লিখেছেন সূফি বরষণ
আপন আত্মীয়স্বজন, যাদের সাথে সামাজিক বা ধর্মীয়ভাবে বিবাহ নিষিদ্ধ, তাদের সাথে যৌনাচার করাকে ইনসেষ্ট বলা হয়। আপন মা, বাবা, ভাই, বোন, মামা, চাচা, খালা, ফুফু, নানা, দাদা, নানী, দাদী, ভাগ্না, ভাগ্নি, ভাতিজা, ভাতিজি, সৎ ভাই বোন, সৎ মা-বাবা (হিন্দু ও খ্রিষ্ট ধর্মে আপন চাচাতো ও মামাতো ভাই-বোন) - এদের সাথে বিবাহ ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ, তাই এদের সাথে কোনোরকম যৌন সম্পর্ক স্থাপনই ইনসেষ্ট হিসেবে গণ্য হয়। সাধারণত মাতাল বা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এমনটি ঘটে থাকে, এছাড়া চরম যৌন উত্তেজনাকর অবস্থায়, অল্পবয়সে একাকী এবং ঘনিষ্ঠভাবে বসবাস করার কারণেও এমনটি হয়ে থাকতে পারে।
ইলোরা-কোনার্ক, কামশাস্ত্র, কালিদাস, জয়দেব - এসবের কথা ছেড়েই দিচ্ছি, কিন্তু সাধারণ যাপনের খণ্ড চিত্রের মধ্যেই তো এর হাজারটা উদাহরণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এই যে ফি বছর দেখি, আমার বাড়ির সামনের মন্দিরে আট থেকে আশি, ঝুপড়ি থেকে স্কাই স্ক্র্যাপার, সমস্ত তলার সহোদরা-জননী-ভার্যাকুল ক্যামন নাজ-নজ্জার মাথা খেয়ে আখাম্বা শিবলিঙ্গে দুধ-জল-ফুল-বেলপাতা চড়িয়ে পুণ্যি অর্জন করছেন, তা কিসের জন্যে?
শিব ঠাকুরের লিঙ্গটিকে ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, সেটির চারপাশে বেড় দেওয়া বৃত্তাকার ব্যাপারটি একটি পরিস্ফুট যোনিদ্বার ভিন্ন কিছুই নয়, যার শাস্ত্রীয় নাম গৌরীপট্ট। অর্থাৎ মাতৃ-প্রকৃতির যোনি ভেদ করে থাকা অনাদি পুরুষের উত্থিত লিঙ্গ। তন্ত্রে যাকে বলে প্রকৃতি-পুরুষের মিলন, বোষ্টমরা যাকে কাব্য করে বলেন রাধা-কেষ্টর যুগল মিলন, তিব্বতের বজ্রযানী বৌদ্ধরা যাকে বলেন "মণি পদ্মে হুম" (মণি হচ্ছে লিঙ্গ, পদ্ম - যোনি), চৈনিক তাওইস্টরা যাকে বলেন ইন-ইয়াং, মারফতি-বাউলরা যাকে বলেন "মনের মানুষের সঙ্গে মিলন হওয়া।" নামে রূপে ভিন্ন ভিন্ন, অন্তিমে সবই এক ও অভিন্ন। বস্তুত প্রজনন ও সৃষ্টি সংক্রান্ত অবশ্যম্ভাবী কিছু প্রয়োজনীয়তা থেকে উদ্ভূত আদিম জাদু-বিশ্বাস থেকেই এই সমস্ত সামাজিক আচারের উৎপত্তি, যাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যৌনতা ও সৃষ্টির সম্পর্ক।
আর শুধু তান্ত্রিক বা বৌদ্ধই নয়, বৈদিক পূজা-আচারের মধ্যেও এই আদিম যৌনতা সংক্রান্ত প্রক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়। যেমন ধরুন, বৈদিক পুজো-আচ্চায় যে ঘট প্রতিস্থাপনের রীতি চালু আছে, তাও আসলে এই উৎপাদন ও প্রজনন সংক্রান্ত আদিম রীতিরই প্রকাশ মাত্র। পূর্ণ ঘট আসলে পূর্ণ গর্ভেরই মেটাফর, যা প্রতিস্থাপিত হয় "যন্ত্র" বা "মণ্ডল" নামক দুর্বোধ্য তান্ত্রিক সিম্বলের ওপর, আর এই যন্ত্র বা মণ্ডল আসলে যোনি, যা থেকে সমগ্র সৃষ্টির সূত্রপাত। যোনির ওপর পূর্ণঘট স্থাপন অর্থাৎ শূন্যযোনি থেকে পূর্ণ গর্ভ বা প্রজনন তথা উৎপাদনের দিকে যাত্রা। যেমন, দূর্গাপুজোর ঘট প্রতিস্থাপিত হয় সর্বতভদ্র মণ্ডলের ওপর।
গ্রীক পুরাণ...
গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী, দেবতা ও দেবীদের মধ্যে ছিল ইনস্টেস, অবাধ অসম যৌনাচার! জিউসের মেজো ভাই হেডিস বহুত কাহিনী করে যৌনলালসার চূড়ান্ত করে আপন ভাতিজি জিউসেরই মেয়ে পার্সিফোনকে বিয়ে করেন। দেবতা জিউস নিজেও নিজের সহোদর বোন ডিমিটার-এর সাথে অবৈধ প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েন এবং সে প্রণয়ের ফলেই দেবী পার্সিফোনের জন্ম হয়। তিনি ছিলেন পাতালপুরীর রাণী।
দেবতা জিউসের অসংখ্য স্ত্রী ছিল। এদের মধ্যে দুই সহোদর বোন ডিমিটার ও হেরাও ছিল। তিনি তার সহোদর বোন হেরার রূপে মুগ্ধ হয়ে তার সাথে সঙ্গম করার জোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত তিনি একটা কোকিলের রূপ ধারণ করে শীতার্ত হয়ে অসুস্থ অবস্থায় হেরার সামনে গিয়ে পড়েন। হেরা দয়াদ্রচিত্তে কোকিলটিকে হাতে তুলে নেন। গরম করে সুস্থ করার জন্য তার বুকের মধ্যে কোকিলটিকে চেপে ধরেন। এভাবে তিনি কোকিলটিকে উত্তপ্ত করে সুস্থ করার চেষ্টা করেন। এ সময়ে জিউস স্বরূপে ফিরে আসেন এবং বোন হেরাকে ধর্ষণ করেন। এ লজ্জা থেকে রক্ষা পাবার জন্য হেরা জিউসকে বিয়ে করেন।
মেটিস, লেটো, ইউরাইনোম, ডাইওনি, থেমিস এবং ম্নেমোসিন এঁরা ছিলেন জিউসের স্ত্রী। এতগুলি স্ত্রী বর্তমান থাকার পরেও দেবরাজ জিউস অসংখ্য স্বর্গের দেবী এমনকি মর্তের নারীদের সাথেও অনিয়ন্ত্রিত যৌনাচার করে গেছেন। জিউসের সন্তান ডাইওনিসাস, হেলেন অব ট্রয় এবং হারকিউলেস মর্তের সুন্দরীদের সাথে তাঁর অবৈধ প্রণয়ের ফসল। এ ছাড়াও তার আরও সন্তান ছিল, যেমন - অ্যাপোলো, এরিস, আরটিমিস, অ্যাথেনা, হেফায়েসটাস, হারমিস এবং আফ্রোদিতি। যে ভাবেই হোক, এরা সবাই কিন্তু দেবতা এবং এদের প্রত্যেকের নারী-ঘটিত যৌন কু-কর্মের তালিকাও বিশাল। এই হল দেবতাদের কাছ থেকে শেখা যৌননিয়ন্ত্রণের অবস্থা। দেবতারা যা কিছুই করুক না কেন, সর্বত্রই তাদের নারীভোগ চাই।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন