা মারফত সাহায্য, এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে যারা তাঁর মতবাদে দীক্ষিত হবে, তাদেরকেই আল্লাহ এমনই ভাবে সাহায্য করবে।
বদর যুদ্ধের পর মুহাম্মদ তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনাকারী বেশ কিছু নিরস্ত্র মানুষকে খুনের আদেশ জারি করেন। তাঁর অনুসারী গুপ্ত ঘাতকরা রাতের অন্ধকারে এই সব নিরস্ত্র লোককে অমানুষিক নৃশংসতায় খুন করে। মুহাম্মদ এই খুনিদের ভূয়সী প্রশংসা করেন ও বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করেন। অতঃপর মুহাম্মদ বনি কেইনুকা গোত্রকে বিতাড়িত করে তাঁদের সমস্ত সম্পদ হস্তগত করেন। একের পর এক উপর্যুপরি সাফল্য ও গণিমতের মালের হিস্যায় উজ্জীবিত মুহাম্মদের অনুসারীরা তাদের নেতার প্রতি হন আরও বেশি অনুগত ও আস্থাশীল। মদিনায় হিজরতের পর একের পর এক এইসব সাফল্যের পরিচয়ে মুহাম্মদ অনুসারীদের বিশ্বাস হয় সুদৃঢ়, "মুহাম্মদের দাবি সত্য, তাঁর প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের প্রমাণ স্পষ্ট!" (পর্ব: ৪৬- ৫১)।
মুহাম্মদ বনি কেইনুকা গোত্রের সমস্ত লোককে খুন করতে চেয়েছিলেন! তাঁদের প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল আবদুল্লাহ বিন উবাই নামের এক অসীম সাহসী আদি মদিনাবাসীর কল্যানে।
তারপর শুরু হলো একের পর এক উপর্যুপরি বিপর্যয়!
ওহুদ যুদ্ধে (মার্চ, ৬২৫ সাল) চরম বিপর্যয়:
>>> ওহুদ যুদ্ধে মুহাম্মদের চরম পরাজয় ও সমবয়সী চাচা হামজা বিন আবদুল মুত্তালিব সহ ৭০ জন অনুসারীর নৃশংস খুন ও নবী-গৌরব ধূলিস্যাৎ! বিনষ্ট নবী-গৌরব পুনরুদ্ধার ও নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার কলা-কৌশলের অংশ হিসাবে মুহাম্মদের হামরা আল-আসাদ অভিযান ও আল্লাহর নামে কমপক্ষে ৬০ টি ঐশী বাণীর অবতারণার করে 'নিজেকে নির্দোষ ও বিপর্যয়ের সম্পূর্ণ দায়ভার তাঁর অনুসারীদের উপর ন্যস্ত করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালান’! বিভিন্ন অজুহাতের মাধ্যমে তিনি এটিই প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, ওহুদ যুদ্ধের চরম বিপর্যয়ের জন্য তাঁর নেতৃত্ব কোনোভাবেই দায়ী নয়, দায়ী তাঁর অনুসারীদের ইমানের দুর্বলতা! সুতরাংতাঁর অনুসারীদের উচিত এই যে, তারা যেন তাদের সেই ইমানের দুর্বলতা স্বীকার করে নিয়েও তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে। (পর্ব: ৬৮-৭০)।
'আল-রাজী', আবু-সুফিয়ানকে গুপ্তহত্যা চেষ্টা ও বীর মাউনার ব্যর্থতা:
>>> ওহুদ যুদ্ধের মাস তিনেক পর 'আল-রাজী' ও তার পরের ঘটনায় তাঁর আরও ছয়জন অনুসারীর নৃশংস খুন! তারপর আবু-সুফিয়ানকে গুপ্তহত্যার চেষ্টায় ব্যর্থতা! তারপর বীর মাউনার বিষাদময় ঘটনায় তাঁর আরও ৪০-৭০ জন অনুসারীর নৃশংস খুন! তারপর আমর বিন উমাইয়া আল-দামরি কর্তৃক ভুলক্রমে বানু আমির গোত্রের দুইজন লোককে খুন ও তার খেসারতের (রক্ত-মূল্যের অর্থ) জোগাড়ের ব্যর্থতা। (পর্ব- ৭২-৭৪)।
ওহুদ যুদ্ধের পর ছয়টি মাসের একের পর এক চরম বিপর্যয়ে নাস্তানাবুদ মুহাম্মদ পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁর অনুসারী ও প্রতিপক্ষের কাছে তাঁর শক্তিমত্তার নিদর্শন পেশ ও তাঁর অনুসারীদের পার্থিব সুযোগ-সুবিধার (গণিমত) ব্যবস্থা নিশ্চিত করেন নিরপরাধ বনি নাদির গোত্রকে "জিবরাইলের অজুহাতে" জোরপূর্বক বিতাড়িত করার মাধ্যমে। খন্দক যুদ্ধের বছর দেড়েক আগে মুহাম্মদ কী অজুহাতে বনি নাদির গোত্রের সমস্ত মানুষকে তাঁদের শত শত বছরের মদিনার আবাসস্থল থেকে অমানুষিক নৃশংসতায় জোরপূর্বক বিতাড়িত করেছিলেন, তার বিস্তারিত আলোচনা পর্ব: ৫২ ও ৭৫-এ করা হয়েছে। বনি নাদির গোত্রকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও তাঁদের সম্পদ লুণ্ঠনের হিস্যায় মুহাম্মদের অনুসারীরা হয়েছিলেন উজ্জীবিত এবং মুহাম্মদের হৃত গৌরব ও নেতৃত্ব হয়েছিল পুনঃপ্রতিষ্ঠিত।
বনি কেইনুকা গোত্রের মত এবারেও মুহাম্মদ বনি নাদির গোত্রের সমস্ত লোককে খুন করতে চেয়েছিলেন! তাঁদের প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল আবারও সেই একই আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের কল্যাণে।
তারপর ধাতুল-রিকা ও দুমাতুল- জানদাল (Dumatul-Jandal) হামলায় ব্যর্থতা:
>>> বনি নাদির গোত্রকে উচ্ছেদের দুই মাস পর (অক্টোবর-নভেম্বর, ৬২৫ সাল) মুহাম্মদ ধাতুল-রিকা হামলা পরিচালনা করেন ও ঘাতাফান গোত্রের এক বড় দলের সম্মুখীন হয়ে ভীত হয়ে প্রত্যাবর্তন করেন। এই অভিযানেই মুহাম্মদ প্রথম ভয় নামাজ (৪:১০২) সম্পাদন করেন। (পর্ব-৭৬)।
ধাতুল রিকা হামলার প্রায় আট মাস পর হিজরি ৫ সালের রবিউল আউয়াল মাসে (জুলাই, ৬২৬ সাল) মুহাম্মদ দুমাতুল- জানদাল হামলা পরিচালনা করেন। কোনোরূপ সংঘর্ষ ছাড়াই মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা বিফলকাম অবস্থায় মদিনায় প্রত্যাবর্তন করেন। [2] [3] [4]
তারপর এই খন্দক যুদ্ধ! আবারও ব্যর্থতা!
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনার পুনরারম্ভ: [5]
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ৯৩) পর:
‘খন্দক যুদ্ধ ও বনি কুরাইজার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ সুরা আল-আহযাব (সুরা: ৩৩) নাজিল করে, যেখানে আল্লাহ বর্ণনা করেছে তাদের পরীক্ষা ও তার [আল্লাহর] দয়া ও সাহায্যের বিষয়ে:
[এর পর সিরাতে সুরা আল-আহযাবের ৩৩:৯ থেকে ৩৩:২৭ আয়াতের উল্লেখ। ৩৩:১০ থেকে ৩৩:১৭ আয়াতের আলোচনা ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। (পর্ব: ৮১)]
[৩৩:১৮-১৯] "আল্লাহ খুব জানেন তোমাদের মধ্যে কারা তোমাদেরকে বাধা দেয় এবং কারা তাদের ভাইদেরকে বলে, আমাদের কাছে এস। তারা কমই যুদ্ধ করে। [১৯] তারা তোমাদের প্রতি কুন্ঠাবোধ করে। যখন বিপদ আসে, তখন আপনি দেখবেন মৃত্যুভয়ে অচেতন ব্যক্তির মত চোখ উল্টিয়ে তারা আপনার প্রতি তাকায়। অতঃপর যখন বিপদ টলে যায় তখন তারা ধন-সম্পদ লাভের আশায় তোমাদের সাথে বাকচাতুরীতে অবতীর্ণ হয়। তারা মুমিন নয়। তাই আল্লাহ তাদের কর্মসমূহ নিস্ফল করে দিয়েছেন। এটা আল্লাহর জন্যে সহজ।"
[৩৩:২০] - "তারা মনে করে শক্রবাহিনী চলে যায়নি। যদি শক্রবাহিনী আবার এসে পড়ে, তবে তারা কামনা করবে যে, যদি তারা গ্রামবাসীদের মধ্য থেকে তোমাদের সংবাদাদি জেনে নিত, তবেই ভাল হত। তারা তোমাদের মধ্যে অবস্থান করলেও যুদ্ধ সামান্যই করত।"
[৩৩:২১] - "যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।"
[৩৩:২২] - "যখন মুমিনরা শক্রবাহিনীকে দেখল, তখন বলল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল এরই ওয়াদা আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল সত্য বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আত্নসমর্পণই বৃদ্ধি পেল।"
[৩৩:২৩] - "মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।"
[৩৩:২৪-২৫]- "এটা এজন্য যাতে আল্লাহ, সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফেকদেরকে শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" [২৫] আল্লাহ কাফেরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন। তারা কোন কল্যাণ পায়নি। যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে গেছেন। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।"’ [6] [7]
>>> মুহাম্মদের অধিকাংশ অনুসারী খন্দক যুদ্ধে (মার্চ, ৬২৭ সাল) কীরূপ অসহায় ও ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন, ওহুদ যুদ্ধের মতই খন্দক যুদ্ধেও মুহাম্মদের বহু অনুসারী কীভাবে মুহাম্মদের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছিলেন ও যথারীতি মুহাম্মদ "আল্লাহর নামে" তাদেরকে কীরূপে আনুগত্যহীন (মুনাফিক) ঘোষণা দিয়ে হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন - তার সাক্ষ্য হয়ে আছে মুহাম্মদেরই স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থের ওপরে উল্লেখিত আয়াতসমূহ, ‘সিরাত’ ও হাদিসের বর্ণনা। (পর্ব: ৭৭-৮৬)।
ওপরে উল্লেখিত একের পর এক চরম ব্যর্থতা ও বিপর্যয় স্থানের কোথাও মুহাম্মদের প্রতিশ্রুত “আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও ফেরেশতাদের সাহায্য" মুহাম্মদ অনুসারীদের কেউই প্রত্যক্ষ করেননি!
এমত অবস্থায় মুহাম্মদ অনুসারীদের মনোবল ও নবীর প্রতি তাঁদের আস্থা ক্রমান্বয়ে নিম্নগতিসম্পন্ন হতে বাধ্য। এই পরিস্থিতিতে এক প্রচণ্ড উচ্চাভিলাষী দলপতি কীভাবে তাঁর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে রাখবেন? শুধুমাত্র ইমানের দুর্বলতার অজুহাত ও বাগ্মিতার সাহায্যে অনুসারীদের যে খুব বেশি দিন আয়ত্তে রাখা যায় না, তা তীক্ষ্ণবুদ্ধির মুহাম্মদের অজানা থাকার কথা নয়। অনুসারীদের দলে ধরে রাখতে হলে নেতার সফলতা ও শক্তিমত্তা প্রদর্শন এবং অনুসারীদের পার্থিব সুখ-সচ্ছলতা ও সুযোগ-সুবিধার জোগান অপরিহার্য। একের পর এক চরম ব্যর্থতায় মুহাম্মদ অনুসারীরা তাঁদের নবীর উপর আস্থা হারাতে বাধ্য।
এমত পরিস্থিতিতে:
১) অনুসারীদের কাছে নিজের শক্তিমত্তার প্রমাণ উপস্থাপন করতে,
২) অনুসারীদের পার্থিব সুযোগ সুবিধার জোগান (গণিমত) নিশ্চিত করতে, ও
৩) “প্রয়োজনে ‘তিনি' কতটা নিষ্ঠুর হতে পারেন" এই বার্তা প্রতিপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে এক উচ্চাভিলাষী নৃশংস একনায়ক (Dictator) তার নৃশংসতার যে-উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন, মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ তাইই করেছিলেন। আর এই কুট উদ্দেশ্য সাধনের বাহন হিসাবে তিনি জিবরাইল-কে ব্যবহার করে “তাহারা কাফেরদের পৃষ্ঠপোষকতা করিয়াছিল'" অজুহাতটি হাজির করেন। (পর্ব: ৮৭)।
মুহাম্মদের ভাষায়,
৩৩:২৬ - কিতাবীদের মধ্যে যারা কাফেরদের পৃষ্টপোষকতা করেছিল, তাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে নামিয়ে দিলেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি নিক্ষেপ করলেন। ফলে তোমরা একদলকে হত্যা করছ এবং একদলকে বন্দী করছ।
৩৩:২৭ - তিনি তোমাদেরকে তাদের ভূমির, ঘর-বাড়ীর, ধন-সম্পদের এবং এমন এক ভূ-খন্ডের মালিক করে দিয়েছেন, যেখানে তোমরা অভিযান করনি।
>>> অবিশ্বাসীরা মুহাম্মদ এবং তাঁর কোনো অনুসারীকে কোনোরূপ শারীরিক অত্যাচার করেছেন, কিংবা তাঁর কোনো অনুসারীকে খুন করেছেন, এমন উদাহরণ সমগ্র কুরানে একটিও নেই! কিন্তু মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা অমানুষিক ও সন্ত্রাসী কায়দায় কী রূপে অমুসলিমদের হামালা করেছিলেন, খুন করেছিলেন, নির্যাতন করেছিলেন (মুক্ত মানুষকে চিরদিনের জন্য বন্দী), তাঁদেরকে ভিটে মাটি থেকে উৎখাত করে তাঁদের যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি লুট করেছিলেন, তা মুহাম্মদ তাঁর নিজের জবানবন্দিতেই অত্যন্ত প্রাঞ্জল ও সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন। বনি কেউনুকা ও বনি নাদির গোত্রের সমস্ত লোকদের "খুন করার অভিলাষ" মুহাম্মদ চরিতার্থ করতে পারেননি পরিস্থিতির কারণে। বনি কুরাইজা গণহত্যার মাধ্যমে মুহাম্মদ তাঁর সেই অভিলাষ চরিতার্থ করেছিলেন।
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ১০৬-১০৭ http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf
[2] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৪৪৯
[3] “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৪৬৩ http://books.google.com/books?id=sD8_ePcl1UoC&printsec=frontcover&source=gbs_ge_summary_r&cad=0#v=onepage&q&f=false
[4] 'দুমাতুল-জানদাল - ওয়াদি সিরহান (Wadi Sirhan) এর সম্মুখ ভাগে অবস্থিত উত্তর আরবের এক মরূদ্যান। বানু কিনানা নামের বানু কালব গোত্রের এক উপগোত্র (Banu Kinanah subtribe of Banu Kalb) ও কিছু আরব খ্রিষ্টান এখানে বসবাস করতো। বর্তমান আল-জাউফ (al-Jawf) শহরটি এই স্থানে অবস্থিত।'
[5] Ibid “সিরাত রসুল আল্লাহ”, লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, পৃষ্ঠা ৪৬৬-৪৬৮
[6] ইবনে কাথিরের কুরান তফসির:
[7]তাফসীর যালালীন ও অন্যান্য:
রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
পুতুলের হক কথা - ০৪
লিখেছেন পুতুল হক
১০.
বুদ্ধি হবার সময় থেকে শুনে আসছি কাদিয়ানিরা কাফের। প্রশ্ন জাগতো মনে, তারা কি আল্লাহতে বিশ্বাস করে না? তারা কি মোহাম্মদকে নবী হিসেবে মানে না? কেউ কি বুঝিয়ে বলতে পারেন, কেন তাঁরা কাফের? শিয়া-সুন্নির বিরোধের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য। ক'জন বাঙালি মুসলমান জানে, সুন্নিরা কেন শিয়াদের শত্রু মনে করে? তারা তো নবী পরিবারের সমর্থক। তাদের ইমাম হতেন নবীর বংশধর। তবুও আমরা কেন তাদের ঘৃণা করি?
একজন কাদিয়ানি বা একজন শিয়া মুসলিমকে স্বচক্ষে দেখার অনেক আগে থেকে আমি তাদের ঘৃণা করতে শিখেছিলাম। হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদিসহ পৃথিবীর সকল অমুসলিমকে ঘৃণা করতে শিখেছিলাম। এরপর নাস্তিক ঘৃণা করতে শিখেছিলাম। ভালোবাসার জন্য তবে রইলো কে? পৃথিবীর মানুষের চার ভাগের তিন ভাগকে ঘৃণা করে, বাকি একভাগের মাত্র একটা ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে হয় "উম্মাহ"।
আমি ভাবতে শিখেছিলাম, আমার ধর্ম ইসলামই সেরা। ইসলামই একমাত্র সত্য। আবার সবার ইসলাম ইসলাম নয়। অথবা সবার ইসলাম সত্য নয়। আমি ধরে নিই, আমার ইসলাম - সত্য ইসলাম। এভাবে সব মুসলমান ধরে নেয়, তার ইসলাম - সত্য ইসলাম। আবার সব মুসলমানকে যার যার সত্য ইসলাম নিয়ে চুপচাপ থাকলে চলবে না। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এক সত্য আরেক সত্যকে সহ্য করতে পারে না। মহান আল্লাহ জিবরাইলকেও আর পাঠান না। কে বলবে, কোনটা সত্য ইসলাম?
ঘটনা হল: যার বেশি শক্তি, তার ইসলামই সত্য ইসলাম।
১১.
- তোমার ছেলেটা কেমন আছে?
- আল্লাহ্র রহমতে ভালো আছে।
- তোমার আম্মুর শরীর কেমন?
- আম্মুর শরীরটা ভালো নেই।
১২.
আল্লাহ সুবহানাতায়ালার বয়স হয়েছে। "কুন" আগের মত জোরসে বলতে পারেন না। তাই দুনিয়া থেকে রিকুইজিশন দিয়েছেন বহুল পরিমাণে ইট, বালি, রড, সিমেন্ট, উন্নত বিছানা, নরম সোফা, কমপ্লিট, চামড়ার জুতো, আফটার শেভ, শেভিং জেল, ভালো পারফিউম এবং ভালো কনডমের। বামাতিদের জন্য আসমানে অষ্টম বেহেশত নির্মাণ করবেন আল্লাহ। ইসলাম তথা নবী-রাসুলের একনিষ্ঠ খেদমত করে যেসব বামাতি, অষ্টম বেহেশতে তাদের জন্য উন্নত খাবার, মদ আর হুরি সম্বলিত আরাম-আয়েশে পূর্ণ জীবনের গ্যারান্টি প্রদান করছেন আল্লাহ। দলে দলে বামাতি আজকাল স্বপ্নে নবীকে দেখে। নবী তাদের বেহেশতের কথা বলে। তখন তারা বেহেশতের কল্পনা করে। দুনিয়াতে ছেঁড়া চটি, শুকনা গলা আর সস্তা পতিতা ছাড়া আর কিছু জোটেনি। আল্লাহ্র নবীর মান বাচানোর উসিলায় যদি একটু ভালো খাওয়া-পড়া জোটে অন্তত পরকালে। ভালো থাকার জন্য পরকালই সই।
মক্কা - কোরান-বর্ণিত নিরাপদ নগরী
কোরানে মক্কা নগরীকে নিরাপদ বলা হয়েছে বারবার, এমনকি আল্যা একবার শপথও নিয়েছে নিরাপদ মক্কা নগরীর নামে:
১. তারা কি দেখে না যে, আমি (মক্কা নগরীকে) একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চতুপার্শ্বে যারা আছে, তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। (সুরা ২৯: ৬৭)
২. যে ব্যক্তি সেখানে (মক্কার হারাম) প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। (সুরা ৩: ৯৭)
৩. শপথ এই নিরাপদ (মক্কা) নগরীর। (সুরা ৯৫:১-৩)
৪. আর স্মরণ করো তখনকার কথা যখন আমি এই গৃহকে (কাবা) লোকদের জন্য কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল গণ্য করেছিলাম। (সুরা ২:১২৫)
অথচ এ বছরে আল্যার নিরাপত্তা-চাদরে ঢাকা এই নগরীতে অবস্থিত আল্যার ঘর ক্কাবাতেই ক্রেন ভেঙে পড়ে মারা গেছে ১১১ জন, মিনায় শয়তানকে পাথর মারতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা গেছে আরও ৭১৭ (মতান্তরে ২০০০) জন। এর আগে গত ৪০ বছরে নিরাপদ এই নগরীতে হজ্বের সময় ঘটা দুর্ঘটনাগুলোর একটি তালিকা দেখে আল্যার বাকসর্বস্বতা ও মিথ্যাচার তথা কোরানের ভুয়াত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হোন:
বিভিন্ন সময়ে একের পর এক হজ ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সড়ক দুর্ঘটনা, বোমা বিস্ফোরণ, শিয়া-সুন্নি সংঘর্ষ, ভবন ধস, অগ্নিকাণ্ড এবং পদদলিত হওয়ার মতো মর্মান্তিক ঘটনা।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ জন আফগানসহ ডজনখানেক হাজি মারা যাওয়ার ৪ বছর পর আবার সেই সেপ্টেম্বরেই পবিত্র হজের মাত্র কয়েকদিন আগে আরেক ট্র্যাজেডির জন্ম হলো। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ি শুক্রবারের ক্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৭ জনে।
২০০৬ সালে মক্কায় বহুতল আল-গাজা হোটেল ধসে ৭৬ জন নিহত হন এবং আহত হন আরও ৬৪ জন। একই বছর আল-জামারাতে শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মারতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা যান আরও ৩৪৫ জন।
২০০৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতেও শয়তানকে পাথর ছুঁড়ে মারার সময় পদদলিত হয়ে মারা যান ২৪৪ জন হাজি। ২০০১ সালের ৫ মার্চ ৩৫ জন হাজি মারা যান ওই আল-জামারাতে একই ধরনের ঘটনায়।
ওই একই জায়গায় ১৯৯৮ সালে পদদলিত হয়ে মারা যান ১৮০ জন হাজি।
১৯৯৭ সালের ১৫ এপ্রিল মিনায় তাবুতে আগুন লেগে পুড়ে মারা যান ৩৪০ জন। এ ঘটনায় আহত হন আরও প্রায় দেড় হাজার মানুষ।
১৯৯৪ সালের ২৩ মে ২৭০ জন মারা যান আল-জামারাতে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ইন্দোনেশীয়।
এর আগে ১৯৯০ সালের ২ জুলাই মক্কায় মারা যান ১৪’শ ২৬ জন হাজি। তাদের বেশির ভাগই ছিলেন মালয়েশীয়, ইন্দোনেশীয় ও পাকিস্তানি। সুড়ঙ্গ পথে পদপিষ্ট হয়ে এই বিপুল মানুষের মৃত্যু হয়। হজ ট্র্যাজেডিগুলোর মধ্যে এটিই এযাবৎ কালের সবচেয়ে বেশি প্রাণহানীর ঘটনা।
মুসলিমদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থানে শুধু দুর্ঘটনাই নয় বোমা বিস্ফোরণ, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষেও মারা গেছেন অনেক মুসল্লি।
১৯৮৯ সালের ৯ জুলাই মক্কায় দুইটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত হন এক হাজি এবং আহত হন আরও ১৬ জন।
১৯৮৭ সালের ৩১ জুলাই মক্কায় ৪০২ জন হাজি নিহত হন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ইরানি হাজি। এ ঘটনায় আরও ৬৪৯ জন আহত হন। সৌদি নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে শিয়াদের সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে তাবুতে আগুন লেগে গেলে নিহত হন ২০০ হাজি।
অর্থাৎ ১৯৭৫ থেকে ২০১৫ মক্কায় ৪০ বছরে হজ্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় চার হাজারেরও বেশি মানুষ। এবং ঘটনাগুলো ঘটেছে কিন্তু সেই নগরীতে, যাকে আল্যাফাক বারবার বর্ণনা করেছে নিরাপদ হিসেবে! অতএব খিয়াল কৈরা!
শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
ফাতেমা দেবীর ফতোয়া - ২১
লিখেছেন ফাতেমা দেবী (সঃ)
১০১.
অনেক মুছলমান কোরবানির মানবিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয় এভাবে, তারা নাকি কোরবানির মাধ্যমে তাদের মনের পশুকে কোরবানি করে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের মনের পশু তাদের মনে না থেকে হাটে-বাজারে ও ফার্মগুলিতে থাকে কেন? তারা তাদের মনের পশুকে নিজেদের মন থেকে না নিয়ে হাট-বাজার ও ফার্ম থেকে কিনে নেয় কেন?
১০২.
নবী ইব্রাহীমকে আল্যা তার সবচেয়ে প্রিয় জিনিস আল্যার নামে হত্যা করতে বলেছিল। ইব্রাহীমের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস ছিল তার পুত্র ইসমাইল। তাই সে নিজের পুত্র ইসমাইলকে পাহাড়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করে জবাই করতে শুরু করে দিল। চোখ খুলে দেখলো, ইসমাইল নয়, একটি পশু জবাই হয়ে আছে। পশুটি তার নিজের তাজা রক্তের ওপর ছটফট করছে, গোঙাচ্ছে, কষ্টে তার চোখগুলি বের হয়ে যেতে চাইছে, তার জিহবা বেরিয়ে গেছে, রক্তে আর কাদায় মাখামাখি হয়ে গেছে, মৃত্যুর সাথে লড়ছে সে। কিছুক্ষণ পরে সে নিথর হয়ে গেছে। তাই দেখে আল্যা রাব্বুল আলামিন খুব খুশি হয়ে গেছে। এই হলো কোরবানির ইতিহাস। সামর্থ্যবান মুসলমানদের কোরবানি ফরজ। কোরবানি মানে, আল্যা রাব্বুল আলামিনকে খুশি করার জন্য নিরীহ অসহায় পশুদের খুন করা আল্যাকে মহান ঘোষণা করে।
এই কথাগুলি পড়ে আমাকে আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আমি কি মাছ-মাংস খাই না? আমি কি গৌতম বুদ্ধ হয়ে গেছি? উত্তর হচ্ছে, আমি মাছ-মাংস শাক-সবজি সবই খাই। তবে তা ছওয়াব বা পূণ্য লাভের জন্য নয়, বাঁচার জন্য। পৃথিবীর সকল জীব খাদ্যচক্র ও ইকোসিস্টেমের অন্তর্গত। বেঁচে থাকার জন্য আমরা প্রত্যেকেই খাবারের জন্য একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আমরা ভেজ বা ননভেজ যা-ই খাই না কেন, তার সবই প্রাণ কিন্তু। ভাত-রুটি-নুডুলসও প্রাণ থেকে আসে। আমরা যেটাই খাই, কোনো না কোনো প্রাণ আমাদেরকে হত্যা করতে হয়। নিষ্প্রাণ বস্তু যেমন; ইট বালু সিমেন্ট এসব আমরা খেতে পারি না। বাঁচার জন্য খাওয়া আর পুণ্যলাভের জন্য নিরীহ পশুদের নির্মমভাবে হত্যা করে হত্যোৎব পালন করা কি এক কথা হলো?
মাছ-মাংস যদিও খাই, মুরগি জবাইয়ের দৃশ্য এবং বড়শিতে মাছ ধরার দৃশ্যও আমি দেখতে পারি না। খুব কষ্ট লাগে। নিজেকে স্বার্থপর মনে হয়। কিন্তু বাঁচার জন্য ফুড চেইনের বাইরেও আমি যেতে পারি না। আল্যা নাকি এত মহানম নিরীহ পশুদের হত্যার দৃশ্য দেখে তিনি কীভাবে খুশি হন? কাউকে হত্যা কীভাবে ছওয়াবের ব্যাপার হতে পারে?
১০৩.
কোরবানি ঈদের দিন মুছলমানদের ঘরে ঘরে হত্যাযজ্ঞ মোবারক।
১০৪.
পশুদের যখন আল্যার আদেশে তাকে খুশি করার জন্য মুছলমানেরা কোরবানির নামে খুন করে, যখন পশুগুলি মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করে, নিজের রক্ত ও কাদায় মাখামাখি হয়ে ধরফর করে তখন মহান দয়ালু আল্যা সাত আসমানের উপরে আরসে বসে মহানন্দে খিকখিক করে হাসে ও ছওয়াবের লোভে পশু খুনি মুছলিমদের ছওয়াব দান করে। আল্লা কত দয়ালু ও মহান এইবার দেখেন। বলেন, আল্লা মহান।
১০৫.
আল্যার একমাত্র খাদ্য হচ্ছে রক্ত। আল্যা কোরবানির দিন হত্যা করা পশুর তাজা রক্তের বন্যার উপর গড়াগড়ি দিয়ে রক্ত খায়। সারা বছর বেচারা তেমন কিছুই খেতে পায় না। খিদের চোটে মাথা খারাপ হয়ে আবোলতাবোল কথা বলে। মোমিনাদের উচিত তাদের পিরিয়ডের রক্ত ফিডারে ভরে জমা করে আল্যার কাছে পাঠিয়ে দেয়া। আল্যা আরশে বসে বসে খেতে পারবে। মমিনাদের উচিত হচ্ছে না, তাদের পিরিয়ডের রক্ত অপচয় করা। আল্লা তো বলেছেন, অপচয়কারী শয়তানের ভ্রাতা। মমিনারা কি শয়তানের ভ্রাতা হতে চায়?
শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫
মুসলিম-মনের পশু দূরীকরণের অব্যর্থ তরিকা
লিখেছেন ক্যাটম্যান
আজ ঈদ-উল-আযাহা অর্থাৎ কুরবানির ঈদ। মুসলমানদের বাৎসরিক অসভ্যতা ও বর্বরতা প্রদর্শনের দিন। এই দিনে বর্বর ও সামর্থ্যবান মুসলমানগণ ছুরি-চাপাতির উৎসবে মেতে ওঠেন। ইসলাম ধর্মের অযৌক্তিক রীতি ও প্রথা টিকিয়ে রাখতে বর্বর মুমিন-মুসলমানগণ ধারালো অস্ত্রের শান্তিপূর্ণ আঘাতে অগণিত গৃহপালিত নিরীহ পশুর প্রাণ কেড়ে নেন। এই দিনকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে গরু, ছাগল, উট ও দুম্বা ক্রয়ের মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারীতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশও যথারীতি আক্রান্ত হয়ে থাকে। সারা দেশের ন্যায় রাজধানী ঢাকাও এই প্রবল মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। কিন্তু কুরবানি মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে এই শহর পরিণত হয় গরু-ছাগলের শহরে। পুরো ঢাকা গরু-ছাগলে ঢেকে যায়। এ সময়ে রাস্তা-ঘাটে ও সুরম্য অট্টালিকার গাড়ি পার্কিং স্থলে গরু পার্কিং করে রাখা হয়। চারপাশে যেখানেই যাওয়া যায়, গরু-ছাগলের গুমোট গন্ধে দম আটকে আসে। অবস্থা এমন বেগতিক হয় যে, ঘরে ঘরে বাঙালি মুসলমান ছড়া আওড়াতে থাকে - “গরুর গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই।”
ধর্মের কাহিনী ঘেঁটে আমরা জানতে পারি, ইব্রাহিমের স্ত্রী সারা যখন নিঃসন্তান ছিলেন, তখন দাসপ্রভু ইব্রাহিমের সহবতে সারার দাসী হাজেরার গর্ভে এক পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে। তার নাম ছিল ইসমাইল। ঈসমাইল জন্মলাভের বেশ কয়েক বছর পরে ইব্রাহিমের স্ত্রী সারা ইসহাক নামে এক পুত্র সন্তান জন্মদান করেন। আর তারপর থেকেই স্ত্রী সারার মনে নতুন এক সংকটের সূচনা হয়। ইব্রাহিমের সম্পদ ও স্নেহে নিজ সন্তান ইসহাকের একক উত্তরাধিকার নিশ্চিতকল্পে সারা স্বীয় দাসী হাজেরা ও হাজেরার গর্ভজাত সন্তান ইসমাইলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঈর্ষান্বিত সারা তার স্বামী ইব্রাহিমকে মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশে হাজেরা ও তার শিশু সন্তান ইসমাইলকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে আসার নির্দেশ দেন। সারা’র নির্দেশমত নির্দয় ইব্রাহিম হাজেরা ও তার শিশু সন্তান ইসমাইলকে তপ্ত মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশে ফেলে আসেন। সেই যুগে খাবার ও পানীয় জল বঞ্চিত করে কাউকে পরোক্ষভাবে হত্যার এটি ছিল এক সহিহ পন্থা। যার মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে হত্যার দায় সুকৌশলে এড়ানো সম্ভব।
তবে ইব্রাহিম তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে জনশূন্য মরুভূমিতে ফেলে এলেও উক্ত মরুভূমিতে দূরাগত এক বাণিজ্য কাফেলার আগমনে ও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ যাত্রায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। পরবর্তীতে হাজেরার সন্তান ইসমাইল সাবালক হয়ে ওঠেন এবং শিকারী ও তীরন্দাজ হিসেবে তার সুখ্যাতি আশেপাশের মরুগোত্রে ছড়িয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে ইব্রাহিম জানতে পারেন, তাঁর ফেলে আসা দাসী ও তার গর্ভজাত সন্তান ইসমাইল এখনও বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে। তখন তিনি ইসমাইলকে হত্যার লক্ষ্যে পুনরায় এক ফন্দি আঁটেন। নিজ সন্তান ইসমাইলকে নিজ হাতে জবাই করে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ইব্রাহিম। কিন্তু হত্যার উদ্দেশ্যে ইসমাইলের নিকট উপনীত হয়ে তিনি দেখতে পান, তাঁর সন্তান ইসমাইল আর আগের সেই ছোট্ট শিশু নেই। সে এখন সুঠাম দেহের অধিকারী শক্তিশালী তরুণ। তার সাথে বৃদ্ধ ইব্রাহিম হত্যার লড়াইয়ে কিছুতেই পেরে উঠবেন না। এই বিবেচনায় তিনি স্ত্রী সারাকে নিঃশঙ্ক করার মানসে নতুন এক উপাখ্যান মঞ্চস্থ করেন। সেই উপাখ্যানের নাম ‘দুম্বার রক্তে ইসমাইল বধ উপাখ্যান।’ এই উপাখ্যানের বিষয় - একটি নিরীহ দুম্বাকে জবাই করে জবাইকৃত দুম্বার রক্ত ঈসমাইলের জামায় মেখে সেই রক্তমাখা জামা নিয়ে গিয়ে স্ত্রী সারাকে প্রদর্শন করা। যেন স্ত্রী সারা তা দেখে এই মর্মে আশ্বস্ত হন, তার সকল দুশ্চিন্তার কারণ দাসীপুত্র ইসমাইল পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই। সে আর কখনই তার গর্ভজাত সন্তান ইসহাকের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেবে না। ইব্রাহিম প্রণীত উপাখ্যানের এমন প্রতারণাপূর্ণ কৌশলে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় আজও সেই প্রতারণাপূর্ণ নাটকের সফল মঞ্চায়ন করে থাকে। আর ঘটা করে পশুবধের এমন নির্মমতাকে উৎসবে পর্যবসিত করতে এর নাম দেয়া হয়েছে ঈদ-উল-আযাহা বা কুরবানির ঈদ।
কুরবানির নামে মুমিন-মুসলমানগণ সাধারণত গরু-ছাগল, উট-দুম্বার ন্যায় নিরীহ পশু হত্যা করে থাকেন। তারা শুধু পশুবধ করেই ক্ষান্ত হন না; একইসাথে পশুবধের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অনুসন্ধান ও প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস চালান। পশুবধের আধ্যাত্মিক মহিমা কীর্তনে তারা কতিপয় হাস্যকর ব্যাখ্যার অবতারণা করে থাকেন। তন্মধ্যে অন্যতম হাস্যকর ব্যাখ্যাটি হলো - মানুষের মাঝে নানারকম হিংস্রতা ও পাশবিকতা বিদ্যমান। আর মানব মনের সমস্ত পাশবিকতা ও হিংস্রতার মূলে রয়েছে বন-জঙ্গলে বাস করা বিভিন্ন হিংস্র জন্তু-জানোয়ার। যারা কিনা বিনা পাসপোর্ট-ভিসায় আধ্যাত্মিক পন্থায় নিরীহ মানুষের অন্তরে বাসা বেঁধে মানবিকতাসম্পন্ন মানুষকে পাশবিকতাসম্পন্ন মানুষে পরিণত করে। তাদের গবেষণায় আরও বেরিয়ে এসেছে, মানবজাতির সমগ্র পাশবিক আচরণের পেছনে কোনও মানুষ দায়ী নয়, মূলত দায়ী বনের হিংস্র পশু। তাই বুদ্ধিমান মানবজাতির অগ্রগামী সম্প্রদায় মুসলমানগণ নিজেদের অন্তরের পাশবতা দূরীকরণে মানুষকে জবাই না করে চতুষ্পদ পশু জবাই করে থাকেন। সহজভাবে বলতে গেলে - মনের পশু দূর করতে বনের পশু জবাই করে তারা মূলত বর্বরতার চূড়ান্ত স্তরে উপনীত হন। এই আচরণের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেন, মুসলিম সম্প্রদায় আত্মস্বীকৃত পশু। তাদের প্রত্যেকের অন্তরে বাঘ, সিংহ, হায়েনা, শিয়াল, কুকুর ও ভাল্লুকের মত হিংস্র পশু বিদ্যমান। সেই বিবেচনায় মুমিন-মুসলমানদের কর্তব্য হওয়া উচিত - নিজেদের অন্তরে বিদ্যমান বাঘ-সিংহ দূর করতে বাস্তবিক বাঘ-সিংহ কুরবানি দেয়া। অন্তরের শিয়াল-কুকুর দূর করতে বাস্তবিক শিয়াল-কুকুর কুরবানি দেয়া। অথচ চরম সুবিধাবাদী মুমিনগণ নিজেদের অন্তর থেকে হিংস্র পশু বাঘ-সিংহ, শিয়াল-কুকুর দূরীকরণে বাঘ-সিংহ, শিয়াল-কুকুর কুরবানি দেয়ার পরিবর্তে গরু, ছাগল, উট ও দুম্বার ন্যায় নিরীহ পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন। কারণ বাস্তবিক গরু-ছাগলের জন্য বাস্তবিক বাঘ-সিংহ সব সময় ভীতিকর হলেও মুমিন-মুসলমানের মনের বাঘ-সিংহ বাস্তবিক গরু-ছাগলের ভয়ে চরমভাবে ভীত থাকে। তাই মুমিনেরা মনের বাঘ তাড়াতে গোয়ালের গরু ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে এটিই প্রতীয়মান হয়, সারা বিশ্বের মুমিন-মুসলমানগণ নিজেদের অন্তরে হিংস্র পশুর পরিবর্তে উট-দুম্বা ও গরু-ছাগল লালন করতেই বেশি আগ্রহী। তাই বিশ্বের সমগ্র মুমিন-মুসলমানের বোধবুদ্ধি গরু-ছাগল সুলভ চেতনায় আচ্ছন্ন। তারা চিন্তা ও চেতনায় শুধুই গরু-ছাগলকে অনুসরণ করে থাকেন।
তবে জীবনে একবার পশু কুরবানি করেও তারা মনের পশুর হাত থেকে চিরতরে নিস্তার পান না। কারণ বছর না ঘুরতেই গরু-ছাগলের চেয়েও নিরীহ মুমিন-মুসলমানের অন্তরে হিংস্র পশুসমূহ নতুনভাবে হানা দেয়। তারা চরম হিংস্রতায় মুমিনদের নাজুক অন্তর মুমিনদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দখল করে নেয়। তাই প্রতি বছরই মুমিনগণ নতুন নতুন বাস্তবিক পশু কুরবানির নামে হত্যা করে নিজেদের অন্তরে লালিত আধ্যাত্মিক পশু দূরীকরণের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে থাকেন। মুসলমানদের মনের পশু দূরারোগ্য ব্যাধির চেয়েও ভয়ানক। আধুনিক যুগে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে আরোগ্যলাভ সম্ভব হলেও মুমিন-মুসলমানগণ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিজেদের মনের পশুর অত্যাচার থেকে কখনও নিস্তার পান না। মুসলিম সম্প্রদায়ের মনের পশু নিরাময় অযোগ্য ব্যাধি। এদিক থেকে নাস্তিকগণের অন্তর সকল প্রকার পশু থেকে মুক্ত। তাই তারা নির্লজ্জ মুমিনদের ন্যায় প্রতি বছরে মনের পশু নিধনের নামে বনের পশু হত্যার আয়োজন করে না। তারা এ জাতীয় মানসিক ব্যাধি থেকে পুরোপুরি মুক্ত। কারণ তারা নাস্তিক। বর্তমানে একজন নাস্তিক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভূতপূর্ব ধার্মিক জীবনে আমি কখনত্ত মনের পশু দ্বারা আক্রান্ত না হলেও আল্লাহর ভাবনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। আল্লাহ আমার এতই প্রিয় বিষয় ছিল যে, সবসময় আমার মন আল্লাহর ভাবনায় নিবিষ্ট থাকত। তাই যে বছর আমি কুরবানি দিতে মনস্থির করলাম, সে বছর আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হিসেবে আল্লাহকেই বেছে নিলাম এবং হৃষ্টচিত্তে আল্লাহকেই কুরবানি দিলাম। এমন অনন্য কুরবানির মাধ্যমে আমি দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় জিন্দেগিতে একজন খালেস নাস্তিক হিসেবে সম্মানজনক প্রমোশন অর্জন করলাম। একইসাথে অর্জিত হলো একটি পশুমুক্ত বিশুদ্ধ অন্তর। সেইদিন থেকে আজ অব্দি আমি মনের পশুমুক্ত একজন পরিপূর্ণ নাস্তিক। তাই যারা মনের পশুর হাত থেকে চিরতরে মুক্তি পেত চান, তারা শুধুশুধু সামান্য মূল্যের গরু-ছাগল কুরবানি না দিয়ে সবচেয়ে মূল্যবান ও আপনাদের সবচেয়ে প্রিয় আল্লাহকে কুরবানি দিয়ে খালেস নাস্তিক হিসেবে প্রমোশন গ্রহণ করুন। তাহলে আপনাদেরকে আর প্রতি বছর কাঁড়িকাঁড়ি অর্থ অপচয় করে নিরীহ পশু কুরবানি দিয়ে মনের পশু দূরীকরণের ব্যর্থ প্রয়াস চালাতে হবে না। এক লাফেই মন পরিষ্কারের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবেন।