মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫

ভণ্ড জাকির নায়েকের ভণ্ডামি: পর্ব এক

লিখেছেন ডঃ চ্যালেঞ্জ নায়েক

জাকির নায়েক, ভারতীয় বংশোদ্ভূত আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যক্তিত্ব, যাকে বতর্মান ইসলামের মূলশক্তি হিসাবে ভাবা হয়। সুন্দর কথা এবং মিথ্যার ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে ধর্মপ্রচারকারী হিসেবে তিনি বিখ্যাত। তবে সত্যের বিচারে তাকে বলা হয় বিশ্বের ভণ্ড নাম্বার ওয়ান।

তিনি তার ভণ্ডামি প্রতিষ্ঠা করতে নিজের লেকচারে যেসব খোঁড়া যুক্তি উপস্থাপন করেন এবং মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেন, তা এই সিরিজে পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হবে।

লক্ষ্য করুন আল কোরআনের সূরা লুক্বমান, আয়াত নং ৩৪:
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋِﻨﺪَﻩُ ﻋِﻠْﻢُ ﺍﻟﺴَّﺎﻋَﺔِ ﻭَﻳُﻨَﺰِّﻝُ ﺍﻟْﻐَﻴْﺚَ ﻭَﻳَﻌْﻠَﻢُ ﻣَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺣَﺎﻡِ
ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺪْﺭِﻱ ﻧَﻔْﺲٌ ﻣَّﺎﺫَﺍ ﺗَﻜْﺴِﺐُ ﻏَﺪًﺍ ﻭَﻣَﺎ ﺗَﺪْﺭِﻱ ﻧَﻔْﺲٌ ﺑِﺄَﻱِّ ﺃَﺭْﺽٍ
ﺗَﻤُﻮﺕُ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠِﻴﻢٌ ﺧَﺒِﻴﺮٌ
তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।
অর্থাৎ একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ জানেন, গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে, একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহই জানেন, কখন বৃষ্টি হবে, যা একমাত্র সর্বশক্তিমান ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে জানা সম্ভব নয়।

গর্ভের সন্তান কবে জন্মগ্রহণ করবে, গর্ভের সন্তান ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে এবং কবে, কোথায় বৃষ্টি হবে, এগুলো আমরা বিজ্ঞানের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আগে থেকেই জানতে পারি। পনরোশো বছর আগে আধুনিক বিজ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ মানুষের তৈরি কোরআনের ধারণাই ছিলো না যে, ভবিষ্যতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হবে। এতেই প্রমাণিত হয় যে, আল কোরআন একটা মিথ্যা ও ভুলের সংকলন এবং ভণ্ড জাকির সেই মিথ্যার দালাল।

ডা. জাকির নায়েক এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, এটি কুরআনের অনুবাদের ভুল, কারণ লিঙ্গ শব্দটি কুরআনে নেই। তাই আয়াতটিকে শিশুর লিঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না।

এখানে জাকির নায়েক তার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাঁড় করাতে গিয়ে আরবি ভাষা ও আরবী ব্যাকরণ সম্পর্কে মিথ্যে বলে চরম প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “উক্ত আয়াতে লিঙ্গ বোঝানোর মত কোনো আরবি শব্দ ব্যবহৃত হয়নি।” অথচ আয়াতটিতে এ স্থলে যে-শব্দ রয়েছে, তার অর্থ – “যা কিছু”; এটা লিঙ্গসহ সবদিককেই শামিল করে। কেননা এটা এমন সংযুক্ত-বিশেষ্য বা ইসমে মাওসূল, যা ব্যাপক অর্থ পরিগ্রহ করে। আর সংযোজনী বাক্য বা সিলা এর সাথে মিলে এখানে অর্থ হয়: “যা কিছু গর্ভাশয়সমূহে রয়েছে।” এক্ষেত্রে “মায়ের গর্ভে যা রয়েছে” কথাটি ব্যাপক অর্থ প্রকাশ করছে। এটা ছেলে বা মেয়ে হওয়াও বোঝায়, আবার ফর্সা বা কালো হওয়াও বোঝায়, তেমনি একটি সন্তান বা একাধিক জমজ সন্তানও বোঝাতে পারে অথবা তা সন্তান না হয়ে নিছক রক্তপিণ্ড বা মাংসখণ্ডের আকৃতিকেও বোঝাতে পারে। এসব বিবরণ হচ্ছে বিদ্যমান হাল হিসেবে।

'আলাক' শব্দের অর্থ নিয়ে এ এক চরম হাসির কৌতুক। সারা বিশ্বের সব মুসলিম অনুবাদক বলছে, "আলাক শব্দের অর্থ রক্তপিণ্ড" অথচ জোকার নায়েক বলছে "জোঁকের মত আটকে থাকা।" বুখারী ৩২০৮ নং হাদিসে বলা আছে, মাতৃগর্ভে ভ্রুণ আলাক বা জোকের মত আটকে থাকে ৪০ তম দিন থেকে ৮০ তম দিন। যা সম্পূর্ণ ভুল বা মিথ্যাচার। একটা ভ্রুণ সাধারণত প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই মাতৃগর্ভে আটকে যায়, অথচ মোহাম্মদ বলছেন ৪০ দিন; যা প্রমাণ করে মোহাম্মদের সাথে কোনো মহান শক্তিধর ছিলেন না। থাকলে মোহাম্মদের এত বড় ভুল তিনি কিছুতেই হতে দিতে পারেন না।

আচ্ছা, নাহয় মানলাম, জাকির নায়েকের কথাই সঠিক যে, আল্লাহ লিঙ্গের কথা বলেননি। তাহলে আল্লাহ গর্ভের ভেতর এমন কিসের কথা বলেছেন, যা মানুষের অগ্রিম জানার বাইরে? ভণ্ড জাকির তো এবার নিজের ভণ্ডামির ফাঁদে নিজেই আটকে গেছেন। এবার চলুন, তাকে তার নিজের পাতা ফাঁদে আরো একটু ভালো ভাবে আটকিয়ে ভণ্ডামির সাগরে ডোবাই।

"এটি কুরআনের অনুবাদের ভুল, কারণ লিঙ্গ শব্দটি কুরআনে নেই" - ভণ্ড জাকিরের এই কথাটি যদি সঠিক হয় তাহলে:

★ পৃথিবীর সবগুলো কোরআন অনুবাদ ভুল, যেটা হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য।

★ কোরআনের ভুল অনুবাদ থাকলে সেটার প্রতিবাদ হওয়ার কথা এবং দ্রুত সংশোধন করার কথা। যেহেতু ভুল অনুবাদ নিয়ে কোনো অভিযোগ ও প্রতিবাদ নেই, তার মানে সেটা সঠিক ছিলো এবং আছে।

★ আল্লাহ তো শুধুমাত্র গর্ভের সন্তান আর বৃষ্টির কথা অগ্রিম জানার মিথ্যা বাহাদুরি দেখাতে চায়, কিন্তুু আধুনিক বিজ্ঞান ব্যবহার করে এখন মানুষ শুধু অগ্রিম জানতে পারে, তা-ই নয়, সেক্স ছাড়াই টেস্ট টিউবে নিজের ইচ্ছেমতো ছেলে অথবা মেয়ে জন্ম দিয়ে দেখায়। নিজের ইচ্ছেমত যখন যেখানে খুশি নিজেরাই আকাশে বৃষ্টি নামায়। মানুষের শক্তি ও ক্ষমতা পাগল আল্লাহর চেয়ে বেশি। আল্লাহ আর আল কোরআনের পাঁচ পয়সা মূল্য নেই আধুনিক বাস্তবতার কাছে।

* মিয়া ভণ্ড জাকির, তুমি তো মিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার খুলছো। ভালো কথা। কিন্তুু কিসের রিসার্চ কর তুমি যে, কোরআনের ভুল অনুবাদ আছে জেনেও প্রতিবাদ কর না? কোন রিসার্চে সময় ব্যয় কর যে, একটা সঠিক কোরআন অনুবাদ বের করে দেখাতে পারো না? তোমার রিসার্চ যে শুধুমাত্র ভণ্ডামির নিত্যনতুন কৌশল, অযুহাত ও খোঁড়া যুক্তি তৈরি, সেটা অনেক আগেই প্রমাণ হয়ে গেছে। এখনো সময় আছে ভণ্ডামি ছেড়ে ভালো হয়ে যাও।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন