লিখেছেন ক্যাটম্যান
মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়, ফয়সল আরেফিন দীপন ও নাজিমুদ্দিন সামাদ সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০ > পর্ব ২১ > পর্ব ২২
হঠাৎ দেখি আমার রব আমার সামনে সর্বোত্তম আকৃতিতে।আল-হাদিসের সুবিধাবাদী ভাষ্যকারগণ ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের মুহম্মদি স্বীকারোক্তিকে অস্বীকার করে বিষয়টিকে মুহম্মদের তন্দ্রায় বা স্বপ্নঘোরে ঈশ্বর-দর্শনের স্বীকারোক্তি বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। কারণ হাদিসটির বর্ণনায় তন্দ্রার প্রসঙ্গ এসেছে। তবে তন্দ্রার প্রসঙ্গ বর্ণিত হলেও স্বপ্নের প্রসঙ্গ হাদিসটির কোথাও বর্ণিত হয়নি। তাই তাদের তেমন প্রয়াস ধোপে টিকবে না। তাছাড়া মুহম্মদ স্বকপোলকল্পিত ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অভিজ্ঞতাটি নিখাদ প্রমাণ করতে আলোচ্য হাদিসে কিছু জীবন্ত অনুভূতিও ব্যক্ত করেছেন, যেমন:
আমি দেখলাম তিনি (আল্লাহ) নিজ হাতের তালু আমার ঘাড়ের ওপর রাখলেন, এমনকি আমি তার আঙ্গুলের শীতলতা আমার বুকের মধ্যে অনুভব করেছি।অর্থাৎ মুহম্মদের ঘাড়ে ধরে আল্লাহ বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি বাস্তবিকই মুহম্মদের সামনে উপস্থিত। শুধু তাই নয়, মুহম্মদ তার বুকের মধ্যে আল্লাহর হস্তস্থিত আঙ্গুলের শীতলতাও অনুভব করেছেন।
তবে মুহম্মদ সেই রাতে নিজ ঘাড়ে যৌনসঙ্গমে রত কোনো নারীর হাতের তালু ও আঙ্গুলের স্পর্শকে স্বকপোলকল্পিত ঈশ্বরের হাতের তালু ও আঙ্গুলের স্পর্শ বলে চালিয়ে দিয়েছেন কি না, এ বিষয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। কারণ মুহম্মদের ছিল একাধিক স্ত্রী ও অসংখ্য যৌনদাসী, যাদের সাথে দিবারাত্রী যৌনসংগমে লিপ্ত থাকাটা মুহম্মদের জন্য ছিল পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায়ের চেয়েও অতীব গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের সামিল। হয়ত তেমনই কোনো যৌন-ইবাদতের রাতে যৌনসঙ্গমে রত কোনো নারীর হাতের তালু ও আঙ্গুলের স্পর্শ নিজের ঘাড়ে অনুভব করেছিলেন যৌনবিকারগ্রস্ত মুহম্মদ। আর সারারাত্রিব্যাপী যৌন-ইবাদতে মশগুল থেকে ভোরে ফজরের সম্মিলিত নামাজে যখন তিনি অতিশয় বিলম্বে উপস্থিত হলেন, তখন নিজের অনুসারীদের নিকট নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বকপোলকল্পিত ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের এক অলীক গল্প ফেঁদে বসেছেন হয়ত। সে কারণে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শন বিষয়ক গল্পময় হাদিসটির বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে হাদিসটির শেষে সত্যায়নসূচক সনদও যুক্ত করেছেন মুহম্মদ। যেমন:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয় এ বাক্যগুলো সত্য, তোমরা এগুলো শিখ ও শিক্ষা দাও।এক্ষেত্রে মুহম্মদের উক্ত বাণীর শিক্ষা অনুসরণ করে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, ফজরের সম্মিলিত নামাজে একদিন বিলম্বে উপস্থিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ঈশ্বর বা আল্লাহকে প্রত্যক্ষদর্শনের দুর্লভ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন মুহম্মদ। এমন বিলম্বে উপস্থিতির সাধনা তিনি যদি আরও আগেভাগে করতেন, তাহলে হয়ত আরও আগেভাগেই ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অভিজ্ঞতাটি অর্জন করতেন। তবে তেমন অভিজ্ঞতা অর্জনেচ্ছায় মুহম্মদ দ্রুততার সাথে না এগিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়েছেন। আর এক্ষেত্রে যে ধাপসমূহ তিনি অনুসরণ করেছেন তা নিম্নরূপ:
প্রথমত: বাইবেলের অনুকরণে আল-কুরআনে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের সম্ভাব্যতা অস্বীকার করেছেন।
দ্বিতীয়ত: ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শন বিষয়ে আল-কুরআনে গৃহীত অসম্ভাব্যতার অবস্থান হতে বিচ্যুত হয়ে পরবর্তীকালে শর্তসাপেক্ষে ( অর্থাৎ মৃত্যু পরবর্তী জীবনে) ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের সম্ভাব্যতা স্বীকার করেছেন আল-কুরআন ও মুহম্মদি হাদিসে কুদসিতে।
তৃতীয়ত: আল-কুরআন ও মুহম্মদি হাদিসে কুদসিতে গৃহীত পারলৌকিক জীবনে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অবস্থান হতে বিচ্যুত হয়ে ইহলৌকিক জীবনেই ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের এক নতুন স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন চরম সুবিধাবাদী সুচতুর মুহম্মদ।
বিধায় আমরা বুঝতে পারি, মুহম্মদ তার ঈশ্বর ‘আল্লাহর’ যে-বৈশিষ্ট্যসমূহ স্বীয় প্রবর্তিত আল-কুরআন ও আল-হাদিসে ব্যক্ত করেছেন, সেখানে নানাবিধ স্ববিরোধী বর্ণনা বিদ্যমান। তবে বহুমাত্রিক স্ববিরোধী বর্ণনা সত্ত্বেও মূসা ও অন্যান্য নবীর তুলনায় প্রতারক মুহম্মদ একেবারেই আলাদা। কেননা, অন্যান্য নবীদের কেউই ইহলৌকিক জীবনে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের স্বীকারোক্তি প্রদান করেননি; কিন্তু মুহম্মদ ইহলৌকিক জীবনে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের সম্ভাব্যতা অস্বীকার করা সত্ত্বেও ইহলৌকিক জীবনেই ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অলীক স্বীকারোক্তি প্রদান করেছেন। ঐশী প্রতারণার এমন অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনের কারণে মুহম্মদকে তাই শ্রেষ্ঠ নবী বিবেচনা করা হয়। অপরপক্ষে মূসার পরমেশ্বর ও মুহম্মদের আল্লাহ যদি একই পরম সত্তা হতেন, সেক্ষেত্রে বাইবেলের বর্ণনানুযায়ী ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অব্যবহিত পরেই মুহম্মদের মৃত্যু অনিবার্য ছিল। কিন্তু পরিহাসের বিষয় হলো এই যে, মুহম্মদের ক্ষেত্রে তেমন কিছুই ঘটেনি। তাই ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শন প্রসঙ্গে বাইবেল, আল-কুরআন ও আল-হাদিসের এমন স্ববিরোধী অবস্থান পুনরায় প্রমাণ করে যে, মূসার পরমেশ্বর ও মুহম্মদের ঈশ্বর ‘আল্লাহ’ এক পরম সত্তা নন। মূলত মূসার পরমেশ্বরকে চোলাই করে এক ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসূচক ঈশ্বরের ধারণা তৈরি করেছেন মুহম্মদ।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন