লিখেছেন ক্যাটম্যান
আজ ঈদ-উল-আযাহা অর্থাৎ কুরবানির ঈদ। মুসলমানদের বাৎসরিক অসভ্যতা ও বর্বরতা প্রদর্শনের দিন। এই দিনে বর্বর ও সামর্থ্যবান মুসলমানগণ ছুরি-চাপাতির উৎসবে মেতে ওঠেন। ইসলাম ধর্মের অযৌক্তিক রীতি ও প্রথা টিকিয়ে রাখতে বর্বর মুমিন-মুসলমানগণ ধারালো অস্ত্রের শান্তিপূর্ণ আঘাতে অগণিত গৃহপালিত নিরীহ পশুর প্রাণ কেড়ে নেন। এই দিনকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে গরু, ছাগল, উট ও দুম্বা ক্রয়ের মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারীতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশও যথারীতি আক্রান্ত হয়ে থাকে। সারা দেশের ন্যায় রাজধানী ঢাকাও এই প্রবল মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাজধানী ঢাকাকে বলা হয় মসজিদের শহর। কিন্তু কুরবানি মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে এই শহর পরিণত হয় গরু-ছাগলের শহরে। পুরো ঢাকা গরু-ছাগলে ঢেকে যায়। এ সময়ে রাস্তা-ঘাটে ও সুরম্য অট্টালিকার গাড়ি পার্কিং স্থলে গরু পার্কিং করে রাখা হয়। চারপাশে যেখানেই যাওয়া যায়, গরু-ছাগলের গুমোট গন্ধে দম আটকে আসে। অবস্থা এমন বেগতিক হয় যে, ঘরে ঘরে বাঙালি মুসলমান ছড়া আওড়াতে থাকে - “গরুর গন্ধে ঘুম আসে না একলা জেগে রই।”
ধর্মের কাহিনী ঘেঁটে আমরা জানতে পারি, ইব্রাহিমের স্ত্রী সারা যখন নিঃসন্তান ছিলেন, তখন দাসপ্রভু ইব্রাহিমের সহবতে সারার দাসী হাজেরার গর্ভে এক পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে। তার নাম ছিল ইসমাইল। ঈসমাইল জন্মলাভের বেশ কয়েক বছর পরে ইব্রাহিমের স্ত্রী সারা ইসহাক নামে এক পুত্র সন্তান জন্মদান করেন। আর তারপর থেকেই স্ত্রী সারার মনে নতুন এক সংকটের সূচনা হয়। ইব্রাহিমের সম্পদ ও স্নেহে নিজ সন্তান ইসহাকের একক উত্তরাধিকার নিশ্চিতকল্পে সারা স্বীয় দাসী হাজেরা ও হাজেরার গর্ভজাত সন্তান ইসমাইলকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ঈর্ষান্বিত সারা তার স্বামী ইব্রাহিমকে মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশে হাজেরা ও তার শিশু সন্তান ইসমাইলকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে আসার নির্দেশ দেন। সারা’র নির্দেশমত নির্দয় ইব্রাহিম হাজেরা ও তার শিশু সন্তান ইসমাইলকে তপ্ত মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশে ফেলে আসেন। সেই যুগে খাবার ও পানীয় জল বঞ্চিত করে কাউকে পরোক্ষভাবে হত্যার এটি ছিল এক সহিহ পন্থা। যার মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে হত্যার দায় সুকৌশলে এড়ানো সম্ভব।
তবে ইব্রাহিম তাদের হত্যার উদ্দেশ্যে জনশূন্য মরুভূমিতে ফেলে এলেও উক্ত মরুভূমিতে দূরাগত এক বাণিজ্য কাফেলার আগমনে ও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এ যাত্রায় তাঁরা প্রাণে বেঁচে যান। পরবর্তীতে হাজেরার সন্তান ইসমাইল সাবালক হয়ে ওঠেন এবং শিকারী ও তীরন্দাজ হিসেবে তার সুখ্যাতি আশেপাশের মরুগোত্রে ছড়িয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে ইব্রাহিম জানতে পারেন, তাঁর ফেলে আসা দাসী ও তার গর্ভজাত সন্তান ইসমাইল এখনও বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে। তখন তিনি ইসমাইলকে হত্যার লক্ষ্যে পুনরায় এক ফন্দি আঁটেন। নিজ সন্তান ইসমাইলকে নিজ হাতে জবাই করে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ইব্রাহিম। কিন্তু হত্যার উদ্দেশ্যে ইসমাইলের নিকট উপনীত হয়ে তিনি দেখতে পান, তাঁর সন্তান ইসমাইল আর আগের সেই ছোট্ট শিশু নেই। সে এখন সুঠাম দেহের অধিকারী শক্তিশালী তরুণ। তার সাথে বৃদ্ধ ইব্রাহিম হত্যার লড়াইয়ে কিছুতেই পেরে উঠবেন না। এই বিবেচনায় তিনি স্ত্রী সারাকে নিঃশঙ্ক করার মানসে নতুন এক উপাখ্যান মঞ্চস্থ করেন। সেই উপাখ্যানের নাম ‘দুম্বার রক্তে ইসমাইল বধ উপাখ্যান।’ এই উপাখ্যানের বিষয় - একটি নিরীহ দুম্বাকে জবাই করে জবাইকৃত দুম্বার রক্ত ঈসমাইলের জামায় মেখে সেই রক্তমাখা জামা নিয়ে গিয়ে স্ত্রী সারাকে প্রদর্শন করা। যেন স্ত্রী সারা তা দেখে এই মর্মে আশ্বস্ত হন, তার সকল দুশ্চিন্তার কারণ দাসীপুত্র ইসমাইল পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই। সে আর কখনই তার গর্ভজাত সন্তান ইসহাকের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দেখা দেবে না। ইব্রাহিম প্রণীত উপাখ্যানের এমন প্রতারণাপূর্ণ কৌশলে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় আজও সেই প্রতারণাপূর্ণ নাটকের সফল মঞ্চায়ন করে থাকে। আর ঘটা করে পশুবধের এমন নির্মমতাকে উৎসবে পর্যবসিত করতে এর নাম দেয়া হয়েছে ঈদ-উল-আযাহা বা কুরবানির ঈদ।
কুরবানির নামে মুমিন-মুসলমানগণ সাধারণত গরু-ছাগল, উট-দুম্বার ন্যায় নিরীহ পশু হত্যা করে থাকেন। তারা শুধু পশুবধ করেই ক্ষান্ত হন না; একইসাথে পশুবধের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অনুসন্ধান ও প্রতিষ্ঠার অপপ্রয়াস চালান। পশুবধের আধ্যাত্মিক মহিমা কীর্তনে তারা কতিপয় হাস্যকর ব্যাখ্যার অবতারণা করে থাকেন। তন্মধ্যে অন্যতম হাস্যকর ব্যাখ্যাটি হলো - মানুষের মাঝে নানারকম হিংস্রতা ও পাশবিকতা বিদ্যমান। আর মানব মনের সমস্ত পাশবিকতা ও হিংস্রতার মূলে রয়েছে বন-জঙ্গলে বাস করা বিভিন্ন হিংস্র জন্তু-জানোয়ার। যারা কিনা বিনা পাসপোর্ট-ভিসায় আধ্যাত্মিক পন্থায় নিরীহ মানুষের অন্তরে বাসা বেঁধে মানবিকতাসম্পন্ন মানুষকে পাশবিকতাসম্পন্ন মানুষে পরিণত করে। তাদের গবেষণায় আরও বেরিয়ে এসেছে, মানবজাতির সমগ্র পাশবিক আচরণের পেছনে কোনও মানুষ দায়ী নয়, মূলত দায়ী বনের হিংস্র পশু। তাই বুদ্ধিমান মানবজাতির অগ্রগামী সম্প্রদায় মুসলমানগণ নিজেদের অন্তরের পাশবতা দূরীকরণে মানুষকে জবাই না করে চতুষ্পদ পশু জবাই করে থাকেন। সহজভাবে বলতে গেলে - মনের পশু দূর করতে বনের পশু জবাই করে তারা মূলত বর্বরতার চূড়ান্ত স্তরে উপনীত হন। এই আচরণের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেন, মুসলিম সম্প্রদায় আত্মস্বীকৃত পশু। তাদের প্রত্যেকের অন্তরে বাঘ, সিংহ, হায়েনা, শিয়াল, কুকুর ও ভাল্লুকের মত হিংস্র পশু বিদ্যমান। সেই বিবেচনায় মুমিন-মুসলমানদের কর্তব্য হওয়া উচিত - নিজেদের অন্তরে বিদ্যমান বাঘ-সিংহ দূর করতে বাস্তবিক বাঘ-সিংহ কুরবানি দেয়া। অন্তরের শিয়াল-কুকুর দূর করতে বাস্তবিক শিয়াল-কুকুর কুরবানি দেয়া। অথচ চরম সুবিধাবাদী মুমিনগণ নিজেদের অন্তর থেকে হিংস্র পশু বাঘ-সিংহ, শিয়াল-কুকুর দূরীকরণে বাঘ-সিংহ, শিয়াল-কুকুর কুরবানি দেয়ার পরিবর্তে গরু, ছাগল, উট ও দুম্বার ন্যায় নিরীহ পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন। কারণ বাস্তবিক গরু-ছাগলের জন্য বাস্তবিক বাঘ-সিংহ সব সময় ভীতিকর হলেও মুমিন-মুসলমানের মনের বাঘ-সিংহ বাস্তবিক গরু-ছাগলের ভয়ে চরমভাবে ভীত থাকে। তাই মুমিনেরা মনের বাঘ তাড়াতে গোয়ালের গরু ব্যবহার করে থাকেন। এতে করে এটিই প্রতীয়মান হয়, সারা বিশ্বের মুমিন-মুসলমানগণ নিজেদের অন্তরে হিংস্র পশুর পরিবর্তে উট-দুম্বা ও গরু-ছাগল লালন করতেই বেশি আগ্রহী। তাই বিশ্বের সমগ্র মুমিন-মুসলমানের বোধবুদ্ধি গরু-ছাগল সুলভ চেতনায় আচ্ছন্ন। তারা চিন্তা ও চেতনায় শুধুই গরু-ছাগলকে অনুসরণ করে থাকেন।
তবে জীবনে একবার পশু কুরবানি করেও তারা মনের পশুর হাত থেকে চিরতরে নিস্তার পান না। কারণ বছর না ঘুরতেই গরু-ছাগলের চেয়েও নিরীহ মুমিন-মুসলমানের অন্তরে হিংস্র পশুসমূহ নতুনভাবে হানা দেয়। তারা চরম হিংস্রতায় মুমিনদের নাজুক অন্তর মুমিনদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দখল করে নেয়। তাই প্রতি বছরই মুমিনগণ নতুন নতুন বাস্তবিক পশু কুরবানির নামে হত্যা করে নিজেদের অন্তরে লালিত আধ্যাত্মিক পশু দূরীকরণের ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে থাকেন। মুসলমানদের মনের পশু দূরারোগ্য ব্যাধির চেয়েও ভয়ানক। আধুনিক যুগে যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে আরোগ্যলাভ সম্ভব হলেও মুমিন-মুসলমানগণ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নিজেদের মনের পশুর অত্যাচার থেকে কখনও নিস্তার পান না। মুসলিম সম্প্রদায়ের মনের পশু নিরাময় অযোগ্য ব্যাধি। এদিক থেকে নাস্তিকগণের অন্তর সকল প্রকার পশু থেকে মুক্ত। তাই তারা নির্লজ্জ মুমিনদের ন্যায় প্রতি বছরে মনের পশু নিধনের নামে বনের পশু হত্যার আয়োজন করে না। তারা এ জাতীয় মানসিক ব্যাধি থেকে পুরোপুরি মুক্ত। কারণ তারা নাস্তিক। বর্তমানে একজন নাস্তিক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ভূতপূর্ব ধার্মিক জীবনে আমি কখনত্ত মনের পশু দ্বারা আক্রান্ত না হলেও আল্লাহর ভাবনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। আল্লাহ আমার এতই প্রিয় বিষয় ছিল যে, সবসময় আমার মন আল্লাহর ভাবনায় নিবিষ্ট থাকত। তাই যে বছর আমি কুরবানি দিতে মনস্থির করলাম, সে বছর আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় বিষয় হিসেবে আল্লাহকেই বেছে নিলাম এবং হৃষ্টচিত্তে আল্লাহকেই কুরবানি দিলাম। এমন অনন্য কুরবানির মাধ্যমে আমি দুনিয়া ও আখেরাতের উভয় জিন্দেগিতে একজন খালেস নাস্তিক হিসেবে সম্মানজনক প্রমোশন অর্জন করলাম। একইসাথে অর্জিত হলো একটি পশুমুক্ত বিশুদ্ধ অন্তর। সেইদিন থেকে আজ অব্দি আমি মনের পশুমুক্ত একজন পরিপূর্ণ নাস্তিক। তাই যারা মনের পশুর হাত থেকে চিরতরে মুক্তি পেত চান, তারা শুধুশুধু সামান্য মূল্যের গরু-ছাগল কুরবানি না দিয়ে সবচেয়ে মূল্যবান ও আপনাদের সবচেয়ে প্রিয় আল্লাহকে কুরবানি দিয়ে খালেস নাস্তিক হিসেবে প্রমোশন গ্রহণ করুন। তাহলে আপনাদেরকে আর প্রতি বছর কাঁড়িকাঁড়ি অর্থ অপচয় করে নিরীহ পশু কুরবানি দিয়ে মনের পশু দূরীকরণের ব্যর্থ প্রয়াস চালাতে হবে না। এক লাফেই মন পরিষ্কারের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন