আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

রবিবার, ৮ মে, ২০১৬

লওহে মাহফুজের সন্ধানে: ক্যাটম্যান সিরিজ - ২১

লিখেছেন ক্যাটম্যান

মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়, ফয়সল আরেফিন দীপন ও নাজিমুদ্দিন সামাদ সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।


তবে উভয় বর্ণনায় পার্থক্যের মূলে একটি ঐতিহাসিক কারণ বিদ্যমান। আর সে কারণটি হলো, তওরাত প্রণয়নকালে পারলৌকিক জীবন অর্থাৎ মৃত্যুপরবর্তী জীবনের কোনও ধারণা মূসার ছিল না। তাই তার প্রণীত তওরাতে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের কোনো ধারণা স্থান পায়নি। প্রাচীন পারস্যবাসীর অগ্নিউপাসনামূলক ধর্ম জরাথ্রুস্টবাদ-এ মানব-সাধারণের মৃত্যুপরবর্তী জীবন বা পুনরুত্থান ধারণার প্রথম উৎপত্তি হয়।

জরাথ্রুস্টবাদ হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম একেশ্বরবাদী ধর্ম; প্রাচীন পারস্যে যা আনুমানিক ৩৫০০ বছর পূর্বে নবী জরাথ্রুস্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অপরদিকে প্রতিষ্ঠাকালের বিবেচনায় ইহুদি ধর্ম জরাথ্রুস্টবাদ প্রতিষ্ঠার প্রায় সমসাময়িক হলেও মূসার তওরাতে জরাথ্রুস্টিয় পারলৌকিক জীবন বা পুনরুত্থান ধারণা সন্নিবেশিত হয়নি। তবে মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক শতাব্দী ব্যাপী পারসীক শাসনের ফলে ইহুদি জনগোষ্ঠী জরাথ্রুস্টিয় ধর্মমত ও পুনরুত্থান ধারণার সংস্পর্শে আসে। বিশেষত ৫৮৬ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে জেরুজালেমে ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রথম উপাসনালয় ধ্বংসের পর থেকে অথবা দ্বিতীয় উপাসনালয় প্রতিষ্ঠার সূচনা কাল থেকে তৎকালীন ইহুদি ধর্মীয় নেতৃত্ব নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের অনুঘটক হিসাবে পুনরুত্থানমূলক চিন্তাভাবনা চর্চাকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উৎসাহিত করেন, যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তীকালে ইহুদি ধর্মে পারলৌকিক জীবনের ধারণা কিছুটা মাত্রায় প্রবিষ্ট হলেও সামগ্রিক বিবেচনায় ইহুদি ধর্মে মৃত্যু-পরবর্তী জীবন বা পারলৌকিক জীবনের ধারণা উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করে না। 

আর ইহুদি ধর্মে জরাথ্রুস্টিয় পুনরুত্থান-ভাবনা অতি সামান্য মাত্রায় প্রভাব ফেললেও ইহুদি ধর্মের উপজাত খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্মে তা ব্যাপক মাত্রায় প্রভাববিস্তারে সক্ষম হয়। সে কারণে খ্রিষ্ট ও ইসলাম ধর্মে যাবতীয় ইহলৌকিক সমস্যার বিপরীতে ইহলৌকিক সমাধানের ব্যবস্থা না থাকলেও পারলৌকিক সমাধানের ব্যবস্থা রয়েছে। তাই সুচতুর মুহম্মদ মানবজাতিকে ইহলৌকিক জীবনে ঈশ্বর-দর্শনের প্রতিশ্রুতি প্রদান না করে পারলৌকিক জীবনে শর্তসাপেক্ষে ঈশ্বর-দর্শনের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। অথচ পুনরুত্থান-ভাবনা-অজ্ঞ মূসা ইস্রায়েলের জনগণের নিকট স্বকপোলকল্পিত পরমেশ্বরকে সুকৌশলী পন্থায় প্রদর্শনে পুনঃপুনঃ উদ্যোগ গ্রহণ করে ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে ঈশ্বর-দর্শন বা ঈশ্বর-প্রদর্শনের ন্যায় প্রতারণামূলক প্রতিশ্রুতি প্রদানে সক্ষম হননি। বরং ঈশ্বর-প্রদর্শনের উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ায় মূসা রণেভঙ্গ দেন। আর সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে মূসার তওরাতে মৃত্যুর পরে ঈশ্বর-দর্শনের নিশ্চয়তা প্রদান না করে বরং ঈশ্বর-দর্শনের কারণে মৃত্যুর হুমকি প্রদান করা হয়েছে।

তবে বাইবেল, আল-কুরআন ও মুহম্মদি হাদিসের বর্ণনা পারম্পর্যে সামান্য পার্থক্য থাকলেও একটি বিষয় সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, মুহম্মদের প্রণীত আল-কুরআন ও ব্যক্ত হাদিসে বাইবেলের অপরিসীম প্রভাব বিদ্যমান। একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আলোচ্য হাদিসে কুদসিতে আল-কুরআনে বর্ণিত সূরা আ‘রাফ’র ১৪৩ নম্বর আয়াতের অংশবিশেষ ধার করে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের সম্প্রসারিত ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। আলোচ্য আয়াতটির অংশবিশেষ নিম্নরূপ:
তিনি বললেন: ‘তুমি আমাকে দেখতে পারো না। হ্যাঁ, সামনের পাহাড়ের দিকে তাকাও। সেটি যদি নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারে তাহলে অবশ্যি তুমি আমাকে দেখতে পাবে।’ কাজেই তার রব যখন পাহাড়ে জ্যোতি প্রকাশ করলেন, তখন তা তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিল এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে গেলো।
উক্ত আয়াতের প্রারম্ভিক বর্ণনার সাথে আলোচ্য হাদিসে কুদসির প্রারম্ভিক বর্ণনার যথেষ্ট মিল রয়েছে। যেমন উক্ত হাদিসের প্রারম্ভে বর্ণিত হয়েছে:
আল্লাহ্ তা’আলা বলিয়াছেন, “হে মূসা! তুমি কখনো আমাকে দেখিবে না।”
কিন্তু আলোচ্য আয়াতে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের সম্ভাব্যতা জ্ঞাপন না করে বরং অসম্ভাব্যতা জ্ঞাপন করা হয়েছে। কারণ আয়াতটিতে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের জন্য একটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। শর্তটি হলো, সামনের পাহাড়ে ঈশ্বরের জ্যোতি আপতনের পরেও যদি পাহাড়টি বিদ্যমান দেখতে পান মূসা, তাহলে তিনি ঈশ্বরকে দেখতে সমর্থ হবেন। কিন্তু আয়াতের বর্ণনায় আমরা দেখতে পাই, ঈশ্বরের জ্যোতি আপতিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট পাহাড়টি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় এবং মূসা সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন। আয়াতটির এরূপ বর্ণনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অসম্ভাব্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও আলোচ্য আয়াতটি বাইবেলে বর্ণিত ঘটনার অতিরঞ্জিত নকল। এ বিষয়ে বাইবেলের বর্ণনাটি নিম্নরূপ:
প্রভু বলে চললেন, ‘দেখ, আমার কাছাকাছি এই এক জায়গা আছে; তুমি ওই শৈলের উপরে দাঁড়াও; আর আমার গৌরব যখন তোমার সামনে দিয়ে যাবে, আমি তোমাকে শৈলের এক ফাটলে রাখব ও আমার যাওয়াটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার হাত দিয়ে তোমাকে ঢেকে রাখব। পরে আমি হাত উঠিয়ে নেব, আর তুমি আমার পিঠ দেখতে পাবে। কিন্তু আমার মুখমণ্ডল, না, তা দেখা যাবে না।’ [যাত্রাপুস্তক ৩৩: ২১-২৩]
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন