লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
[ইসলামের ইতিহাসে "হুদাইবিয়া সন্ধি (চুক্তি)" এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সন্ধি পরবর্তী সময়ে কুরাইশ ও অন্যান্য অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যাবতীয় নৃশংসতার বৈধতার প্রয়োজনে মুহাম্মদ তাঁদের বিরুদ্ধে এই চুক্তিভঙ্গের অজুহাত হাজির করেন ও তাঁর আল্লাহর নামে সেই বিখ্যাত “৯:৫ -তরবারির আয়াত (The Verse of the Sword)” সহ সুরা তওবার আরও অনেক নৃশংস আদেশ জারি করেন। ইসলামকে জানতে হলে মুহাম্মদকে জানতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। তাই হুদাইবিয়া সন্ধির এই অধ্যায় থেকে শুরু করে সুরা-তওবা অধ্যায় পর্যন্ত প্রতিটি পর্বের আলোচনা শুরুর পূর্বে "শুরু করিতেছি আল্লাহর নামে"-এর অনুকরণে "যে মুহাম্মদ (সাঃ)-কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।" বাক্যটি যুক্ত করবো।]
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যায়েদ বিন হারিথা (অথবা আবু বকর) এর অধীনে একদল সৈন্য সহ 'বানু ফাযারাহ' গোত্রের ওপর যে-হামলাকারী দল পাঠিয়েছিলেন, সেই হামলা তারা কীভাবে সম্পন্ন করেছিলেন; কী অমানুষিক পাশবিকতায় তাঁর এই অনুসারীরা উম্মে কিরফা নামক এক অতি বৃদ্ধা মহিলাকে হত্যা করেছিলেন; কীভাবে তারা অন্যান্য বন্দীদের সাথে উম্মে কিরফার কন্যাকে ধরে নিয়ে এসে 'যৌনদাসী'-তে রূপান্তরিত করেছিলেন; মুহাম্মদের আগ্রাসী হামলায় ধৃত এই সুন্দরী রমণীটি 'গনিমতের মাল'-এর অংশ হিসাবে মুহাম্মদের কোন সাহাবীর (মুহাম্মদের জীবিত অবস্থায় দীক্ষিত তাঁর প্রত্যক্ষ অনুসারী) ভাগে পড়েছিল; অতি সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক মুক্ত মানুষের অবস্থান থেকে নিমেষেই যৌনদাসী রূপে পরিবর্তিত হওয়ার পর এই অসহায় নারীটির নব্য দাস-মালিক তার এই যৌনদাসীর বস্ত্র উন্মোচন সম্পন্ন করার পূর্বেই কেন তাঁকে মুহাম্মদের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন; সেই অনুসারীর কাছ থেকে এই যৌনদাসীটিকে গ্রহণ করে মুহাম্মদ তাঁকে তাঁর কোন আত্মীয়কে দান করেছিলেন - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
মুহাম্মদের প্রতিষ্ঠিত ইসলাম নামক আদর্শে উন্মুক্ত শক্তি প্রয়োগে অবিশ্বাসী জনপদের মুক্ত মানুষকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে এসে তাঁদেরকে দাস ও যৌনদাসীতে রূপান্তরিত করে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া, তারপর তাদেরকে ইচ্ছামত বিক্রি করা (পর্ব- ৯৩) অথবা দান করা (পর্ব-১০১ ও ১১০) সম্পূর্ণরূপে বৈধ!
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) মতে হিজরি ৬ সালের শাবানমাসে (যার শুরু হয়েছিল ডিসেম্বর ১৬, ৬২৭ সাল) মুহাম্মদের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা বানু আল-মুসতালিক গোত্রের লোকদের ওপর অতর্কিত নৃশংস আগ্রাসী হামলা চালান ও তাঁদের সম্পদ লুণ্ঠন করেন, তাঁদের কিছু লোককে খুন করেন ও বহু লোককে বন্দী করে ধরে এনে দাস ও যৌনদাসী রূপে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেন (পর্ব-৯৭-১০১); বানু আল-মুসতালিক হামলার তিন মাস পরে, হিজরি ৬ সালের জিলকদ মাসে (যার শুরু মার্চ ১৩, ৬২৮ সাল), মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর ৭০০- ১৪০০ সশস্ত্র অনুসারীকে সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করেন। যাত্রার প্রাক্কালে তিনি বারংবার ঘোষণা দেন যে, "তিনি ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা যাচ্ছেন, যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নয়।" মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা যখন মক্কার অদূরে হুদাইবিয়া নামক স্থানে পৌঁছান, তখন মক্কাবাসী কুরাইশরা তাদেরকে মক্কা প্রবেশে সক্রিয় বাধা প্রদান করেন। দুই পক্ষের মধ্যে কোন্দলের উপক্রম হয় ও এক পর্যায়ে মুহাম্মদ ও মক্কাবাসী কুরাইশদের মধ্যে এক ঐতিহাসিক সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হয়, ইসলামের ইতিহাসে যা "হুদাইবিয়া সন্ধি (চুক্তি)" নামে বিখ্যাত।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮) বর্ণনা: [1] [2] [3]
'অতঃপর [বানু আল-মুসতালিক হামলা] আল্লাহর নবী রমজান ও শওয়াল মাস মদিনায় অবস্থান করেন এবং জিলকদ মাসে যুদ্ধ করার অভিপ্রায় না নিয়ে ওমরা-হজ পালনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি তাঁর সাথে যোগ দেয়ার জন্য অন্যান্য আরব গোত্র ও প্রতিবেশী বেদুইনদের আহ্বান জানান এই ভয়ে যে, হয়তো কুরাইশরা তাঁর সশস্ত্র বিরোধিতা করবে অথবা তাঁর কাবা-শরীফ দর্শন প্রতিরোধ করবে; তারা আসলে তাইই করেছিল। বহু আরব গোত্র তাঁর সাথে যোগদানে বিরত থাকে ও তিনি মুহাজির ও আনসার এবং তাঁর সাথে যুক্ত কিছু আরব গোত্রদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। তিনি কুরবানির জন্য পশুদের সঙ্গে নেন ও তীর্থযাত্রীর পোশাক পরিধান করেন, যাতে সকলেই জানতে পারে যে যুদ্ধ করা তাঁর উদ্দেশ্য নয়, তাঁর উদ্দেশ্য হলো কাবা-শরীফ দর্শন ও তার শ্রদ্ধা করা।
মুহাম্মদ বিন মুসলিম বিন শিহাব আল-যুহরি হইতে < উরওয়া বিন আল-যুবাইয়ের হইতে < মিসওয়ার বিন মাখরামা ও মারওয়ান বিন আল-হাকাম আমাকে [মুহাম্মদ ইবনে ইশাক] জানিয়েছেন:
আল্লাহর নবী হুদাইবিয়া সন্ধি-বর্ষে (year of al-Hudaybiya) শান্তির উদ্দেশ্য কাবা-শরীফ দর্শন অভিপ্রায়ে গমন করেন, তিনি ৭০ টি উট কুরবানির জন্য সঙ্গে নেন। তাঁর সঙ্গে ছিল ৭০০ অনুসারী, যাতে একটি উট ১০ জন লোকের ভাগে পরে। আমি আরও যা শুনেছি তা হলো যাবির বিন আবদুল্লাহ বলতেন যে, "হুদাইবিয়া যাত্রায় আমরা ছিলাম ১৪০০ লোক।"’
- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।]
>>> মহাকালের পরিক্রমায় এক নির্দিষ্ট স্থান ও সময়ের ইতিহাস হলো সেই নির্দিষ্ট স্থান ও কালের পারিপার্শ্বিক অসংখ্য ধারাবাহিকঘটনাপরম্পরা ও কর্মকাণ্ডের সমষ্টি। এই ধারাবাহিক ঘটনাপরম্পরায় পূর্ববর্তী ঘটনাপ্রবাহের পরিণাম (consequence) পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ঘটনাপরম্পরার এই ধারাবাহিকতাকে উপেক্ষা করে কোনো বিশেষ সময়ের ইতিহাসের স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভব নয়; বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। সে কারণেই মুহাম্মদের তথাকথিত নবুয়ত পরবর্তী সময় থেকে হিজরত পূর্ববর্তী সময়ে মুহাম্মদের বাণী (পর্ব: ২৬) ও কর্মকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে হিজরত, নাখলা ও নাখলা-পূর্ববর্তী অভিযানের কারণ ও পর্যালোচনা সম্ভব নয়; নাখলা ও নাখলা পূর্ববর্তী অভিযানে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী নৃশংস কর্মকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে বদর যুদ্ধের কারণ ও পর্যালোচনা সম্ভব নয় এবং বদর যুদ্ধের ফলাফল ও বদর যুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে ওহুদ যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের নৃশংস কর্মকাণ্ডের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে ওহুদ যুদ্ধের কারণ ও পর্যালোচনা অসম্ভব।
নাখলা ও নাখলা পূর্ববর্তী অভিযানের (পর্ব: ২৮-২৯) পরিণাম হলো বদর যুদ্ধ (পর্ব: ৩০-৪৩), আর এই যুদ্ধে কুরাইশদের প্রতি মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের পাশবিক নৃশংসতার পরিণাম হলো ওহুদ যুদ্ধ (পর্ব: ৫৪-৭১); একই ভাবে, ওহুদ যুদ্ধের ফলাফল ও ওহুদ যুদ্ধ পরবর্তী সময়ের ঘটনাপরম্পরার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে বনি নাদির গোত্র উচ্ছেদের কারণ ও পর্যালোচনা সম্ভব নয়। বনি নাদির (ও বনি কেউনুকা) গোত্র উচ্ছেদ ও কুরাইশসহ অন্যান্য অবিশ্বাসী গোত্রের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের (পর্ব: ৫২-৭৫) পরিণাম হলো খন্দক যুদ্ধ (পর্ব: ৭৭-৮৬); ইসলামের ইতিহাসের এই একই ধারাবাহিকতার অংশ হিসাবে খন্দক যুদ্ধ পরিস্থিতি ও এই যুদ্ধের ফলাফল বিশ্লেষণ ব্যতিরেকে বনি কুরাইজা গণহত্যার কারণ ও তার পর্যালোচনা অসম্ভব (পর্ব- ৯৪)।
অনুরূপভাবে, হুদাইবিয়া সন্ধি সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা পেতে হলে মুহাম্মদের নবুয়ত পরবর্তী সময় থেকে হুদাইবিয়া সন্ধি পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাসের সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে, হুদাইবিয়া সন্ধি-পূর্ববর্তী গত এক বছরে বনি কুরাইজা গণহত্যা (মার্চ, ৬২৭ সাল) সহ অবিশ্বাসী গোত্র ও জনপদের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আরও চোদ্দটি অতর্কিত আগ্রাসী হামলা, খুন, জখম, লুণ্ঠন ও মুক্ত মানুষকে ধরে নিয়ে এসে দাস ও যৌনদাসী করণ এবং উম্মে কিরফা-র পাশবিক হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে হুদাইবিয়া সন্ধির কারণ ও বাস্তবতা অনুধাবন সম্ভব নয়। তাই উৎসাহী পাঠকদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ এই যে, ইসলাম-বিশ্বাসী অসংখ্য পণ্ডিত ও অপণ্ডিতদের "সুবিধাজনক উদ্ধৃতিযুক্ত" ভাষণ ও রচনায় বিভ্রান্ত হতে না চাইলে, তাঁরা যেন ন্যূনতম পক্ষে পূর্ববর্তী ঘটনা-প্রবাহের অতি সংক্ষেপ সারাংশ ও পর্যালোচনা সম্বলিত নিম্নবর্ণিত এই পর্বগুলোর দিকে আর একবার চোখ বুলিয়ে নেন:
তথাকথিত নবুয়ত প্রাপ্তির সময় থেকে বদর যুদ্ধ পর্যন্ত ঘটনা: পর্ব: ৪১-৪৩
হিজরতের সময় থেকে ওহুদ যুদ্ধ পর্যন্ত ঘটনা: পর্ব: ৬৯
নবুয়ত প্রাপ্তির সময় থেকে বনি কুরাইজা গণহত্যা পর্যন্ত ঘটনা: পর্ব- ৮৬ ও ৯৪
বনি কুরাইজা গণহত্যার সময় থেকে হুদাইবিয়া সন্ধি পর্যন্ত ঘটনা: পর্ব- ১০১ ও ১০৯
অত্যন্ত সংক্ষেপে, মুহাম্মদের নবুয়ত প্রাপ্তির সময় সময় থেকে হুদাইবিয়া সন্ধি পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাসের দিকে আর একবার নজর দেয়া যাক:
নবুয়ত পরবর্তী মুহাম্মদের মক্কার নবী জীবনের কর্মকাণ্ডের ইতিহাস:
৬১০ খ্রিষ্টাব্দের কোনো এক সময়ে হেরা পর্বতের গুহার ভেতর জিবরাইল ফেরেশতা মারফত মুহাম্মদের তথাকথিত নবুয়ত প্রাপ্তির ঘটনাটি ঘটে। এরপর প্রায় তিন বছর মুহাম্মদ তাঁর মতবাদ প্রচার করেন গোপনে, তারপর প্রকাশ্যে। মুহাম্মদ যখন প্রকাশ্যে তাঁর মতবাদ প্রচার শুরু করেন, কোনো কুরাইশই তাঁর প্রচারে কোনোরূপ বাধা প্রদান করেননি; কিন্তু মুহাম্মদ যখন তাঁর ধর্মপ্রচারের নামে কুরাইশদের পূজনীয় দেব-দেবী, কৃষ্টি-সভ্যতা ও পূর্ব-পুরুষদের অসম্মান করা শুরু করেন,
তখন তাঁরা তাঁদের ধর্মরক্ষা ও অসম্মানের প্রতিবাদে মুহাম্মদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।কুরাইশরা মুহাম্মদকে বারংবার এহেন গর্হিত কর্ম থেকে বিরত হওয়ার আহ্বান জানান, কিন্তু মুহাম্মদ তাঁদের কথায় কোনোই কর্ণপাত করেন না। তিনি তাঁর “আল্লাহর নামে (ওহি মারফত)” কুরাইশদের দেব-দেবী ও পূর্ব-পুরুষদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, অসম্মান, শাপ-অভিশাপ, পরোক্ষ হুমকি শাসানী ও ভীতি প্রদর্শন পুরোদমে চালিয়ে যান। মুহাম্মদের নিজ গোত্র হাশেমী বংশের গোত্রপ্রধান ছিলেন তাঁর চাচা আবু তালিব, তিনি ছিলেন মক্কার কুরাইশদের সকল সম্মানিত গোত্র প্রধানদের একজন। মুহাম্মদের এই সকল আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে সংক্ষুব্ধ কুরাইশরা এই “হাশেমী গোত্রপ্রধান ও মুহাম্মদের অভিভাবকের কাছে অন্ততঃপক্ষে দু'বার সম্মিলিতভাবে দেখা করে মুহাম্মদের এহেন গর্হিত কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান। আবু তালিব তাঁর ভাতিজা মুহাম্মদকে অনুরোধ করেন যেন মুহাম্মদ কুরাইশদের দেব-দেবী ও পূর্ব-পুরুষদের কোনোরূপ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, উপহাস ও অসম্মান না করে। মুহাম্মদ তাঁর চাচা আবু তালিবের এই অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন। ব্যর্থ আবু তালিব কুরাইশদের তাঁর এই ব্যর্থতার খবর জানিয়ে দেন। তিনি তাঁদেরকে আরও জানিয়ে দেন যে, মুহাম্মদের মতবাদ ও কর্মকাণ্ডে তিনি বিশ্বাস করেন না, কিন্তু মুহাম্মদের বিরুদ্ধে তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন না এবং গোত্রপ্রধান ও অভিভাবক হিসাবে তিনি মুহাম্মদকে যে কোনো আপদে ও বিপদে স্বগোত্রীয় নিরাপত্তা সুবিধা দান করবেন।
সেই অবস্থায় একান্ত বাধ্য হয়ে মুহাম্মদের অসহনশীল, তাচ্ছিল্য ও আক্রমণাত্মক মতবাদের বিরুদ্ধে কুরাইশরা কঠোর জনমত ও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ও তাঁরা তাঁদের ধর্মান্তরিত পরিবার সদস্য, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের বিভিন্ন উপায়ে পূর্ব-ধর্মে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। ফলে কুরাইশদের যেসব পরিবারের সদস্য, প্রিয়জন ও বন্ধু-বান্ধবরা মুহাম্মদের মতবাদে একদা দীক্ষিত হয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই আবার তাঁদের পূর্ব-ধর্মে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ পরিবার পরিজনদের সাথে যোগদান করতে থাকেন। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মুহাম্মদ তাঁর ধর্মরক্ষার খাতিরে নবুয়তের পঞ্চম বর্ষে (৬১৫ সাল) তাঁর অনুসারীদের তাঁদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার আদেশ জারি করেন।
সুদীর্ঘ সাত বছর কুরাইশরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এই সব কর্মকাণ্ড সহ্য করার পর, অতিষ্ঠ সংক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ কুরাইশরা অনন্যোপায় হয়ে মুহাম্মদের পৃষ্ঠপোষক হাশেমী গোত্রের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ “সামাজিক ও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা” জারি করেন; যা তাঁরা মুহাম্মদের তথাকথিত নবুয়ত প্রাপ্তির সপ্তম থেকে নবম বছর (৬১৬-৬১৯ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত (দু'–তিন বছর) চালু রাখেন। পরবর্তীতে মুহাম্মদের উপরি বর্ণিত গর্হিত কর্ম-তৎপরতা চালু থাকা সত্ত্বেও ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে এই কুরাইশরাই আবার দয়া-পরবশ হয়ে এই নিষেধাজ্ঞাটি বাতিল করেন। হিজরতের প্রায় তিন বছর আগে (৬১৯ সাল) সর্বাবস্থায় সাহায্য ও সহায়তাকারী স্ত্রী খাদিজা ও সগোত্রীয় নিরাপত্তা সুবিধা দানকারী চাচা আবু-তালিব অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে মৃত্যুবরণ করেন। আবু-তালিবের মৃত্যুর পর মুহাম্মদের চাচা আবু লাহাব হাশেমী বংশের গোত্রপ্রধান নিযুক্ত হন ও তিনি তাঁর ভাই আবু তালিবের মতই মুহাম্মদের ওপর স্বগোত্রীয় নিরাপত্তা সুবিধা জারি রাখেন। কিন্তু যখন আবু লাহাব জানতে পারেন, মুহাম্মদ প্রচার করছেন যে, তাঁর পিতা আবদ আল-মুত্তালিব (মুহাম্মদের দাদা)-এর স্থান হলো জাহান্নামের আগুন, তিনি মুহাম্মদের ওপর থেকেস্বগোত্রীয় নিরাপত্তা সুবিধা বাতিল করেন এবং প্রতিজ্ঞা করেন যে, যতদিন তিনি বেঁচে থাকবেন, ততদিন মুহাম্মদের এমনতর অসম্মান ও গর্হিত প্রচারণার বিরোধিতা করবেন। হাশেমী বংশের গোত্র-সুবিধা বাতিল হওয়ার পর কুরাইশরা মুহাম্মদের অসহনশীল, তাচ্ছিল্য ও আক্রমণাত্মক মতবাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর জনমত গড়ে তোলেন ও তাঁরা তাঁদের ধর্মান্তরিত পরিবার সদস্য, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের বিভিন্ন কলা-কৌশলের মাধ্যমে পূর্ব-ধর্মে ফিরিয়ে আনার জোর প্রচেষ্টা চালান। ফলে কুরাইশদের যেসব পরিবারের সদস্য ও প্রিয়জনরা মুহাম্মদের মতবাদে দীক্ষিত হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই আবার তাঁদের পূর্ব-ধর্মে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ পরিবার পরিজনদের সাথে যোগদান করতে থাকেন।
এমত পরিস্থিতিতে মক্কায় মুহাম্মদের ধর্ম-প্রচার প্রচণ্ড বাধাগ্রস্ত ও অনিশ্চিত হয়ে পরে। এই সংকটময় পরিস্থিতি সামাল দিতে মুহাম্মদ গোপনে প্রথমেই গমন করেন তায়েফে (৬১৯ সাল) ও তায়েফের গণ্যমান্য বিশিষ্ট নেতৃবর্গদের তিনি তাঁর নিজ বাসভূমি মক্কার কুরাইশদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেন, তাঁরা তাঁর প্রস্তাবে রাজি হননি। মুহাম্মদ তাঁর নবী-জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে সৌভাগ্যক্রমে মদিনা থেকে মক্কায় আগত কিছু তীর্থযাত্রীর সন্ধান পান, তাঁরা মুহাম্মদের মতবাদে আগ্রহ প্রদর্শন করেন। তায়েফের মতই এবারও মুহাম্মদ মক্কাবাসী কুরাইশদের বিরুদ্ধে এই বিদেশীদের সাথে গোপনে বৈঠক করেন (১ম ও ২য় আকাবা); তাঁরা মুহাম্মদকে মদিনায় হিজরত করার আহ্বান জানান এবং এ ব্যাপারে মুহাম্মদ ও তাঁর হিজরতকারী অনুসারীদের সর্বাত্মক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। জীবনের এই কঠিন মুহূর্তে মুহাম্মদ “তাঁর ধর্মরক্ষার চেষ্টায়” তাঁর অনুসারীদের মদিনায় হিজরত করার আদেশ জারি করেন এবং প্রলোভন, হুমকি ও এমনকি হত্যার আদেশ জারি করে মুহাম্মদ তাঁর অনিচ্ছুক অনুসারীদের মদিনায় হিজরত নিতে বাধ্য করেন। কিছু কাল পর তিনি নিজেও মদিনায় হিজরত করেন (সেপ্টেম্বর ২৪, ৬২২ সাল); কুরাইশরা নয়, মুহাম্মদ নিজ স্বার্থে তাঁর অনুসারীদের তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মদিনায় তাড়িয়ে নিয়ে আসেন।
হুদাইবিয়া সন্ধি পূর্ববর্তী সাড়ে পাঁচ বছরের মুহাম্মদের কর্মকাণ্ডের ইতিহাস:
মদিনায় স্বেচ্ছা-নির্বাসনের (সেপ্টেম্বর, ৬২২ সাল) পর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ছিলেন সম্পূর্ণভাবে মদিনাবাসী মুহাম্মদ অনুসারীদের (আনসার) স্বল্প আয়ের ওপর নির্ভরশীল! অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ! এমত পরিস্থিতিতে দলপতি মুহাম্মদের আদেশ ও নেতৃত্বে বাণিজ্য-ফেরত কুরাইশ কাফেলার ওপর রাতের অন্ধকারে অতর্কিত হামলা করে জোরপূর্বক তাদের মালামাল লুণ্ঠনের অভিযান শুরু করেন। পর পর সাতটি ডাকাতি চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর মুহাম্মদের আদেশে তাঁর অনুসারীরা প্রথম সফল আগ্রাসী অভিযান ও সহিংস যাত্রার গোড়াপত্তন করেন "নাখলা" নামক স্থানে (জানুয়ারি, ৬২৪ সাল); মুহাম্মদ ও কুরাইশদের মধ্যে পরবর্তী যাবতীয় সহিংস সংঘর্ষের আদি কারণ হলো নাখলায় এই বাণিজ্য কাফেলা ডাকাতি ও সহিংসতা। এরই ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় বদর যুদ্ধ। বদর যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা ৭২ জন কুরাইশকে নৃশংসভাবে খুন করেন (দু'জনকে বন্দী অবস্থায়); খুন করার পর তাঁরা সেই লাশগুলোকে অমানুষিক ঘৃণা ও অশ্রদ্ধায় বদর প্রান্তের এক নোংরা শুষ্ক গর্তে একে একে নিক্ষেপ করেন ও ৬৮ জনকে বন্দী করে মদিনায় ধরে নিয়ে আসেন। মাত্র পাঁচ জন ছাড়া বাকি ৬৩ জন বন্দীর প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা সর্বোচ্চ ৪০০০ দিরহাম মুক্তি-পণ আদায় করেন (পর্ব: ৩০-৪৩)।
বদর যুদ্ধের অপ্রত্যাশিত সাফল্যের পর মুহাম্মদ আরও বেশি বেপরোয়া ও নৃশংস হয়ে ওঠেন। তিনি পর পর মদিনার বেশ কয়েকটি মানুষকে খুনের আদেশ জারি করেন। তাঁর অনুসারীরা অমানুষিক নৃশংসতায় তাঁর সেই আদেশ কার্যকর করেন। মুহাম্মদ এই খুনিদের ভূয়সী প্রশংসা করেন ও উপাধিতে ভূষিত করেন। এই মানুষগুলোর অপরাধ ছিল এই যে, তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের "মৌখিক প্রতিবাদ ও সমালোচনা" করেছিলেন। একই সাথে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা বনি কেইনুকা ইহুদি গোত্রকে তাঁদের শত শত বছরের আবাসভূমি মদিনা থেকে উচ্ছেদ করেন ও তাঁদের সম্পত্তি লুট করেন (পর্ব: ৪৬-৫১); মুহাম্মদ বনি কেইনুকা গোত্রের সমস্ত লোককে খুন করতে চেয়েছিলেন. তাঁদের প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল আবদুল্লাহ বিন উবাই নামের এক অসীম সাহসী আদি মদিনাবাসীর কল্যানে।
বদর যুদ্ধের ঠিক এক বছর পরে (মার্চ, ৬২৫ সাল), বদর যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কুরাইশদের প্রতি যে-নৃশংসতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন, তারই ধারাবাহিকতায় মক্কাবাসী কুরাইশরা প্রতিশোধস্পৃহায় উহুদ যুদ্ধটি সংঘটিত করেন। ওহুদ যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের চরম পরাজয় ঘটে, সমবয়সী চাচা হামজা বিন আবদুল মুত্তালিব সহ ৭০ জন অনুসারী হন খুন ও তাঁর নবী-গৌরব হয় ধূলিস্যাৎ (পর্ব: ৫৪-৭১)!
ওহুদ যুদ্ধের এই চরম পরাজয়ের পর মুহাম্মদ ব্যর্থ হন পর পর আরও বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে (পর্ব: ৭২-৭৪); ওহুদ যুদ্ধের পর ছয়টি মাসের একের পর এক চরম বিপর্যয়ে নাস্তানাবুদ মুহাম্মদ পরিস্থিতি সামাল দিতে ও প্রতিপক্ষের কাছে তাঁর শক্তিমত্তার নিদর্শন পেশ ও তাঁর অনুসারীদের পার্থিব সুযোগ-সুবিধা (গণিমত) ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে, তিনি নিরপরাধ বনি নাদিরগোত্রকে “জিবরাইলের অজুহাতে" জোরপূর্বক বিতাড়িত করেন ও তাঁদের সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করেন। বনি কেইনুকা গোত্রের মত এবারেও মুহাম্মদ বনি নাদির গোত্রের সমস্ত লোককে খুন করতে চেয়েছিলেন! তাঁদের প্রাণ রক্ষা পেয়েছিল আবারও সেই একই আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের কল্যাণে (পর্ব: ৫২ ও ৭৫)।
হুদাইবিয়া সন্ধি পূর্ববর্তী এক বছরেরমুহাম্মদের কর্মকাণ্ডের ইতিহাস:
বনি নাদির গোত্র উচ্ছেদ ও অবিশ্বাসী জনপদের ওপর মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের উপর্যুপরি একের পর এক আগ্রাসী হামলার ধারাবাহিকতায় সংঘটিত হয় খন্দক যুদ্ধ (পর্ব:৭৭-৮৬); মুহাম্মদের অধিকাংশ অনুসারী খন্দক যুদ্ধে কীরূপ অসহায় ও ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন, ওহুদ যুদ্ধের মতই খন্দক যুদ্ধেও মুহাম্মদের বহু অনুসারী কীভাবে মুহাম্মদের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছিলেন, তাঁর প্রাণবন্ত ইতিহাস মুহাম্মদের স্বরচিত ব্যক্তিমানস জীবনীগ্রন্থ কুরান ও আদি বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের রচিত সিরাত ও হাদিসে বর্ণিত আছে।
এমত পরিস্থিতিতে অনুসারীদের কাছে নিজের শক্তিমত্তার প্রমাণ উপস্থাপন করতে, অনুসারীদের পার্থিব সুযোগ সুবিধার জোগান (গণিমত) নিশ্চিত করতে ও প্রয়োজনে ‘তিনি' কতটা নিষ্ঠুর হতে পারেন" এই বার্তা প্রতিপক্ষের কাছে পৌঁছে দিতে উচ্চাভিলাষী নৃশংস মুহাম্মদ 'জিবরাইলের অজুহাতে" হুদাইবিয়া সন্ধির এক বছর আগে বানু কুরাইজা গণহত্যা সংঘটিত করেন! মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা মদিনার বাজারে গর্ত খুঁড়ে সেই গর্ত-পাশে তাঁদের ৬০০-৯০০ জন নিরস্ত্র পুরুষ মানুষকে দলে দলে ধরে এনে এক এক করে জবাই করে খুন করেন ও তারপর তাঁদের কাটা-মুণ্ডু ও লাশ সেই গর্তে নিক্ষেপ করেন। আর যৌনাঙ্গের চুল গজানো শুরু হয়নি, এমন ছেলে-সন্তান ও সমস্ত কন্যা-সন্তান ও নারীদের বন্দী করে দাস ও যৌনদাসীতে রূপান্তরিত করেন ও পরবর্তীতে এই যৌনদাসীদের অনেককে নাজাদ অঞ্চলে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে করে তিনি ঘোড়া ও যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করেন (পর্ব: ৮৭-৯৫)।
বানু কুরাইজা গণহত্যার পর হুদাইবিয়া সন্ধি-পূর্ববর্তী সাত মাসে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কমপক্ষে চোদ্দটি আগ্রাসী হামলা চালান, যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো, মুহাম্মদের নেতৃত্বে হুদাইবিয়া সন্ধির মাত্র তিন মাস আগে (শাবান, হিজরি ৬ সাল) বানু আল-মুসতালিক হামলা ও যায়েদ বিন হারিথার (অথবা আবু বকর) অধীনে হুদাইবিয়া সন্ধির মাত্র দুই মাস আগে (রমজান, হিজরি ৬ সাল) বানু ফাযারাহ হামলা ও উম্মে কিরফা-র পাশবিক হত্যাকাণ্ড!
>> আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, ইসলামের ইতিহাসের এমনই এক প্রেক্ষাপটে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ তাঁর ৭০০-১৪০০ অনুসারীদের সঙ্গে নিয়ে মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করেন। যাত্রার প্রাক্কালে তিনি বারংবার ঘোষণা দেন যে, "তিনি ওমরা পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা যাচ্ছেন, যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নয়।" এমনই এক পরিস্থিতিতে গত সাড়ে পাঁচ বছরে অবিশ্বাসী জনপদের ওপর বহু আগ্রাসী ও নৃশংস হামলার নেতৃত্ব ও আদেশ দানকারী এই মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ও তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে কুরাইশদের কীরূপ আচরণ সভ্য মনুষ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে? নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে মুহাম্মদকে বিশ্বাস করে তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের সাদর আমন্ত্রণে মক্কায় ঢুকতে দেয়াই দেয়াই ছিল কুরাইশদের বুদ্ধিদীপ্ত যৌক্তিক পদক্ষেপ? নাকি নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের মক্কা প্রবেশে বাধা দেওয়াই ছিল কুরাইশসহ যে কোনো সভ্য সমাজের মানুষের এক স্বাভাবিক আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া?
পাঠক, ইতিহাসের এমনই এক প্রেক্ষাপটে যদি আপনারা কুরাইশদের মত একই অবস্থানে থাকতেন, তবে কি আপনারা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বিনা বাধায় মক্কায় ঢুকতে দিতেন?
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1]“সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৪৯৯-৫০০
ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ২৮১-২৮২