লিখেছেন পুতুল হক
ভাবছিলাম, ওয়াজ মেহফিলে যদি জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা না বলা হয়, বিধর্মীদের প্রতি বিষোদ্গার করে তাদের নিশ্চিহ্ন করার কথা না বলা হয়, এমনকি যদি মুসলমানদের বিভিন্ন দলগুলোর মধ্যে বিদ্বেষের প্রচারণা না করা হয়, তবে কেমন হবে সে ওয়াজ? জনাকয়েক বৃদ্ধ, অবসরপ্রাপ্ত, পঙ্গু লোক ছাড়া আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না সে ওয়াজে। সারারাত দূরের কথা, ঘন্টাখানেকও চলে কি না সে ওয়াজ, সন্দেহ আছে।
মুসলমান এমনিতেই একটা ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকে। তারাই সেরা, তাদের ধর্মই শ্রেষ্ঠ এবং একমাত্র সঠিক ধর্ম, দুনিয়ায় মাতব্বরি করার যোগ্যতা শুধু তারাই রাখে - এসব মুসলমানদের ইমানি বিশ্বাস। এই বিশ্বাসকে জাগিয়ে তোলার মত কথা শুনতে তারা ওয়াজে যায়। কে কতটা মোহাম্মদি আচরণ করে বেহেস্তের সেরা হুরের দখল পাবে, তার উদ্দীপনা পেতে ওয়াজে যায়। বিধর্মীদের সাথে দোস্তি নয়, তাদেরকে কতল করে কীভাবে বেহেস্ত কনফার্ম করা যাবে, সে কথা শুনতে ওয়াজে যায়। পর্দাহীন নারী শরীরের রসময় বর্ণনা শুনে অর্গাজম পেতে ওয়াজে যায়। নারী কোনো মানুষ নয়, কেবলই যৌনসামগ্রী, সে কথা শুনতে ওয়াজে যায়।
সেখানে তারা মোহাম্মদের ওপর মক্কার পৌত্তলিকদের করা কাফেরদের অত্যাচারের কাল্পনিক কাহিনী শুনে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে কাফের হত্যার কঠোর শপথ নিয়ে ঘরে ফেরে। সেখানে তারা শোনে, মোহাম্মদ কীভাবে কা'বার মূর্তি ভেঙেছিল। সেখানে তারা শোনে, শয়তান বেপর্দা নারীর রূপ ধরে আসে। মুসলমান স্ত্রী কত সামান্য আহারে, কত নির্মম প্রহারে স্বামীর সেবা করে, তার বর্ণনা শুনতে তারা ওয়াজে যায়। বিধর্মী মাত্রই ইসলামের শত্রু, কাজকর্ম বাদ দিয়ে তারা সারক্ষণ ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে, সেসব কথা শোনার জন্য তারা ওয়াজে যায়। ইসলাম কবুল না করার কারণে কাফেরের কবরের আজাব যে হুজুর মাটির ওপর থেকে শুনতে পায়, তার বর্ণনা শুনতে মুসলমান ওয়াজে যায়।
ইসলামের প্রয়োজনে ভাই ভাইয়ের বুকে ছুরি চালিয়ে আল্লাহ-নবীর প্রিয় হবে, বেহেস্তের বাগানে ঘুরে বেড়াবে। শরীরে বোমা বেঁধে কয়েকজন কাফেরসহ নিজেকে উড়িয়ে দেবে মুসলমান। এরপর কাফের দোজখের আগুনে জ্বলবে আর মুসলমান ‘শহীদ’ হয়ে বেহেস্তে হুর নিয়ে মেতে উঠবে। খুন আর ধর্ষণের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ইসলাম কায়েম করবে মুসলমান।
ওয়াজের মূল উদ্দীপনা এখানেই। এসব কিছু বাদ দিয়ে ওয়াজ হয় না। যদি হয়, সেখানে মুসলমানের আনন্দ হয় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন