শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬

'রঙ্গিলা রাসুল' সমাচার, পাকিস্তানের জন্মে এর সম্ভাব্য ভূমিকা এবং পাকিস্তানে ব্ল্যাসফেমি আইন - ৪

লিখেছেন মার্ক এন্টনি

পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩

ঐতিহাসিকগণ বলেন, জিন্নাহ কংগ্রেসের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ত্যাগ করলেও কংগ্রেসের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং ভারত বিভাগ তিনি চাননি। কিন্তু ১৯৩০ সালে একটি আলাদা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের ধারণা তৈরির পর থেকেই ইকবাল বারবার জিন্নাহকে পাকিস্তান নামে একটি আলাদা রাষ্ট্র তৈরির কথা বলতে থাকেন। 

শেষ পর্যন্ত জিন্নাহ ১৯৪০ সালে অফিশিয়ালি ঘোষণা দেন যে, পাকিস্তান সৃষ্টিই তাঁর লক্ষ্য। ইকবাল জিন্নাহকে সবসময়ই একটি আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের গঠনের জন্য কথা বলে আসছিলেন। ১৯৩৭ সালের ২১ শে জুন জিন্নাহকে লেখা ইকবালের একটি চিঠি দেখুন:
একটি আলাদা মুসলিম অঙ্গরাজ্যই কেবল ভারতকে শান্তিপূর্ণ রাখতে পারে এবং মুসলিমদেরকে অমুসলিমদের কর্তৃত্ব থেকে রক্ষা করতে পারে। কেন উত্তর পশ্চিম ভারত এবং বাংলার মুসলিমদেরকে একটি জাতি হিসেবে বিবেচনা করা হবে না, যে জাতি নিজের সিদ্ধান্তেই চলতে পারে, যেমনটা ভারতের মধ্যকার জাতিগুলো এবং বাইরের জাতিগুলো চলছে?
পাঞ্জাব মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে ইকবাল জিন্নাহর রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও পাঞ্জাবী নেতা স্যার সিকান্দার হায়াত খানের রাজনৈতিক চুক্তির সমালোচনা করেন, যাদেরকে ইকবাল সামন্তপ্রভু শ্রেণীর প্রতিনিধি হিসেবে দেখতেন এবং যারা ইসলাম ও তার মূল রাজনৈতিক দর্শনের প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন না। যাই হোক, ইকবাল প্রতিনিয়তই মুসলিম নেতাদের ও জনগণকে জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগকে সমর্থন করতে উৎসাহিত করেছেন। ভারতের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলার সময় তিনি বলেন:
কেবল একটাই রাস্তা খোলা আছে। মুসলিমদেরকে জিন্নাহ্‌র হাত শক্ত করতে হবে। তাদের সবাইকে মুসলিম লীগে অংশগ্রহণ করা উচিত। আমরা সকলে একত্রে মিলিত হলেই কেবল হিন্দু ও ব্রিটিশ উভয়ের বিরুদ্ধেই ভারতের প্রশ্নে লড়াই করতে পারব। এটা ছাড়া আমাদের দাবি কখনই বাস্তবায়িত হবে না। সবাই বলবে, আমাদের দাবি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়াবে। কিন্তু সেটা তাদের আমাদের উদ্দেশ্যকে বানচাল করার কৌশল ছাড়া আর কিছুই না। এই দাবি আমাদের জাতীয় অস্তিত্বকে রক্ষা করার জন্য... মুসলিম লীগের নেতৃত্বে এই যুক্তফ্রন্ট গঠিত হতে পারে। আর কেবল জিন্নাহ্‌র নেতৃত্বেই মুসলিম লীগ বিজয়ী হতে পারে। এখন জিন্নাহ ছাড়া আর কেউই মুসলিমদের নেতৃত্বদানের ক্ষমতা রাখে না।
প্রশ্ন হচ্ছে: যেখানে ১৯৩০ সালের দিকে আল্লামা ইকবাল সমস্ত মুসলিম লীগ নেতার ওপরেই ক্ষুব্ধ ছিলেন, তিনি হঠাৎ করে জিন্নাহর ওপরে এত দরদ দেখানো শুরু করলেন কেন? এর কারণ এটা নয় তো যে, জিন্নাহ ইলমুদ্দিনের কেসে বোম্বে থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন? আর এ কারণে অন্যান্য যে কোনো নেতার চাইতে জিন্নাহই ইকবালের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন আর জিন্নাহর চোখ দিয়েই ইকবাল সাহেব পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখতে থাকেন?

হতে পারে। কিন্তু এতে জিন্নাহর নিজের উপকার হয়নি কি? আল্লামা ইকবাল যখন সকলকে কেবল জিন্নাহকেই মুসলিমদের স্বাধীনতা এনে দিতে একমাত্র সক্ষম নেতা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন, তখন ভারতের সকল মুসলিমের কাছে জিন্নাহ এক অবিসংবাদী নেতায় পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন