রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কোরান, নাকি বাইবেল - কোনটি বেশি সহিংস

কোরান বাইবেলের চেয়ে কম সহিংস বলে একটি প্রচারণা শুরু হয়েছে অনলাইনে। মুছলিমরা উৎফুল্ল ও পুলকিত চিত্তে ভাবছে: "আমাদের ধর্মীয় কিতাব ওদেরটার চেয়ে কম খারাপ।" কিন্তু কোনও পবিত্র কিতাবে সহিংস কিংবা কুৎসিত বাণী থাকবে কেন - সেই সরল স্বাভাবিক প্রশ্নটি উদয় হচ্ছে না নির্বোধদের মাথায়।

এবং একটি কথা। ধরা যাক, একটি আধঘণ্টার মুভিতে তিনটি ধর্ষণদৃশ্য আছে, অন্য একটি মুভিতে আছে পাঁচটি, তবে সেই মুভিটি দেড় ঘণ্টার। সেক্ষেত্রে আধঘণ্টার মুভিটিকে দেড় ঘণ্টার মুভিটির চেয়ে কম খারাপ বলার দাবি কতোটা গ্রহণযোগ্য? অতএব খিয়াল কৈরা: বাইবেলের আয়তন কোরানের চেয়ে অনেক বেশি।

প্রাসঙ্গিক বিধায় গত ২৭ ডিসেম্বরে ধর্মকারীতে প্রকাশিত একটি পোস্ট আবার প্রকাশ করা হচ্ছে।
#
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালের সবচেয়ে সহিংস গ্রন্থ কোনটি, এ নিয়ে কোনও প্রতিযোগিতা হলে তাতে প্রথম দু'টি স্থান দখল করবে কোরান ও বাইবেল। সহিংসতার বিচারে আর কোনও পুস্তকই এদের নখের যোগ্যও নয়। ফলে তৃতীয় স্থান অধিকারী বইটি থাকবে এদের অ-নে-ক পেছনে।

কিন্তু কোরান ও বাইবেলের ভেতরে কোনটি স‌হিংসতর? প্রথম স্থান দখল করবে কোন কিতাব? নির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। এমনও সম্ভব, দুটোকেই যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করতে হতে পারে। 

এবার কিছু হিসেব দেখা যাক।

কোরানে সহিংস আয়াতের সংখ্যা ৫৩২ টি। বাইবেলে - ১৩২১ টি। তার মানে কি বাইবেল জিতে গেল? না। এখন দেখতে হবে শতকরা হিসেব। কারণ কোরানের চেয়ে বাইবেল ঢের বেশি ঢাউস।

কোরানে সর্বমোট আয়াত আছে ৬২৩৬ টি, আর বাইবেলে - ৩১,১০২ টি। অর্থাৎ কোরানে সহিংস আয়াতের সংখ্যা ৮.৫৩ শতাংশ এবং বাইবেলে - ৪.২৫ শতাংশ। দেখা যাচ্ছে, শতকরা হিসেবে কোরানে সহিংস আয়াতের সংখ্যা বাইবেলের দ্বিগুণ।

তার মানে কি কোরান জিতে গেল? সেটাও ঠিক বলা যাচ্ছে না। কারণ আলোচ্য পরিসংখ্যানে হিসেবে আনা হয়নি সহি‌ংসতার মাত্রা। এবং সেই মাত্রা নির্দিষ্টভাবে নিরূপণ করাও দুরূহ। যেমন, বাইবেল ও কোরানের নিচের দু'টি আয়াতের মধ্যে কোনটি বেশি সহিংস, তা নির্ধারণ করা কি সহজ?
[বাইবেল, গণনা পুস্তক ৩১:১৪-১৮] মোশি ১,০০০ সৈন্যের সেনাপতি এবং ১০০ সৈন্যের সেনাপতি, যারা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছিল তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। মোশি তাদের বললেন, “তোমরা কেন স্ত্রীলোকদের বেঁচে থাকতে দিয়েছো? পিযোরের বিলিয়মের ঘটনার সময় এই সব স্ত্রীলোকরাই প্রভুর কাছ থেকে ইস্রায়েলীয় পুরুষদের দূরে সরিয়ে দিয়েছিল এবং সেই জন্যই প্রভুর লোকদের মধ্যে মহামারী হয়েছিল। এখন সমস্ত মিদিয়নীয় ছেলেদের হত্যা করো। সমস্ত মিদিয়নীয় স্ত্রীলোকদের হত্যা করো যাদের কোনো না কোনো পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক ছিল। তুমি সমস্ত যুবতী মেয়েদের বাঁচতে দিতে পারো। কিন্তু কেবল তখনই যদি তাদের সঙ্গে কোনো পুরুষের যৌন সম্পর্ক না থেকে থাকে। 
[কোরান ৫:৩৩] যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। 
সহিংসতার প্রতিযোগিতায় যে-কিতাবটিই এগিয়ে থাকুক না কেন, সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার এই যে, প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকারী এই দুই সহিংস কিতাবে আস্থা রাখে ও বিশ্বাস করে এ জগতের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। 

এই নিবন্ধ অবলম্বনে  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন