(নিবিড় নিষ্ঠা ও অবিশ্বাস্য অধ্যাবসায় কাকে বলে, সেটার উদাহরণসহ ব্যাখ্যা নিরন্তর দিয়েই চলেছেন অত্যন্ত পরিশ্রমী ও অতি যত্নবান লেখক গোলাপ। তাঁর লেখা সিরিজটির এ যাবত প্রকাশিত ১৩০ টি পর্বের যে কোনও একটি মন দিয়ে পড়লেই পাঠক তা উপলব্ধি করতে পারবেন।
সিরিজটি এখনও চলমান, তবে বিষয়ভিত্তিকভাবে খণ্ডে খণ্ডে ইবুক তৈরি করার কাজ শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। ইবুকের ভূমিকায় লেখক বর্ণনা করেছেন, অভাবনীয় শ্রমসাধ্য এই অতিকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে কী তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে, কী ছিলো সেই চালিকাশক্তি।)
উপক্রমণিকা
ভাবনার শুরু:
১৬ ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল। বাংলাদেশীদের জীবনে সবচেয়ে আনন্দের দিন! সবচেয়ে আবেগের দিন! সবচেয়ে কষ্টের দিন! সবচেয়ে আনন্দের দিন এই জন্য যে, সুদীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসরদের পরাজিত করে আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সবচেয়ে আবেগের দিন এই জন্য যে, পাক হানাদার বাহিনীরা আত্মসমর্পণ করেছে - খবরটি শোনার পর আমাদের সবার মনে সেদিন এমন এক অনুভূতি ও আবেগের সৃষ্টি হয়েছিল, স্বাধীনতার এত বছর পরেও ঐ দিনের স্মৃতি মনে পড়লে আমরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ি। সবচেয়ে কষ্টের দিন এই কারণে যে, এই দিনটির আগের নয় মাস সময়ে ৩০ লক্ষ প্রাণ, দুই লাখের অধিক মা-বোনদের ইজ্জত, অসংখ্য ঘর-বাড়ি জ্বালাও-পোড়াও ও লুটতরাজের শিকার হয়েছিল পুরো বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ। এমন কোনো পরিবার ছিলো না, যারা কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি! যাঁরা স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন, তারা তো বটেই, যাঁরা বিপক্ষে ছিলেন, তারাও। আমি এমন পরিবারও দেখেছি, যে-পরিবারের ছেলে ছিলেন রাজাকার, কিন্তু তার পিতা-মাতা ও অন্যান্য পরিবার-সদস্যরা ছিলেন স্বাধীনতার পক্ষে।
সুদীর্ঘ নয় মাস যাঁরা সমগ্র বাংলাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন ও যাঁরা এই কাজে তাঁদের সহযোগিতা করেছিলেন, তারা সবাই ছিলেন মুসলমান। এই কাজের বৈধতা প্রদানে তাঁরা যে যুক্তিটি প্রয়োগ করেছিলেন, তা হলো - তাঁরা ছিলেন পাকিস্তান ও ইসলাম রক্ষার পক্ষে, আর তাদের এই কাজে যারাই তাদেরকে বাধা প্রদান করেছিলেন, তারা সবাই ছিলেন ইসলামের শত্রু। এই বিশ্বাস ও চিন্তাধারায় তাঁরা বাংলাদেশীদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিলেন, অসংখ্য ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ভস্মীভূত করেছিলেন, শহরে-গ্রামে-গঞ্জে অতর্কিত হামলা করে বিরুদ্ধবাদীদের সম্পদ লুণ্ঠন ও মা-বোন-স্ত্রী-কন্যাদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের ইজ্জতহানি করেছিলেন। লুটতরাজে অর্জিত ধনসম্পদ ও স্ত্রী-কন্যা-মা-বোনদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাঁদের যৌনদাসীতে রূপান্তর করাকে তারা সম্পূর্ণ ইসলামসম্মত বলে বিশ্বাস করতেন। ইসলামের পরিভাষায় যাকে বলা হয় 'গনিমতের মাল!'
মহকুমা শহরে আমাদের বাসা। শহরে পাকিস্তান মিলিটারি আসছে, এই খবরটি শোনার পর তারা সেখানে আসার আগেই জীবন বাঁচানোর তাগিদে সবকিছু ফেলে আমরা আমাদের গ্রামের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। যুদ্ধের ঐ সময়টিতে আমাদের ইউনিয়নে পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হয়ে যিনি 'শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান' হয়েছিলেন, তিনি ছিলেন আমার হাই স্কুলের অংক শিক্ষকের ছোট ভাই সোলায়মান হোসেন। আমাদের অত্র অঞ্চলে তিনি ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথ ডাক্তার। শিক্ষকটি ছিলেন আমার আব্বার বন্ধু, সেই হিসাবে ক্লাসের বাইরে তাঁকে ও তাঁর এই ছোট ভাইকে আমি চাচা বলে ডাকতাম। আমার এই শিক্ষকটিকে আমি কখনো নামাজ পড়তে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। কিন্তু তার এই ছোটভাইটি ছিলেন ঠিক তার উল্টো। নিয়মিত নামাজ পড়তেন ও তাঁর চেম্বারে বসে ধর্ম বিষয়ে পড়াশোনা করতেন। কিন্তু যুদ্ধের আগে তিনি জামাত-ই-ইসলাম বা অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে কখনোই জড়িত ছিলেন না। ব্যক্তিগতভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ভাল মানুষ, সদাহাস্যময়। কিন্তু যুদ্ধের সময় সেই মানুষটিই হয়ে গেলেন 'শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান', যিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, পাকিস্তান ও ইসলাম রক্ষার তাগিদে ইসলামের এই শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও 'গনিমতের মাল (Booty)' ইসলামসম্মত। তাঁর এই ব্যবহারে আমার শিক্ষকটি লজ্জা বোধ করতেন ও একান্ত প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া লোকজনদের সাথে স্বাভাবিক মেলামেশা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ১৬ই ডিসেম্বরের কিছুদিন আগে মুক্তিবাহিনীর লোকেরা সোলায়মান হোসেনকে হত্যা করে।
১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি আমার আব্বার সঙ্গে শহরে এসে দেখি, যেখানে আমাদের ইটের দেয়াল ও টিনের ছাদের বাসাটি ছিলো, সেখানে বাড়িঘরের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমাদের অবর্তমানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিহারী দোসরারা আমাদের বাসার ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গেছে। আমরা আরও যা প্রত্যক্ষ করলাম, তা হলো, দলে দলে বাঙালিরা বিহারী পাড়ার দিকে যাচ্ছে ও তাদের ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র ঠেলাগাড়িতে করে ভরে ভরে নিয়ে আসছে। এমনকি তাদের বাড়ির দেয়াল ভেঙে ইটগুলো পর্যন্ত খুলে খুলে নিয়ে আসছে। আমাদের বাসা থেকে সামান্য দূরেই এই বিহারী পাড়া। যুদ্ধের আগে আমার সমবয়সী তাঁদের অনেকের সন্তানই ছিল আমার বাল্যবন্ধু ও খেলার সাথী।
দৃশ্যটি কাছে থেকে দেখার জন্য আমরা সামনে বিহারী পাড়ার দিকে এগিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আমারা যে-দৃশ্য দেখতে পাই, তা হলো - যেমন করে একদা বিহারীরা আমাদের সহায় সম্বল লুট করেছিল, আজ বাঙালিরা মেতেছে সেই একই কর্মে। তখন সকাল ৮-৯ টা মত হবে। সেখানে দেখা হয়ে গেল আমাদের পাড়ার মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে, ফজরের নামাজের পর তিনি সেখানে এসেছেন ও আমাদের মতই দর্শক হয়ে এ দৃশ্য দেখছেন। তিনি ছিলেন একাধারে ক্বারী ও হাফেজ, ইসলাম বিষয়ে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী একজন মওলানা বলেই তাঁকে আমরা জানতাম। যুদ্ধের আগে আমরা পাড়ার এই মসজিদেই তার ইমামতিতে নামাজ পড়তাম।
আমাদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মওলানা সাহেব আমার আব্বাকে কাছে ডাকলেন, বললেন, "আপনি কিছু নেবেন না? আপনাদের বাড়িঘর তো লুটপাট হয়ে গিয়েছে।" আব্বা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, "হুজুর অন্যের সম্পত্তি কি এইভাবে লুট করে নিয়ে যাওয়া ইসলামে জায়েজ?" মওলানা সাহেব নির্দ্বিধায় আব্বাকে বললেন, "হ্যাঁ! এখন যুদ্ধের সময়। যুদ্ধের সময় পরাজিত পক্ষের সহায় সম্পত্তির ওপর বিজয়ীদের হক। একে বলা হয় 'গণিমতের মাল।' এটা নিতে ইসলামে কোনো বাধা নেই।" আমার আব্বা পরহেজগার মানুষ। তিনি বিস্মিত হয়ে বললেন, 'আপনি যা বললেন, সে কথা তো সোলায়মানও বলতো!" সোলায়মান লোকটি কে, তা মওলানা সাহেব যখন জানতে চাইলেন, তখন আব্বা তাকে তার পরিচয় দিলেন ও তাঁকে এও জানালেন যে, অল্প কিছুদিন আগে মুক্তিবাহিনীর লোকেরা তাঁকে মেরে ফেলেছে। মওলানা সাহেব বললেন, "ওরা ছিল অন্যায়ের পক্ষে, আর আমরা হলাম ন্যায়ের পক্ষে।"
গোঁড়া ইসলামী পরিবারে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। সেই পাঁচ-ছয় বছর বয়সের সময় আম্মার কাছে আরবি পড়া শুরু করেছিলাম। অর্থ বুঝতাম না, শুধু পড়া ও সুরা মুখস্থ করা। বিশ্বাসী ছিলাম সর্বান্তকরণে! ইসলাম বিষয়ে তখন কিছুই জানতাম না। তথাপি ঐ বয়সে আমি এটুকু স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলাম যে, সোলায়মান চাচা ও এই মওলানা সাহেবের বিশ্বাসের মধ্যে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য মৌলিক পার্থক্য নেই। দু'জনই ব্যক্তিগত জীবনে অতীব সচ্চরিত্র। দু’জনেই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, তাঁরা ইসলাম ও ন্যায়ের পক্ষে আছেন; দু’জনেই মনে-প্রাণে তাঁদের বিরুদ্ধ পক্ষকে শত্রুপক্ষ জ্ঞান করতেন; দু'জনই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, বিজয়ী হবার পর শত্রুপক্ষের সহায় সম্পত্তি হলো 'গনিমতের মাল' - ইসলামের বিধানে যার ভোগ-দখল সম্পূর্ণ হালাল।
এর বছর চার পরের কথা। গ্রীষ্মের ছুটিতে আমার কাজিনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছি। কাজিনের স্ত্রী, আমার ভাবী, 'ইসলামের ইতিহাস (Islamic History)' বিষয়ে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছেন। বিষয়টির প্রতি আগ্রহ থাকায় ভাবীর অনার্স সিলেবাসের বইগুলোর একটা নিয়ে পড়া শুরু করলাম। কয়েকটি অধ্যায় পড়ার পর আগ্রহ আমাকে এমনভাবে পেয়ে বসলো যে, মন্ত্রমুগ্ধের মত যে আট দিন তাঁদের বাসায় ছিলাম, তাঁর সিলেবাসের সবগুলো বই পড়ে ফেললাম। জানলাম, সরল বিশ্বাসে এতদিন যা আমি জেনে এসেছিলাম, “একজন মুসলমান কখনোই অন্য একজন মুসলমানকে খুন করতে পারে না, তা ছিলো ভ্রান্ত।” এই আটদিন সময়ে আমার এই বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র এই বইগুলোর পাতায় পাতায় প্রত্যক্ষ করেছিলাম। জানলাম, একজন মুসলমান অন্য একজন মুসলমানকে যে অবলীলায় খুন করতে পারে, সে ইতিহাসের শুরু হয়েছে ইসলামের ঊষালগ্নে। এটি ১৪০০ বছরের পুরনো ইতিহাস, যা আমার জানা ছিলো না। যুগে যুগে তা হয়ে এসেছে, এখনও হচ্ছে ও ভবিষ্যতেও তা হবে, যতদিনে না আমাদের চিন্তা-চেতনা ও মানসিকতার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে।
ইসলামের ঊষালগ্নে সংঘটিত সেই ইতিহাসের পাত্র-পাত্রীর নামগুলো ছিলো ভিন্ন, চরিত্র অভিন্ন! আমাদের সোলায়মান চাচা ও মওলানা সাহেবের পক্ষের পরিবর্তে সেখানে ছিলইসলামের ইতিহাসের তৃতীয় খুলাফায়ে রাশেদিন উসমান ইবনে আফফান (রা:) ও তার বিরুদ্ধ পক্ষ মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর ও তাদের দল, যারা অতিবৃদ্ধ উসমান ইবনে আফফান-কে কুরান পাঠরত অবস্থায় অমানুষিক নৃশংসতায় খুন করেছিলেন; সেখানে ছিলো ইসলামের ইতিহাসের চতুর্থ খুলাফায়ে রাশেদিন আলী ইবনে আবু তালিব (রা:) ও তার বিরুদ্ধ পক্ষ উম্মুল মুমেনিন নবী-পত্নী আয়েশা বিনতে আবু বকর (রা:) ও তাদের দল ('উটের যুদ্ধ'), যেখানে দু'পক্ষের হাজার হাজার মুসলমান খুন হয়েছিলেন; সেখানে ছিলো আলি ইবনে আবু তালিব ও মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের ও তাদের দল (‘সিফফিন যুদ্ধ’), যে-যুদ্ধে দু'পক্ষের অজস্র মুসলমানদের খুন করা হয়েছিল, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অসংখ্য পরিবার। ইসলামের ঊষালগ্নের ইতিহাসের এইসব পাত্র-পাত্রী ও তাদের পক্ষের লোকদের বিশ্বাস ও মানসিকতার সঙ্গে ১৯৭১-এ আমাদের সোলায়মান চাচা ও মওলানা সাহেবের বিশ্বাস ও মানসিকতার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই। দু’পক্ষই মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, তাঁরা ইসলাম ও ন্যায়ের পক্ষে আছেন, অপর পক্ষ হলো শত্রুপক্ষ! গত ১৪০০ বছরে তাদের এই 'ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিন্তা ভাবনার' গুণগত চরিত্রের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
তখন পর্যন্ত আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতাম, এই হানাহানির শিক্ষা কোনোভাবেই আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর কুরানের শিক্ষা হতে পারে না। আমার বিশ্বাসের এই তলানিটুকুও নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিলো,যখন আমি কুরানের অর্থ ও তরজমা বুঝে পড়লাম, আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের লেখা 'সিরাত' ও হাদিস গ্রন্থ পড়লাম। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সময়ের সাথে (৫৭০-৬৩২ সাল) তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী এই সব হানাহানির পার্থক্য এটুকুই যে, তাঁর সময়ে এই হানাহানি ও নৃশংসতা সীমাবদ্ধ ছিলো তাঁর ও তাঁর বিরুদ্ধ পক্ষ অবিশ্বাসী জনপদবাসীদের মধ্যে। তাঁর সময়ে মুসলমান-মুসলমানদের মধ্যে কোনো বড় ধরনের সংঘাত হয়নি। মুসলমান-মুসলমানদের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল তাঁর মৃত্যুর ঐ দিনটিতেই, তাঁর লাশ কবরে শোয়ানোর আগেই! জন্মের পর থেকে এতগুলো বছরের লালিত যে-বিশ্বাস আমি মনে প্রাণে ধারণ করে এসেছিলাম, সেই বিশ্বাস ভঙ্গের কষ্ট কাউকে বলে বোঝানো যাবে না!
লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব:
ইসলাম ও মুসলমান এই শব্দ দুটি সমার্থক নয়। ইসলাম হলো একটি মতবাদ, আর মুসলমান হলো মানুষ। মতবাদের কোনো অনুভূতি নেই, মানুষের আছে। যখনই কোনো প্রচলিত মতবাদ ও প্রথার বিরুদ্ধে কেউ ভিন্নরূপ মত প্রকাশ করেন,তখন প্রচলিত মতবাদ ও প্রথায় বিশ্বাসী মানুষরা কষ্ট পান। তাঁদের এই কষ্ট যৌক্তিক নাকি অযৌক্তিক, সে বিষয়ে আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিতর্ক করতে পারি, বিতর্কে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে হারিয়ে দিতে পারি। কিন্তু সত্য হলো - বিশ্বাসীদের এই কষ্ট "সত্য!" আমি এই কষ্ট নিজে অনুভব করেছি। কিন্তু সেই অজুহাতে প্রচলিত মতবাদ ও প্রথার বিরুদ্ধে একজন মানুষের স্বাধীন মুক্ত মত প্রকাশে “যে কোনো ধরনের বাধা প্রদান গর্হিত বলেই আমি মনে করি।” ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন প্রচলিত মতবাদ ও প্রথার বিরুদ্ধে তাঁর নতুন মতবাদ প্রচার শুরু করেছিলেন, সমালোচনা করেছিলেন, তখন পৌত্তলিক আরব ও অন্যান্য অবিশ্বাসীরা কষ্ট পেয়েছিলেন। তাঁদের কষ্ট ছিলো "সত্য!" কিন্তু তাঁদের সেই কষ্টের কথা ভেবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যা বিশ্বাস করতেন, তা প্রকাশ ও প্রচারে পিছুপা হননি।
প্রতিটি "মতবাদ ও প্রথার"সমালোচনা হতে পারে ও তা হওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি সমালোচনা করার অপরাধে সেই মতবাদে বিশ্বাসী লোকেরা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে সমালোচনাকারীকে নাজেহাল, অত্যাচার ওহত্যা করেন! তখন সেই মতবাদের সমালোচনা আরও কঠোরভাবে হওয়া উচিত। এর অর্থ এই নয় যে, এই মতবাদে বিশ্বাসী "মানুষদের" ঘৃণা করা। আমার মা-বাবা, স্ত্রী, কন্যা, পরিবার, সমাজ, দেশের মানুষ - এদেরকে ঘৃণা করার কল্পনাও আমি করতে পারি না। কিন্তু আমি জন্মসূত্রে যে-মতবাদ ও প্রথায় বিশ্বাসী হয়ে আর সবার মত জীবন শুরু করেছিলাম, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও তার পরের কিছু ঘটনা এই মতবাদ সম্বন্ধে আমাকে আগ্রহী করে তোলে। এই মতবাদ সম্বন্ধে এতদিনে যা আমি জেনেছি, কোনোরূপ "political correctness"-এর আশ্রয় না নিয়ে উপযুক্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাইই আমি এই বইতে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। আমি বিশ্বাস করি মানুষ হিসাবে এ আমার অধিকার।
মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদের "Anatomy dissection" ক্লাসে একটা আপ্তবাক্য স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। সেটি হলো, "মন যা জানে না, চোখ তা দেখে না (What mind does not know eye cannot see)।" শরীরের কোনো মাংসপেশি, শিরা, ধমনী, স্নায়ু কোথা থেকে উৎপত্তিহয়েছে, কোন কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে দিয়ে তা গিয়েছে, যাবার সময় কোনো শাখা বিস্তার করেছে কি না, যদি করে সেটা আবার কোন দিক দিয়ে কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে - ইত্যাদি বিষয়ের জ্ঞান যদি না থাকে, তবে চোখের সামনে থাকলেও তা প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। কিংবা যদিও বা তা দেখা যায়, তবে তাকে ভুল ভাবে চিহ্নিত করার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। যদি এ বিষয়ে বিশদ জ্ঞান থাকে, তবে এর উল্টোটি ঘটে।
বইয়ের কথা:
এই বইটির মূল অংশের সমস্ত রেফারেন্সেই কুরান ও আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের রচিত কিতাবগুলোর ইংরেজি অনুবাদ থেকে সরাসরি বাংলায় অনূদিত। এই মূল গ্রন্থগুলো লেখা হয়েছে আজ থেকে ১১৫০-১২৫০ বছরেরও অধিক পূর্বে, মুহাম্মদের মৃত্যু-পরবর্তী সবচেয়ে নিকটবর্তী সময়ের লিখা, যা এখনও সহজলভ্য। ইসলামের ইতিহাসের এই সব মূল গ্রন্থের (Primary source of annals of Islam) তথ্য-উপাত্ত ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত (Very clearly documented) ঐতিহাসিক দলিল। এই সব মূল গ্রন্থে যে-ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে, তা সাধারণ সরলপ্রাণ মুসলমানদের অধিকাংশেরই অজানা। শুধু যে অজানা, তাইই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের জানা ইসলামের ইতিহাসের সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অত্যন্ত স্পষ্ট নথিভুক্ত ইতিহাসগুলো সাধারণ মুসলমানদের কাছে গোপন করা হয়, অস্বীকার করা হয়, অথবা মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনার বিপরীতটি প্রচার করা হয়।
বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও তা সাধারণ মুসলমানদের অধিকাংশেরই মর্মপীড়ার কারণ হতে পারে, এই বিবেচনায় বাংলা অনুবাদের সাথে মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করা হয়েছে। আদি উৎসের এ সকল রেফারেন্সের ভিত্তিতেই বিষয়ের আলোচনা, পর্যালোচনা ও উপসংহার। আজকের পৃথিবীর ৭০০ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১৬০ কোটি মুসলমান সম্প্রদায়ভুক্ত, বাকি ৫৪০ কোটি ইসলাম-অবিশ্বাসী, যারা মুসলমানদের মত বিশ্বাস নিয়ে এই বইগুলো পড়েন না। এই বিশাল সংখ্যক অবিশ্বাসী জনগোষ্ঠী পক্ষপাতিত্বহীন মানবিক দৃষ্টিকোণের সাহায্যে কোনোরূপ "political correctness" ছাড়া এই সব নথিভুক্ততথ্য-উপাত্তের যেভাবে সম্ভাব্য আলোচনা ও পর্যালোচনা করতে পারেন, সেভাবেই তা করা হয়েছে।
ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে 'ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান' আবিষ্কারের একটা ফ্যাশন চালু হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের (Evidenced based knowledge) এই স্বর্ণযুগে, যখন মানুষ ১৪ কোটি মাইল দূরবর্তী মঙ্গল গ্রহে মহাকাশযান পাঠাচ্ছেন; কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরবর্তী গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সির খুঁটিনাটির কিনারা করছেন; এই চমকপ্রদ (magnificent) মহাবিশ্ব উৎপত্তির একদম আদিতে কী ঘটেছিল এবং পরবর্তী ১৩৫০ কোটি বছরে কী রূপে তার বিকাশ ঘটেছে - ইত্যাদি বিষয়ের চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করছেন; সেই একই যুগে অবস্থান করে একদল মানুষ বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম, বিজ্ঞানের অবমাননা ও শ্লীলতাহানি করে 'ধর্মগ্রন্থে বিজ্ঞান' প্রচার করে সাধারণ সরলপ্রাণ অজ্ঞ মানুষদের প্রতারিত করে চলেছেন। এই অপকর্মে তাঁরা যে-পদ্ধতিটি ব্যবহার করেন, তাকে "জল পড়ে পাতা নড়ে" পদ্ধতি বলা যেতে পারে। নমুনা:
‘"জল পড়ে পাতা নড়ে" এর মধ্যেই আছে বিজ্ঞানের যাবতীয় আবিষ্কারের 'ইঙ্গিত!'
১) এখানে “জল” অর্থে জলের উপাদান 'হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন' বোঝানো হয়েছে। 'বিগ ব্যাং (Big Bang)' এর পরে 'হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম' ছিলো সৃষ্টির আদি অ্যাটম (Atom)। মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুর আদি উপকরণ হলো অ্যাটম। পরবর্তীতে সৃষ্ট অন্যান্য সকল অ্যাটম সৃষ্টি হয়েছে এই 'হাইড্রোজেন’ থেকে। আর 'অক্সিজেন' আমাদের বেঁচে থাকার এক অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
২) এখানে "পড়ে" অর্থে Gravitational force বোঝানো হয়েছে, যা না হলে গ্রহ-নক্ষত্র-গ্যালাক্সি কোনোকিছুই সৃষ্টি হতো না। গ্রহ সৃষ্টি না হলে কোনো জীবের সৃষ্টি হতো না, আমরাও সৃষ্টি হতাম না। আবিষ্কারের আগে বিজ্ঞানের এই ইঙ্গিতটি লেখক কীভাবে জেনেছেন? সত্যিই আশ্চর্য!
৩) এখানে "পাতা" অর্থে সালোক সংশ্লেষণ (Photosynthesis) বোঝানো হয়েছে, যার ফলে উৎপাদন হয় অক্সিজেন। অক্সিজেনের অভাব হলে আমরা কি বাঁচতে পারতাম? ‘"জল পড়ে পাতা নড়ে"-এর এক একটি "শব্দ" বিজ্ঞানের এক একটি অভূতপূর্ব আবিষ্কারের ইঙ্গিত! কী আশ্চর্য!
৪) আর "নড়ে" এর মধ্যেই আছে বিজ্ঞানের দু'টি বিশাল 'ইঙ্গিত'।এখানে নড়ের এক অর্থ হলো 'বায়ু'! বায়ু ছাড়া কি কোনোকিছু নড়ে? নড়ে না। এখানে 'নড়ে' হলো "বায়ু, অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল, অর্থাৎ স্পেস!" আর "নড়ে"-এর আরেক অর্থ হলো 'বল (Force)'! যেখানে বায়ু নেই সেখানে কোনো কিছু নড়াতে গেলে লাগে বল। এই 'বল ছাড়া সবকিছু অচল’!
কী আশ্চর্য! নিশ্চয়ই "জল পড়ে পাতা নড়ে"-এর রচয়িতা একজন নবী (ঈশ্বরের অবতার) ছিলেন। তাইই যদি না হবে, তবে আবিষ্কার হওয়ার আগেই কীভাবে তিনি বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক সমস্ত যুগান্তকারী আবিষ্কারের "ইঙ্গিত” দিতে পেরেছিলেন?’
সে কারণেই প্রথম অধ্যায়টির নাম দিয়েছি 'কুরানে বিগ্যান!' এই অধ্যায়ের নয়টি পর্ব ও পর্ব-১৩ থেকে পাঠকরা কুরানে "বিজ্ঞানের" কিছু নমুনা জেনে নিতে পারবেন। দ্বিতীয় অধ্যায় - 'ইসলাম: উদ্ভট উটের পিঠে!' এতে সামগ্রিকভাবে কুরান ও তার অ্যানাটমি (Anatomy), ইসলাম প্রচার শুরু করার পর মুহাম্মদের সাথে কুরাইশদের বাক-বিতণ্ডা, যুক্তি-প্রতিযুক্তি, মুহাম্মদকে দেয়া তাদের 'চ্যালেঞ্জ', তাদেরকে দেয়া মুহাম্মদের চ্যালেঞ্জ - ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর 'মুহাম্মদের ব্যক্তি-মানস জীবনী (Psycho-biography)' অধ্যায় শিরোনামে পরবর্তী একশত তিনটি পর্বে হুদাইবিয়া সন্ধির বিস্তারিত আলোচনা পর্যন্ত মুহাম্মদের মদিনা জীবনের উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। বাকি উপাখ্যান গুলো ধর্মকারীতে আগের মতই ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হবে। মক্কার নবী জীবনের ইতিহাস আলোচনার আগেই তাঁর মদিনার নবী জীবনের বর্ণনা শুরু করা হয়েছে এই কারণে যে আদি উৎসে বর্ণিত 'সিরাত' গ্রন্থে মুহাম্মদের মদিনায় নবী জীবনের বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে সমগ্র বইয়ের ৮২ শতাংশ জুড়ে। সাধারণ মুসলমানদের সিংহভাগই মুহাম্মদের মদিনা জীবন ইতিহাস সম্বন্ধে প্রায় সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার:
২০০২ সালে প্রয়াত ডঃ অভিজিৎ রায়ের একটি ছোট্ট ই-মেইল পাই। তিনি কীভাবে আমার ই-মেইল ঠিকানা জোগাড় করেছিলেন, তা আমি আজও জানি না। তিনি লিখেছিলেনতাঁর গড়া 'মুক্তমনা' ওয়েব সাইটের কথা ও তার ওয়েব লিংক। বাংলাভাষায় মুক্তমনের মানুষদের লেখা অসংখ্য আর্টিকেলসমৃদ্ধ একটি ওয়েব সাইট, যার হদিস তখন আমার জানা ছিল না। সেখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। ডঃ অভিজিৎ রায়ের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ২০১০ থেকে ২০১২ সালে 'মুক্তমনায়' ইসলাম ধর্ম সংক্রান্ত লেখাগুলোতে আমি ছিলাম নিয়মিত মন্তব্যকারীদের একজন। সে সময় অনেকেই আমাকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন এ বিষয়ে কিছু লেখার জন্য। যাদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়, তাঁরা হলেন - অভিজিৎ রায়, তামান্না ঝুমু, আবুল কাশেম ভাই, আকাশ মালিক ভাই, সৈকত চৌধুরী, ব্রাইট স্মাইল, কাজী রহমান, আদিল মাহমুদ, রুশদি, ভবঘুরে, সপ্তক ও আরও অনেকে। তাঁদের উৎসাহেই মূলত এ বিষয়ে লেখার সিদ্ধান্ত। তাঁদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার এই লেখায় যে সমস্ত বইয়ের রেফারেন্স উদ্ধৃত হয়েছে, সেই সমস্ত বইয়ের লেখক ও প্রকাশকদের, যে সমস্ত ওয়েব সাইটের রেফারেন্স যুক্ত হয়েছে, সেই লেখকদের এবং যাদের নাম রেফারেন্স হিসাবে উদ্ধৃত হয়েছে - তাদের সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। সর্বোপরি সমস্ত পাঠকদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, যারা তাঁদের ব্যস্ত জীবনের কিছুটা সময় ব্যয় করে লেখাগুলো পড়ছেন।
আমি আশা করেছিলাম যে, বইটি লেখা সম্পূর্ণ করার পর তা ই-বুক আকারে তৈরি করা হবে। ক'দিন আগে একটা ই-মেইল পাই, যা আমাকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করে। ই-মেইলটি যিনি পাঠিয়েছেন তিনি হলেন "নরসুন্দর মানুষ!"জানতে পারলাম, গত চারটি বছর তিনি আমার লেখা প্রত্যেকটি পর্ব সযত্নে জমা করে রেখেছেন, বিশেষ অংশগুলো হাইলাইট করেছেন, প্রয়োজনীয় রেফারেন্সগুলো সংরক্ষণ করেছেন - আমার এইলেখার ই-বুক তিনি তৈরি করে দেবেন তাই। তিনি নিজ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এমন একটি চমৎকার প্রচ্ছদসমৃদ্ধ ই-বুক তৈরি করেছেন, যা দেখে আমি মুগ্ধ! তাঁর এই নিষ্ঠা ও ভালবাসার বিনিময় দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই।
যে-মানুষটির সাহায্য, সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা ছাড়া এ লেখা প্রকাশ করা সম্ভব হতো না, তিনি হলেন "ধর্মপচারক!" গত চারটি বছর তিনি আমার প্রত্যেকটি লেখার প্রুফ রিড করেছেন, বিভিন্ন সময়ে অনুবাদে সাহায্য করেছেন ও পরামর্শ যুগিয়েছেন। আমি তাঁর কাছে ঋণী।
জুন ২৬, ২০১৬ সাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন