লিখেছেন ক্যাটম্যান
মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ও ফয়সল আরেফিন দীপন সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।
এই বিষয়টি মুহম্মদের আল-কুরআনে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নিম্নলিখিত ভাষায়:
মূসাকে আমি তিরিশ রাত-দিনের জন্য (সিনাই পর্বতের ওপর) ডাকলাম এবং পরে দশদিন আরো বাড়িয়ে দিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় পূর্ণ চল্লিশ দিন হয়ে গেলো। যাওয়ার সময় মূসা তার ভাই হারুনকে বললো: আমার অনুপস্থিতিতে তুমি আমার জাতির মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সঠিক কাজ করতে থাকবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথে চলবে না। [সূরা আল আরাফ ১৪২]
তবে বাইবেলের বর্ণনায় মূসার বড় ভাই আরোন ও মূসার ভগিনীপতি হুরের নাম উল্লেখ করা হলেও আল-কুরআনের বর্ণনায় শুধুমাত্র মূসার বড় ভাই হারুনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অবশেষে মূসা পর্বত চূড়ায় আরোহণ করলেন। কারণ ওখানে গিয়ে মূসা তার কল্পিত পরমেশ্বরের নিকট থেকে ইস্রায়েলের জনগণের উদ্দেশ্যে প্রণীত দশ আজ্ঞা ও তওরাতের লিখিত সংস্করণ নিয়ে আসবেন। কিন্তু পরমেশ্বর কী প্রক্রিয়ায় মূসাকে তওরাতের নির্দেশনাসমূহ প্রদান করবেন, তা আড়াল করতেই ইস্রায়েলের সত্তর জন প্রবীণ ব্যক্তিকে পাহাড়ের পাদদেশে অপেক্ষমান রেখে দীর্ঘ সময়ের জন্য আলাদা হয়ে যান মূসা। তবে তিনি একা গেলেন না, যাওয়ার সময় তার ভৃত্য যোশুয়াকে সাথে নিলেন। কারণ যোশুয়া মূসার যাবতীয় প্রতারণামূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মুখ্য সহায়কের ভূমিকা পালন করবে, যেন মূসা নির্বিঘ্নে পর্বত চূড়ায় অবস্থান করে পরমেশ্বরের নামে তওরাত প্রণয়ন করতে পারে। তার এমন গোপনীয় কার্যক্রম ইস্রায়েলের জনগণের নিকট যেন প্রকাশ হয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতেই যোশুয়া সংশ্লিষ্ট পর্বত চূড়ায় আরোহণের পথ পাহারায় নিয়োজিত থাকবে এবং মূসার আনুষঙ্গিক কাজে সহযোগিতা করবে। বাইবেলে তার পরের ঘটনা নিম্নরূপ:
তখন মোশী পর্বতে গিয়ে উঠলেন, আর মেঘটি পর্বতকে ঢেকে ফেলল। প্রভুর গৌরব সিনাই পর্বতের উপরে অধিষ্ঠান করল, আর ছ’ দিন ধরে মেঘটি তা ঢেকে রাখল। সপ্তম দিনে তিনি মেঘের মধ্য থেকে মোশীকে ডাকলেন। ইস্রায়েল সন্তানদের চোখে প্রভুর গৌরব পর্বত চূড়ায় গ্রাসকারী আগুনের মত প্রকাশ পাচ্ছিল। আর মোশী মেঘের মধ্যে প্রবেশ করে পর্বতে গিয়ে উঠলেন। মোশী চল্লিশদিন-চল্লিশরাত পর্বতের উপরে থাকলেন। [যাত্রাপুস্তক ২৪:১৫-১৮]
কিন্তু এভাবে মূসার চল্লিশ দিন চল্লিশ রাতের সন্দেহজনক লোকান্তর বাস মূসা ও তার পরমেশ্বরের প্রতি ইস্রায়েলের প্রবীণবর্গকে যথেষ্ট মাত্রায় সন্দিহান করে তোলে, একই সাথে মূসার বিরক্তিকর দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে ইস্রায়েলের প্রবীণবর্গ বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। অবশেষে তাঁরা মূসা ও মূসার পরমেশ্বরের প্রতি আস্থা হারিয়ে সোনার বাছুর-মূর্তি নির্মাণ করে তাকেই নিজেদের পথপ্রদর্শক দেবতা জ্ঞানে পূজা করতে শুরু করেন। যদি তাঁরা মূসার পরমেশ্বরকে সত্যিই দর্শন করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তেমন ঈশ্বরের প্রতি আস্থা হারিয়ে বিকল্প দেবতা হিসাবে সোনার বাছুর-মূর্তি নির্মাণ করে তার পূজায় লিপ্ত হতেন না। তাঁদের এমন বিদ্রোহ প্রমাণ করে, ইস্রায়েলের প্রবীণবর্গের নিকট মূসা তার কল্পিত পরমেশ্বরকে প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছেন। বাইবেলে সেই ঈশ্বর বিদ্রোহের বর্ণনা নিম্নরূপ:
পর্বত থেকে নেমে আসতে মোশীর দেরি হচ্ছে দেখে লোকেরা আরোনের কাছে একত্রে সমবেত হয়ে তাঁকে বলল, ‘ওঠ, আমাদের পুরোভাগে চলবেন এমন দেবতাকে আমাদের জন্য তৈরি কর, কেননা ওই যে মোশী মিশর দেশ থেকে আমাদের এখানে এনেছে, তার যে কী হল, তা আমরা জানি না। ’
আরোন তাদের বললেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কানের সোনার দুল খুলে আমার কাছে নিয়ে এসো।’ তাই সমস্ত লোক কান থেকে সোনার দুল খুলে আরোনের কাছে নিয়ে গেল। তাদের হাত থেকে সেইসব নিয়ে তিনি খোদকারের একটা যন্ত্র দিয়ে নকশা গঠন করে ঢালাই করা একটা বাছুর তৈরি করলেন; তখন লোকেরা বলে উঠল, ইস্রায়েল এ-ই তোমার পরমেশ্বর, যিনি মিশর দেশ থেকে তোমাকে এখানে এনেছেন! [যাত্রাপুস্তক ৩২: ১-৪]
ইস্রায়েলের জনগণের ওই ঈশ্বর বিদ্রোহের ঘটনা বাইবেল থেকে চুরি করে কুরআনের অন্তর্ভুক্ত করেছেন মুহম্মদ। যা কুরআনে নিম্নোক্ত ভাষায় বিবৃত হয়েছে:
যখন মূসার জন্য চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত করিয়াছিলাম, তাহার প্রস্থানের পর তোমরা তখন গোবৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করিয়াছিলে। আর তোমরা তো জালিম। [সূরা বাকারা ৫১]
এছাড়াও বলা হয়েছে:
মূসার অনুপস্থিতিতে তার জাতির লোকেরা নিজেদের অলঙ্কার দিয়ে বাছুরের মূর্তি তৈরী করলো। তার মুখ দিয়ে গরুর মত ‘হাম্বা’ রব বের হতো। তারা কি দেখতে পেতো না যে, ঐ বাছুর তাদের সাথে কথাও বলে না আর কোন ব্যাপারে তাদেরকে পথনির্দেশনাও দেয় না ? কিন্তু এরপরও তাকে মাবুদে পরিণত করলো। বস্তুত তারা ছিল বড়ই জালেম। [সূরা আরাফ ১৪৮]
আর একটি বিষয় লক্ষণীয়, বাইবেলে মূসার চল্লিশ দিন চল্লিশ রাতের প্রতারণামূলক অন্তর্ধানের যে-স্বীকৃতি মুহম্মদি কুরআনের সূরা বাকারা ৫১ ও সূরা আরাফ ১৪২ নম্বর আয়াতে দেয়া হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে চল্লিশ দিনের চিল্লার ফর্মুলা প্রণয়ন করেছে তাবলিগ জামাত, যে-তাবলিগ জামাত ১৯২৭ সালে ভারত উপমহাদেশে মুহম্মদ ইলিয়াস কান্দলভি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত তাবলিগ জামাত চল্লিশ দিনের চিল্লা পালন করে থাকে, যে-চিল্লায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে মুহম্মদের আহাম্মক অনুসারীগণ নিজেদের বাড়ি-ঘর, পরিবার-পরিজন ছেড়ে চল্লিশ দিনব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়িয়ে ও স্থানীয় মসজিদে অবস্থান করে ধর্ম প্রচার করে। যদি প্রতারক মূসা সিনাই পর্বতে পরমেশ্বরের সাথে সাক্ষাতের বাহানায় ইস্রায়েলের জনগণের উদ্দেশে চল্লিশ দিন রাতের প্রতারণার নাটক মঞ্চস্থ না করতেন, তাহলে আজ ভারত উপমহাদেশে তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠা হত না। আর সেই সাথে চর্চা হতো না তাবলিগ জামাত প্রবর্তিত চিল্লার। একজন প্রতারকের প্রতারণার রীতিকে আল্লাহর রাস্তায় সাধনার পরম পবিত্র রীতি মেনে যা চর্চা করে চলেছেন উপমহাদেশের কোটি কোটি অজ্ঞ, মূর্খ ও তথাকথিত শিক্ষিত মুসলিম জনগণ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন