বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬

ইসলামের শিক্ষা - আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপরতা

লিখেছেন হুমায়ুন রশীদ

ফেইসবুকে একটা ছবি দেখলাম, ভারতে ইসকন ইফতারি করাচ্ছে মুসলিমদের। তারাবি নামাজের ব্যবস্থাও রাখছে। এর আগে ঢাকার কমলাপুরে বৌদ্ধ বিহারে ইফতার বিরতণের খবর দেখেছি। বিশ্ব নেতাদের রমজানের শুভেচ্ছাবাণী তো প্রত্যেক বছরই দেয়া হয়। এটার চেয়ে বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য - ঈদের শুভেচ্ছা জানায় পোপ। সাধারণ মুসলিমরা একবারও ভেবে দেখে না, কেন তাদের মোনাজাতে কেবল মুসলিমদের শান্তি-সমৃদ্ধি চাওয়া হয়, কেন শুধু ‘বিশ্বের মুসলমানদের’ জন্য দোয়া করা হয়। অন্যান্য ধর্ম যেখানে ‘জগতের সকল প্রাণীর সুখী হওয়ার’ দোয়া চায়? ক্রিসমাস কিংবা ইস্টারে কেন সৌদি গ্রান্ড মুফতি কিংবা ইউরোপের কোনো মসজিদের ইমাম খ্রিষ্টানদের শুভেচ্ছা জানায় না? কেন অমুসলিমদের জন্য ইসলাম দোয়া করতে নিষেধ করেছে? কেন অমুসলিমদের ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেয়া নিষেধ করেছে? এসব মানবিক প্রশ্ন তো তাদের মনে আসেই না, উল্টো এইসব বর্বর প্রতিক্রিয়াশীল নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তাদের কী গর্ব! কী নির্লজ্জ সাফাই!

ছোটবেলায় দেখতাম বিটিভিতে গীতা পাঠ, ত্রিপিটক পাঠ শেষে বলা হতো, জগতের সকল মানুষ সুখে থাক, শান্তিতে থাক। কিন্তু কুরআন পাঠ শেষে মাওলানা সাহেব বলতেন, বিশ্বের সকল মুসলমান হেফাজত থাকুক, আল্লাহ তাদের সমৃদ্ধি দান করুন, সারা বিশ্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করছে, আল্লাহ তাদের পরাস্ত করে ইসলামকে জয়ী করে দিন। ছোট বয়েসেও মনে প্রশ্ন জাগত: হিন্দুরা, বৌদ্ধরা বলছে জগতের সবাই সুখী হোক, শুধু আমরা বলছি, নিজেরা ছাড়া আর কেউ যেন সুখী না হয়! কী রকম ছোটমনের পরিচয় যেন। বড়দের জিজ্ঞেস করে দেখেছি, তারাও অস্বস্তিজনক অবস্থায় পড়ে যায়। যাঁরা সৎ মুসলমান, মানে যাঁরা ভণ্ড নন কিংবা ধর্মটাকে ভাল করে জানেন, তাঁরা বলতেন, অরা হইতাছে কাফের, "অরা তো সারা জীবন দোযগে জ্বলব, ওদের তাই দোয়া করা যাবে না।" এই রকম জবাব শুনে বেশির ভাগ শিশু-কিশোর এতেই অভ্যস্ত ও সন্তুষ্ট হয়। সেই ছাঁদে তৈরি হতে থাকে। তারপর স্কুল-কলেজে ভর্তি হয়ে সহপাঠী হিন্দুকে মুখের ওপর বলে দেয়, "তরা দোযগের আগুনে জ্বলবি সারা জীবন।" এই ছেলে বড় হয়ে নিজে যখন শিক্ষক হবে, সেও ক্লাসরুমে হিন্দু ছাত্রদের বলবে, "তরা তো বেহেস্তে যাবি না।"

দোয়ায় যদি কাজ হতো, আল্লাহ বলতে যদি কেউ থাকত, তাহলে মুসলমানরা থাকত পৃথিবীতে সবচেয়ে সম্পদশালী, ক্ষমতাবান, সুখী ও সমৃদ্ধ। আর তাদের অভিশাপে দুনিয়াতে ভিন্ন ধর্মের কেউ আর আস্ত থাকত না। কাজেই কে প্রার্থনায় কী বলল, কিছুই আসে যায় না বস্তু-জগতের বাস্তবতায়। যেটা হয়, প্রার্থনার ভাষাতে জাত চেনা যায়। কার ঈশ্বর কেমন, সেটা সেই ধর্মের প্রার্থনাতে বোঝা যায়।

আমার লেখাগুলোতে আলাদা করে ইসলাম ধর্ম থেকে অন্য ধর্মকে তুলনা দেয়ার একটা প্রচেষ্টা থাকে। এর কারণটা হচ্ছে - মুসলমানরা যেন আত্মসমালোচনা শুরু করে। পাথরের মূর্তির সামনে বসে প্রার্থনা করা অর্থহীন, তার উদ্দেশে দুধ-ঘি ঢালা অপচয়। তবে সেটা কারুর ক্ষতি করে না। কাউকে মারতে যায় না। তেমনি নামাজ পড়ে কারুর সন্তুষ্টি চাওয়া বোকামী, কিন্তু নামাজ কারুর ক্ষতি করে না, কাউকে খুন করে না, মারতে যায় না। ক্ষতিকর ঐটাই, যেটা মানুষকে মানুষ না ভেবে কেবল ‘মুসলমান’ ভাবায়। ভিন্ন ধর্মের মানুষদের অভিশাপ দেয়া, তাদের ক্ষতি চাইতে শেখানোটাই খারাপ। সেটাই মানুষকে মারতে শেখায়, ঘৃণা করতে শেখায়। ইসলাম ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের অনুসারীদের সঙ্গে এটাই তফাত। আত্মসমালোচনা ভিন্ন মুসলিমদের উন্নতির পথ দেখি না।

নাজিল হলো ফাজিল 'পরে - ১

লিখেছেন বিরামহীন-আরাম

পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে - (সূরা আন-নাবা): "তারা পরস্পরে কি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? (১) মহা সংবাদ সম্পর্কে, (২) যে সম্পর্কে তারা মতানৈক্য করে। (৩) না, সত্ত্বরই তারা জানতে পারবে, (৪) অতঃপর না, সত্বর তারা জানতে পারবে। (৫) আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা (৬) এবং পর্বতমালাকে পেরেক? (৭) আমি তোমাদেরকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছি, (৮) তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, (৯) রাত্রিকে করেছি আবরণ। (১০) দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়, (১১) নির্মান করেছি তোমাদের মাথার উপর মজবুত সপ্ত-আকাশ। (১২) এবং একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করেছি। (১৩)"

এই আয়াতগুলো থেকে আমরা কী বুঝলাম? এই সব পুরাপুরিই ছাইঞ্চ অর্থাৎ বিগ্যান। খালি ইশারা আর ইশারা। যাদের অন্তরে মোহর মারা, তারা কিছুই বুঝবে না। বুঝবে শুধু ফাজিলরা – মানে ফাজিল ডিগ্রীধারীরা। আপনি কি ফাজিল? নাহলে নিচে বাড়েন।

তারা পরস্পরে কি বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে? (১) মহা সংবাদ সম্পর্কে, (২) যে সম্পর্কে তারা মতানৈক্য করে। (৩) না, সত্ত্বরই তারা জানতে পারবে, (৪) অতঃপর না, সত্বর তারা জানতে পারবে। (৫) - >> আল্লা হইলেন তিনি, আর জিগাইলেন নবীরে। তার উপ্রে ‘মতানৈক্য’, ‘জানতে পারবে’, ‘অতঃপর না, সত্বর তারা জানতে পারবে’ এইসবের ভিত্রে পুরাই লুপে পইড়া গেলেন না? ঠিক এইভাবেই কম্পুটার প্রোগ্রাম এর "Loop" এবং "Algorithm" আবিষ্কার হইলো। যারা এই কুরানের সাথে কম্পুটারের সম্পর্ক ঠিক ধরতে পারবে না, তারা বলবে, কুরান এতো সহজ বিষয় না। আগায় পাছায় আরো দশটা আয়াত পড়তে হবে, কোন কারনে এই রহমত নাজেল হইলো, তা জানতে হবে, আবার আরবি সাহিত্যও বুঝতে হবে। অথচ দেখেন, কুরান কী সহজ বিষয়! আপনি নিশ্চয় এখন বুঝতে পারেন, কম্পুটার বিজ্ঞান পুরাই কোরানের অবদান।

আমি কি করিনি ভূমিকে বিছানা (৬)>>> কী মুসিবত! যা কিছু কইবা, সব উদাহরন হইল বিছানা। হ গোলাকার পৃথিবী হইলো বিছানার মতন। ছাইঞ্চ, বুঝতে হপে!

এবং পর্বতমালাকে পেরেক? (৭)>>> সব দোষ ইস্কুরুপ করসে। তাই পর্বত হইল খালি পেরেকের মতন। 

আমি তোমাদেরকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছি, (৮)>>> ব্যাকটেরিয়া, এমিবা হইতে শুরু কইরা বহুত প্রাণী আছে, যাদের কোনো জোড়া নাই। এইখানে আণুবীক্ষণিক প্রানীদের হিসাবেই ধরা হয় নাই। অণুবীক্ষন আবিষ্কার হইলে এই ভুল আর হইতো না। 

তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, (৯) - >>> এইটা ছাইঞ্চ। এই আয়াত না পড়লে তো আমরা ঝান্তামই না, নিদ্রা গেলে ক্লান্তি দূর হয়। আপনি ঝানতেন?

রাত্রিকে করেছি আবরণ। (১০) - >>> এইটাও ছাইঞ্চ। কারণ রাইতের বেলা সূর্য আল্লার আরশের নিচে থাকে। হারা রাইত ধইরা ইবাদত- বন্দেগী করে, যেন তারে ফজরের ওয়াক্তে ছাইড়া দেয়া হয়। আরেকটু খেয়াল করলেই ধরতে পারবেন, কোপা আমেরিকায় চিলির বিজয়ের কারণ। বাংলাদেশে যখন রাইত হয়, তখন বাংলাদেশের উল্টাপাশে নিশ্চয় আরশসহ আল্লারে দেখা যায়। বাংলাদেশের প্রতিপাদ স্থান হইল চিলি। আল্লার নূর দেইখাই তো তারা এই কাপ জিইতা গেলগা। এখন "বাংলাদেশের মানুষ কেন চিলিতে যখন রাইত তখন আল্লারে দেখেনা?" - এই জাতীয় প্রশ্ন কইরা নিজেরে শয়তানের দলে ভিড়াইবেন না। তোমরাই বল, তার কোন অবদানরে অস্বীকার করবা? 

দিনকে করেছি জীবিকা অর্জনের সময়, (১১) - >>> রাইতে কেউ জীবিকা অর্জন করে না। রাইতের কাম খালি বিছানায়। কী ঠিক কি না? আমি কিন্তু খালি ঘুমের কথা কইতেছিলাম, অন্য কিছু বুঝলে অজু কইরা আসেন।

নির্মান করেছি তোমাদের মাথার উপর মজবুত সপ্ত-আকাশ। (১২) - >>> এইটা কিলিয়ার ছাইঞ্চ। আকাশ যদি মজবুতই না হবে তাইলে “আমার চান্দিতে আকাশ ভাইঙ্গা পড়সে” এই বাগধারাটাই সৃষ্টি হইতো না।

এবং একটি উজ্জ্বল প্রদীপ সৃষ্টি করেছি। (১৪) - >>> নিশ্চয় সূর্য হইলো প্রদীপের মতন। হাইড্রোজেন-হিলিয়াম ফিশন আর মোমে-তেলে পুড়া প্রদীপ নিশ্চয় একই জিনিস। কোনো সন্দেহ নাই আমার। আপনার আছে?

(সূরার বাকি অংশ নাজেল হচ্ছে)

বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬

প্রকাশিতব্য ইবুক 'কুরানে বিগ্যান'-এর উপক্রমণিকা

(নিবিড় নিষ্ঠা ও অবিশ্বাস্য অধ্যাবসায় কাকে বলে, সেটার উদাহরণসহ ব্যাখ্যা নিরন্তর দিয়েই চলেছেন অত্যন্ত পরিশ্রমী ও অতি যত্নবান লেখক গোলাপ। তাঁর লেখা সিরিজটির এ যাবত প্রকাশিত ১৩০ টি পর্বের যে কোনও একটি মন দিয়ে পড়লেই পাঠক তা উপলব্ধি করতে পারবেন।

সিরিজটি এখনও চলমান, তবে বিষয়ভিত্তিকভাবে খণ্ডে খণ্ডে ইবুক তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। ইবুকের ভূমিকায় লেখক বর্ণনা করেছেন, অভাবনীয় শ্রমসাধ্য এই অতিকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে কী তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে, কী ছিলো সেই চালিকাশক্তি।) 

লিখেছেন গোলাপ

উপক্রমণিকা

ভাবনার শুরু:

১৬ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল। বাংলাদেশীদের জীবনে সবচেয়ে আনন্দের দিন! সবচেয়ে আবেগের দিন! সবচেয়ে কষ্টের দিন! সবচেয়ে আনন্দের দিন এই জন্য যে, সুদীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসরদের পরাজিত করে আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সবচেয়ে আবেগের দিন এই জন্য যে, পাক হানাদার বাহিনীরা আত্মসমর্পণ করেছে - খবরটি শোনার পর আমাদের সবার মনে সেদিন এমন এক অনুভূতি ও আবেগের সৃষ্টি হয়েছিল, স্বাধীনতার এত বছর পরেও ঐ দিনের স্মৃতি মনে পড়লে আমরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। সবচেয়ে কষ্টের দিন এই কারণে যে, এই দিনটির আগের নয় মাস সময়ে ৩০ লক্ষ প্রাণ, দুই লাখের অধিক মা-বোনদের ইজ্জত, অসংখ্য ঘর-বাড়ি জ্বালাও-পোড়াও লুটতরাজের শিকার হয়েছিল পুরো বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। এমন কোনো পরিবার ছিলো না, যারা কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি! যাঁরা স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন, তারা তো বটেই, যাঁরা  বিপক্ষে ছিলেন, তারাও। আমি এমন পরিবারও দেখেছি, যে-পরিবারের ছেলে ছিলেন রাজাকার, কিন্তু তার পিতা-মাতা ও অন্যান্য পরিবার-সদস্যরা ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে।

সুদীর্ঘ নয় মাস যাঁরা সমগ্র বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন ও যাঁরা এই কাজে তাঁদের সহযোগিতা করেছিলেন, তারা সবাই ছিলেন মুসলমান। এই কাজের বৈধতা প্রদানে তাঁরা যে যুক্তিটি প্রয়োগ করেছিলেন, তা হলো - তাঁরা ছিলেন পাকিস্তান ও ইসলাম রক্ষার পক্ষে, আর তাদের এই কাজে যারাই তাদেরকে বাধা প্রদান করেছিলেন, তারা সবাই ছিলেন ইসলামের শত্রু। এই বিশ্বাস ও চিন্তাধারায় তাঁরা বাংলাদেশীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিলেন, অসংখ্য ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্মীভূত করেছিলেন, শহরে-গ্রামে-গঞ্জে অতর্কিত হামলা করে বিরুদ্ধবাদীদের সম্পদ লুণ্ঠন ও মা-বোন-স্ত্রী-কন্যাদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের ইজ্জতহানি করেছিলেন। লুটতরাজে অর্জিত ধনসম্পদ ও স্ত্রী-কন্যা-মা-বোনদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের যৌনদাসীতে রূপান্তর করাকে তারা সম্পূর্ণ ইসলামসম্মত বলে বিশ্বাস করতেন। ইসলামের পরিভাষায় যাকে বলা হয় 'গনিমতের মাল!' 

মহকুমা শহরে আমাদের বাসা। শহরে পাকিস্তান মিলিটারি আসছে, এই খবরটি শোনার পর তারা সেখানে আসার আগেই জীবন বাঁচানোর তাগিদে সবকিছু ফেলে আমরা আমাদের গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। যুদ্ধের ঐ সময়টিতে আমাদের ইউনিয়নে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে যিনি 'শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান' হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন আমার হাই স্কুলের অংক শিক্ষকের ছোট ভাই সোলায়মান হোসেন। আমাদের অত্র অঞ্চলে তিনি ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। শিক্ষকটি ছিলেন আমার আব্বার বন্ধু, সেই হিসাবে ক্লাসের বাইরে তাঁকে ও তাঁর এই ছোট ভাইকে আমি চাচা বলে ডাকতাম। আমার এই শিক্ষকটিকে আমি কখনো নামাজ পড়তে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু তার এই ছোটভাইটি ছিলেন ঠিক তার উল্টো। নিয়মিত নামাজ পড়তেন ও তাঁর চেম্বারে বসে ধর্ম বিষয়ে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু যুদ্ধের আগে তিনি জামাত-ই-ইসলাম বা অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে কখনোই জড়িত ছিলেন না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভাল মানুষ, সদাহাস্যময়। কিন্তু যুদ্ধের সময় সেই মানুষটিই হয়ে গেলেন 'শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান', যিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, পাকিস্তান ও ইসলাম রক্ষার তাগিদে ইসলামের এই শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও 'গনিমতের মাল (Booty)' ইসলামসম্মত। তাঁর এই ব্যবহারে আমার শিক্ষকটি লজ্জা বোধ করতেন ও একান্ত প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া লোকজনদের সাথে স্বাভাবিক মেলামেশা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ১৬ই ডিসেম্বরের কিছুদিন আগে মুক্তিবাহিনীর লোকেরা সোলায়মান হোসেনকে হত্যা করে।

১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি আমার আব্বার সঙ্গে শহরে এসে দেখি, যেখানে আমাদের ইটের দেয়াল ও টিনের ছাদের বাসাটি ছিলো, সেখানে বাড়িঘরের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমাদের অবর্তমানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিহারী দোসরারা আমাদের বাসার ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। আমরা আরও যা প্রত্যক্ষ করলাম, তা হলো, দলে দলে বাঙালিরা বিহারী পাড়ার দিকে যাচ্ছে ও তাদের ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র ঠেলাগাড়িতে করে ভরে ভরে নিয়ে আসছে এমনকি তাদের বাড়ির দেয়াল ভেঙে ইটগুলো পর্যন্ত খুলে খুলে নিয়ে আসছে। আমাদের বাসা থেকে সামান্য দূরেই এই বিহারী পাড়া। যুদ্ধের আগে আমার সমবয়সী তাঁদের অনেকের সন্তানই ছিল আমার বাল্যবন্ধু ও খেলার সাথী।

দৃশ্যটি কাছে থেকে দেখার জন্য আমরা সামনে বিহারী পাড়ার দিকে এগিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আমারা যে-দৃশ্য দেখতে পাই, তা হলো - যেমন করে একদা বিহারীরা আমাদের সহায় সম্বল লুট করেছিল, আজ বাঙালিরা মেতেছে সেই একই কর্মে।  তখন সকাল ৮-৯ টা মত হবে। সেখানে দেখা হয়ে গেল আমাদের পাড়ার মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে, ফজরের নামাজের পর তিনি সেখানে এসেছেন ও আমাদের মতই দর্শক হয়ে এ দৃশ্য দেখছেন। তিনি ছিলেন একাধারে ক্বারী ও হাফেজ, ইসলাম বিষয়ে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী একজন মওলানা বলেই তাঁকে আমরা জানতাম। যুদ্ধের আগে আমরা পাড়ার এই মসজিদেই তার ইমামতিতে নামাজ পড়তাম।

আমাদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মওলানা সাহেব আমার আব্বাকে কাছে ডাকলেন, বললেন, "আপনি কিছু নেবেন না? আপনাদের বাড়িঘর তো লুটপাট হয়ে গিয়েছে।" আব্বা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, "হুজুর অন্যের সম্পত্তি কি এইভাবে লুট করে নিয়ে যাওয়া ইসলামে জায়েজ?" মওলানা সাহেব নির্দ্বিধায় আব্বাকে বললেন, "হ্যাঁ! এখন যুদ্ধের সময়। যুদ্ধের সময় পরাজিত পক্ষের সহায় সম্পত্তির ওপর বিজয়ীদের হক। একে বলা হয় 'গণিমতের মাল।' এটা নিতে ইসলামে কোনো বাধা নেই।" আমার আব্বা পরহেজগার মানুষ। তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, 'আপনি যা বললেন, সে কথা তো সোলায়মানও বলতো!" সোলায়মান লোকটি কে, তা মওলানা সাহেব যখন জানতে চাইলেন, তখন আব্বা তাকে তার পরিচয় দিলেন ও তাঁকে এও জানালেন যে, অল্প কিছুদিন আগে মুক্তিবাহিনীর লোকেরা তাঁকে মেরে ফেলেছে। মওলানা সাহেব বললেন, "ওরা ছিল অন্যায়ের পক্ষে, আর আমরা হলাম ন্যায়ের পক্ষে।"

গোঁড়া ইসলামী পরিবারে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। সেই পাঁচ-ছয় বছর বয়সের সময় আম্মার কাছে আরবি পড়া শুরু করেছিলাম। অর্থ বুঝতাম না, শুধু পড়া ও সুরা মুখস্থ করা। বিশ্বাসী ছিলাম সর্বান্তকরণে! ইসলাম বিষয়ে তখন কিছুই জানতাম না। তথাপি ঐ বয়সে আমি এটুকু স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম যে, সোলায়মান চাচা ও এই মওলানা সাহেবের বিশ্বাসের মধ্যে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য মৌলিক পার্থক্য নেই। দু'জনই ব্যক্তিগত জীবনে অতীব সচ্চরিত্র। দু’জনেই মনে-প্রাণে  বিশ্বাস করতেন যে, তাঁরা ইসলাম ও ন্যায়ের পক্ষে আছেন; দু’জনেই মনে-প্রাণে তাঁদের বিরুদ্ধ পক্ষকে শত্রুপক্ষ জ্ঞান করতেন; দু'জনই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, বিজয়ী হবার পর শত্রুপক্ষের সহায় সম্পত্তি হলো 'গনিমতের মাল' - ইসলামের বিধানে যার ভোগ-দখল সম্পূর্ণ হালাল। 

এর বছর চার পরের কথা। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমার কাজিনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। কাজিনের স্ত্রী, আমার ভাবী, 'ইসলামের ইতিহাস (Islamic History)' বিষয়ে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছেন। বিষয়টির প্রতি আগ্রহ থাকায় ভাবীর অনার্স সিলেবাসের বইগুলোর একটা নিয়ে পড়া শুরু করলাম। কয়েকটি অধ্যায় পড়ার পর আগ্রহ আমাকে এমনভাবে পেয়ে বসলো যে, মন্ত্রমুগ্ধের মত যে আট দিন তাঁদের বাসায় ছিলাম, তাঁর সিলেবাসের সবগুলো বই পড়ে ফেললাম। জানলাম, সরল বিশ্বাসে এতদিন যা আমি জেনে এসেছিলাম, “একজন মুসলমান কখনোই অন্য একজন মুসলমানকে খুন করতে পারে না, তা ছিলো ভ্রান্ত।” এই আটদিন সময়ে আমার এই বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র এই বইগুলোর পাতায় পাতায় প্রত্যক্ষ করেছিলাম। জানলাম, একজন মুসলমান অন্য একজন মুসলমানকে যে অবলীলায় খুন করতে পারে, সে ইতিহাসের শুরু হয়েছে ইসলামের ঊষালগ্নে। এটি ১৪০০ বছরের পুরনো ইতিহাস, যা আমার জানা ছিলো না। যুগে যুগে তা হয়ে এসেছে, এখনও হচ্ছে ও ভবিষ্যতেও তা হবে, যতদিনে না আমাদের চিন্তা-চেতনা ও মানসিকতার  উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে।

ইসলামের ঊষালগ্নে সংঘটিত সেই ইতিহাসের পাত্র-পাত্রীর নামগুলো ছিলো ভিন্ন, চরিত্র অভিন্ন! আমাদের সোলায়মান চাচা ও মওলানা সাহেবের পক্ষের পরিবর্তে সেখানে ছিলইসলামের ইতিহাসের তৃতীয় খুলাফায়ে রাশেদিন উসমান ইবনে আফফান (রা:) তার বিরুদ্ধ পক্ষ মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর ও তাদের দল, যারা অতিবৃদ্ধ উসমান ইবনে আফফান-কে কুরান পাঠরত অবস্থায় অমানুষিক নৃশংসতায় খুন করেছিলেন; সেখানে ছিলো ইসলামের ইতিহাসের চতুর্থ খুলাফায়ে রাশেদিন আলী ইবনে আবু তালিব (রা:) তার বিরুদ্ধ পক্ষ উম্মুল মুমেনিন নবী-পত্নী আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা:) ও তাদের দল ('উটের যুদ্ধ'), যেখানে দু'পক্ষের হাজার হাজার মুসলমান খুন হয়েছিলেন; সেখানে ছিলো আলি ইবনে আবু তালিব মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের ও তাদের দল (‘সিফফিন যুদ্ধ’), যে-যুদ্ধে দু'পক্ষের অজস্র মুসলমানদের খুন করা হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অসংখ্য পরিবার। ইসলামের ঊষালগ্নের ইতিহাসের এইসব পাত্র-পাত্রী ও তাদের পক্ষের লোকদের বিশ্বাস ও মানসিকতার সঙ্গে ১৯৭১-এ আমাদের সোলায়মান চাচা ও মওলানা সাহেবের বিশ্বাস ও মানসিকতার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। দু’পক্ষই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, তাঁরা ইসলাম ও ন্যায়ের পক্ষে আছেন, অপর পক্ষ হলো শত্রুপক্ষ! গত ১৪০০ বছরে তাদের এই 'ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিন্তা ভাবনার' গুণগত চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

তখন পর্যন্ত আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতাম, এই হানাহানির শিক্ষা কোনোভাবেই আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর কুরানের শিক্ষা হতে পারে না। আমার বিশ্বাসের এই তলানিটুকুও নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলো,যখন আমি কুরানের অর্থ ও তরজমা বুঝে পড়লাম, আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের লেখা 'সিরাত' ও হাদিস গ্রন্থ পড়লাম। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়ের সাথে (৫৭০-৬৩২ সাল) তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী এই সব হানাহানির পার্থক্য এটুকুই যে, তাঁর সময়ে এই হানাহানি ও নৃশংসতা সীমাবদ্ধ ছিলো তাঁর ও তাঁর বিরুদ্ধ পক্ষ অবিশ্বাসী জনপদবাসীদের মধ্যে। তাঁর সময়ে মুসলমান-মুসলমানদের মধ্যে কোনো বড় ধরনের সংঘাত হয়নি। মুসলমান-মুসলমানদের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর ঐ দিনটিতেই, তাঁর লাশ কবরে শোয়ানোর আগেই! জন্মের পর থেকে এতগুলো বছরের লালিত যে-বিশ্বাস আমি মনে প্রাণে ধারণ করে এসেছিলাম, সেই বিশ্বাস ভঙ্গের কষ্ট কাউকে বলে বোঝানো যাবে না!

লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব:

ইসলাম ও মুসলমান এই শব্দ দুটি সমার্থক নয়। ইসলাম হলো একটি মতবাদ, আর মুসলমান হলো মানুষমতবাদের কোনো অনুভূতি নেই, মানুষের আছে। যখনই কোনো প্রচলিত মতবাদ ও প্রথার বিরুদ্ধে কেউ ভিন্নরূপ মত প্রকাশ করেন,তখন প্রচলিত মতবাদ ও প্রথায় বিশ্বাসী মানুষরা কষ্ট পান। তাঁদের এই কষ্ট যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক, সে বিষয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিতর্ক করতে পারি, বিতর্কে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে হারিয়ে দিতে পারি। কিন্তু সত্য হলো - বিশ্বাসীদের এই কষ্ট "সত্য!" আমি এই কষ্ট নিজে অনুভব করেছি। কিন্তু সেই অজুহাতে প্রচলিত মতবাদ ও প্রথার বিরুদ্ধে একজন মানুষের স্বাধীন মুক্ত মত প্রকাশে যে কোনো ধরনের বাধা প্রদান গর্হিত বলেই আমি মনে করি। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন প্রচলিত মতবাদ ও প্রথার বিরুদ্ধে তাঁর নতুন মতবাদ প্রচার শুরু করেছিলেন, সমালোচনা করেছিলেন, তখন পৌত্তলিক আরব ও অন্যান্য অবিশ্বাসীরা কষ্ট পেয়েছিলেন। তাঁদের কষ্ট ছিলো "সত্য!" কিন্তু তাঁদের সেই কষ্টের কথা ভেবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যা বিশ্বাস করতেন, তা প্রকাশ ও প্রচারে পিছুপা হননি।

প্রতিটি "মতবাদ ও প্রথার"সমালোচনা হতে পারে ও তা হওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি সমালোচনা করার অপরাধে সেই মতবাদে বিশ্বাসী লোকেরা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সমালোচনাকারীকে নাজেহাল, অত্যাচার ওহত্যা করেন! তখন সেই মতবাদের সমালোচনা আরও কঠোরভাবে হওয়া উচিত। এর অর্থ এই নয় যে, এই মতবাদে বিশ্বাসী "মানুষদের" ঘৃণা করা। আমার মা-বাবা, স্ত্রী, কন্যা, পরিবার, সমাজ, দেশের মানুষ - এদেরকে ঘৃণা করার কল্পনাও আমি করতে পারি না। কিন্তু আমি জন্মসূত্রে যে-মতবাদ ও প্রথায় বিশ্বাসী হয়ে আর সবার মত জীবন শুরু করেছিলাম, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও তার পরের কিছু ঘটনা এই মতবাদ সম্বন্ধে আমাকে আগ্রহী করে তোলে। এই মতবাদ সম্বন্ধে এতদিনে যা আমি জেনেছি, কোনোরূপ "political correctness"-এর আশ্রয় না নিয়ে উপযুক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাইই আমি এই বইতে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি মানুষ হিসাবে এ আমার অধিকার।

মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদের "Anatomy dissection" ক্লাসে একটা আপ্তবাক্য স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। সেটি হলো, "মন যা জানে না, চোখ তা দেখে না (What mind does not know eye cannot see)।" শরীরের কোনো মাংসপেশি, শিরা, ধমনী, স্নায়ু কোথা থেকে উৎপত্তিহয়েছে, কোন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে দিয়ে তা গিয়েছে, যাবার সময় কোনো শাখা বিস্তার করেছে কি না, যদি করে সেটা আবার কোন দিক দিয়ে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে - ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞান যদি না থাকে, তবে চোখের সামনে থাকলেও তা প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। কিংবা যদিও বা তা দেখা যায়, তবে তাকে ভুল ভাবে চিহ্নিত করার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। যদি এ বিষয়ে বিশদ জ্ঞান থাকে, তবে এর উল্টোটি ঘটে।

বইয়ের কথা:

এই বইটির মূল অংশের সমস্ত রেফারেন্সেই কুরান ও আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের রচিত কিতাবগুলোর ইংরেজি অনুবাদ থেকে সরাসরি বাংলায় অনূদিত। এই মূল গ্রন্থগুলো লেখা হয়েছে আজ থেকে ১১৫০-১২৫০ বছরেরও অধিক পূর্বে, মুহাম্মদের মৃত্যু-পরবর্তী সবচেয়ে নিকটবর্তী সময়ের লিখা, যা এখনও সহজলভ্য। ইসলামের ইতিহাসের এই সব মূল গ্রন্থের (Primary source of annals of Islam) তথ্য-উপাত্ত ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত (Very clearly documented) ঐতিহাসিক দলিল। এই সব মূল গ্রন্থে যে-ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে, তা সাধারণ সরলপ্রাণ মুসলমানদের অধিকাংশেরই অজানা। শুধু যে অজানা, তাইই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের জানা ইসলামের ইতিহাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অত্যন্ত স্পষ্ট নথিভুক্ত ইতিহাসগুলো সাধারণ মুসলমানদের কাছে গোপন করা হয়, অস্বীকার করা হয়, অথবা মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার বিপরীতটি প্রচার করা হয়।

বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও তা সাধারণ মুসলমানদের অধিকাংশেরই মর্মপীড়ার কারণ হতে পারে, এই বিবেচনায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করা হয়েছে। আদি উৎসের এ সকল রেফারেন্সের ভিত্তিতেই বিষয়ের আলোচনা, পর্যালোচনা ও উপসংহার। আজকের পৃথিবীর ৭০০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১৬০ কোটি মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত, বাকি ৫৪০ কোটি ইসলাম-অবিশ্বাসী, যারা মুসলমানদের মত বিশ্বাস নিয়ে এই বইগুলো পড়েন না। এই বিশাল সংখ্যক অবিশ্বাসী জনগোষ্ঠী পক্ষপাতিত্বহীন মানবিক দৃষ্টিকোণের সাহায্যে কোনোরূপ "political correctness" ছাড়া এই সব নথিভুক্ততথ্য-উপাত্তের যেভাবে সম্ভাব্য আলোচনা ও পর্যালোচনা করতে পারেন, সেভাবেই তা করা হয়েছে।

ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে 'ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান' আবিষ্কারের একটা ফ্যাশন চালু হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের (Evidenced based knowledge) এই স্বর্ণযুগে, যখন মানুষ ১৪ কোটি মাইল দূরবর্তী মঙ্গল গ্রহে মহাকাশযান পাঠাচ্ছেন; কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরবর্তী গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সির খুঁটিনাটির কিনারা করছেন; এই চমকপ্রদ (magnificent) মহাবিশ্ব উৎপত্তির একদম আদিতে কী ঘটেছিল এবং পরবর্তী ১৩৫০ কোটি বছরে কী রূপে তার বিকাশ ঘটেছে - ইত্যাদি বিষয়ের চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করছেন; সেই একই যুগে অবস্থান করে একদল মানুষ বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, বিজ্ঞানের অবমাননা ও শ্লীলতাহানি করে 'ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান' প্রচার করে সাধারণ সরলপ্রাণ অজ্ঞ মানুষদের প্রতারিত করে চলেছেন। এই অপকর্মে তাঁরা যে-পদ্ধতিটি ব্যবহার করেন, তাকে "জল পড়ে পাতা নড়ে" পদ্ধতি বলা যেতে পারে। নমুনা:

‘"জল পড়ে পাতা নড়ে" এর মধ্যেই আছে বিজ্ঞানের যাবতীয় আবিষ্কারের 'ইঙ্গিত!'

১) এখানে “জল” অর্থে জলের উপাদান 'হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন' বোঝানো হয়েছে। 'বিগ ব্যাং (Big Bang)' এর পরে 'হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম' ছিলো সৃষ্টির আদি অ্যাটম (Atom)। মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুর আদি উপকরণ হলো অ্যাটম। পরবর্তীতে সৃষ্ট অন্যান্য সকল অ্যাটম সৃষ্টি হয়েছে এই 'হাইড্রোজেন’ থেকে। আর 'অক্সিজেন' আমাদের বেঁচে থাকার এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

২) এখানে "পড়ে" অর্থে Gravitational force বোঝানো হয়েছে, যা না হলে গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সি কোনোকিছুই সৃষ্টি হতো না। গ্রহ সৃষ্টি না হলে কোনো জীবের সৃষ্টি হতো না, আমরাও সৃষ্টি হতাম না। আবিষ্কারের আগে বিজ্ঞানের এই ইঙ্গিতটি লেখক কীভাবে জেনেছেন? সত্যিই আশ্চর্য!

৩) এখানে "পাতা" অর্থে সালোক সংশ্লেষণ (Photosynthesis) বোঝানো হয়েছে, যার ফলে উৎপাদন হয় অক্সিজেন। অক্সিজেনের অভাব হলে আমরা কি বাঁচতে পারতাম? ‘"জল পড়ে পাতা নড়ে"-এর এক একটি "শব্দ" বিজ্ঞানের এক একটি অভূতপূর্ব আবিষ্কারের ইঙ্গিত! কী আশ্চর্য!

৪) আর "নড়ে" এর মধ্যেই আছে বিজ্ঞানের দু'টি বিশাল 'ইঙ্গিত'।এখানে নড়ের এক অর্থ হলো 'বায়ু'! বায়ু ছাড়া কি কোনোকিছু নড়ে? নড়ে না। এখানে 'নড়ে' হলো "বায়ু, অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল, অর্থাৎ স্পেস!"  আর "নড়ে"-এর আরেক অর্থ হলো 'বল (Force)'! যেখানে বায়ু নেই সেখানে কোনো কিছু নড়াতে গেলে লাগে বল। এই 'বল ছাড়া সবকিছু অচল’!

কী আশ্চর্য! নিশ্চয়ই "জল পড়ে পাতা নড়ে"-এর রচয়িতা একজন নবী (ঈশ্বরের অবতার) ছিলেন। তাইই যদি না হবে, তবে আবিষ্কার হওয়ার আগেই কীভাবে তিনি বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক সমস্ত যুগান্তকারী আবিষ্কারের "ইঙ্গিত” দিতে পেরেছিলেন?’ 

সে কারণেই প্রথম অধ্যায়টির নাম দিয়েছি 'কুরানে বিগ্যান!' এই অধ্যায়ের নয়টি পর্ব  ও পর্ব-১৩ থেকে পাঠকরা কুরানে "বিজ্ঞানের" কিছু নমুনা জেনে নিতে পারবেন। দ্বিতীয় অধ্যায় - 'ইসলাম: উদ্ভট উটের পিঠে!' এতে সামগ্রিকভাবে কুরান ও তার অ্যানাটমি (Anatomy), ইসলাম প্রচার শুরু করার পর মুহাম্মদের সাথে কুরাইশদের বাক-বিতণ্ডা, যুক্তি-প্রতিযুক্তি, মুহাম্মদকে দেয়া তাদের 'চ্যালেঞ্জ', তাদেরকে দেয়া মুহাম্মদের চ্যালেঞ্জ - ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর 'মুহাম্মদের ব্যক্তি-মানস জীবনী (Psycho-biography)' অধ্যায় শিরোনামে পরবর্তী একশত তিনটি পর্বে হুদাইবিয়া সন্ধির বিস্তারিত আলোচনা পর্যন্ত মুহাম্মদের মদিনা জীবনের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। বাকি উপাখ্যান গুলো ধর্মকারীতে আগের মতই ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে। মক্কার নবী জীবনের ইতিহাস আলোচনার আগেই তাঁর মদিনার নবী জীবনের বর্ণনা শুরু করা হয়েছে এই কারণে যে আদি উৎসে বর্ণিত 'সিরাত' গ্রন্থে মুহাম্মদের মদিনায় নবী জীবনের বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে সমগ্র বইয়ের ৮২ শতাংশ জুড়ে। সাধারণ মুসলমানদের সিংহভাগই মুহাম্মদের মদিনা জীবন ইতিহাস সম্বন্ধে প্রায় সম্পূর্ণ অজ্ঞ।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার:

২০০২ সালে প্রয়াত ডঃ অভিজিৎ রায়ের একটি ছোট্ট ই-মেইল পাই। তিনি কীভাবে আমার ই-মেইল ঠিকানা জোগাড় করেছিলেন, তা আমি আজও জানি না। তিনি লিখেছিলেনতাঁর গড়া 'মুক্তমনা' ওয়েব সাইটের কথা ও তার ওয়েব লিংক। বাংলাভাষায় মুক্তমনের মানুষদের লেখা অসংখ্য আর্টিকেলসমৃদ্ধ একটি ওয়েব সাইট, যার হদিস তখন আমার জানা ছিল না। সেখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। ডঃ অভিজিৎ রায়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ২০১০ থেকে ২০১২ সালে 'মুক্তমনায়' ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত লেখাগুলোতে আমি ছিলাম নিয়মিত মন্তব্যকারীদের একজন। সে সময় অনেকেই আমাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন এ বিষয়ে কিছু লেখার জন্য। যাদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়, তাঁরা হলেন - অভিজিৎ রায়, তামান্না ঝুমু, আবুল কাশেম ভাই, আকাশ মালিক ভাই, সৈকত চৌধুরী, ব্রাইট স্মাইল, কাজী রহমান, আদিল মাহমুদ, রুশদি, ভবঘুরে, সপ্তক ও আরও অনেকে। তাঁদের উৎসাহেই মূলত এ বিষয়ে লেখার সিদ্ধান্ত। তাঁদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার এই লেখায় যে সমস্ত বইয়ের রেফারেন্স উদ্ধৃত হয়েছে, সেই সমস্ত বইয়ের লেখক ও প্রকাশকদের, যে সমস্ত ওয়েব সাইটের রেফারেন্স যুক্ত হয়েছে, সেই লেখকদের এবং যাদের নাম রেফারেন্স হিসাবে উদ্ধৃত হয়েছে - তাদের সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। সর্বোপরি সমস্ত পাঠকদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, যারা তাঁদের ব্যস্ত জীবনের কিছুটা সময় ব্যয় করে লেখাগুলো পড়ছেন।

আমি আশা করেছিলাম যে, বইটি লেখা সম্পূর্ণ করার পর তা ই-বুক আকারে তৈরি করা হবে। ক'দিন আগে একটা ই-মেইল পাই, যা আমাকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করে। ই-মেইলটি যিনি পাঠিয়েছেন তিনি হলেন "নরসুন্দর মানুষ!"জানতে পারলাম, গত চারটি বছর তিনি আমার লেখা প্রত্যেকটি পর্ব সযত্নে জমা করে রেখেছেন, বিশেষ অংশগুলো হাইলাইট করেছেন, প্রয়োজনীয় রেফারেন্সগুলো সংরক্ষণ করেছেন - আমার এইলেখার ই-বুক তিনি তৈরি করে দেবেন তাইতিনি নিজ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এমন একটি চমৎকার প্রচ্ছদসমৃদ্ধ ই-বুক তৈরি করেছেন, যা দেখে আমি মুগ্ধ! তাঁর এই নিষ্ঠা ও ভালবাসার বিনিময় দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই।

যে-মানুষটির সাহায্য, সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা ছাড়া এ লেখা প্রকাশ করা সম্ভব হতো না, তিনি হলেন "ধর্মপচারক!" গত চারটি বছর তিনি আমার প্রত্যেকটি লেখার প্রুফ রিড করেছেন, বিভিন্ন সময়ে অনুবাদে সাহায্য করেছেন ও পরামর্শ যুগিয়েছেন। আমি তাঁর কাছে ঋণী।

গোলাপ মাহমুদ
জুন ২৬, ২০১৬ সাল

শেখ'স শপ - ১০

লিখেছেন শেখ মিলন

২৮.
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষতা অনেকটা এরকম:

"আমি জ্বীনে বিশ্বাস করি না, কিন্তু "জ্বীন নেই বলে" জ্বীন-বিশ্বাসীদের অনভূতিতে আঘাত করা যাবে না। বরং জ্বীন-বিশ্বাসীদের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে আমাকেও তাদের সাথে জ্বীনের ভয়ে কাঁপতে হবে।"

২৯.
উপাসনা হচ্ছে (পণ্ড)শ্রম।
উপাসক হচ্ছে শ্রমিক।
পুণ্য হচ্ছে শ্রমের মজুরি (বাকি এবং ফাঁকি)।

উপাসক কোনোরকমে উপাসনা শেষ করেই পুণ্যের পুঁজি কতো জমা হলো না হলো, দেখাদেখি নাই, শুধু চাই আর চাই।
এই চাই, ওই চাই...

৩০.
সকালে এলাকার কয়েকজন নাস্তিকের সঙ্গে মত বিনিময় (৬জন, একজন সমবয়সী, বাকি সকলেই আমার বড় এবং তার মধ্যে একজন আমার শিক্ষক)।
দুপুরে জুম্মার নামাযে মসজিদে হাজিরা দিলাম।
তারপর গরুর মাংস সহযোগে দুপুরের আহার সারলাম।
বিকেলে এলাকার এক কনসার্টে গান শুনলাম।
সন্ধ্যায় একটি মিলাদে অংশ নিলাম।
তারপর ৬ নাস্তিক একযোগে শূকরের মাংস দ্বারা রাতের আহারকার্য সম্পন্ন করলাম।

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

ঈশ্বরের ইতিহাস - ১

লিখেছেন মেসবাহ উস সালেহীন

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে নতুন একটা সিরিয়াল দেখানো হয়েছে। দি স্টোরি অফ গড। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এই প্রোগ্রামটা। প্রোগ্রামের হোস্ট মর্গান ফ্রিম্যান বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় যান, সেখানকার মানুষদের ধর্মীয় আচার-আচরণ দেখেন, মানুষদের সাথে কথা বলেন আর তারপর এগুলোর মাঝে মিল-অমিল খোঁজার চেষ্টা করেন। প্রথম পর্বের বিষয় হচ্ছে মৃত্যু। এখানে দেখানো হয়েছে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা, প্রাচীন ইনকা সভ্যতার মৃত্যু নিয়ে বিশ্বাস। একইসাথে সমসাময়িক হিন্দু আর খ্রিষ্টান ধর্মবিশ্বাসে মৃত্যুর কনসেপ্ট নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। বিজ্ঞান নিয়েও কিছুটা টানাটানি করেছে, কিন্তু সেটা খুব বেশি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়।

প্রাচীন মেক্সিকোয় (ইনকা কিংবা এ্যাজটেক সভ্যতায়) মৃত্যু কিংবা রক্ত খুবই প্রয়োজনীয় একটা ব্যাপার ছিল। তাদের বিশ্বাস ছিল, সূর্য দেবতার উদ্দেশে রক্তপাত করা হলে সেটা সূর্যকে শক্তি যোগাবে। সূর্য সেই শক্তি নিয়ে প্রতিদিন আকাশে আসবে, আলো বর্ষণ করবে। সূর্য শক্তিহীন হয়ে গেলে পুরা পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যাব। তাই ওদের কমিউনিটির অনেকেই স্বেচ্ছায় নিজেকে দেবতার উদ্দেশে বলি দিতে যেত মন্দিরে। মন্দিরের পুরোহিত তার বুক কেটে হৃদপিণ্ড বের করত। লোকটা পরম তৃপ্তির সাথে দেখত, কীভাবে তার শরীরের হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত বের হচ্ছে, কীভাবে সেই রক্ত পেয়ে সূর্যদেব শক্তিশালী হচ্ছে। একটা তৃপ্তি নিয়েই সে মারা যেত - এই ভেবে যে, "আমার মৃত্যুতে আমার পুরা কমিউনিটি উপকৃত হচ্ছে।"

মিশরের রাজার মৃত্যুর পরে বিশাল বিশাল পিরামিড বানানো হত। পিরামিডের কেন্দ্রে রাজার কফিন রাখা হত। পিরামিডের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন দোয়া-দরুদ-মন্ত্র লেখা থাকত। মৃত্যুর পরে রাতের বেলা রাজার আত্মা জেগে উঠবে। রাজা তখন তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। এই যাত্রাপথে অনেক দুষ্ট আত্মা-জ্বিন-ভূত তাকে বাধা দেবে। দোয়া-দরুদগুলো তাকে রক্ষা করবে। তবে ইসলাম ধর্মের কনসেপ্ট অনুযায়ী আমরা যে-ধরনের যাত্রার কথা বুঝি, সেরকম কিছু নয়। ইসলামের মিথ অনুযায়ী, মৃত্যুর পরে আত্মাকে পুলসেরাত নামে একটা ব্রিজ পার হতে হবে। এই ব্রিজের তলায় আগুন (দোজখ) আর ব্রিজ পার হতে পারলে বাগান (বেহেস্ত); অনেকেই তাকে দোজখে টেনে নিয়ে যেতে চাইবে। তবে একবার কেউ যদি পুলসেরাত পাড়ি দিয়ে বেহেশতে ঢুকতে পারে, তাহলে সে সারাজীবন ওই বেহেশতেই থাকবে।মিশরীয়দের বিশ্বাস সেই রকম ছিল না। রাজা সারারাত যুদ্ধ করে করে তার গন্তব্যে পৌছাবে। ভোররাতে আবার তার আত্মা কফিনে ফিরে আসবে। পরদিন রাতে আবার তার আত্মা নতুনভাবে যাত্রা শুরু করবে। এইভাবে প্রতিদিন একই সাইকেল চলবে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, রাজা যদি যুদ্ধে জিততে পারে, তাহলেই পরদিন সকালে সূর্য উঠবে। রাজা যদি হেরে যায়, তাহলে আর সূর্য উঠবে না। সূর্য না উঠলে পুরা দেশের ক্ষতি। এই জন্য দেশের মানুষ এত কষ্ট সহ্য করেও পিরামিড বানাতো। অপরদিকে রাজা মরে গেলেও কিন্তু দেশের প্রতি তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। প্রতিরাতে তার কর্তব্য হচ্ছে - অপদেবতাদের সাথে যুদ্ধ করে করে সূর্যদেবতাকে মুক্ত করা।

ইহুদিদের আদি পুস্তক ওল্ড টেস্টামেন্টে মৃত্যুর পরে অন্য কোনো জীবনের উল্লেখ নেই। কিন্তু যিশু এসে মৃত্যুর পরে অন্য এক জীবনের কথা বলেছেন। যিশু নিজে সকল মানুষের পাপ বহন করে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। নিজে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন। তাই অন্য সব খ্রিষ্টানের আর কোনো পাপ নেই। অন্য খ্রিষ্টান যদি স্বীকার করে নেয় যে, যিশু আমার রক্ষাকর্তা, তিনিই আমার সব পাপ নিয়ে নিয়েছেন - এই বিশ্বাসের জন্যই সে স্বর্গে যাবে। ইসলাম নিয়ে এই এপিসোডে কোনো আলোচনা হয়নি। ইসলামের পরকাল অনেক স্পস্ট এবং বিশদ। এই পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী এবং মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবন। অনন্ত জীবনে হয় আপনি বেহেশতে সুখে থাকবেন অথনা দোজখে অনেক কষ্টে থাকবেন। এই পৃথিবীতে আপনার কাজের ওপরে আপনার পরকালের স্থান নির্ধারিত হবে।

হিন্দু ধর্মের কনসেপ্ট অনুযায়ী - আপনার মৃত্যুর পরে আপনার পুনর্জন্ম হবে। এই জন্মে অনেক পাপ কাজ করলে আপনার জন্ম হবে মানুষের চেয়ে খারাপ কোনো প্রাণী হিসাবে কিংবা খারাপ মানুষ হিসাবে। আর এই জন্মে অনেক ভাল কাজ করলে আপনার নতুন জন্ম হবে অনেক ভাল পরিবারের মানুষ হিসাবে কিংবা মানুষের চেয়েও উন্নত কোনো প্রাণী হিসাবে। অনেক ভাল কাজ করলে তখন আপনার আত্মা এতই সুপিরিয়র প্রাণী হয়ে যাবে যে, সেটি ঈশ্বরের সাথে বিলীন হয়ে যাবে। একে বলে মোক্ষলাভ। এর পরে আর কোনো জন্মান্তর হবে না। 
ইসলামি সুফিজম-এর লক্ষ্যও কিন্তু এটাই। খোদার সাথে নিজেকে ফানা ফিল্লাহ করে দেওয়াই উদ্দেশ্য। নামাজ-রোজা কিংবা বেহেশত মূল উদ্দেশ্য নয়। হিন্দু ধর্মের মূল লক্ষ্য পুনর্জন্ম নেওয়া নয়, বরং মোক্ষলাভ করা। এই জন্য অনেক শর্টকাট পথ আছে। যেমন বেনারস কিংবা অন্যান্য তীর্থক্ষেত্রে শবদাহ করলে আত্মা মোক্ষলাভ করবে বলে ধারণা করা হয়। হিন্দুদের শবযাত্রা অনেক উৎসবমুখর হয়। কারণ এই মৃত্যুতে শোকের কিছু নেই। নতুন একটা জীবনের প্রথম পর্ব এই মৃত্যু।

সারমর্ম: মরগান ফ্রিম্যান একজন গীর্জার পাদ্রীকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি কেন এই লাইনে এলেন? তিনি বললেন, আমি একবার পানিতে ডুবে গিয়েছিলাম। প্রায় ১৫ মিনিট পানির নিচে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা রঙিন আলো। গথিক ডিজাইনের গীর্জার কাচের ভেতর দিয়ে যেমন রঙিন আলো আসে, সেই রকম। সেই আলোর ভেতর দিয়েই আমি যিশুকে দেখতে পেলাম। মনে হল যিশু আমার কাছে এসে কিছু স্বর্গীয় বাণী বলে গেলেন। ১৫ মিনিট পরে আমাকে উদ্ধার করা হয়। নতুন জীবন ফিরে পেয়ে আমি এই পেশায় এলাম।

একজন হার্টের ডাক্তারের কাছে মরগান ফ্রিম্যান তার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলেন। সেই ডাক্তার বললেন, মৃত্যুর পূর্বে সব ধর্মের মানুষই এই ধরনের হ্যালুসিনেশন ফিল করে। তারা রঙিন আলো দেখে। অনেক অবাস্তব জিনিস দেখে। অনেক সময় দেখে তাদের মৃত আত্মীস্বজনকে।মানুষের ব্রেইনের স্ট্রাকচারের কারণ এমন ঘটনা ঘটে। তবে তিনি নতুন একটা তথ্য দিলেন। আমাদের হৃদপিণ্ড কিংবা ব্রেইন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার পরেও আমাদের শরীরের সব সেল মারা যেতে কিছুটা সময় লাগে। এই সময়েও মানুষের সচেতনতা কাজ করে।

মানুষ সব সময়েই চেয়েছে অমর হয়ে থাকতে। মৃত্যুর ভয় তাকে তাড়া করেছে সব সময়। সান্ত্বনা হিসেবে সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কল্পগাথা বানিয়েছে। সব কল্পগাথার মোটামুটি কমন বিষয় হল — এই মৃত্যুর পরেও আরেকটা জীবন আছে। মিশরের ফারাওরা পিরামিডে নিজের নাম খোদাই করেছে অমর থাকার জন্য। মরগান ফ্রিম্যান জোক করে বলেছেন, আমিও অমর। আমার ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে। আমি মারা গেলেও এই অ্যাকাউন্ট থাকবে।

গরুপূজারি গাধাগুলো - ১৫৬

পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে

নবী সমীপে খোলা চিঠি - ৪

লিখেছেন পুতুল হক

মাননীয় নবী,

ভালোবাসা জানবেন। আমি মাঝে মাঝে আপনার কথা ভেবে অবাক হই। আপনার পেশায় আপনি প্রচণ্ডভাবে সফল, একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর কারণ আমার কাছে যা মনে হয়, তা হল - আপনি আপনার সময়ে একজন আধুনিক মানুষ। আপনার সে সময়কার উম্মতদের আপনি কখনো পেছনে ফিরে যেতে বলেননি। তাদের বলেননি কাপড় ছেড়ে আল্লাহর দেয়া গাছের ছাল পরো। যুদ্ধে ব্যবহার করেছিলেন সে সময়কার আধুনিক অস্ত্র। জবের রুটি খেয়েছেন, কাঁচা জব চিবিয়ে খাননি। তখনকার সময়ে মানুষের অর্জিত জ্ঞানের আপনি পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করেছেন।

নবী, আপনি কোনোকিছুর জন্য আল্লাহর মুখাপেক্ষী ছিলেন না। আপনি নির্ভরশীল ছিলেন খাদিজার সম্পদ, অনুসারীদের বাহুবল আর আপনার বুদ্ধির ওপর। প্রাথমিকভাবে এই তিন শক্তি আপনার সফলতার সূত্রপাত ঘটিয়েছিল। আল্লাহকে আপনি সৃষ্টি করেছেন অপরদের জন্য। অনুসারীরা তাদের অর্জিত সফলতার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে। ব্যর্থতাকে আল্লাহর ইচ্ছা বলে মেনে নেবে। তাদের মন, তাদের শরীর আপনি আল্লাহ নামের কাল্পনিক রশি দিয়ে বেধে ফেলেছেন। এ সব কিছু আপনি করেছেন আপনার স্বার্থে।

যিশু যদি ঈশ্বরের স্রষ্টা না হতেন, তবে তিনি যীশু হতেন না। আপনি যদি আল্লাহর স্রষ্টা না হতেন, তবে আপনি কি হতেন? সৃষ্টিকর্তারা সব সময় আপনাদের ওপর নির্ভর করেছেন, আপনারা তাদের ওপর নির্ভরশীল নন।

বেহেশতে আপনি সেরা খাবার খাবেন, তাতে দুনিয়াতে আপনার ভালোমন্দ খাওয়া আটকে ছিল না। বেহেস্তে আপনি যৌনতার জন্য সেরা হুর পাবেন, তাতে দুনিয়াতে একের পর এক বিবি ও দাসী গ্রহণ বন্ধ ছিল না। আপনি জানতেন না, মৃত্যুর পর কী আছে। কাজেই জীবনকে উপভোগ করা আপনি থামিয়ে রাখেননি। যখন, যেভাবে, যতটুকু সম্ভব, আপনি জীবন উপভোগ করেছেন চুমুকে চুমুকে।

আপনি কি জানতেন, আপনার মৃত্যুর কয়েক মাসের মধ্যে আপনার প্রিয় কন্যা নিদারুণ মনের কষ্টে মারা যাবেন? আপনি কি জানতেন, আপনার প্রিয় হাসান-হোসেন এমন করুণ মৃত্যুর শিকার হবেন? আপনি জানতেন না, নবী। তারা হয়তো আপনার প্রতিটি কথা বিশ্বাস করতো। আপনি আপনার একান্ত প্রিয় মানুষদের মিথ্যা বলেছিলেন। আপনার ধূর্ততার শাস্তি পেয়েছে আপনার বংশধরেরা।

আপনার সময় থেকে আমার সময়ের ব্যবধান প্রায় পনেরশ বছর। মহাকালের কাছে এ সময় কিছুই নয়। আমি বুঝতে পারি, আপনার বয়ান করা কল্পকাহিনী কতটা বানোয়াট আর ভুলে ভরা। আগামীর মানুষগুলো আরো বেশি করে বুঝতে পারবে।

আপনি সেকালে একজন আধুনিক মানুষ হয়েও যে-ভুল করেছিলেন, তা হল - আপনি বুঝতে পারেননি যে, আধুনিকতা গতিশীল, তা এক জায়গায় থেমে থাকে না। গত পনেরশ বছরে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। মুসলমানদের উন্মাদনার কারণ - তারা বর্তমানের সাথে আপনার সময়ের সুতো ধরে রাখে। তারা বর্তমানকে অস্বীকার করে পেছনে যায় না, আবার পেছনটাকেও ছাড়ে না। এমন অবস্থা চলতে থাকলে তারা হয় পৃথিবীকে ধ্বংস করবে, নয়তো নিজেরা ধ্বংস হবে। মানুষের জীবনের মূল্য আপনার কাছে কখনো ছিল না। তবুও আপনার কাছে জানতে ইচ্ছে করে, আপনি কি চাইবেন কোটি কোটি মানুষ, যারা আপনাকে মন দিয়ে ভালোবাসে, প্রতিনিয়ত তারা এমন উন্মাদের জীবন কাটাবে?

সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬

ধর্ম, রাজনীতিবিদ ও ধর্মের তামাশা

লিখেছেন লিংকন রায় অন্তর

’৯২ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ভেঙেছিল ভগবানের দল এবং সে দাঙ্গার ফলে এদেশের ভাঙা হয়েছিলো বহু মন্দির। তখন এক বুড়োকে আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম, "নানা, মন্দির কারা ভেঙেছে?" উত্তরে বুড়ো বলেছিলেন, "ভগবানের ঘর খোদায় ভেঙেছে।"... যাহোক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যদি এহেন কাজ করতে পারে, তাহলে জনসাধারণের ভরসার স্থান আর থাকলো কোথায়?

কোনো এক সময়ে এক বড়ো ভাইয়ের এক খ্রিষ্টান সহকর্মী নিখোঁজ হলো, তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। দু’দিন পর পত্রিকার একটি খবর দেখে তার আত্মীয়-স্বজন, পুলিশসহ ১২ নং মিরপুর গিয়ে একটি কবর খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করে। তখন মিরপুরে এতো ঘনবসতি ছিল না। ১২ নম্বরের কোনো এক কানাগলিতে তার এক বন্ধু তাকে কায়দা করে এনে ভাড়াকরা গুণ্ডা দিয়ে খুন করে একটি বস্তির ঘরে ফেলে গেলে স্থানীয়রা তাকে সনাক্ত করার জন্য তার প্যান্ট খুলে দেখলো তার লিঙ্গ কাটা নেই, তাই তারা ধরে নিলো, সে হিন্দু। অতঃপর ঠাকুর ডেকে হিন্দুশাস্ত্র মতে মুখে অগ্নিসংযোগ করে তাকে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ তিনি হিন্দুদের ভগবানের ইচ্ছাতে তার নিকট যাবার মতো মন্ত্র সঙ্গে নিয়ে গেছেন! লাশ উদ্ধারের পর আবার আত্মীয়-স্বজনরা পাদ্রি ডেকে খ্রিষ্টান ধর্মমতে মন্ত্রোচ্চারণ করে পুনরায় কবর দেয়। বড়ো ভাইয়ের ওই সহকর্মী তাহলে কার কাছে গেলো, ভগবান নাকি ঈশ্বরের কাছে? হিন্দুর ভগবান কি খ্রিষ্টানের ঈশ্বরের কাছে পরাজিত হলো?

আর একটি ঘটনা, এদেশের নয়, বিদেশের। এক ব্যক্তি হুজুর ডেকে তার মৃত ছেলেকে কোরান শরীফের বিধানমতে সমস্ত শেষকৃত্যানুষ্ঠান শেষে যখন কবরস্থানে নিয়ে যাচ্ছিলো, তখন তার হিন্দু ধর্মালম্বী স্ত্রী বাধা দিলো। ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীর অমতে কিছু করতে পারলেন না, তিনি ছেলের লাশ মায়ের হাতে সঁপে দিলেন। মা ঠাকুর ডেকে হিন্দু শাস্ত্রমতে সৎকার করলো। তাহলে মুসলমানের আল্লা কি হিন্দুর ভগবানের নিকট পরাজিত হলো? আর ওই ছেলেটিই বা কার কাছে গেলো?

ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় আমরা এতোটাই অন্ধ যে, মনুষ্যত্ববোধ এখানে কোনোই কাজ করে না। প্রশ্ন হলো: খোদা-ভগবান-ঈশ্বর এরা কি ভিন্ন ভিন্ন সত্তা, নাকি একই সত্তা? অনেকে বলেন, যে নামেই ডাকো না কেন, তারা এক। কিন্তু তা কি করে? তাহলে কেন এমন বিদঘুটে ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ তারা তাদের নবী-রাসূল, দেবতাদের মাধ্যমে প্রচার করে পৃথিবীতে এক মহারক্তারক্তি বাঁধিয়ে রেখেছে? আদৌ তারা কি মানুষের শান্তি চায়? যাহোক, আমরা এমনই ধার্মিক যে, মৃতদেরও এর হাত থেকে রেহাই নেই। আমাদের ধার্মিকতা দেখে মনে হচ্ছে, আমরা দিন-দিন ধার্মিকই হচ্ছি কিন্তু, মানবতা হারাচ্ছি। আমরা প্রতিনিয়তই অতিলোভী হচ্ছি, তাই দেখে আল্লা-ভগবানেরাও কি লোভী হচ্ছে? ধর্মও নির্দিষ্ট করে দেয়নি যে, কতো বেশি ধার্মিক হলে মানবতা ভুলুণ্ঠিত হবে না? কতো বেশি লোভী হলে তা সর্বোচ্চ লোভ? কতো বেশি ধনী হলে সর্বোচ্চ ধনী? কতো বেশি হিংস্র হলে তা হিংস্রতা? কতো বেশি পশু হলে তা পশুত্ব? কতো ধন-সম্পদ লুটতরাজ যথেষ্ট? কতো গরীবের জায়গা-জমি দখল যথেষ্ট? কতো ক্ষদ্র ব্যবসায়ী গিলে খাওয়া যথেষ্ট? কতো বেশি লাভ পেলে তা সর্বোচ্চ লাভ? কতো বড় চুরি বিচারের কাঠগড়ায় ওঠার জন্য যথেষ্ট? কতোখানি প্রতারণা হলে প্রতারণা বলা হবে না? রাষ্ট্রের কতো বড় অর্থনৈতিক ক্ষতিকে ক্ষতি বলা হয়? কতো বড় স্টকমার্কেট কেলেংকারিকে কেলেংকারি বলা যাবে? কতো বেশি জালিয়াতি করলে তাকে জালিয়াত বলা যাবে? কিছুই বলা যাবে না, কারণ ক্ষমতাধরদের হাতেই ধর্ম এবং রাষ্ট্রের সব চাবিকাঠি। সমাজে ক্ষমতাধর ধার্মিকরা, রাষ্ট্রে ক্ষমতাধর অসৎরা। তাই তারা যা করে, তাতে সাধারণের সমর্থন বা মতামতের তোয়াক্কা করে না। ক্ষমতা না থাকলে ছেঁচড়া চোর হওয়া যায়, কিন্তু প্রকৃত দুর্নীতিবাজ হওয়া যায় না। তাই তো আমরা সকলেই চাই ক্ষমতা, হোক তা ধর্মীয়, হোক তা রাষ্ট্রের ক্ষমতা। জাতিগতভাবে আমরা আর কতো ঘুষ খেলে তা পর্যাপ্ত হবে? কতো বেশি দুর্নীতি করলে আমরা তৃপ্ত হবো? দুর্নীতিতে কতোবার প্রথম হলাম, কিন্তু তাতে তৃপ্ত নই, অতৃপ্তি আমরা এখন ছুঁয়েছে হিমালয়, এখন ভাঙবো নিজেদের রেকর্ডখানি।

দুর্নীতিই তো আরো ক্ষমতাবান হওয়ার সিঁড়ি। অতি-মুনাফা, অতি-ক্ষমতা, অতি-আমিত্ব, অতি-অহংকারই আজকালকার সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার গুণাবলী। কতো বড় নেতা যথেষ্ট বড়ো নেতা? কতোখানি ক্ষমতা যথেষ্ট ক্ষমতা? কতো গলাবাজি যথেষ্ট গলাবাজি? কতো অভিনয় যথেষ্ট অভিনয়? কতো ইন্ডাস্ট্রির মালিক যথেষ্ট? কতো বেশি জাহাজ-উড়োজাহাজ থাকলে যথেষ্ট? কতো বেশি ট্যাক্স ফাঁকি যথেষ্ট? কতো বেশি নকল টাকা, নকল সার্টিফিকেট তৈরি যথেষ্ট? কতো বেশি চেক জালিয়াতি যথেষ্ট? খাদ্যে কতো বেশি ভেজাল দেওয়া যথেষ্ট? কতো বিষ দিয়ে ফল, শাক-সব্জি, দুধ, মাছ... সংরক্ষণ যথেষ্ট? কতো বেশি ডাক্তারি ফি নিলে তা পর্যাপ্ত? কতো বেশি ভূমিদখল করলে ভূমিদস্যুদের বিচার হবে? কতো বেশি গরিব চুষলে তা অন্যায়ের তালিকায় পড়বে? কতো বেশি বিখ্যাত হলে যথেষ্ট? কতো বেশি সময় ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা যথেষ্ট? কতো বেশি ধার্মিক হলে তা মনুষ্যত্ব নষ্ট করে না? কতো মিলিয়ন টাকা হলে তৃপ্ত হবো, কতো বিলিয়ন যথেষ্ট বিলিয়ন? এক জীবন পার করতে কতো বিলিয়নের প্রয়োজন? কতো বেশি টাকা হলে একজন মূর্খও সমাজের/রাষ্ট্রের/রাজনীতির নেতৃত্ব পায়? কতো টাকা হলে একজন মানুষ সুখী থাকবে, তৃপ্ত হবে? কতো বেশি টাকা হলে পরমায়ু কিনতে পারা যায়? কতো বেশি ক্ষমতাধর হলে তা যথেষ্ট, ধর্ম তার সীমানা নির্ধারণ করে দেয়নি, তাই আমাদের লোভেরও সীমা নেই। ধর্মকে কেউ অপমান করলে তার মুণ্ডুপাত না ঘটিয়ে ছাড়ে না যে-জাতি, সে জাতির এ অধঃপতন কেন?

রাজনৈতিক দুর্বাত্তায়নের বিরুদ্ধে ধার্মিকরা একদমই চুপ কেন? প্রতিনিয়তই দেখা যায়, ধর্মীয় ও বিবিধ রাজনৈতিক দল এবং জনসাধারণ চিৎকার করে 'ধর্ম গেলো ধর্ম গেলো' বলে। কিন্তু নৈতিকতা যে কবেই চলে গিয়েছে, সে বিষয়ে কারো হুঁশ নেই। কারণ এটা ধার্মিকদের দেশ, মানবতার দেশ নয়।

ধর্মের চিড়িয়াখানায় - ৪

লিখেছেন ধর্মহীন জিরাফ

১৬.
মুহম্মদ নারীকে কুকুরের সাথে তুলনা করলে হয় নারীর 'মর্যাদা', আর শফী হুজুর তেঁতুলের মত ভিটামিন 'সি' সমৃদ্ধ নারীপ্রিয় ফলের সাথে তুলনা করলে হয় 'অমর্যাদা'?

আপনারা এমুন করেন ক্যান?

১৭.
ধর্ম আল্লাহর, অথচ চাপাতি হাতে তা রক্ষা করতে হয় মানুষকে। এর থেকে বড় রসিকতা আর কী হতে পারে!

১৮.
নিধার্মিক শত্রুকেও বিশ্বাস করা যায়, যেটা যায় না নিজের ধর্মান্ধ ভাইকেও।
সে আপনি যতই ভালো হোন না কেন, কারণ সে ধর্মের জন্য যে কোনো কিছু করতে পারে।

১৯.
ধর্ম দিয়ে এই গ্রহে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে যে-পরিমাণ রক্তপাত প্রয়োজন, সেই পরিমাণ রক্ত পুরো মানবজাতির শরীরে নেই।

২০.
যে-দেশে নাস্তিকের সংখ্যা যত বেশি, সে দেশ জ্ঞানে-বিজ্ঞানে তত বেশি সমৃদ্ধশালী, তত বেশি উন্নত।
গোঁয়ার না থেকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নত রাষ্ট্রগুলোর দিকে একবার তাকান, বুঝতে পারবেন।

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬

ইছলাম ত্যাগের কারণসমূহ - ৩৩

ব্রিটেনের কাউন্সিল অভ এক্স-মুসলিম নামের সংগঠনের উদ্যোগে #ExMuslimBecause নামে টুইটারে একটি প্রচারণা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। প্রাক্তন মুছলিমরা উপস্থাপন করছে ইছলাম ত্যাগের বিবিধ কারণ। অতি দীর্ঘ ও ক্রমবর্ধমান এই কারণ-তালিকা থেকে কিছু সরস ও সিরিয়াস কারণ অনুবাদ করে প্রকাশ করা হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে। এতে যুক্ত করা হচ্ছে/হবে ধর্মকারীর ঠিকানায় পাঠানো লেখা/ছবি/ভিডিওও।


Primal Tom: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ সঙ্গীত, সেক্স, আমোদপ্রমোদের উদ্দীপক দ্রব্য, চিত্রকলা, স্বাধীন অনুসন্ধান, সামাজিক সঙ্গী কুকুর - সব হারাম। ফাক অফ!

WOOTS: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ আমি ভালোবাসি জ্যাজ, মানবাধিকার, এক কিতাব ছাড়া আরও পুস্তকপাঠ, ভালোবাসি প্রশ্ন করতে। এবং ধর্ম হচ্ছে একটি কারাগার, যা ভেঙে ফেলা প্রয়োজন আমার।

Saudi Atheist: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ কারণ ইছলাম একটি যৌনবৈষম্যবাদী, সমকামবিদ্বেষী, সন্ত্রাসী ধর্ম।

AtheistInHijab: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ যখন আমি পড়েছিলাম, কাবাঘরে অবস্থিত মূতিগুলো নবী নিজ হাতে ভেঙেছে, আমি আমার বিবেক দিয়ে তার এই কীর্তির ন্যায্যতা দিতে পারিনি।

Halima B: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ আখিরাতের জন্য প্রস্তুতির চেয়ে বর্তমান জীবনের গুরুত্ব নিশ্চয়ই অনেক বেশি। গুনাহ নামের ভিত্তিহীন অনুভূতিমুক্ত জীবন উপভোগ করতে পারাটা অত্যন্ত আনন্দের ব্যাপার।

Elyzcheva: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ কে আমার শরীর স্পর্শ করবে ও দেখবে, সেটা সম্পূর্ণভাবে আমার সিদ্ধান্ত - কোনও এক নারীবিদ্বেষী নবী বা কোনও আধিপত্যপ্রবণ আল্যার নয়।

Nagla: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ আমি আমার জীবনটা যাপন করতে চাই। কখন বেহেশতে যাবো, সে কথা ভেবে তা স্থগিত রাখতে চাই না।

macaryos: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ ইছলাম অনুসারে, আমি আমার জীবনের প্রিয়তম ব্যক্তির সঙ্গে থাকতে পারবো না, কারণ সে কাফের।

Steph: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ যৌনবাতিকগ্রস্ততা, লিঙ্গভিত্তিক পৃথকীকরণ (segregation), পর্দাপ্রথা এবং আমার শরীর বিয়ক বাতিকগ্রস্ততা - আমার পোশাকের ধরন সব সময়ই অসহীহ্ বলে গণ্য করা হতো!

Ex-Moslim: আমি প্রাক্তন মুছলিম, কারণ আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে, বেহেশত নামে একটি স্থান আছে, যেখানে যাবে শুধু মুছলিমেরা, বাকিরা দোজখের আগুনে পুড়বে।

জাকির নায়েকের ‘কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান’ এবং তার যুক্তিখণ্ডন - পর্ব ১

লিখেছেন Enigmatic Jihad

বর্তমানে ইসলামের জগতে জাকির নায়েক এক অন্যতম নাম। ‘কুরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান’ নামে তার একটি বই আছে, যা মুসলিমদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ও তাদের গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার। বইটি প্রথমবার পড়েই বুঝে গিয়েছিলাম বইয়ে বর্ণিত নিগূঢ় জ্ঞান সম্পর্কে। অনেকদিন থেকেই ইচ্ছা ছিলো বইটি সম্পর্কে কিছু লেখার। তবে সময় ও সুযোগ কোনোটিই হয়ে উঠে নি। 

জাকির নায়েক যে একজন ভণ্ড ও ধাপ্পাবাজ লোক, তার প্রমাণ নেটে অসংখ্য ছড়িয়ে আছে। আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো বিবর্তন সম্পর্কিত তার ৫ মিনিটের একটি লেকচারে ২৫ টি ভুল (ভিডিওটি বাংলায়) বের করা একটি ভিডিও। যদিও সেটা অনেক দিন আগের ঘটনা। তবে জাকির নায়েকের এই আধুনিক বিজ্ঞান সম্পর্কিত বিশেষ কোনো লেখা আমি খুঁজে পাইনি। আসুন, জানি কোরান ও জাকির নায়েক কী বলে, আর আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে।

তার 'কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান' বইটির অনুবাদ প্রকাশ হয় ২০০৯ সালে, ঢাকা পিস পাবলিকেশন থেকে। অনুবাদ করেছেন মোঃ আব্দুল কুদ্দূস। ২০১৫ সালে যার নতুন সংস্করণ করা হয়। এছাড়া 'জাকির নায়েকের লেকচার সমগ্র' নামে আরেকটি বই রয়েছে, যেখানেও কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান বিষয়টি উঠে এসেছে। বইটির প্রথমেই অনুবাদক ও প্রকাশক তাদের নিজ নিজ মতামত সহ কিছু কথা লেখেন। এরপর জাকির নায়েকের জীবনী নিয়ে ৬ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ আছে। এবার আসি বইটির মূল প্রসঙ্গে। বইটির সূচিপত্রের প্রথম বিষয়টি হচ্ছে ‘কোরআনের চ্যালেঞ্জ’। 

১. কোরআনের চ্যালেঞ্জ: প্রথমেই জাকির নায়েক কোরআনকে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট আরবি সাহিত্য বলে অভিহিত করেছেন। সে যাই হোক, তর্কে না গিয়ে মুখ্য আলোচনায় ফিরে আসি। কোরআনের যে-চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তা হলো সূরা বাক্বারার ২৩-২৪ নং আয়াত।
এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো। আর যদি তা না পার-অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য। (সূরা বাক্কারা, ২৩-২৪)
ঠিক আছে, আপনারা Origin of Species by means of Natural Selection-এর মত একটি বই লিখে দেখাতে পারবেন? পারবেন না, কারণ ক ও খ কখনই এক হয় না। বই কেন, একটা চ্যাপ্টারও লিখতে পারবেন না। আর আমি একটা বই লিখলে তাতে কোনো ভুল ভ্রান্তি আছে কি না, তা পাঠকই বিচার করবেন। আমি যদি বইয়ের শুরুতে লিখে দিই যে, এতে কোনো ভুল নেই, এটি সকল ভুলের ঊর্ধ্বে, তাহলেই তো আর বইটি ভুল-ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে হয়ে যায় না। আর কোরআনের বিপক্ষেও সারা দুনিয়ায় হাজার হাজার মানুষ চ্যালেঞ্জ করেছে। তাদের চ্যালেঞ্জের জবাবও ইসলাম বা জাকির নায়েক কেউ দিচ্ছেন না। একটি জলজ্যান্ত উধাহরণ দেয়া যাক। টিম মিনচিন নামের একজন কমেডিয়ান, যিনি কিনা একাধারে গায়ক, পিয়ানোবাদক, গিটারবাদক, তিনি তার এক গানের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে। এমনকি তিনি তার পক্ষে বাজি ধরেছেন তাঁর পিয়ানো, তাঁর একটি পা এবং তাঁর স্ত্রী। (এই পোস্টে গিয়ে অপূর্ব লিরিকসসহ সেই গানটি শুনে নেয়া যাবে। - ধর্মপচারক)

কোথায়, তার চ্যালেঞ্জের জবাব কি জাকির নায়েক দিয়েছেন? উক্ত বাক্কারা অর্থাৎ The Cow সূরার মাধ্যমে মানুষকে যে সত্যিকারের Cow বানানো হয়েছে, তা মানুষ এখনও বুঝতে পারে না। 

নিত্য নবীরে স্মরি – ২৪৩

পূর্ণাকারে দেখতে ছবির ওপরে ক্লিক করতে হবে

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

মর্যাদা চাই না, ইসলাম সামলা!

লিখেছেন রহমান পৃথু

চীনা মেয়েরা জামাকাপড়-চালচলনে ইউরোপ-আমেরিকার মেয়েদের মত খোলামেলা। স্তনের আভাস দেখা যায় - তবুও কোনো টিজ নেই। চুরি করে কোনো ছেলে বুক বা দেহ দেখছে - চোখে পড়েনি। মেয়েরা রাস্তাঘাট, যানবাহন বাস আন্ডারগ্রাউন্ডে চলাফেরা করছে - স্বাধীন। 

জাকির নায়েক ও মুসলমানরা মিথ্যা বলে - ইউরোপ আমেরিকায় নারীরা বুরখা পরে না - তাই ওখানে বেশি যৌন-অত্যাচার ও ধর্ষণ চলে। এবং পক্ষান্তরে ইসলাম নারীকে দিয়েছে মহান মর্যাদা! 

পরীক্ষা করুন: পাঁচজন যুবতী মেয়েকে রাত ১২ টার সময় মুসলিম দেশের কোনো শহরে বা বাংলাদেশের মসজিদের শহর ঢাকায় ছেড়ে দিন। যদি একজন মেয়েও সকালে অক্ষত ফিরতে পারে!

কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকায় শহরের সরু রাস্তায় রাত বারটায় একা কোনো মেয়েকে নির্ভয়ে হেঁটে বা সাইকেলে যেতে দেখবেন। ওসব দেশের স্কুল-কলেজের মেয়েরা যে জামাকাপড় পরে, তার কিছুমাত্র বাংলাদেশে কোনো মেয়ে পরে রাস্তায় বের হলে কলেজে পৌঁছানোর আগেই সে মেয়ের ওপর একশটি ফৌজদারী অপরাধ সংগঠিত হবে। 

মুসলমানদের ধারণা - পাশ্চাত্যের নারীরা বুরখা পরে না এবং স্বল্প বসনের নারীরা সব বেশ্যা। এরকম হাজারো মিথ্যা প্রচার ও অন্ধ বিশ্বাসের ওপর ইসলাম টিকে আছে। অথচ পাশ্চাত্যে - স্ত্রীর অমতে সেক্স করাও অপরাধ। ইসলামে নারী - সে ছয় বছরের শিশু হলেও - হালাল। 

ইসলামে - কোনো নারী ধর্ষণের অভিযোগ করলে উল্টো ঐ নারীকে ধর্ষিত হওয়ার অপরাধে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। আরবে বাপ-বেটার হাতে পরিবারের কোনো নারী ও শিশু রেহাই পায় না। বিশ্বাস না হয় - বাংলাদেশী নারী, যারা আরব দেশে ঘরের কাজ করেন, তাঁদের কাছে শুনে দেখেন, সেখানে নারীকে ইসলাম কত মর্যাদা দিয়েছে। এছাড়া ইসলামে পালিত কন্যাকেও বিয়ে করা যায়েজ। 

সৌদি আরব, ইরান, আফগান বা পাকিস্তানের কোনো মেয়েকে চয়েস দিয়ে দেখুন - ইসলামের দেয়া মর্যাদায় ডুবে থাকতে চায় নাকি পাশ্চাত্যে পালিয়ে আসতে চায়।

তারপরও যে সব মেয়ে বুরখা পরে ইসলামের মর্যাদা লাভের আশা করে, তাদের জন্য করুণা হয়।

চিত্রপঞ্চক - ১৪৪

সর্বমোট পাঁচটি ছবি। নিচের খুদে ছবিগুলোয় একের পর এক ক্লিক করুন। প্রক্সি ব্যবহারকারীদের জন্য সরাসরি লিংক: http://imgur.com/a/P0nTO

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা অধ্যায় - গোপন প্রচারের তিন বছর (পর্ব ০২)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


{মুহাম্মদের জীবন ইতিহাস থেকে জানা যায়, তার দাদা আব্দুল মুত্তালিবসহ তার সকল চাচা ও ফুফুরা কবি ছিলেন; মুহাম্মদের মাতা আমিনাও ছিলেন একজন কবি; এবং তাদের কবিতার সূত্র আজও খুঁজে পাওয়া যায়। পিতা আব্দুল্লাহ আকালপ্রয়াত হওয়ায় তাঁর কাব্য প্রতিভার কথা জানা যায় না, তবে তাঁরও কাব্য প্রতিভা ছিল নিশ্চিত বলা যায়। মুহাম্মদেরও চার লাইনের একটি কবিতার খোঁজ পাওয়া যায় এখনও; এই ধারাবাহিকের কোনো এক পর্বে সে চার লাইন কবিতাও প্রকাশ করা হবে।

মুহাম্মদের কাব্য প্রতিভা, যা তার বয়স চল্লিশ পেরুনোর আগে সুপ্ত ছিল; তাই নতুন ভাষা এবং নতুন ধারায় মুহাম্মদের দ্বিতীয় সত্তা (জিব্রাইল ও আল্লাহ্) কতৃক প্রকাশিত হতে থাকে কোরআন নামে। মুহাম্মদের প্রকাশিত প্রতিটি আয়াতের ভাষা এবং ছান্দিক কাব্যসুর একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করে; যা তৎকালীন আরবের কবিতাপ্রিয় মানুষদের সামনে নতুন মোহগ্রস্ততার পথ খুলে দেয়। মুহাম্মদ নিজেও তার এই অসাধারণ গুনের কথা উল্লেখ করেছেন; (অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে)

"Narrated Abu Huraira: Allah's Messenger (pbuh) said, "I have been sent with the shortest expressions bearing the widest meanings, and I have been made victorious with terror (cast in the hearts of the enemy), and while I was sleeping, the keys of the treasures of the world were brought to me and put in my hand." Abu Huraira added: Allah's Messenger (pbuh) has left the world and now you, people, are bringing out those treasures (i.e. the Prophet did not benefit by them). (Sahih al-Bukhari, Vol. 4, Book 52, Hadith 220)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন: আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভাণ্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেয়া হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো চলে গেছেন আর তোমরা ওগুলো বাহির করছ। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৭৭, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস, তাওহীদ পাবলিকেশন্স)

ধর্মকারীর বন্ধুদের জন্য কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২য় পর্ব; এই পর্বেও থাকছে ধারাবহিকভাবে ছয় অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭ম প্রকাশ; সূরা এখলাস (১১২) (নিখাদ) ৪ আয়াত:
১. বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
২. আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি,
৪. এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮ম প্রকাশ; সূরা আল গাশিয়াহ (৮৮) (কেয়ামত) ১৬ আয়াত:
১. আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি?
২. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত,
৩. ক্লিষ্ট, ক্লান্ত।
৪. তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে।
৫. তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে।
৬. কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোনো খাদ্য নেই।
৭. এটা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধায়ও উপকার করবে না।
৮. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে, সজীব,
৯. তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট।
১০. তারা থাকবে, সুউচ্চ জান্নাতে।
১১. তথায় শুনবে না কোনো অসার কথাবার্তা ।
১২. তথায় থাকবে প্রবাহিত ঝরণা।
১৩. তথায় থাকবে উন্নত সুসজ্জিত আসন।
১৪. এবং সংরক্ষিত পানপাত্র
১৫. এবং সারি সারি গালিচা
১৬. এবং বিস্তৃত বিছানো কার্পেট।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯ম প্রকাশ; সূরা আত তারিক (৮৬) (রাত্রিতে যে উপস্থিত হয়) শেষ ৭ আয়াত:
১১. শপথ চক্রশীল আকাশের
১২. এবং বিদারনশীল পৃথিবীর শপথ
১৩. নিশ্চয় কোরআন সত্য-মিথ্যার ফয়সালা।
১৪. এবং এটা উপহাস নয়।
১৫. তারা ভীষণ চক্রান্ত করে,
১৬. আর আমিও কৌশল করি।
১৭. অতএব, কাফেরদেরকে অবকাশ দিন, তাদেরকে অবকাশ দিন, কিছু দিনের জন্যে।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১০ম প্রকাশ; সূরা আল ইনফিতার (৮২) (বিদীর্ণ হওয়া) ৫ আয়াত:
১. যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,
২. যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে,
৩. যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,
৪. এবং যখন কবরসমূহ উন্মোচিত হবে,
৫. তখন প্রত্যেকে জেনে নেবে সে কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কী পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১১তম প্রকাশ; সূরা আশ-শামস (৯১) (সূর্য) ১০ আয়াত:
১. শপথ সূর্যের ও তার কিরণের,
২. শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে,
৩. শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে,
৪. শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে,
৫. শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর।
৬. শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর,
৭. শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর,
৮. অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন,
৯. যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সে-ই সফলকাম হয়।
১০. এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১২তম প্রকাশ; সূরা আল আ’লা (৮৭) (মহীয়ান) ৭ আয়াত:
১. তুমি তোমার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা কর
২. যিনি সৃষ্টি করেন ও সুবিন্যস্ত করেন।
৩. এবং যিনি সুপরিমিত করেন ও পথ প্রদর্শন করেন
৪. এবং যিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেন,
৫. অতঃপর তাকে কাল খড়-কুটায় পরিণত করেন ।
৬. আমি তোমাকে পাঠ করাতে থাকব, ফলে তুমি বিস্মৃত হবে না
৭. আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

'রঙ্গিলা রাসুল' সমাচার, পাকিস্তানের জন্মে এর সম্ভাব্য ভূমিকা এবং পাকিস্তানে ব্ল্যাসফেমি আইন

লিখেছেন মার্ক এন্টনি

রঙ্গিলা রাসুল এবং এবং একজন জাতীয় বীর ‘ইলমুদ্দিন’

১৯২০-এর দশকে পাঞ্জাবের মুসলিমরা এবং হিন্দু আর্য সমাজ একটি একটি রাজনৈতিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল। মুসলিমরা একটি পুস্তিকা বা প্যামফ্লেট প্রকাশ করে, যেখানে হিন্দুদের দেবী সীতাকে পতিতা হিসেবে দেখানো হয়। বলা হয়, এরই প্রতিশোধ নেবার জন্য আর্য সমাজের স্বামী দয়ান্দের এক অনুসারী কৃষ্ণ প্রসাদ প্রতাব, পণ্ডিত চামুপতি লাল ছদ্মনামে একটি পুস্তিকা লেখেন। এর নাম ছিল “রঙ্গিলা রাসুল।” লাহোরের এক প্রকাশক রাজপাল ১৯২৩ সালে পুস্তিকাটি প্রকাশ করেন। এই পুস্তিকায় নবী মুহম্মদের সাথে হজরত আয়শার বিবাহকে ফোকাস করা হয় যে, আয়শা ছিল নবী মুহম্মদের থেকে বয়সে অনেক ছোট। আর সেই সাথে প্রকাশ করা হয় বহুবিবাহের কুপ্রভাবসহ বিভিন্ন বয়সী নারীকে বিবাহের সমস্যাবলি। এই পুস্তিকাতে বেশ কিছু নির্দিষ্ট হাদিসেরও উল্লেখ ছিল।

মুসলিমরা এই পুস্তিকার বিষয়াবলির ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে এই ব্যাপারটিকে আদালতে নিয়ে যায়। আদালত রাজপালকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করে। পরবর্তীতে আপিল করা হলে কোর্ট এই বিচারকে সমর্থন করে। যাইহোক, রাজপাল এরপর হাইকোর্টে যায়। হাইকোর্ট তাকে নির্দোষ প্রমাণ করে, কারণ তিনি যা করেছেন, তা ইন্ডিয়ান পেনাল কোড-এর ১৫৩ ধারা অনুযায়ী কোনো অপরাধের মধ্যে পড়ে না। হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্ত মুসলিমদেরকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ করে।

ইলমুদ্দিন নামে ১৯ বছর বয়সী এক কাঠমিস্ত্রীর ছেলে তার বন্ধুদের সাথে লাহোরের মসজিদ ওয়াজির খান এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তারা তখন মসজিদের মোল্লার জ্বালাময়ী ভাষণ শোনে, যেখানে ইসলামের নবীকে অমর্যাদাকারী ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লোকজনকে একত্রিত করা হচ্ছিল। বলা হয়, এই ভাষণদাতা ছিলেন সৈয়দ আতাউল্লাহ শাহ বুখারি, আর ভাষণটি দেয়া হয়েছিল ১৯২৯ সালের ৬ এপ্রিলে। ভাষণ শুনে ইলমুদ্দিন এক রুপি দিয়ে একটি ছুরি কেনে। এরপর সে লাহোরের ঊর্দু বাজারে রাজপালের দোকানে যায় এবং রাজপালকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। সে পালিয়ে যাবার কোনো চেষ্টা করেনি। এতে তাকে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করা হয় এবং মিয়ানওয়ালি কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ইলমুদ্দিন এমন একজনকে হত্যা করে, যিনি সেই লেখাটার লেখক ছিলেন না। হয়তো ইলমুদ্দিন এবং রাজপালের কেউই সেই পুস্তিকাটি পড়েনি। কিন্তু সেই মোল্লার তীব্র ভাষণ এই ১৯ বছরের কিশোরকে সেদিন জঘন্যতম অপরাধটি করতে প্রভাবিত করেছিল, তাও এমন একজনকে, যাকে সে কোনোদিন চোখেও দেখেনি।

বিচারে ইলমুদ্দিনের পক্ষের আইনজীবী ফারুক হুসাইন দাবি করেন, ইলমুদ্দিন দোষী নয়, তাকে প্রভাবিত করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত ইলমুদ্দিনের বিরুদ্ধে রায় দেয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর লাহোর হাইকোর্টে একটি আপিল করা হয়, যেই আপিলের আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। কিন্তু যাই হোক, মামলাটিতে তার পরাজয় হয়। পরবর্তীতে ইলমুদ্দিন রাজা পঞ্চম জর্জের প্রতি একটি মার্সি পিটিশন বা ক্ষমা চেয়ে দরখাস্ত করে, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

১৯২৯ সালের ৩১ শে অক্টোবর ইলমুদ্দিনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মিয়ানওয়ালিতে ইলমুদ্দিনকে কবর দেয়া হয় যেখানে মুসলিমরা তার লাশকে লাহোরে দাফন করতে চেয়েছিল। ব্রিটিশরা ভয় পেয়েছিল যে, এটা এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি করবে, যা হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা তৈরি করতে পারে। কেবল আল্লামা মুহম্মদ ইকবাল এবং মিয়া আবদুল আজিজ এর নিশ্চিন্তকরণের পরই তার দেহ কবর থেকে ১৫ দিন পর তুলে আনা হয় এবং লাহোরে আবার কবর দেয়া হয়।

ইলমুদ্দিনের লাশ ১৯২৯ সালের ১৪ই নভেম্বরে পুনরায় কবর থেকে তোলা হয়। দুই দিন পর লাশ লাহোরে পোঁছে। সমস্ত শহর এবং আশেপাশের অনেক অঞ্চল থেকে মুসলিমরা তার জানাজায় আসে। ডঃ আল্লামা ইকবালকে ইলমুদ্দিনের বাবা জানাজার নামাজের ইমাম হতে বলেন। কিন্তু ইকবাল সাহেব সেটা করতে চাননি। তিনি বলেন, “আমি একজন পাপী ব্যক্তি, ইসলামের এই বীরের জানাজার নামাজের ইমাম হবার যোগ্যতা আমার নেই।” দুই লক্ষ মুসলিম এই জানাজায় অংশগ্রহণ করেছিল, যা মসজিদ ওয়াজির খান-এর ইয়াম ইমাম মুহম্মদ শামসুদ্দীন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। কবি এবং সাংবাদিক মওলানা জাফর আলী সেখানে বলেন, “হায়! যদি আমি এরকম এক আশীর্বাদপুষ্ট সম্মান অর্জন করতে পারতাম!” আল্লামা ইকবাল এই লাশ বহন করে নিয়ে যান। যখন ইকবাল সাহেব এই লাশটিকে তার কবরে রাখতে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বলেন, “এই অশিক্ষিত তরুণটি আমাদের মত শিক্ষিতদেরকে ছাড়িয়ে গেছে।”

সেদিন মুসলিম নেতাদের আচরণ আশানুযায়ী ছিল না। স্যার মুহমদ ইকবাল, যিনি পরবর্তীতে পাকিস্তানের জাতীয় কবি হন, এবং মওলানা জাফর আলী খান কেবল তার প্রশংসাই করেননি, তাকে বীরের মর্যাদা দেন।

(চলবে)

ফাতেমা দেবীর ফতোয়া - ৩৪

লিখেছেন ফাতেমা দেবী (সঃ)

১৬৬.
সমস্ত পৃথিবী খুঁজে এমন একজন মোসলমান বের করা কি সম্ভব, যে সমকামিতা ঘৃণা করে না? যে সমকামীদের ঘৃণা করে না? যে মোসলমান কর্তৃক সমকামী হত্যা সমর্থন করে না?

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কাকে ভালোবাসবে, কার সাথে যৌনসম্পর্ক করবে, তা তার নিজের ব্যাপার সম্পূর্ণভাবে। অন্যের ক্ষতি না করে প্রাপ্তবয়স্কদের পারস্পরিক সম্মতিতে কোনো সম্পর্ক হলে তা কোনোভাবেই অপরাধ নয়। ইসলাম ও মোসলমানদের কে অধিকার দিয়েছে অন্যের প্রেম ও যৌনজীবনে তাদের নাক ঢুকিয়ে দিতে? হত্যা ও সব ধরনের ধ্বংসলীলা ছাড়া আর কিছুই কি তারা করতে জানে না?

১৬৭.
পৃথিবী সৃষ্টি করার আগে আল্লার কাম-কাজ কী ছিল? পৃথিবী সৃষ্টি করার পরেই বা তার কাম-কাজ কী?

১৬৮.
মানুষের জন্য একটা সুন্দর নিরাপদ পৃথিবীর প্রয়োজন। যেখানে মানুষ পরস্পরকে ভালোবাসতে পারবে, শিল্প-সাহিত্য-সুন্দরের চর্চা করতে পারবে, অন্যের ক্ষতি না করে সবাই নিজের মতো করে বিকশিত হতে পারবে, যেখানে লিঙ্গের ভিত্তিতে মানুষকে বিভাজিত করা হবে না, যেখানে সবার মুক্ত মত ও বুদ্ধির চর্চা থাকবে অবারিত। এরকম একটা পৃথিবী গড়তে হলে জগতের সমস্ত মোসলমানকে এক জায়গায় একত্রিত করে সেই জায়গাটাকে সীল মোহর করে দিতে হবে। মোসলমানদেরকে সঙ্গে রেখে সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী গঠন অসম্ভব। কারণ ইসলামে গান হারাম, কবিতা লেখা হারাম, ছবি আঁকা শিরক, অমোসলমানদের সাথে বন্ধুত্ব হারাম, নারীরা নাপাক। এরকম সমস্ত সুন্দর ও ভালো কাজ ইসলামে হারাম। ইসলামের কেতাব কোরানে মোসলমানদের বলা হয়েছে অমুসলিমদের হত্যা করতে, অমুসলিম নারীদের ধর্ষণ করতে, দাসীদের সম্ভোগ করতে, অমুসলিমদের ধন-সম্পদ লুট করতে। যতো ঘৃণ্য অপকর্ম আছে, সব ইসলামে হালাল। মোসলমানরা তাই করে করে জগতজুড়ে তাণ্ডবলীলা ঘটিয়ে চলেছে।

১৬৯.
- কোরানের চেয়ে জঘন্য কিতাবের নাম কী?
- হাদিস।
- হাদিসের চেয়ে জঘন্য কিতাবের নাম কী?
- কোরান।

১৭০.
গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, জীবহত্যা মহাপাপ। এটা শুধু তাঁর মুখের কথাই ছিল না। এই কথাকে তিনি বাস্তবায়িতও করেছিলেন তাঁর জীবনে। নিজের স্ত্রী ও সদ্যভূমিষ্ঠ পুত্রকে ত্যাগ করে তিনি চিরতরে ঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। নিজের সন্তানকে তিনি কোনোদিন পিতৃস্নেহ দেননি। সন্তান ও স্ত্রীর প্রতি কোনো দায়িত্ব পালন করেননি। তবে তিনি ওদেরকে হত্যা করেননি কিন্তু, যেহেতু ওরা জীব ছিল। 

দেখলেন তো, গৌতম শুধু কথায় নয়, কাজেও তাঁর মহত্বের প্রমাণ রেখে গেছেন?

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন, ২০১৬

কোরআন থেকে কোরআন: কেয়ামত হচ্ছে না কেন?

লিখেছেন সাঈদুর রহমান

মক্কা-মদিনায় ইসলাম প্রচারের সময় মুহাম্মদ যে-কয়েকটা বিষয় সেখানকার অদিবাসীদের জোর গলায় বলে বেড়াতেন, কেয়ামত দিবস (কোরআন ২২:৭) হল তার একটি। কেয়ামতের বর্ণনায় যে কয়েকটি ঘটনা আল-কোরআনে বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হল সেদিন আকাশ ভেঙে পড়বে (কোরআন ৮২:১), তারাগুলো তাদের আলো হারিয়ে (কোরআন ৭৭:৮) আকাশ থেকে খসে পড়বে (কোরআন ৮২:২) এবং সর্বোপরি বলা হয়েছে সেদিন এই পৃথিবী এবং আকাশমণ্ডলী সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবীতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে (কোরআন ১৪:৪৮)। 

কিন্তু কেয়ামতের এমন ভয়াবহতা শুনিয়ে মুহাম্মদের আল্লাভীতি অর্জনের সকল চেষ্টাকেই নিষ্ফল করে দিত মক্কাবাসীরা (কোরআন ৩৪:৩); কেয়ামতকে একটা অবিসম্ভাবী দিন বলে জোর গলায় প্রচার করে গেলেও মুহাম্মদের প্রচারিত অন্যান্য বিষয়গুলোর মত এই কেয়ামত দিবসকেও অবিশ্বাস করত তারা (কোরআন ৪০:৫৯, কোরআন ১৫:৮৫)। 

এই কেয়ামতটা ঠিক কখন হবে, সেটা অবশ্য মুহাম্মদ নিজেও জানত না। কারণ ছিল - কেয়ামত কখন হবে, সেটার জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে ছিল (কোরআন ৩৩:৬৩, কোরআন ৪১:৪৭, কোরআন ৪৩: ৮৫, কোরআন ৭৯:৪৪)।... আসুন কিছু পেছনে যাই। কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় বলা হয়েছে প্রত্যেক জাতীর জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়েছে (কোরআন ৭:৩৪, কোরআন ১০:৪৯, কোরআন ৪৬:৩); এই সময়টা অতিক্রম হলেই কেয়ামতের মত মহাপ্রলয় দিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ধবংস করে দেয়া হয়। মুহাম্মদের আগে মহাপ্রলয় দিয়ে আল্লাহ বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ধবংসও করে দিয়েছিলেন (কোরআন ৭:৪); উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় লূতের (কোরআন ১৫:৭৪) এবং হিজর সম্প্রদায় (কোরআন ১৫:৮৩) কথা। (নূহ এবং অন্যান্য নবীর সম্প্রদায়কে ধবংসের কাহিনী জানতে কোরআন ২৬:১০৫-১৮৯ পড়ে নিতে পারেন। ) 

গল্পগুলো থেকে যে-বিষয়টা নজরে আনার মত, সেটি হল, যেসব নবীর সম্প্রদায়কে মহাপ্রলয়ের মাধ্যমে ধবংস করা হয়েছিল, সেই প্রলয়গুলো ঘটেছিল সেসব নবীর বেঁচে থাকাকালীন। আমার লেখাটির মূল প্রশ্নটি এখানেই। অন্যান্য নবীর জীবদ্দশায় মহাপ্রলয়গুলো হয়ে থাকলে মুহাম্মদের সময় কেয়ামতটা হল না কেন? আসুন, সামান্য গভীরে যাওয়া যাক। প্রথমে যে আয়াতটি লক্ষ্য করার মত, সেটি হল - কোরআন ৭:১৮৫ - "তাহারা কি লক্ষ্য করে না যে .... সম্ভবত তাদের নির্ধারিত কাল নিকটবর্তী।"

এখানে যা বোঝা যাচ্ছে, মুহাম্মদ কাফিরদের বলছিলেন যে, তাদের নির্ধারিত সময় এসে গেছে এবং খুব শিঘ্রই কেয়ামত হয়ে যাবে। একই কথা বলা হয়েছে কোরআন ৩৩:৬৩-তে ... "সম্ভবত কেয়ামত শীঘ্রই হয়ে যেতে পারে।" এখানে হয়ত কেউ প্রশ্ন করতে পারেন, কেয়ামত মুহাম্মদের সময়েই আসবে, এমন কিছু কি বলা হয়েছে? এর উত্তর: জ্বী হ্যাঁ। 

কেয়ামত কাদের ওপর আসবে, তা খুব সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে কোরআন ৭:১৮৭ আয়াতটিতে... "তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে কেয়ামত কখন ঘটবে। বল,... আকস্মিকভাবেই উহা *তোমাদের* উপর পড়িবে।" একই কথা বলা হয়েছে কোরআন ৩৪:৩-এ... "বল, আসিবেই। শপথ আমার প্রতিপালকের: নিশ্চয়ই *তোমাদের নিকট* ইহা আসিবে।" কেয়ামতটা যে তৎকালীন মক্কাবাসীর ওপরেই আসার কথা ছিল, তা ওপরের দু'টি আয়াতেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এটাকে অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই।

কেয়ামত নিয়ে সবচেয়ে নজর কাড়ার মত যে-আয়াতটি কোরআনে বলা হয়েছে, সেটি হল কোরআন ৫৪:১ - "কেয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে আর চাঁদ বিদীর্ণ হয়েছে।" অন্য একটি আয়াতে (কোরআন ৪৭:১৮) বলা হয়েছে, কেয়ামতের লক্ষণগুলো এসে পড়েছিল। এ দুটি আয়াত থেকে এটাও স্পষ্ট যে, কেয়ামতের লক্ষণও সে সময় প্রকাশ পেয়েছিল।

ওপরোক্ত বিষয়গুলো থেকে এবার কয়েকটা প্রশ্ন তুলে ধরছি: ১) মুহাম্মদ যখন খুব নির্দিষ্ট করেই বলছিলেন যে, তৎকালীন কাফিরদের ওপর কেয়ামত আসবে, তাহলে কেয়ামতটা তাদের ওপর তার সময়কালেই হল না কেন? মহাপ্রলয় তো অন্যান্য নবীদের জীবদ্দশাতেই হয়েছিল!২) কেয়ামতের সকল লক্ষণ মুহাম্মদের সময়েই এসে পড়লেও ঠিক কী কারণে আজ অবধি কেয়ামত সংঘটিত হল না? এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা কী? ৩) মুহাম্মদ কি তাহলে মক্কাবাসীদের মিথ্যা কথা বলে বেড়াতেন? ৪) নাকি পুরো কেয়ামতটাই একটা মনগড়া বিষয়?