জ্যোতিষবিগ্যান
যখন বিশেষ কিছু জানা ছিল না, তখন আকাশ ছিল এক কল্পনার রাজত্ব, যেখানে ঠাকুর-দেবতারা বিচরণ করত। তখনকার অবস্থায় এ রকম ভাবা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। আজকে জানার পরিধি বহুদূর বিস্তৃত হওয়ায় আমরা জানি, আকাশ হলো গ্রহ-তারা ইত্যাদির বিচরণক্ষেত্র।| আকাশে যা আছে, তা বস্তু ও শক্তির নানা রূপ, যার গঠন ও চরিত্র সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এক বিশাল জ্ঞানভাণ্ডার গড়ে তুলেছেন। এ সবকিছুর সাথে ঠাকুর-দেবতা-ফেরেস্তার কোনোই সম্পর্ক নেই।
কিন্তু সমস্যা হলো, আকাশ সম্পর্কে আধুনিক জ্ঞানের পাশাপাশি সমাজের ধর্মীয় পরিমণ্ডলে অজ্ঞতার যুগের প্রাচীন ধারণাগুলো এমনভাবে শেকড় গেঁড়ে রয়েছে যে, বহু মানুষ গ্রহ-তারাদের দেবতাজ্ঞানে পুজো করে। এখানেই শেষ নয়। এখনও বহু মানুষ বিশ্বাস করে গ্রহ তারারা মানুষের ভাগ্যের উপর শুভ-অশুভ প্রভাব বিস্তার করে।
আকাশ সম্পর্কে আধুনিক ধারণা তাদের জানা আছে। সকলে এও জানে, চাঁদে মানুষ ঘুরে এসেছে এবং মহাকাশে অনুসন্ধানের জন্যে অনেকগুলো মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে। জানা আছে, কিন্তু সংস্কার ছাড়তে পারছে না।
এই সব ভ্রান্ত ধারণার অর্থনৈতিক ফলাফলটাও লক্ষ্য করার মতো। রাস্তাঘাটের আনাচে-কানাচে প্রণামীর বাক্স নিয়ে কত যে শনি মন্দির গজিয়ে উঠেছে! ভক্তের অভাব হচ্ছে না। আরও আছে। জ্যোতিষীর দল তাদের হোম-যজ্ঞ মাদুলি-আংটি নিয়ে তৈরি হয়ে আছে গ্রহ-তারাদের শান্ত (!) করার জন্য। এ এক উদ্ভট ব্যাপার।
জ্যোতিষীরা বোঝে, আজকের দিনে শুধু ঠাকুর-দেবতার তত্ত্ব দিয়ে মানুষ ফাঁসানো যাবে না। তাই তারা বিজ্ঞানের ভান করে তাদের বস্তাপচা তত্ত্বের ওপর আধুনিক বিজ্ঞানের প্রলেপ লাগাবার উদ্ভট চেষ্টা চালায়। সূর্য-গ্রহ-চাঁদের আকর্ষণ-বল মানুষের ভাগ্য নাকি টানতে পারে! আবার নানা রকমের রশ্মি, যেগুলো এমনিতে শরীরে ঢুকতে পারে না, সেগুলো তাদের দেওয়া আংটির মধ্যে দিয়ে শরীরে ঢুকে ভাগ্যকে মেরামত করে। তাদের মতে, ভাগ্য বলে কোনো একটা কিছু মানুষের শরীরের মধ্যে আছে। জ্যোতিষীরা এভাবে নতুন নতুন কুসংস্কারের আস্তাকুঁড় তৈরি করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন