লিখেছেন জুলিয়াস সিজার
চট্টগ্রামের সাতকানিয়াতে চার জামায়াত শিবির কর্মী কোরআন শরীফ ছিঁড়ে ফেলেছে। একেবারে প্রমাণসহ হাতেনাতে ধরা পড়েছে তারা। ঘটনার দায়ও স্বীকার করেছে।
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, এ-দেশের মুসলমানদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগার জন্য মোক্ষম একটা খবর। কিন্তু কোনো মুসলমানেরই সেই চিরচেনা ধর্মানুভূতি আহত হলো না। দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও হলো না, মিছিল হলো না, মোল্লারা গাড়ি ভাঙচুর করলো না। পাজামার ভেতরে পাঞ্জাবি গুঁজে দিয়ে কাঠমোল্লারা খেমটা নাচ নাচলো না। কারণ কী?
কারণ কোরআন শরীফ যারা ছিঁড়েছে, তারা সবাই মুসলমান। মুসলমান যখন কোরআন ছিঁড়ে ফেলে, বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে, জায়নামাজে আগুন দেয়, তখন এ-দেশের মুসলমানদের ধর্মানুভূতি আহত হয় না। এ-দেশের মুসলমানদের ধর্মানুভূতি আহত হয় অমুসলিম কেউ কোরআন অবমাননা করেছে - এমন কোনো ভুয়া খবরে!
রামুতে হামলার আগে গুজব রটালো, 'উত্তম বড়ুয়া কোরআনের উপর ঠ্যাং তুলে দিয়ে ছবি তুলেছেন।' ব্যস, আর কী লাগে! সারা পৃথিবী রামু দেখতে পেলো।
বরিশালের চর কাউইয়াতে একটা সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এক হিন্দু ছেলের নামে ফেইসবুকে ফেইক একাউন্ট খুলে চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগ দলীয় সন্ত্রাসীরা ইসলাম অবমাননাকর কিছু পোস্ট করে উস্কানি দিয়েছিলো এলাকায়। আর অমনি শান্তির ধর্মের অনুসারীরা শান্তি বিতরণ করতে করতে করতে গ্রামটাকে লণ্ডভণ্ড করে ফেললো। কেউ একবার খোঁজখবরও নিয়ে দেখলো না, আসলে মূল ঘটনা কী!
এমন ভুয়া খবর ছড়িয়ে, কোরআন অবমাননার গুজব রটিয়ে, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা এ-দেশে ঘটানো হয়েছে অনেকবার। অথচ এবার সত্যি সত্যি কোরআন অবমাননার ঘটনা ঘটেছে, তাও বাঙালি মুসলমানেরা চুপ! কারণ? কারণ ঐ একটাই। যারা কোরআন ছিঁড়েছে, তারা মুসলমান। মুসলমান হয়ে মুসলমানের দোষ দেখতে নেই, ধরতে নেই!
সৌদি আরব ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে মুসলমান মারছে, ইয়েমেনের পাল্টা জবাবে সৌদি আরবে মুসলমান মরছে। এতো মুসলমানের লাশ পড়ছে কিন্তু কোনো প্রতিবাদ নেই। কেন? কারণ মুসলমানেরাই মুসলমান মারছে। অতএব চুপ থাকাই শ্রেয়।
শিয়ারা সুন্নীদের মারছে, সুন্নীরা শিয়াদের মারছে। মসজিদে বোমা মারছে। মসজিদ ভেঙে ধুলোবালি হয়ে যাচ্ছে। কারো অনুভূতিতে লাগছে না। অনুভূতিতে লাগে শুধু ভারতের বাবরি মসজিদের জন্য! মুসলমানেরা মসজিদ ভাঙলেও ভালো। এতে অনুভূতিতে লাগে না।
অনুভূতিতে লাগে শুধু 'কোনো অমুসলিম কোরআন অবমাননা করেছে' - এমন ভুয়া খবরে। আর নিজ ধর্মের কেউ কোরআন পোড়াক, জলে ভাসিয়ে দিক, মসজিদ ভেঙে পাউডার করে ফেলুক, তাতে কোনো সমস্যা নেই! অনুভূতি তখন ডিপ ফ্রিজে থাকে। সত্যি! বাঙালি মুসলমান না দেখলে বুঝতেই পারতাম না, সার্কাসের মতো ঐতিহ্য কেবলমাত্র এদের দ্বারাই ধরে রাখা সম্ভব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন