লিখেছেন জুলিয়াস সিজার
২৫ শে মার্চ গণহত্যার শুরুর আগে পাকিস্তানি জেনারেল নরপশু টিক্কা খান নির্দেশ দিয়েছিল, "বাঙালি মেয়েদেরকে ধর্ষণ করো, তাদের সম্পত্তি লুট করো, আর পুড়িয়ে দাও সবকিছু।"
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে ছিল যে দানব নিয়াজী, সেও সৈন্যদের যৌন উস্কানিমূলক ব্রিফিং দিয়ে ধর্ষণে উৎসাহিত করতো এভাবে: "গত রাতে তোমার অর্জন কী, শেরা(ব্যাঘ্র)?" চোখে শয়তানের দীপ্তি নিয়ে জিজ্ঞাসা সৈনিকদের করতো সে। অর্জন বলতে কয়জন নারীকে ধর্ষণ করেছে, সেটা বোঝাতো। নিয়াজী নির্লিপ্তভাবে ধর্ষণের পক্ষে যুক্তি দিতো, "সৈন্যরা বাস করবে, যুদ্ধ করবে এবং মরবে পূর্ব পাকিস্তানে আর যৌনক্ষুধা মেটাতে যাবে পশ্চিম পাকিস্তান, এটা তুমি আশা করতে পারো না। পারো?"
এটা ছিল বাঙালি মেয়েদের প্রতি পাকিস্তানিদের দৃষ্টিভঙ্গি। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নয়টি মাস পাকিস্তানিরা তাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখিয়েছে বিভীষিকাময় ধর্ষণের মাধ্যমে।
সমগ্র ঢাকা শহর থেকে শহর থেকে বালিকা, কিশোরী, যুবতী এমনকি মাঝবয়সী নারীদেরকে ধরে নিয়ে এসে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে জড়ো করা হয়। সাথে সাথে তাঁদের কাপড়, পোশাক খুলে নিয়ে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে উন্মত্ত পশুর মতো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সৈনিক থেকে অফিসার সকল পদবীর লোকেরা সাথে সাথে যার যাকে ইচ্ছা ধর্ষণ করতে শুরু করে। কোন মেয়ে প্রতিবাদ করলে তৎক্ষণাৎ তাদের যোনি এবং গুহ্যদ্বারের মধ্যে বন্দুক, বেয়নেট ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে তাঁদের দেহ ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। এসব দেখে আর বাকি মেয়েরা কথা বলার সাহস করে নি।
মেয়েদের ঠোঁট, বুকের স্তন, মাংস দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে নিতে শুরু করে তারা। অনেক মেয়েই ঠিক সেখানেই প্রাণ হারায়। পাকিস্তানিদের বর্বরতার সীমা পরিমাপ করা যায় না। একটা উদাহরণ দিই, "অনেক ১০-১২ বছর বয়সের মেয়েকে উপর্যুপরি ধর্ষণের কারণে মেয়েগুলো অধিকাংশই প্রায়ই প্রাণ যায় যায় অবস্থা হয়ে যায়। যখন পাকিস্তানি সৈন্যরা বুঝতে পারলো এই ছোট মেয়েগুলো আর সুস্থ হবে না এবং ভবিষ্যতে এদের আর ধর্ষণ করা যাবে না তখনি তারা ঐ মেয়েদের পা দুইদিকে টেনে দেহটাকে ছিঁড়ে দুইভাগ করে ফেলে।"
আর এখন গ্যালারিতে বাংলাদেশের মেয়েরা মুখে পাকিস্তানের পতাকা এঁকে নাচে। পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান দেয় দর্শকেরা। পাকিস্তানি সৈন্যরা মুখে মাইক্রোফোন নিয়ে বলে,"দর্শকদের সমর্থন দেখে মনে হচ্ছিলো যেন আমরা নিজেদের ঘরের মাটিতে খেলছি। বাংলাদেশ আমাদের সেকেন্ড হোম।" এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?
আরেকদল আসে ইতিহাস শেখাতে। এরা জামাত শিবিরের কাজিন - আমাদের বিপ্লবী বামাতি ভাইয়েরা। তাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে পাকিস্তানিদের ঘৃণা করা নয়! সব পাকিস্তানি এক নয়। তাহলে প্রশ্ন ওঠে: তো ৭১-এ দীর্ঘ নয় মাস বাঙালিদের ওপর এই নির্যাতন চালানোর সময় সাধারণ পাকিস্তানিদের প্রতিবাদ বা ভূমিকা কী ছিল? এখনকার পাকিস্তানিদের বাংলাদেশ এবং বাঙালিদের নিয়ে মন্তব্য কী? রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান কখনও ক্ষমা চেয়েছে কি? সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর পাকিস্তানের পার্লামেন্ট শোক প্রস্তাব পাশ করে।
সেই পাকিস্তান আর পাকিস্তানিদের জন্য এই কার্ল মার্ক্স আর লেনিনের মুখোশ পরা ভণ্ডদের প্রেম উপচিয়ে উপচিয়ে পড়ে। একটু খবর নিয়ে দেখেন, বাপ-দাদা কেউ না কেউ কট্টর জামাতি, আর তারা নিজেরাই কট্টর ধর্মান্ধ। শুধু বাম রাজনীতির একটা মুখোশ পরে বসে আছে প্রগতিশীলতার ভান ধরার জন্য। এটা রক্তে মিশে থাকা পাকিস্তান প্রেম।
নাটোর থেকে ভারত নিয়ে যাওয়ার সময় এক যুদ্ধবন্দী পাকিস্তানি সৈন্য চিৎকার করে করে বলছিলো, "হাম ফির আয়েঙ্গে, ফির আয়েঙ্গে।"
কতভাবেই না ফিরে আসা যায়। সশরীরে ফিরে আসতে হয় না। আসলেই তারা ফিরে এসেছে। ক্রিকেটপ্রেমের আড়ালে পাকিস্তান প্রেমের মধ্যে দিয়ে, উদারনীতির মাধ্যমে জামাত-শিবিরের মার্ক্সবাদী ফরম্যাট বামদের পাকিস্তান-প্রেমের মধ্যে দিয়ে, সাম্প্রদায়িকতার মধ্যে দিয়ে, উগ্র ধর্মান্ধতার মধ্যে দিয়ে, ধর্মরক্ষার প্রয়োজনে প্রগতিশীল মানুষ খুনের মধ্যে দিয়ে।
নিজে একটু কান পেতে শুনুন, পাকিস্তানি সৈন্যটির "হাম ফির আয়েঙ্গে.....আয়েঙ্গে" চিৎকার আপনি নিজেও শুনতে পাবেন। বর্তমান বাংলাদেশের মধ্যে অনুভব করতে পারবেন পাকিস্তানের উপস্থিতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন