লিখেছেন মানবিক মানব
মুসলমানদের মহান বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাকির নায়েক বিগ ব্যাং থিওরির সাথে পবিত্র কোরআনের সাদৃশ্য দেখাতে যে-আয়াত দু'টি উল্লেখ করে নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন, তা আবার প্রকাশ করছি।
সুরা আল আম্বিয়ার ৩০ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে, "অবিশ্বাসীরা কি ভাবিয়া দেখে না, আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী মিশিয়া ছিল ওতপ্রত ভাবে? অতপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম।" পবিত্র কোরআনের এই আয়াতে বিগ ব্যাং থিওরি বর্ণনা করা হয়েছে খুব সংক্ষেপে।
এছাড়াও পবিত্র কুরআনে আছে, সুরা ফসিলতের ১১ নাম্বার আয়াতে উল্লেখ করা আছে যে, "অতপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন যাহা ছিল ধুম্রপুঞ্জ বিশেষ, অনন্তের দিকে উহাকে এবং পৃথিবীকে বললেন তোমরা আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং উভয়ে বলিল আমরা আসলাম একান্ত অনুগত হইয়া।" যে-আরবি শব্দটি এখানে বলা হয়েছে, সেটা 'দুখান', যার অর্থ ধোঁয়া।
কোনো বিজ্ঞানীকে প্রশ্ন করলে তিনি বলবেন, এই বিশ্ব জগৎ এটা তৈরির আগে মহাবিশ্বের বিভিন্ন উপাদান সেগুলো ছিল বায়বীয় অবস্থায়। আর এই আরবি শব্দ 'দুখান', যার অর্থ 'ধোঁয়া', এটাকে আরও সঠিক ভাবে বললে বলা হবে বায়বীয়।
পূর্বে আমি বলেছিলাম যে, বিগ ব্যাং থিওরি আমাদের বলে না যে, মহাবিশ্ব ছিল বায়বীয় অবস্থায়। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে - কোন বিজ্ঞানীর কাছ থেকে তিনি জেনেছেন এ কথা? সে-ও কি তার মত আস্তিক? এই আয়াত দু'টি দিয়ে তিনি কিভাবে বিগ ব্যাং-এর সাথে মিল খুঁজে পেলেন, আমি বুঝতে পারছি না! তাঁর উদ্ধৃত অনুবাদ অনুযায়ী বোঝা যাচ্ছে যে, অবিশ্বাসীরা মানে মুসলিম বাদে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ কি ভেবে দেখে না, পৃথিবী এবং আকাশ পরস্পর মিশে ছিল এবং আল্লাহ এদের পৃথক করে দিয়েছেন। এই অনুযায়ী আমরা বুঝতে পারি, পৃথিবী সেটা আগেই তৈরি ছিল (কুরআনের অন্যান্য আয়াত অনুযায়ী সমতল) এবং আকাশ (কুরআনের অন্যান্য আয়াত অনুযায়ী ছাদ) এটাও আগেই তৈরি করা ছিল। এরা পরস্পর একসাথে মিশে ছিল অর্থাৎ আকাশ (ছাদ) এবং (সমতল ) পৃথিবী একটা আরেকটার ওপর মিশে ছিল। এরপর আল্লাহ এই দু'টিকে আলাদা করে দিয়েছেন।
তাঁর উদ্ধৃত অন্য আয়াত অনুযায়ী, আকাশ ছিল ধুম্রপুঞ্জ মানে ধোঁয়া অর্থাৎ বায়বীয় পদার্থ। আল্লাহ আকাশকে যা আগেই তৈরি ছিল বায়বীয় হিসেবে এবং পৃথিবী যা আগেই তৈরি করা ছিল উভয়কে বললেন, তোমরা দু'জন আসো অনন্তের দিকে স্বেচ্ছায় অথবা বাধ্য হয়ে। এবং তারা বাধ্যগত হয়ে আল্লাহের আদেশ পালন করলো। এখানে আকাশ এবং পৃথিবীকে বলা হয়েছে উভয় (together), কিন্তু সবাই মানে, সমস্ত (altogether or all) বিশ্বজগত নয়। এই ব্যাখ্যা দিয়ে কি বিগ ব্যাং থিওরি বর্ণনা হলো, তাও আবার সংক্ষিপ্তভাবে? জাকির নায়েকই এর উত্তর দিতে পারবেন। এই আয়াত দু'টির অনুবাদ আমি যেটা পেয়েছি, সেটা হলো:
"কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে , আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল , অতপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম।" (সুরা আল আম্বিয়া : আয়াত ৩০) - এখানে বলা হয়েছে যে অবিশ্বাসী বা কাফেররা মানে মুসলিম বাদে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ কি ভেবে দেখে না যে, পৃথিবী এবং আকাশের (যে দুটো আগেই তৈরী করা ছিল ) মুখ বন্ধ ছিল বা এগুলো একসাথে যুক্ত অবস্থায় ছিল অথবা এ দুটো আসলে একটাই ছিল, পরে মহান আল্লাহতালা এ দুটোর মুখ খুলে দিলেন বা এ দুটোকে পৃথক করলেন অথবা এটাকে দু'টুকরো করলেন। (অনুবাদ অনুযায়ী তো এরকমই হয়) এবং আলাদাভাবে স্থাপন করলেন।
পরের আয়াতটি হলো: "অতপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রপুঞ্জ, অতপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা আসো ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল , আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।" (সুরা ফসিলাত : আয়াত-১১) - এই আয়াত অনুযায়ী আল্লাহ আকাশকে, যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ বা বায়বীয়, সেটাকে এবং পৃথিবীকে বললেন, তোমরা আসো ইচ্ছে অথবা অনিচ্ছায়। তখন আকাশ এবং পৃথিবী স্বেচ্ছায় আল্লাহর আদেশ পালন করলো। এখানে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে, আল্লাহ আকাশ এবং পৃথিবীকে আসতে বলছেন, অর্থাৎ এগুলো আগেই তৈরি হয়ে আছে। তাহলে কি এটা বিগ ব্যাং থিওরির সাথে মিললো?
জাকির নায়েক কী দেখে এগুলোকে বলল যে, এগুলো বিগ ব্যাং-এর বর্ণনা দিয়েছে? সেটা জাকির নায়েক ছাড়া কেউ বলতে পারবে কি না, সন্দেহ !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন