মঙ্গলবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সরকারী বিবৃতি

লিখেছেন শহীদুজ্জামান সরকার

১.
যখন আমি এক প্রকার ধর্ম অন্ধ ছিলাম সেই সময়ের কিছু কথা বলি।

স্কুল থেকে ফিরছি। তখনও আমার ভাগ্যে সাইকেলে যাতায়াত করার সুযোগ হয়নি। ঠিক সেই সময়টায় হেঁটে বাড়ি ফিরতে হতো! রাস্তার মধ্য একবার এক টুকরো আরবি লেখা কাগজ পড়ে ছিল। আরবি পড়তে না জানলেও ঠিক দেখে চিনেছি, এটা আল্লার পবিত্র কোনো বাণী। আমি কাগজটা কুড়িয়ে চুমু খেলাম। শুনেছিলাম, কোন এক মাতাল ব্যক্তি এই আরবি লেখাটা সযত্নে তুলে রাখার জন্য আল্লার প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়েছিল। তিনি আর কেউ নন, হয়রত মালেক।

সে যাই হোক, কাগজটা সযত্নে স্কুল ব্যাগে রেখে দিলাম। আর মনে কল্পনা করলাম, আমি অনেক মহৎ কোনো কাজ করেছি। এর বিনিময়ে আল্লা যে আমাকে কী দেবেন, আল্লাপাকই জানেন। আমি নাদান বাচ্চা, আমি কি আল্লার কথা জানতে পারি? আমি তো আর নবী মুহাম্মদ নই যে, আল্লা কী বলবে না বলবে, আমি সব জানবো।... এসব আজগুবি কথা ভাবছি আর বাসায় ফিরছি। প্রথমে এই কথাটা এসে মাকে বললাম, মা শুনে অনেক খুশি। আমিও খুশি - অনেক খুশি।

এই ঘটনার পর একদিন আমার এক মাদ্রাসা পড়ুয়া বড় ভাইকে কাগজটা দেখালাম। তিনি কাগজটা দেখে মুচকি হেসে বললেন, এটা তো ফ্যাকা বইয়ের একটা টুকরা! এই বইটা কী - জানতে চাইলাম। তিনি সহজ করে বললেন, এই কাগজটা হলো দাখিল ক্লাসের একটা বইয়ের কাগজের টুকরা, এটাতে মেয়েদের মাসিক সংক্রান্ত লেখা থাকে। মানে মেয়েদের কেমনে কী হয়।

এই কথাটা শুনার পর আমি কেমন যেন এক যৌন-উন্মাদনা পেলাম। কোথায় গেলো আমার আল্লাভীতি, টের পেলাম না। কেবলই ভাবতে লাগলাম, মেয়েদের যোনি দিয়ে কী জিনিস বের হয়, ইশ!... এসব আমার বয়সন্ধিকালের প্রথম দিকের কথা। 

২.
মা বলতো, "অজু ছাড়া কুরান ধরতে হয় না। আর যদি ধরিসও, তাহলে কুরানের ওজনের সমপরিমাণ যে কোনো সম্পদ দান করতে হবে।" তখন থেকেই ভাবনা: আসলে আছেটা কী এই বইটাতে? তবে প্রথম যেদিন এই বইটা বাংলায় পড়ি, তখন তো আমার চক্ষু চড়ক গাছ! এই বইটাতে হুমকি-ধামকি ছাড়া আর কিছুই নেই। মুসলিম ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি আক্রোশ ছাড়া কিছু নেই। বইটা পড়ে বুঝতে পারলাম, মুসলিম ছাড়া এই পৃথিবীতে অন্য কোনো জাতি থাকতে পারে না। তবে মার মুখে যে শুনি, সমস্ত মানুষ নাকি তিনার সৃষ্টি, তাহলে তিনি কেন তাদের ধ্বংস হতে এবং ধ্বংস করতে বলছেন? তিনি তো সবই পারেন, তাহলে তিনার যদি এতই ইচ্ছা থাকে সমস্ত মানুষকে মুসলিম বানানোর, তাহলে কেন তিনি এই সব কাজটা কুন বলে করে ফেলছেন না?

কুন বলে তিনি বিশ্বজগত সৃষ্টি করলেন, কুন বলে তিনি আকাশমণ্ডলী সৃষ্টি করলেন। সমস্ত কাজ করলেন সাত দিনে। আর এই সামান্য মানুষকে হেদায়েত দিতে পারছেন না? তিনি যদি না-ই পারেন, তাহলে মুহাম্মদ, ঈসা, মুসা, ইব্রাহিম, আদমকে হেদায়েত দিল কে? তিনিই তো বলেন, আমার রহমত ছাড়া কেউ কোনো কিছু করতে পারবে না। তাহলে কেন এত কষ্ট করে হেদায়েত-এর ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে?... কী জানি বাপু! সব তার লীলাখেলা। আমার বুঝে কাজ নেই। তবে এখনও পর্যন্ত তার লীলা কিন্তু চোখে পড়লো না।

৩.
ইন্টারনেট অনলাইনে এসে একটা জিনিস দেখলাম, অমুক ব্যক্তি তমুক ব্যক্তি কুরান অবমাননা করার জন্য মানুষ থেকে বানরে পরিণত হয়েছে, কারো মুখ বেঁকে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। (পরে জেনেছি, ফটোশপ করে নাকি বহু কিছু করা যায়। এমনকি আল্লার ছবিও আঁকা যায়।)

তবে এ পর্যন্ত কাউকে স্বচক্ষে এমনটি হতে দেখলাম না। এই তো সেদিন হেফাজত মৌল্লানারা কুরান পুড়ে ছারখার করে দিল, কই তাদের তো কিছু হলো না! ইউরোপ-আমেরিকার কত শত মানুষ কুরানের ওপর উঠে বসে থাকলো, তাদের তো কারো কিছু হলো না! এই তো দু'দিন আগে শিবির কর্মীরা কুরান ছিড়ে খণ্ড খণ্ড করে দিলো, কিছু হলো না! তাদের আল্লা কিছু না করলেও পুলিশে ধরে নিয়ে গেল।

ঠিক এই বিষয়টা আমার বোধে আসে না - আল্লা থাকতে এই কাজগুলো মানুষকে কেন করতে হয়? মসজিদ-কাবা-কুরান তো আল্লায় রক্ষা করে। কেন আপনারা শোনেননি, বাদশা আব্রাহা কাবা ধ্বংস করতে এলে আল্লা একদল পাখি পাঠিয়ে কাবা রক্ষা করেছিল?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন