আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভণ্ড জাকির নায়েকের ভণ্ডামি: পর্ব দুই (চতুর্থ অংশ)

লিখেছেন ডঃ চ্যালেঞ্জ নায়েক


জাকির নায়েক নির্লজ্জের মতো এই কাজটি করে এবং মিথ্যা বলে মানুষের সাথে প্রতারণা করে।

এই আয়াতে ইয়াজবাহুন অর্থ কক্ষপথে ভ্রমণ করা অথবা কোনো পথে বিচরণ করা বা ভ্রমণ করা। কিন্তু জাকির নায়েক ইয়াজবাহুন-এর মূল শব্দটি এনে এই শব্দটির অর্থ পরিবর্তন করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে। ইয়াজবাহুন শব্দটি সাবাহা শব্দটি থেকে আসুক আর না আসুক, এটা দিয়ে যে-অর্থটিকে প্রকাশ করা হয়েছে কুরআনে, অনুবাদের সময় সেই অর্থটিকেই অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। এখন ইয়াজবাহুন শব্দটি সাবাহা থেকে এসেছে, তাই সাবাহা শব্দটির যা অর্থ, ইয়াজবাহুন শব্দটিরও সে অর্থই হবে, সেটা দাবি করা রীতিমত হাস্যকর। হস্ত থেকে যদি হস্তী শব্দটি তৈরি হয়, তবুও হস্তী (হাতি) এবং হস্ত (হাত) এক অর্থে ব্যবহৃত হবে না কোনোদিনও। ঠিক তেমনি ইমপসিবল (impossible) শব্দটি এসেছে পসিবল (possible) শব্দটি থেকে। তাই বলে কি আমি দাবি করতে পারি যে, যেহেতু ইমপসিবল শব্দটি এসেছে পসিবল শব্দটি থেকে, তাই ইমপসিবল অর্থ সম্ভব। সেটা রীতিমত হাস্যকর শোনাবে। কারণ আমরা জানি, ইমপসিবল (অসম্ভব) এবং পসিবল (সম্ভব) শব্দ দুটো পরস্পর বিপরীত অর্থ বহন করে। আর তাই ইয়াজবাহুন-এর অর্থ সাবাহা শব্দটি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যাবে না। এক্ষেত্রে ইয়াজবাহুন শব্দটি সাবাহা শব্দটির অনুরূপ অর্থ প্রকাশ করলেও ইয়াজবাহুন শব্দটি দিয়ে যা বোঝায়, সেটাই ব্যবহার করতে হবে। অন্য বা ভিন্ন অর্থ এনে নতুন অর্থ করাটা হবে ভণ্ডামি বা প্রতারণা।

কিন্তু জাকির নায়েক সাবাহা শব্দটি এনেই ক্ষান্ত হয়নি, উপরন্তু সাবাহা শব্দটির অর্থকেও পরিবর্তন করে কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানানোর চেষ্টা করেছে সে। জাকির নায়েক বলেছে, ইয়াজবাহুন শব্দটি এসেছে মূল শব্দ সাবাহা থেকে। আর সাবাহা দিয়ে চলন্ত কোন কিছুর গতিকে বুঝানো হয়। তবুও জাকির নায়েক ধরা খেয়ে গেছে। কারণ ইয়াজবাহুন শব্দটির বদলে যদি সে সাবাহা শব্দটির অর্থকেও ব্যবহার করে, তবুও সূর্যের নিজ অক্ষের চার পাশে প্রদক্ষিণ করা বোঝাবে না। কারণ সাবাহা দিয়ে চলন্ত কিছুর গতিকে বোঝায়। অর্থাৎ সাবাহা দিয়ে সূর্যের চলন্ত অবস্থার গতিকে বোঝাবে। সূর্য যে পৃথিবীর চারপাশে গতিশীল সেটাই বোঝাবে। কারণ জাকির নায়েক নিজেই বলেছে যে, সাবাহা দিয়ে চলন্ত কিছুর গতিকে বোঝায়। অর্থাৎ সূর্যের চলমান অবস্থার গতিকে বোঝাবে; নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিণের কথা বোঝাবে না।

চালাকি করেও জাকির নায়েকের প্রতারণা ঢাকতে পারলো না জাকির সাহেব। জাকির নায়েক বলেছে, “যদি বলা হয়, কোনো মানুষ মাটির উপরে সাবাহা করছে, তার মানে এই নয় যে, সে মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। এর অর্থ সে হাঁটছে বা দৌড়াচ্ছে।” এই বাক্যটিতে জাকির নায়েকের চালাকিটা দেখার মতো বটে! সে নিজেই বলেছে যে, সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতিশীলতা। আর তাই যখন বলা হবে মানুষটি সাবাহা করছে, তখন এমনিতেই এর অর্থ হবে - মানুষটি গতিশীল আছে বা চলন্ত আছে। অর্থাৎ সে হাঁটছে বা দৌড়াচ্ছে। কারণ হাঁটা আর দৌড়ানোই হলো মানুষের ক্ষেত্রে চলন্ত কিছুর গতিশীলতা। মাটিতে গড়াগড়ি করা কোনো চলন্ত প্রক্রিয়া নয়। কারণ মাটিতে গড়াগড়ি করা মানুষের চলন্ত অবস্থা বোঝায় না। হাঁটা বা দৌড়ানো দিয়ে মানুষের চলন্ত অবস্থা বোঝানো হয়। কিন্তু জাকির নায়েক প্রতারণা করার জন্য বলছে, এখানে সাবাহা অর্থ মাটিতে গড়াগড়ি হবে না। যদি সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতিশীলতাই হয়, তবে সেটা এমনিতেই গড়াগড়ি খাওয়া বোঝাবে না। এর জন্য এই অবান্তর কথাটির আমদানী করার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু জাকির নায়েক এই অবান্তর কথাটিকে এজন্যই এখানে এনেছে, যেন তার প্রতারণা কেউ ধরতে না পারে।

এরপর জাকির নায়েক বলেছে, “যদি আমি বলি যে, একজন মানুষ পানিতে সাবাহা করছে; তার মানে এই নয় যে, সে ভেসে আছে। এটার অর্থ সে সাঁতার কাটছে।” এখানেও জাকির নায়েক প্রতারণামূলক কথার আমদানী করেছে। যদি সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতিই হয়, তবে পানিতে সাবাহা করার অর্থ এমনিতেই সাঁতার কাটা হয়। ভেসে থাকা হবে না; কারণ সাবাহা দিয়ে চলন্ত কিছুকে বোঝানো হয়। আর ভেসে থাকা মানে সেটা চলন্ত কিছুর গতিশীলতা নয়। তবে সাঁতার কাটা মানে চলন্ত কিছুর গতিশীলতা। আর তাই পানিতে সাবাহা করা মানে পানিতে সাঁতার কাটাই। কিন্তু এই কথাটাও জাকির নায়েক তার প্রতারণাকে বৈধ করার জন্য আমদানী করেছে।

এরপর জাকির নায়েক বলেছে, “একই ভাবে পবিত্র কুরআনে যখন বলা হচ্ছে 'ইয়াজবাহুন' যার মূল শব্দ সাবাহা, গ্রহ-নক্ষত্র সম্পর্কে তখন সেটা উড়ে যাওয়া বোঝায় না, নিজ অক্ষের চারদিকে প্রদক্ষিণ করা বোঝায়।” এখানে জাকির নায়েকের ভণ্ডামী বা প্রতারণাটা দেখার মতো। নিজেই সাবাহা'র অর্থ চলন্ত কিছুর গতিশীলতা বলে নিজেই এর অর্থকে ভিন্ন দিকে নিয়ে গেছে। কেন গ্রহ-নক্ষত্রের ক্ষেত্রে সাবাহা শব্দটির অর্থ বদলে যাবে? জাকির নায়েক তো বলেছে সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতি। তাহলে গ্রহ-নক্ষত্রের ক্ষেত্রে কেন চলন্ত গ্রহ-নক্ষত্রের গতিশীলতা হবে না? জাকির নায়েক সাবাহার অর্থ বলেছে চলন্ত কিছুর গতি অর্থাৎ কোন কিছুর গতিশীলতা। তাহলে কেন গ্রহ নক্ষত্রের গতিশীলতা বা চলমানতা না বুঝিয়ে নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিণ করা বোঝাবে? তাহলে ভুলে ভরা কুরআনকে বিজ্ঞানময় হিসেবে দেখানো যাবে, এই জন্য?

লক্ষ্য করুন, সাবাহা অর্থ চলন্ত কোন কিছুর গতি বা গতিশীলতা। তাহলে গ্রহ-নক্ষত্রের ক্ষেত্রে সাবাহা শব্দটির অর্থ এমনিতেই হবে গ্রহ-নক্ষত্রের পরিভ্রমণ বা ভ্রমণ বা চলমান থাকা। কিন্তু জাকির নায়েক এই স্বাভাবিক অর্থটিকে না নিয়ে তার সুবিধা অনুযায়ী ভিন্ন অর্থ নিচ্ছে: নিজ অক্ষের চারদিকে প্রদক্ষিণ। নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিণ বলা হলে এটি চলন্ত কিছুর গতিকে বোঝালো না। কারণ চলন্ত কিছু হতে হলে তাকে জায়গা বদলাতে হয়। অর্থাৎ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা বোঝাতে হবে। যেমনটি মাটিতে সাবাহ করা অর্থাৎ হাঁটা বা দৌড়ানো এবং পানিতে সাবাহা করা বা সাঁতার কাটা। কারণ হাটা বা দৌড়ানো অথবা সাঁতার কাটা দিয়ে চলন্ত কিছুর গতিকেই বোঝানো হয়। তবে গ্রহ-নক্ষত্রের ক্ষেত্রেও সাবাহা অর্থ গ্রহ-নক্ষত্রের পরিভ্রমণ বা বিচরণ অর্থই ব্যবহৃত হবে। তবেই সাবাহা অর্থ চলন্ত কিছুর গতিশীলতা অর্থটি সঠিক হবে।

কিন্তু জাকির নায়েক সেটা না করে নিজের মত করে সাবাহার অর্থকে নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিণ করা বলে চাপিয়ে দিচ্ছে। আর কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাচ্ছে। কারণ নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করা চলন্ত কিছু হলো না। একটা গাড়ির স্থির অবস্থায় চাকা ঘুরলেই সেটাকে চলন্ত বলা হয় না। সেই চাকা ঘোরাটা যখন গাড়িটিকে স্থান পরিবর্তন করাবে তখনই সেটা হবে চলন্ত অবস্থা। আর তাই গ্রহ-নক্ষত্রের নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিণ করা কোনো চলন্ত প্রক্রিয়া নয়। এটি একটি স্থির প্রক্রিয়া। কারণ নিজ অক্ষের চারপাশে প্রদক্ষিন করলেও গ্রহ-নক্ষত্র স্থান পরিবর্তন করবে না। কিন্তু গ্রহ-নক্ষত্রের বৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করা ব্যবহার করলেই কেবল এটি দিয়ে গতিশীলতা বা চলন্ত অবস্থা বোঝাবে।

তাই জাকির নায়েকের দাবীর মতো সাবাহা বা ইয়াজবাহুন দিয়ে কখনই নিজ অক্ষে প্রদক্ষিণ করা বোঝায় না। তাই কুরআনকে বিজ্ঞানময় বানাতে আয়াতের অর্থকে পরিবর্তন করে অযৌক্তিকভাবে নতুন অর্থ করলেই তাদের দাবির মতো করে কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে যাবে না। কুরআনের আসল অর্থ অনুযায়ী কুরআনের এই আয়াতটিতে ইয়াজবাহুন দিয়ে সূর্যের গতিশীলতা বুঝিয়েছে; নিজ অক্ষকে প্রদক্ষিন বোঝায়নি। আর এই গতি যে গ্যালাক্সির চারপাশে বৃত্তাকারে ভ্রমণ নয় বরং পূর্ব থেকে পশ্চিমে পৃথিবীকে পরিভ্রমন করা সেটা সেই হাদিসে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা আছে। আর তাই জাকির নায়েকের ভণ্ডামি অনুযায়ী এর অর্থ পরিবর্তন করলেই কুরআন বিজ্ঞানময় হয়ে গেলো না। বরং কুরআনের ভুল প্রমাণিত হলো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন