আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০১৬

লওহে মাহফুজের সন্ধানে: ক্যাটম্যান সিরিজ - ২২

লিখেছেন ক্যাটম্যান

মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়, ফয়সল আরেফিন দীপন ও নাজিমুদ্দিন সামাদ সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।


তাই তুলনামূলক বিচারে এটা নিশ্চিত যে, আল-কুরআনে বর্ণিত সূরা আ‘রাফ’র ১৪৩ নম্বর আয়াতের বর্ণনাটি অতিরঞ্জিত হলেও তার উৎস নিহিত আছে বাইবেলের উপর্যুক্ত বর্ণনায়। তবে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অসম্ভাব্যতা বিষয়ে বাইবেল ও আল-কুরআনের উপর্যুক্ত বর্ণনাসমূহ অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও মুহম্মদের প্রণীত আল-কুরআনের প্রাসঙ্গিক বর্ণনা এবং আলোচ্য হাদিসে কুদসির বর্ণনায় অসামঞ্জস্য বিদ্যমান। কারণ বাইবেলের অনুকরণে আল-কুরআনের বর্ণনায় ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অসম্ভাব্যতা স্বীকার করা হলেও হাদিসে কুদসির বর্ণনায় ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অসম্ভাব্যতা দূরীকরণে একটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। শর্তটি হলো মৃত্যু; অর্থাৎ ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের অসম্ভাব্যতা পুরোপুরি স্বীকার না করে মৃত্যু-পরবর্তী জীবন বা পারলৌকিক জীবনে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের আংশিক সম্ভাব্যতা স্বীকার করা হয়েছে। আর এভাবে সূরা আ‘রাফ’র ১৪৩ নম্বর আয়াতে বিবৃত অবস্থান হতে বিচ্যুত হয়ে হাদিসে কুদসির বর্ণনায় পরিবর্তিত অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে; যা ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের বিষয়ে আল-কুরআন ও আল-হাদিসের সাংঘর্ষিক অবস্থানকে প্রমাণ করে।

এমনকি উপর্যুক্ত হাদিসে কুদসির ন্যায় মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের প্রতিশ্রুতিজ্ঞাপক আরও কয়েকটি হাদিসে কুদসি রয়েছে। তন্মধ্যে দু’টি হাদিসে কুদসি যথাক্রমে নিম্নে বর্ণিত হলো:
দিনে যখন আকাশে মেঘ থাকে না তখন তোমরা সূর্য দেখ কি? আর রাত্রিতে যখন আকাশ মেঘমুক্ত থাকে, তখন তোমরা চাঁদ দেখ কি? নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রভুকে অতিসত্বর দেখিতে পাইবে। এমনকি তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তাহার প্রভু সম্বোধন করিবেন এবং জিজ্ঞাসা করিবেন, “হে আমার বান্দা! তুমি কি এই গুনাহ্ স্বীকার কর?” সে বলিবে, “হে আমার প্রভু! আপনি কি আমাকে ক্ষমা করেন নাই?” তখন তিনি বলিবেন, আমার ক্ষমার ফলেই ত তুমি এই পর্যায়ে পৌঁছিয়াছ। (আহমদ ইহা আবূ হুরায়রা (রা)-এর সূত্রে সংগ্রহ করিয়াছেন। হাদিস নম্বর— ৩৩৩)
এবং পরবর্তী হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে:
যখন জান্নাতের অধিবাসিগণ জান্নাতের নিয়ামতসমূহ উপভোগরত থাকিবে, তখন তাহাদের জন্য একটি আলো উজ্জ্বল হইয়া দেখা দিবে। সঙ্গে সঙ্গে তাহারা তাহাদের মস্তক উত্তোলন করিবে এবং অনুভব করিবে যে, তাহাদের প্রভু উপর হইতে তাহাদের উপর স্বীয় উপস্থিতির আলোকপাত করিয়াছেন। অতঃপর তিনি বলিবেন, “তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হউক হে জান্নাতবাসিগণ। ” ইহা আল্লাহ্ তা‘আলার সেই বাণী ( যাহা কুরআনে উল্লেখ আছে ) শান্তি উক্তিটি দয়াময় প্রভুর পক্ষ হইতে” ( সূরা ইয়াসীন: ৫৮ )। তিনি জান্নাতবাসীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিবেন। তাহারাও তাঁহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিবে। অতঃপর যতক্ষণ তাহারা তাঁহাকে দেখিতে থাকিবে ততক্ষণ তাহারা জান্নাতের কোন নিয়ামতের দিকেই লক্ষ্য করিবে না। অতঃপর তিনি তাহাদের নিকট হইতে আত্মগোপন করিবেন। শুধু তাঁহার আলো ও তাঁহার বরকত তাহাদের উপর এবং তাহাদের বাসভবনসমূহের উপর অবশিষ্ট থাকিবে। (ইবনে মাজা ইহা জাবির ( রা )-এর সূত্রে সংগ্রহ করিয়াছেন। * বিঃ দ্রঃ এই হাদীসটিতে প্রথমত আল্লাহ্ তা‘আলার সহিত বান্দার চাক্ষুষ সাক্ষাত এবং দ্বিতীয়ত করুণাময়ের অসীম কৃপার আভাস দেওয়া হইয়াছে। হাদিস নম্বর— ৩৩৪, আল্লামা মুহাম্মদ মাদানী: “হাদীসে কুদসী” ( অনুবাদ— মোমতাজ উদ্দীন আহমদ ), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০০৪ খৃ., পৃ. ২৭৯-২৮০)
উল্লেখ্য, ৩৩৪ নম্বর হাদিসটিতে সংশ্লিষ্ট গ্রন্থকার একটি টীকা যুক্ত করেছেন; যা ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শন বিষয়ে হাদিসটির অর্থ আরও সুস্পষ্ট করেছে। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, উপর্যুক্ত হাদিসে কুদসি সমূহে শুধু মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে ঈশ্বরকে প্রত্যক্ষদর্শনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়েছে। ইহলৌকিক জীবনে কোনোভাবেই ঈশ্বরকে দেখার সম্ভাবনা স্বীকার করা হয়নি। অথচ আল-কুরআন ও আল-হাদিসে ঘোষিত সকল অসম্ভাব্যতাকে ভুল প্রমাণ করে মুহম্মদ তার স্বকপোলকল্পিত ঈশ্বরকে ইহলৌকিক জীবনে প্রত্যক্ষদর্শনের অলীক দাবি করেছেন। যে হাদিসে তিনি এই অলীক দাবিটি করেছেন, সেটাও একটি হাদিসে কুদসি। আলোচ্য হাদিসে কুদসিটি নিম্নে বর্ণিত হলো:
মুয়ায ইব্ন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা ফজর সালাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলম্ব করলেন, আমরা প্রায় সূর্যের অগ্রভাগ দেখার কাছাকাছি ছিলাম, অতঃপর তিনি দ্রুত বের হলেন, সালাতের ঘোষণা দেয়া হল, তিনি দ্রুত সালাত আদায় করলেন, যখন সালাম ফিরালেন উচ্চ স্বরে আমাদেরকে বললেন: “তোমরা তোমাদের কাতারে থাক যেরূপ আছ। ”
অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন: “আমি অবশ্যই তোমাদের বলব কি কারণে আজ আমার বিলম্ব হয়েছে। আমি রাতে উঠে ওযু করেছি অতঃপর যা তাওফিক হয়েছে সালাত আদায় করেছি, সালাতে আমার তন্দ্রা এসে যায় তাই আমার কষ্ট হচ্ছিল, হঠাৎ দেখি আমার রব আমার সামনে সর্বোত্তম আকৃতিতে। তিনি আমাকে বললেন: হে মুহাম্মদ,
আমি বললাম: লাব্বাইক আমার রব। তিনি বললেন: ঊর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কি নিয়ে তর্ক করছে ?
আমি বললাম: হে আমার রব আমি জানি না, —তিনি তা তিনবার বললেন। রাসূল বলেন: আমি দেখলাম তিনি ( আল্লাহ ) নিজ হাতের তালু আমার ঘাড়ের ওপর রাখলেন, এমনকি আমি তার আঙ্গুলের শীতলতা আমার বুকের মধ্যে অনুভব করেছি, ফলে আমার সামনে প্রত্যেক বস্তু জাহির হল ও আমি চিনলাম।
অতঃপর বললেন: হে মুহাম্মদ, আমি বললাম: লাব্বাইক হে আমার রব। তিনি বললেন: ঊর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কি নিয়ে তর্ক করছে ? আমি বললাম: কাফফারা সম্পর্কে। তিনি বললেন: তা কি ? আমি বললাম: জামাতের জন্য হাঁটা, সালাতের পর মসজিদে বসে থাকা, কষ্টের সময় পূর্ণরূপে ওযু করা। তিনি বলেন: অতঃপর কোন বিষয়ে ? আমি বললাম: পানাহার করানো, সুন্দর কথা বলা, মানুষের ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় রাতে সালাত আদায় করা। তিনি ( আল্লাহ ) বললেন: তুমি চাও।
আমি বললাম: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণের কাজ করার তৌফিক চাই, খারাপ কাজ ছেড়ে দেয়ার তৌফিক চাই, অভাবীদের জন্য ভালোবাসা, আর আপনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন ও আমার প্রতি রহম করেন। আর যখন আপনি কোন কাওমকে ফিতনা তথা পরীক্ষায় নিপতিত করতে চান, তখন আমাকে পরীক্ষায় নিপতিত না করে মৃত্যু দিন। আমি আপনার কাছে আপনার ভালোবাসা, আপনাকে যে ভালোবাসে তার ভালোবাসা এবং এমন আমলের ভালোবাসা চাই যা আমাকে আপনার ভালোবাসার নিকটে নিয়ে যাবে। ”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: নিশ্চয় এ বাক্যগুলো সত্য, তোমরা এগুলো শিখ ও শিক্ষা দাও।” [তিরমিযি, হাদিসটি সহিহ। হাদিস নম্বর— ১৩৬; আবু আব্দুল্লাহ মুস্তফা আল-আদাভি: “সহিহ হাদিসে কুদসি” ( অনুবাদ— সানাউল্লাহ নজির আহমদ ), মিসর, দিকহিলিয়াহ, মুনিয়া সামনুদ, ২০১২ খৃ., পৃ. ১৫৪-১৫৬)
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন