লিখেছেন জুলিয়াস সিজার
মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তক থেকে যখন অমুসলিম লেখকদের লেখা বাদ দেওয়া হলো, তখন মডারেট মুসলমানদের মন্তব্য: "মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা এমনিতেই সাম্প্রদায়িক হয়। এটা নিয়ে উচ্চবাচ্য করার কিছু নেই। মাদ্রাসা দিয়ে ইসলামকে বিবেচনা করবেন না।"
মাদ্রাসায় যখন বোমা তৈরির সরঞ্জাম পাওয়া যায়, বোমা তৈরির সময় অসাবধানতাবশত বোমা বিস্ফোরণে মাদ্রাসা ভস্ম হয়ে যায়, তখন মডারেট মুসলমানদের মন্তব্য: "মাদ্রাসার সাথে জড়িত মানুষেরা এমনিতেই উগ্রবাদের সাথে জড়িত থাকে। মাদ্রাসা দিয়ে ইসলামকে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়।"
মাদ্রাসার ছাত্ররা যখন দল বেঁধে সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়, ভাস্কর্য ভাঙে, মূর্তি ভাঙে, মাদ্রাসার বড় বড় আলেম আর হুজুরেরা যখন নারীদের নিয়ে একের পর এক অবমাননাকর বক্তব্য দিয়ে যায়, মাইকে নাস্তিক কতলের ঘোষণা দেয়, তখন মডারেট মুসলমানদের মন্তব্য: "কিছু মাদ্রাসার ছাত্র কিংবা মোল্লাদের কর্মকাণ্ডের কারণে ইসলাম নিয়ে মন্তব্য করতে যাবেন না।"
এখন আপনি মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের কথা বলুন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা কথা বলুন, মাদ্রাসার ছাত্রদেরকে ১৪০০ বছর আগের মরুভূমির ধুলাবালির শিক্ষা না দিয়ে, কুয়োর ব্যাঙ না বানিয়ে রেখে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার কথা বলুন, তখন মডারেট মুসলমানদের মন্তব্য: "ইয়ে মানে... মানে... উম... হুম... মানে ইয়ে.... হুম... উম মাদ্রাসা তো আছেই ধর্মীয় শিক্ষার জন্য। সেখানে যদি ধর্মই না পড়িয়ে বিজ্ঞান পড়ানো হয়, তাহলে তার নাম আর মাদ্রাসা দেওয়ারই বা দরকার কী!"
অন্য সব সময় মডারেট মুসলমানদের কাছে মাদ্রাসা খারাপ। শুধু বর্তমান যুগের সাথে তুলনায় অকেজো, অচল, বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের অনুকূল আবহাওয়া উপযোগী দেশের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক এই মাদ্রাসা শিক্ষা সংস্কারের কথা বলুন, তাতেই মডারেটরা ব্যথায় কোঁকাতে শুরু করবে। অথচ খোঁজ নিয়ে দেখুন, এই মডারেট মুসলমানদের পরিবারের কেউই মাদ্রাসায় পড়ে না। নিজের সন্তানটি একদম স্মার্ট। তবে তারা আবার এটাও আশা করবে যে, অন্যের সন্তান মাদ্রাসায় যাবে, কোরানে হাফেজ হবে, আলেম হবে আর ইসলাম রক্ষা করবে।
এই মডারেট মুসলমানেরাই সবচেয়ে বেশি ভীতিকর। এরা লাইফ স্টাইল চাইবে ইউরোপ-আমেরিকার মতো, আবার রাষ্ট্রধর্ম চাইবে ইসলাম! স্বপ্ন দেখে ইউরোপ-আমেরিকায় গিয়ে বসবাস করবে, আবার ওদিকে এটাও আশা করে যে, একদিন ইউরোপ-আমেরিকা শাসন করবে ইসলাম! এই মহাজ্ঞানী মডারেটদের মাথায় এটা ঢোকে না যে, ইসলাম যেখানে শাসন করে, সেখানে ইউরোপ-আমেরিকা কিংবা সভ্যতা হয় না। ইসলামে যেখানে শাসন করে, সেখানে হয় নারীদের বস্তাবন্দী করা, সেখানে দাবা খেলা হারাম, সেখানে ধর্ষণের জন্য নারীকে চারজন সাক্ষী যোগাড় করতে হয়, সেখানে ছবি দেখা ছবি আঁকা সবই হারাম। এই মডারেটেরা হাতকাটা ব্লাউজ পরে ফেইসবুকে ছবি আপলোড দিয়ে তারপর আবার ইসলাম প্রচার করতে বসবে, 'খুনি আস্তিক এবং তার হাতে নিহত নাস্তিক দুজনেই সমান অপরাধী।' একদিকে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে লিটনের ফ্ল্যাটে যাবে, আবার অন্যদিকে নাস্তিকেরা ইসলাম অবমাননা করছে জিকির তুলবে। ওপরে হিজাব নিজে টপস, তারপর স্টাইলিশ হিজাবী সেলফি দেবে। আবার বলবে, 'মুসলমান হয়ে পূজা/ক্রিসমাস/প্রবারণা পূর্ণিমার শুভেচ্ছা দেওয়া হারাম।' তাদের চোদ্দ গোষ্ঠীর কেউ মাদ্রাসাতে না গেলেও মাদ্রাসা নিয়ে কিছু বললেই তাদের অনুভূতিতে লেগে যায়।
(সর্বমোট সাতটি ছবি; সবগুলো দেখতে হলে মূল ছবি বা ছোট ছোট ছবিগুলোর ওপরে একের পর এক ক্লিক করতে হবে)
আগেও বলেছি, এখনও বলছি: এই মডারেট মুসলমানেরাই সবচেয়ে বড় অপরাধী। মাদ্রাসা, জঙ্গিবাদ, আল-কায়েদা, আইএস এরা তো স্রেফ সন্ত্রাসের মুখপাত্র মাত্র। এই মডারেট মুসলমানেরাই সন্ত্রাসের মূল যোগানদাতা, যারা মুখে আইএস ঘৃণা করে, আবার এটাও আশা করে, কোনো একদিন পৃথিবীব্যাপী খিলাফত হবে, জিহাদ হবে, ইসলাম কায়েম হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন