লিখেছেন ক্যাটম্যান
মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয় ও ফয়সল আরেফিন দীপন সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।
মজার বিষয় হলো, বাইবেলে বর্ণিত মূসার পরমেশ্বর দর্শনের উক্ত গল্পটি মুহম্মদ তার প্রণীত আল-কুরআনে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যা নিম্নরূপ:
অতঃপর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলো এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন তখন সে আকূল আবেদন জানালো, ‘হে প্রভু! আমাকে দর্শনের শক্তি দাও, আমি তোমাকে দেখবো।’ তিনি বললেন: ‘তুমি আমাকে দেখতে পারো না। হ্যাঁ, সামনের পাহাড়ের দিকে তাকাও। সেটি যদি নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্যি তুমি আমাকে দেখতে পাবে।’ কাজেই তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো। সংজ্ঞা ফিরে পেয়ে মূসা বলল: ‘পাক-পবিত্র তোমার সত্তা। আমি তোমার কাছে তাওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম মুমিন।’ [সূরা আল আরাফ: ১৪৩]
উক্ত আয়াতে মুহম্মদের প্রতারণামূলক বর্ণনাটি বাইবেলের তুলনায় আরও এক কাঠি সরেস। কারণ মুহম্মদ ঈশ্বর-দর্শনের বিষয়টি অসম্ভব প্রমাণের জন্য উক্ত আয়াতে মূসার তুলনায় অধিক মাত্রায় রং চড়াতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাইবেলের ওপরোক্ত বর্ণনার ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে মুহম্মদও তার প্রণীত আল-কুরআনে প্রাসঙ্গিক আয়াত অন্তর্ভুক্ত করেছেন। বাইবেলীয় বর্ণনায় মূসার আবেদনের প্রেক্ষিতে পরমেশ্বর তাকে যা বললেন তা নিম্নরূপ:
প্রভু বললেন, ‘দেখ, আমি এক সন্ধি স্থাপন করি: তোমার গোটা জনগণের সামনে আমি এমন কতগুলো আশ্চর্য কর্মকীর্তি সাধন করব, যার মত কোন দেশ বা কোন জাতির মধ্যে কখনও সাধন করা হয়নি; যে সমস্ত লোকের মাঝে তুমি বসবাস করছ, তারা দেখবে প্রভু কিনা সাধন করতে পারেন, কেননা তোমার সঙ্গে আমি যা করতে যাচ্ছি, তা ভয়ঙ্কর! আমি আজ তোমাকে যা আজ্ঞা করি, তাতে বাধ্য হও। দেখ, আমি আমোরীয়, কানানীয়, হিত্তীয়, পেরিজীয়, হিব্বীয় ও যেবুসীয়কে তোমার সামনে থেকে তাড়িয়ে দেব। [যাত্রাপুস্তক ৩৪: ১০-১১]
বাইবেলের উক্ত বর্ণনার ধারাবাহিকতায় আল-কুরআনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে:
বললেন: হে মূসা! আমি সমস্ত লোকদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে তোমাকে নির্বাচিত করেছি, যেন আমার নবুওয়াতের দায়িত্ব পালন করতে পারো এবং আমার সাথে কথা বলতে পারো। কাজেই আমি তোমাকে যা কিছু দেই তা নিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। এরপর আমি মূসাকে কতকগুলো ফলকে জীবনের সকল বিভাগ সম্পর্কে উপদেশ এবং প্রত্যেকটি দিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট নির্দেশ লিখে দিলাম এবং তাকে বললাম: ‘এগুলো শক্ত হাতে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তোমার জাতিকে এর উত্তম তাৎপর্যের অনুসরণ করার হুকুম দাও। শীঘ্রই আমি তোমাদের দেখাবো ফাসেকদের গৃহ।’ [সূরা আল আরাফ: ১৪৪-১৪৫]
উক্ত আয়াতে দশ আজ্ঞাবিশিষ্ট প্রস্তরফলকের কথা বলা হয়েছে। সেই দশ আজ্ঞা, যার প্রতি মূসাকে বাধ্য হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে বাইবেলে; আর আল-কুরআনের উক্ত বর্ণনায় আজ্ঞাবিশিষ্ট প্রস্তরফলকগুলোকে শক্ত হাতে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার এবং মূসার জাতিকে উক্ত ফলক ও ফলকে লিপিবদ্ধ আজ্ঞাসমূহের উত্তম তাৎপর্য অনুসরণ করার হুকুম দেয়া হয়েছে।
আর বাইবেলের বর্ণনায় আমোরীয়, কানানীয়, হিত্তীয়, পেরিজীয়, হিব্বীয় ও যেবুসীয় বলে যে জাতিসমূহকে তাড়িয়ে দেয়ার কথা বলা হয়েছে, আল-কুরআনে উক্ত বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে ‘শীঘ্রই আমি তোমাদের দেখাবো ফাসেকদের গৃহ।’
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন