লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৬২৮ সালের মার্চ মাসে (জিলকদ, হিজরি ৬ সাল) মক্কার হারাম শরীফ থেকে ৯-১০ মাইল দূরবর্তী হুদাইবিয়া নামক স্থানে কুরাইশ প্রতিনিধি সুহায়েল বিন আমরের সাথে কী কী শর্তেএক লিখিত চুক্তিনামায় সম্মত হয়েছিলেন; এই চুক্তিনামার তিনি কোন কোন ব্যক্তির স্বাক্ষর সাক্ষী হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন; চুক্তিনামাটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর সেখানে উপস্থিত মুহাম্মদ অনুসারীরা প্রবল মর্মবেদনায় তাঁর সাথে কীরূপ আচরণকরেছিলেন; তাঁদের সেই আচরণে মনঃক্ষুন্ন মুহাম্মদ কার পরামর্শে সেখানে তাঁর পরবর্তী কার্যক্রম সমাধা করেছিলেন; অনুসারীদের এইরূপ অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত পরিস্থিতিতে তাঁদের মনোবল চাঙ্গা করা ও সর্বোপরি তাঁর নবী-গৌরব পুনরুদ্ধার ও নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে প্রায় সর্বাবস্থায় মুহাম্মদ কোন দু'টি কৌশল অবলম্বন করেন; ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
অতঃপর মুহাম্মদ মদিনায় প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তাঁর অনুসারীদের অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ, এই চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা ও সর্বোপরি তাঁর নবী-গৌরব ও নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে মদিনায় প্রত্যাবর্তনের আগেই পথিমধ্যে মুহাম্মদ তাঁর প্রথম কৌশল-টি প্রয়োগ করেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) বর্ণনার পুনরারম্ভ: [1] [2]
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ১২২) পর:
‘আল-যুহরীর অব্যাহত বর্ণনা: “অতঃপর আল্লাহর নবী প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন ও যখন তিনি তার অর্ধেক রাস্তায় পৌঁছেন, সুরা আল-ফাতহ (সুরা নম্বর ৪৮) অবতীর্ণ হয়।’”
ওহুদ যুদ্ধের চরম ব্যর্থতার পর মুহাম্মদ "তাঁর আল্লাহর" নামে যে-উদ্দেশ্য সাধনের প্রয়োজনে কমপক্ষে ৬০-টি বাণীর অবতারণা করেছিলেন (পর্ব: ৭০), সেই একই উদ্দেশ্য সাধনের প্রয়োজনে হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তি সম্পন্ন করার পর মুহাম্মদ তাঁর আল্লাহর নামে ২৯টি বাণীর অবতারণা করেন।
মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর ভাষায় সেই বাণীগুলো হলো:
ভূমিকা প্রদান:
৪৮:১-৪ – “নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা ফয়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট।' (২) যাতে আল্লাহ আপনার অতীত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (৩) এবং আপনাকে দান করেন বলিষ্ঠ সাহায্য। (৪) তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন, যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরও ঈমান বেড়ে যায়। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়”।
>> ইমাম বুখারীর বর্ণনায় (৫:৫৯:৪৯০) আমরা জানতে পারি যে, যখন “নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা ফয়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট (৪৮:১)" নাজিল হয়, তখন মুহাম্মদের অনুসারীরা তাঁকে অভিনন্দন জানান ও জিজ্ঞাসা করেন, "কিন্তু আমরা কী পুরষ্কার পাবো?" তাঁদের এই প্রশ্নের জবাবে মুহাম্মদ তাঁদেরকে দেন প্রলোভন (৪৮:৫):
৪৮:৫ – “ঈমান এজন্যে বেড়ে যায়, যাতে তিনি ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করান, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে এবং যাতে তিনি তাদের পাপ মোচনকরেন। এটাই আল্লাহর কাছে মহাসাফল্য”। [3]
অত:পর, হুমকি ও শাসানী!:
৪৮:৬ – “এবং যাতে তিনি কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারী এবং অংশীবাদী পুরুষ ও অংশীবাদিনী নারীদেরকে শাস্তি দেন, যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষন করে। তাদের জন্য মন্দ পরিনাম। আল্লাহ তাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাদেরকে অভিশপ্ত করেছেন। এবং তাহাদের জন্যে জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন। তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল অত্যন্ত মন্দ”।
অত:পর নিজেই নিজের certificateপ্রদান:
৪৮:৭-৮ - 'নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের বাহিনীসমূহ আল্লাহরই। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (৮) 'আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি অবস্থা ব্যক্তকারীরূপে, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।'
ভূমিকা-প্রলোভন-হুমকি-আত্ম প্রশংসা ও certificate প্রদানের পর অভিপ্রায়ঘোষণা!:
৪৮:৯ - 'যাতে তোমরা আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁকে সাহায্য ও সম্মান কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর।'
অত:পর তাঁর দাবী, “মুহাম্মদের আনুগত্য = আল্লাহর আনুগত্য!"
৪৮:১০: 'যারা আপনার কাছে আনুগত্যের শপথ করে, তারা তো আল্লাহর কাছে আনুগত্যের শপথ করে। আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে। 'অতএব, যে শপথ ভঙ্গ করে; অতি অবশ্যই সে তা নিজের ক্ষতির জন্যেই করে এবং যে আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করে; আল্লাহ সত্ত্বরই তাকে মহাপুরস্কার দান করবেন।'
অত:পর, যারা এই যাত্রায় তাঁর সঙ্গে যোগ দেন নাই, তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদগার!:
৪৮:১১-১২- 'মরুবাসীদের মধ্যে যারা গৃহে বসে রয়েছে, তারা আপনাকে বলবেঃ আমরা আমাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। 'অতএব, আমাদের পাপ মার্জনা করান। তারা মুখে এমন কথা বলবে, যা তাদের অন্তরে নেই। বলুনঃ আল্লাহ তোমাদের ক্ষতি অথবা উপকার সাধনের ইচ্ছা করলে কে তাকে বিরত রাখতে পারে? বরং তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয় পরিপূর্ণ জ্ঞাত। (১২) বরং তোমরা ধারণ করেছিলে যে, রসূল ও মুমিনগণ তাদের বাড়ী-ঘরে কিছুতেই ফিরে আসতে পারবে না এবং এই ধারণা তোমাদের জন্যে খুবই সুখকর ছিল। তোমরা মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়েছিলে। তোমরা ছিলে ধ্বংসমুখী এক সম্প্রদায়।'
অত:পর, তাঁকে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে হুমকি!:
৪৮:১৩- 'যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস করে না, আমি সেসব কাফেরের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্তুত রেখেছি।'
অত:পর, তাঁর 'স্বেচ্ছাচারী (পর্ব: ২০)’ বক্তব্য!:
৪৮:১৪- 'নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।'
আবারও যারা তাঁর সঙ্গে এই যাত্রায় অংশ নেন নাই তাঁদের বিরুদ্ধে বিষোদগার!:
৪৮:১৫- 'তোমরা যখন যুদ্ধলব্ধ ধন-সম্পদ সংগ্রহের জন্য যাবে, তখন যারা পশ্চাতে থেকে গিয়েছিল, তারা বলবেঃ আমাদেরকেও তোমাদের সঙ্গে যেতে দাও। তারা আল্লাহর কালাম পরিবর্তন করতে চায়। বলুনঃ তোমরা কখনও আমাদের সঙ্গে যেতে পারবে না। আল্লাহ পূর্ব থেকেই এরূপ বলে দিয়েছেন। তারা বলবেঃ বরং তোমরা আমাদের প্রতি বিদ্বেষ পেষণ করছ। পরন্তু তারা সামান্যই বোঝে।'
অতঃপর, তাঁর সকল অনুসারীদের (ব্যতিক্রম শুধু অন্ধ-খঞ্জ-রুগ্ন) যুদ্ধ অব্যাহত রাখার নির্দেশ "যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়!”:
৪৮:১৬-১৭- 'গৃহে অবস্থানকারী মরুবাসীদেরকে বলে দিনঃ আগামীতে তোমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে। তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা মুসলমান হয়ে যায়। তখন যদি তোমরা নির্দেশ পালন কর, তবে
আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন। 'আর যদি পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর যেমন ইতিপূর্বে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছ, তবে তিনি তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দিবেন। (১৭) “অন্ধের জন্যে, খঞ্জের জন্যে ও রুগ্নের জন্যে কোন অপরাধ নাই এবং যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত্য করবে তাকে তিনি জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে যে, ব্যক্তি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন”।
আল্লাহ তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দিবেন। 'আর যদি পৃষ্ঠপ্রদর্শন কর যেমন ইতিপূর্বে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছ, তবে তিনি তোমাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দিবেন। (১৭) “অন্ধের জন্যে, খঞ্জের জন্যে ও রুগ্নের জন্যে কোন অপরাধ নাই এবং যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুগত্য করবে তাকে তিনি জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে যে, ব্যক্তি পৃষ্ঠপ্রদর্শন করবে, তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন”।
>> মুহাম্মদ তাঁর এই বাণী "আগামীতে তোমরা এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতির সাথে যুদ্ধ করতে আহুত হবে (৪৮:১৬)" এর মাধ্যমে কাদেরকে বোঝাতে চেয়েছেন, সে ব্যাপারে আদি মুসলিম ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের বর্ণনা: ‘আবদুল্লাহ বিন আবু নাজিহ < আতা বিন আবু রাবাহ < ইবনে আব্বাস-এর উদ্ধৃতি মোতাবেক (তা হলো) পারস্য-বাসী।অন্য একজন যাকে আমি সন্দেহ করি না, আল যুহরীর উদ্ধৃতি দিয়ে আমাকে জানিয়েছেন যে, "এক প্রবল পরাক্রান্ত জাতি" মানে হলো বানু হানিফা ও তার সাথের ঘোর মিথ্যাবাদীরা।' [1]
বিভিন্ন উৎসের উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে কাথির যা বর্ণনা করেছেন তা হলো:'--অনেকগুলো মতামত আছে: প্রথমত:, শুবাহ < আবু বিশার < সাইদ বিন জুবায়ের অথবা ইকরিমা অথবা উভয়ের উদ্ধৃতি মতে তারা হলেন হাওয়াজিন-গোষ্ঠী।কাতাদা, তার এক বর্ণনা মতে, এই একই মত পোষণ করেন। দ্বিতীয় মত হলো এই যে, আদ-দাহহাক মতে তারা হলেন থাকিফ-গোষ্ঠী (tribe of Thaqif)। তৃতীয় মত হলো, তারা হলেন বানু হানিফা, যা জুবায়ের ও আয-যুহরির উদ্ধৃতি দিয়ে মুহাম্মদ ইবনে ইশাক বর্ণনা করেছেন [ওপরে বর্ণিত]। সায়েদ বিন জুবায়ের ও ইকরিমা অনুরূপ মতামত বর্ণনা করেছেন। চতুর্থ মত হলো, তারা হলেন পারস্য-বাসী,যা আবদুল্লাহ বিন আব্বাসের উদ্ধৃতি দিয়ে আলী বিন আবি তালহা রিপোর্ট করেছেন। এই একই মত পোষণ করেছেন আতা, মুজাহিদ ও ইকরিমা। কাব বিন আল-আহবার বলেছেন যে, তারা হলেন রোমানরা। অন্যদিকে ইবনে আবি লায়লা, আতা, আল-হাসান ও কাতাদা- তার অন্য এক বর্ণনা মতে, যা বলেছেন, তা হলো এই যে, তারা হলেন পারস্য-বাসী ও রোমানরা। মুজাহিদ এও বলেছেন যে, তারা হলেন মুশরিকরা (idolators); অন্য এক বর্ণনায় মুজাহিদ বলেছেন যে, তারা হলেন, "পরাক্রমশালী যোদ্ধারা”, যা কোনো বিশেষ গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি।” ইবনে জুরায়েজ ও ইবনে জারির শেষের এই ব্যাখ্যাটি পছন্দ করেন"।' [4] [5]
অতঃপর,আল-রিযওয়ানের শপথ গ্রহণকারীদের 'লুটের মালের ওয়াদা প্রদান’ (পর্ব-১১৭):
৪৮:১৮-২১- “আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন। (১৯) এবং বিপুল পরিমাণে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ, যা তারা লাভ করবে। আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (২০) আল্লাহ তোমাদেরকে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদের ওয়াদা দিয়েছেন, যা তোমরা লাভ করবে। তিনি তা তোমাদের জন্যে ত্বরান্বিত করবেন। তিনি তোমাদের থেকে শত্রুদের স্তব্দ করে দিয়েছেন-যাতে এটা মুমিনদের জন্যে এক নিদর্শন হয় এবং তোমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করেন। (২১) আর ও একটি বিজয় রয়েছে যা এখনও তোমাদের অধিকারে আসেনি, আল্লাহ তা বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান’।
অত:পর কুরাইশদের বিরুদ্ধে তাঁর বিষোদগার!:
৪৮:২২-২৫- 'যদি কাফেররাতোমাদের মোকাবেলা করত, তবে অবশ্যই তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করত। তখন তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পেত না। (২৩)এটাই আল্লাহর রীতি, যা পূর্ব থেকে চালু আছে। তুমি আল্লাহর রীতিতে কোন পরিবর্তন পাবে না। (২৪) তিনি মক্কা শহরে তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে নিবারিত করেছেন তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর। তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ তা দেখেন। (২৫)তারাই তো কুফরী করেছে এবং বাধা দিয়েছে তোমাদেরকে মসজিদে হারাম থেকে এবং অবস্থানরত কোরবানীর জন্তুদেরকে যথাস্থানে পৌছতে। যদি মক্কায় কিছুসংখ্যক ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী না থাকত, যাদেরকে তোমরা জানতে না। অর্থাৎ তাদের পিষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত, অতঃপর তাদের কারণে তোমরা অজ্ঞাতসারে ক্ষতিগ্রস্ত হতে, তবে সব কিছু চুকিয়ে দেয়া হত; কিন্তু এ কারণে চুকানো হয়নি, যাতে আল্লাহ তা’আলা যাকে ইচ্ছা স্বীয় রহমতে দাখিল করে নেন। যদি তারা সরে যেত, তবে আমি অবশ্যই তাদের মধ্যে যারা কাফের তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শস্তি দিতাম।' [বিস্তারিত: "তারা ছিলেন সশস্ত্র (পর্ব: ১১২)!"]
অত:পর সুহায়েল বিন আমরের জেদ (পর্ব: ১১৮) এর বিরুদ্ধে তাঁর বিষোদগার!:
৪৮:২৬: "কেননা, কাফেররা তাদের অন্তরে মূর্খতাযুগের জেদ পোষণ করত। অতঃপর আল্লাহ তাঁর রসূল ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদের জন্যে সংযমের দায়িত্ব অপরিহার্য করে দিলেন। বস্তুতঃ তারাই ছিল এর অধিকতর যোগ্য ও উপযুক্ত। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।'
অত:পর, অনুসারীদের সমালোচোনার জবাবে (পর্ব-১২০-১২১) মুহাম্মদের কৈফিয়ত!:
৪৮:২৭- 'আল্লাহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।'
অত:পর, নিজেই নিজেকে আবারও 'certificate' প্রদান!:
৪৮:২৮- 'তিনিই তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের উপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠাতারূপে আল্লাহ যথেষ্ট।'
পরিশেষে, 'অবিশ্বাসীদের' প্রতি তাঁর অনুসারীদের কঠোর হওয়ার নির্দেশ!:
৪৮:২৯ -"মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল এবং তাঁর সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সেজদারত দেখবেন। তাদের মুখমন্ডলে রয়েছে সেজদার চিহ্ন । তওরাতে তাদের অবস্থা এরূপ এবং ইঞ্জিলে তাদের অবস্থা যেমন একটি চারা গাছ যা থেকে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর তা শক্ত ও মজবুত হয় এবং কান্ডের উপর দাঁড়ায় দৃঢ়ভাবে-চাষীকে আনন্দে অভিভুত করে-যাতে আল্লাহ তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জালা সৃষ্টি করেন। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের ওয়াদা দিয়েছেন।"
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ) অতিরিক্ত বর্ণনা:
'আল্লাহর নবী দশ দিন যাবত হুদাইবিয়ায় অবস্থান করেন; কিছু লোক বলেন যে, তা ছিল বিশ রাত্রি অবধি। হুদাইবিয়া থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় তিনি মার আল-যাহরান (Marr al-Zahran) নামক স্থানে যাত্রাবিরতি দেন, অতঃপর আল-উসফান নামক স্থানে।---
মুয়াধ বিন মুহাম্মদ আমাকে যা বলেছেন, তা হলো, আব্বাসের কাছে আশ্রিত (mawla of Abbas) শুবা বলছেন, ''আমি ইবনে আব্বাসকে বলতে শুনেছি যে, 'উমর ইবনে খাত্তাব বলেছেন: 'হুদাইবিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় আমি আল্লাহর নবীর সঙ্গে হাঁটছিলাম। আমি আল্লাহর নবীকে প্রশ্ন করি, কিন্তু তিনি তার কোনো জবাব দেন না। অতঃপর আমি তাঁকে আবার প্রশ্ন করি, কিন্তু তিনি তার কোনো জবাব দেন না। তারপর আমি তাঁকে তৃতীয়বার প্রশ্ন করি ,কিন্তু তিনি তার কোনো জবাব দেন না। উমর বলেন, আমি নিজেকে বলি, "হে উমর, তোর মা তোকে হারিয়ে ফেলেছে! আল্লাহর নবী তোকে তিনবার সতর্ক করে দিয়েছে।" প্রত্যেক বারই আমাকে তিনি কোনো উত্তর দেননি, আমি লাঠির খোঁচা মেরে আমার উটটি-কে ধাবিত করি, যতক্ষণে না আমি সবার সমানে এগিয়ে যাই। আমি ভীত ছিলাম এই ভেবে যে, আমার সম্বন্ধে কোনো কুরানের আয়াত নাজিল হতে পারে। আমি ভয়াভিভুত ছিলাম এই কারণে যে, আমি হুদাইবিয়ায় আল্লাহর নবীর সাথে বাদানুবাদ করেছিলাম, কারণ আমার কাছে সন্ধিচুক্তিটি ছিল ঘৃণিত। অস্থিরতায়, আমি সবার সমানে এগিয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎই সেখানে ঘোষকের চিৎকার, "হে উমর ইবনে আল-খাত্তাব!" তখন আমার যে কী অনুভূতি হয়েছিল, তা আল্লাহই ভাল জানে।
আমি তটস্থ অবস্থায় রওনা হই, যতক্ষণে না আমি আল্লাহর নবীর কাছে আসি ও তাঁকে সালাম করি, তিনি হাসিমুখে আমার সালামের জবাব দেন। আল্লাহর নবী বলেন, "আমার কাছে এক আয়াত নাজিল হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্য ওঠার চেয়েও বেশি প্রিয়।" অতঃপর তিনি পাঠ করেন (কুরান: ৪৮:১), “নিশ্চয় আমরা আপনাকে এক সুস্পষ্ট বিজয় প্রদান করেছি (‘Indeed we have granted you a clear conquest')।" [2]
-অনুবাদ, টাইটেল, আয়াত নন্বর ও [ ]যোগ – লেখক
ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা:
এই প্রসঙ্গে ইমাম বুখারীর বর্ণনা (৬:৬০:৩৫৭) আল-ওয়াকিদির ওপরে বর্ণিত অতিরিক্ত বর্ণনারই অনুরূপ। [6]
>>> মুহাম্মদের স্বরচিত “সূরা আল ফাতহর (সুস্পষ্ট বিজয়)” ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে-বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট, তা হলো - ওহুদ যুদ্ধে চরম পরাজয়ের পর "নিজ উদ্দেশ্য সাধনের প্রয়োজনে" যেমন মুহাম্মদ আল্লাহর নামে তাঁর অনুসারীদের বিভিন্ন প্রলোভন ও সান্ত্বনার বাণী শোনান; হুমকি-শাসানী ও ভীতি প্রদর্শন করেন; অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে করেন বিষোদগার, তাঁর শক্তিমত্তার আস্ফালন ও আল্লাহর নামে নিজেই নিজের যথেচ্ছ প্রশংসা ও গুণকীর্তন করে নিজেই নিজের কর্তৃত্বের অনুমোদন দেন; হুদাইবিয়া সন্ধি চুক্তির পর আবারও তিনি ঠিক সেই কাজটিই করেন। পার্থক্য হলো এই যে সেখানে মুহাম্মদ তাঁর পরাজয়ের সম্পূর্ণ দায়ভার তাঁর অনুসারীদের ওপর আরোপ করেছিলেন, আর এখানে তিনি দাবি করেন যে, তিনি কুরাইশদের সাথে হুদাইবিয়াই এই সন্ধি চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে "সুস্পষ্ট বিজয়" অর্জন করেছেন!
আল-রিযওয়ানের শপথ গ্রহণকারী অনুসারীদের উদ্দেশে মুহাম্মদ তাঁর এই ৪৮:১৯-২১ ও ৪৮:২৭ এর মাধ্যমে যে “আসন্ন বিজয় ও লুটের মালের ওয়াদা” করেছেন, তা তাঁরা কাদের সাথে যুদ্ধ করে প্রাপ্ত হবেন বলে বুঝিয়েছেন, সে ব্যাপারেও তাঁর ৪৮:১৬ বাণীটির মত আদি বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। বিভিন্ন উৎসের উদ্ধৃতি দিয়ে ইবনে কাথির যা বর্ণনা করেছেন তা হলো: “--এর অর্থ হলো, 'খাইবার হামলা, অথবা আগামী যে কোনো যুদ্ধ জয় ও গনিমত লাভ অথবা মক্কা বিজয়, অথবা পারস্য বিজয় ও রোমানদের বিরুদ্ধে বিজয়, অথবা কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেকটি যুদ্ধ জয় ও গনিমত লাভ।'” [7]
>> এই চমকপ্রদ (Magnificent) বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোনো সৃষ্টিকর্তা আছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই। তথাপি আজকের পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষই কোনো না কোনো সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। আগেই বলেছি (পর্ব: ১০), স্রষ্টায় বিশ্বাস উচিত নাকি অনুচিত, প্রয়োজনীয় নাকি অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকারক নাকি লাভজনক, সে বিষয়ের অবতারণা এ লেখার উদ্দেশ্য নয়। এ লেখার উদ্দেশ্য হলো স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বক্তব্য ও কার্যকলাপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার দাবির যথার্থতা/অসাড়তা নিরূপণ! মুহাম্মদ দাবি করেছেন যে, “তাঁর আনুগত্য করার অর্থই হলো আল্লাহর আনুগত্য করা”(৪৮:১০); তাঁর এই বাণীতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তায় (যদি থাকে) বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত হওয়ার কোনোই কারণ নেই! কে এই মুহাম্মদের কল্পিত আল্লাহ ও কী তার ক্ষমতা, সে বিষয়ের আলোচনা 'কুরান কার বাণী? (পর্ব: ১৪)" পর্বে করা হয়েছে।
(চলবে)
কুরানের উদ্ধৃতিগুলো সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট অনুবাদকারীর পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।]
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫০৫-৫০৭ http://www.justislam.co.uk/images/Ibn%20Ishaq%20-%20Sirat%20Rasul%20Allah.pdf
[2] অনুরূপ বর্ণনা (Parallel): “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬১৬-৬২৪ http://www.britannica.com/biography/al-Waqidi
ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩০৩-৩০৭
[3] সহি বুখারী: ভলুম ৫, বই ৫৯, হাদিস নম্বর ৪৯০
Narrated By Anas bin Malik: Regarding Allah's Statement: "Verily! We have granted you (O, Muhammad) Manifest victory." (48.1) It refers to the Al-Hudaibiya Pledge. And the companions of the Prophet said (to the Prophet), "Congratulations and happiness for you; but what reward shall we get?" So Allah revealed:"That He may admit the believing men and women to gardens beneath which rivers flow." (48.5)
[4] ইবনে কাথিরের কুরান তফসির:
[5]তাফসীর যালালীন ও অন্যান্য:
[6] সহি বুখারী: ভলুম ৬, বই ৬০, হাদিস নম্বর ৩৫৭
Narrated Aslam: While Allah's Apostle was proceeding at night during one of his journeys and 'Umar bin Al-Khattab was traveling beside him, 'Umar asked him about something but Allah's Apostle did not reply. He asked again, but he did not reply, and then he asked (for the third time) but he did not reply. On that, 'Umar bin Al-Khattab said to himself, "Thakilat Ummu 'Umar (May 'Umar's mother lose her son)! I asked Allah's Apostle three times but he did not reply." 'Umar then said, "I made my camel run faster and went ahead of the people, and I was afraid that some Qur'anic Verses might be revealed about me. But before getting involved in any other matter. I heard somebody calling me. I said to myself, 'I fear that some Qur'anic Verses have been revealed about me,' and so I went to Allah's Apostle and greeted him.
He (Allah's Apostle) said, 'Tonight a Sura has been revealed to me, and it is dearer to me than that on which the sun rises (i.e. the world)' Then he recited: "Verily, We have given you a manifest victory." (48.1)
[7] ইবনে কাথিরের কুরান তফসির: http://www.qtafsir.com/index.php?option=com_content&task=view&id=2010&Itemid=104
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন