শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা অধ্যায় - গোপন প্রচারের তিন বছর (পর্ব ০২)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


{মুহাম্মদের জীবন ইতিহাস থেকে জানা যায়, তার দাদা আব্দুল মুত্তালিবসহ তার সকল চাচা ও ফুফুরা কবি ছিলেন; মুহাম্মদের মাতা আমিনাও ছিলেন একজন কবি; এবং তাদের কবিতার সূত্র আজও খুঁজে পাওয়া যায়। পিতা আব্দুল্লাহ আকালপ্রয়াত হওয়ায় তাঁর কাব্য প্রতিভার কথা জানা যায় না, তবে তাঁরও কাব্য প্রতিভা ছিল নিশ্চিত বলা যায়। মুহাম্মদেরও চার লাইনের একটি কবিতার খোঁজ পাওয়া যায় এখনও; এই ধারাবাহিকের কোনো এক পর্বে সে চার লাইন কবিতাও প্রকাশ করা হবে।

মুহাম্মদের কাব্য প্রতিভা, যা তার বয়স চল্লিশ পেরুনোর আগে সুপ্ত ছিল; তাই নতুন ভাষা এবং নতুন ধারায় মুহাম্মদের দ্বিতীয় সত্তা (জিব্রাইল ও আল্লাহ্) কতৃক প্রকাশিত হতে থাকে কোরআন নামে। মুহাম্মদের প্রকাশিত প্রতিটি আয়াতের ভাষা এবং ছান্দিক কাব্যসুর একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করে; যা তৎকালীন আরবের কবিতাপ্রিয় মানুষদের সামনে নতুন মোহগ্রস্ততার পথ খুলে দেয়। মুহাম্মদ নিজেও তার এই অসাধারণ গুনের কথা উল্লেখ করেছেন; (অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে)

"Narrated Abu Huraira: Allah's Messenger (pbuh) said, "I have been sent with the shortest expressions bearing the widest meanings, and I have been made victorious with terror (cast in the hearts of the enemy), and while I was sleeping, the keys of the treasures of the world were brought to me and put in my hand." Abu Huraira added: Allah's Messenger (pbuh) has left the world and now you, people, are bringing out those treasures (i.e. the Prophet did not benefit by them). (Sahih al-Bukhari, Vol. 4, Book 52, Hadith 220)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন: আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অল্প শব্দে ব্যাপক অর্থবোধক বাক্য বলার শক্তি সহ আমাকে পাঠানো হয়েছে এবং শত্রুর মনে ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। একবার আমি নিদ্রায় ছিলাম, তখন পৃথিবীর ধনভাণ্ডার সমূহের চাবি আমার হাতে দেয়া হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো চলে গেছেন আর তোমরা ওগুলো বাহির করছ। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৯৭৭, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস, তাওহীদ পাবলিকেশন্স)

ধর্মকারীর বন্ধুদের জন্য কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২য় পর্ব; এই পর্বেও থাকছে ধারাবহিকভাবে ছয় অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৭ম প্রকাশ; সূরা এখলাস (১১২) (নিখাদ) ৪ আয়াত:
১. বলুন, তিনি আল্লাহ, এক,
২. আল্লাহ অমুখাপেক্ষী,
৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি,
৪. এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮ম প্রকাশ; সূরা আল গাশিয়াহ (৮৮) (কেয়ামত) ১৬ আয়াত:
১. আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি?
২. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত,
৩. ক্লিষ্ট, ক্লান্ত।
৪. তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে।
৫. তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে।
৬. কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোনো খাদ্য নেই।
৭. এটা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধায়ও উপকার করবে না।
৮. অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে, সজীব,
৯. তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট।
১০. তারা থাকবে, সুউচ্চ জান্নাতে।
১১. তথায় শুনবে না কোনো অসার কথাবার্তা ।
১২. তথায় থাকবে প্রবাহিত ঝরণা।
১৩. তথায় থাকবে উন্নত সুসজ্জিত আসন।
১৪. এবং সংরক্ষিত পানপাত্র
১৫. এবং সারি সারি গালিচা
১৬. এবং বিস্তৃত বিছানো কার্পেট।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯ম প্রকাশ; সূরা আত তারিক (৮৬) (রাত্রিতে যে উপস্থিত হয়) শেষ ৭ আয়াত:
১১. শপথ চক্রশীল আকাশের
১২. এবং বিদারনশীল পৃথিবীর শপথ
১৩. নিশ্চয় কোরআন সত্য-মিথ্যার ফয়সালা।
১৪. এবং এটা উপহাস নয়।
১৫. তারা ভীষণ চক্রান্ত করে,
১৬. আর আমিও কৌশল করি।
১৭. অতএব, কাফেরদেরকে অবকাশ দিন, তাদেরকে অবকাশ দিন, কিছু দিনের জন্যে।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১০ম প্রকাশ; সূরা আল ইনফিতার (৮২) (বিদীর্ণ হওয়া) ৫ আয়াত:
১. যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,
২. যখন নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে,
৩. যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে তোলা হবে,
৪. এবং যখন কবরসমূহ উন্মোচিত হবে,
৫. তখন প্রত্যেকে জেনে নেবে সে কী অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কী পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১১তম প্রকাশ; সূরা আশ-শামস (৯১) (সূর্য) ১০ আয়াত:
১. শপথ সূর্যের ও তার কিরণের,
২. শপথ চন্দ্রের যখন তা সূর্যের পশ্চাতে আসে,
৩. শপথ দিবসের যখন সে সূর্যকে প্রখরভাবে প্রকাশ করে,
৪. শপথ রাত্রির যখন সে সূর্যকে আচ্ছাদিত করে,
৫. শপথ আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর।
৬. শপথ পৃথিবীর এবং যিনি তা বিস্তৃত করেছেন, তাঁর,
৭. শপথ প্রাণের এবং যিনি তা সুবিন্যস্ত করেছেন, তাঁর,
৮. অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন,
৯. যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সে-ই সফলকাম হয়।
১০. এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরথ হয়।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ১২তম প্রকাশ; সূরা আল আ’লা (৮৭) (মহীয়ান) ৭ আয়াত:
১. তুমি তোমার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা কর
২. যিনি সৃষ্টি করেন ও সুবিন্যস্ত করেন।
৩. এবং যিনি সুপরিমিত করেন ও পথ প্রদর্শন করেন
৪. এবং যিনি তৃণাদি উৎপন্ন করেন,
৫. অতঃপর তাকে কাল খড়-কুটায় পরিণত করেন ।
৬. আমি তোমাকে পাঠ করাতে থাকব, ফলে তুমি বিস্মৃত হবে না
৭. আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি জানেন প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন