আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬

জাকির নায়েকের ‘কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান’ এবং তার যুক্তিখণ্ডন - পর্ব ৪

লিখেছেন Enigmatic Jihad


পরবর্তীতে জাকির নায়েক যে-বিষয়টি তুলে ধরেন, তা হলো, চাঁদ এবং তার আলো সম্পর্কিত। জাকির নায়েক বলেন যে ১৪০০ বছর আগেই কোরআনে বলা হয়েছে যে, চাঁদের আলো প্রতিফলিত আলো। এক্ষেত্রে জাকির নায়েক প্রথমে এই আয়াতটি উল্লেখ করেন: "'কল্যাণময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলের রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সুর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।" (সুরা ফুরকান-৬১) - এখানে সুর্যকে বোঝাতে ﺳِﺮَﺍﺟًﺎ (সিরাজ) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যার অর্থ বাতি। এখানে তিনি আরোও দুটি আয়াত উল্লেখ করেন: "'তিনিই সেই সত্বা, যিনি সুর্যকে উজ্জ্বল আলোকময় এবং চাদকে স্নিগ্ধ আলোয় আলোকিত করেছেন।" (সুরা ইউনুস-৫) এবং "তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, আল্লাহ কিভাবে সপ্ত আসমানকে স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন এবং সেখানে চাঁদকে রেখেছেন আলোরুপে, এবং সুর্যকে রেখেছেন প্রদীপরুপে।" (সুরা নুহ-১৫-১৬)

যাই হোক, এখানে জাকির নায়েকের যুক্তি হলো, কোরআনে সুর্যকে বোঝাতে যে সকল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, চন্দ্রকে বোঝাতে সেই সকল শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। সুতরাং, কোরান সুর্য ও চাঁদের আলোর পার্থক্যকে স্বীকার করে। এখন, আপনি নিশ্চয় গরুকে ভেড়া এবং ভেড়াকে ছাগল ডাকবেন না। তাই সুর্যকে এবং চন্দ্রকে নিশ্চয়ই একই শব্দ দ্বারা প্রকাশ করার কোনো প্রশ্নই নেই এবং এর কোনো মানেও হয় না এবং তা দ্বারা তাদের আলোর প্রকৃতি সম্পর্কেও জানা যায় না। আমি বলি ছাগল, আর কেউ বলে হাগল, নিশ্চয়ই দুটো আলাদা বস্তু না। আর এত কষ্টের কী প্রয়োজন, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ শুধুমাত্র এইটুকু লিখলেই পারতেন, "তোমরা কি দেখ না, আমি চন্দ্রকে উজ্জ্বল করেছি, তার স্বীয় আলো ব্যতীত?" কোরান কি মানুষের জন্য সহজ ও বোধগম্যভাবে লেখা হয়নি?

এর পরের বিষয়টি হলো, সুর্যের আবর্তন সম্পর্কে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন যে, পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্রে স্থির হয়ে আছে এবং সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহগুলো এর চতুর্দিকে আবর্তন করছে। পাশ্চাত্যে খ্রিষ্টপুর্ব দ্বিতীয় শতাব্দিতে টলেমির যুগ থেকে মহাবিশ্বের এ ভূ-কেন্দ্রিক ধারণা ব্যাপকভাবে প্রচলিত সত্য হিসেবে বিদ্যমান ছিলো। ১৫১২ খ্রিষ্টাব্দে নিকোলাস কোপারনিকাস তার সুর্যকেন্দ্রিক গ্রহ সংক্রান্ত গতিতত্ত্ব দেন, যাতে বলা হয়, সুর্য তার চারদিকে ঘুর্ণায়মান গ্রহগুলোর কেন্দ্রে গতিহীন।

আসলে টলেমির এই ভূ-কেন্দ্রিক মডেল অনেক সভ্যতাতেই খুব গ্রহণযোগ্যতা পায়, যেমন প্রাচীন গ্রিক সভ্যতা। এ কারণেই অনেক গ্রিক দার্শনিককে পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করতে দেখা যায়। এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো অ্যারিস্টটলীয় পদার্থবিদ্যা এবং টলেমির জগৎ। টলেমির এই ধারণা অজ্ঞাতকাল থেকে শুরু করে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত বহাল তবিয়তেই ছিলো। "মেগেল ম্যাথমেটিক সাইনট্যাক্সিস", মধ্যযুগে যা ছিলো জ্যোতিষশাস্ত্রের বাইবেল, তার রচয়িতা টলেমি যে শুধু ভূ-কেন্দ্রিক বিশ্বের ধারণা পোষণ করতেন, তা নয়, তার ব্যাপক প্রচারও করতেন। তবে তখনকার কেউ যে সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের সম্পর্কে কোনো ধারণার অধিকারী ছিলেন না, তা নয়। টলেমির কয়েক শতাব্দী আগে ইজিয়ান অঞ্চলের চিয়স দ্বীপে জন্মগ্রহণকারী এরিস্টার্কাস সুর্যকেই বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু বলে গণ্য করেছিলেন। কোপার্নিকাস ফ্রুয়েনবার্গ গির্জায় থাকাকালীন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ (খালি চোখে) ও গণিতশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও ধর্মতত্ত্ব নিয়ে জ্ঞানসাধনা চালিয়ে যান। তাঁর অধ্যয়ন যত এগিয়ে যেতে থাকে, তিনি টলেমীয় ধারণায় বেশি করে আস্থাহীন হয়ে পড়তে লাগলেন। ১৫১০ থেকে ১৫১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল ধরে কোপার্নিকাস তাঁর মতবাদের সংক্ষিপ্তসার হিসেবে "de hypothesibus motuum coelestium a syconstitutis commentariolus" (মহাশূন্যের বস্তুনিচয়ের বিন্যাস থেকে তাদের গতিশীলতা সম্বন্ধে তত্ত্বসমুহের ওপর মন্তব্য) রচনা করেন। গ্রহমণ্ডলীয় কেন্দ্রে স্থির অবস্থানে বিদ্যমান সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর বার্ষিক গতি ও নিজ অক্ষের চারদিকে তার আহ্নিক ঘুর্ণন থেকেই যে তারকাগুলোর আপাত প্রতীয়মান দৈনিক গতি, সূর্যের বার্ষিক গতি ও গ্রহসমুহের পশ্চাদগতিশীল আচরণের উদ্ভব ঘটে - এ কথাই ছিলো ঐ রচনার মূল প্রতিপাদ্য।

এবার আসি কোরানের আয়াতের দিকে: "তিনিই সৃষ্টি করেছেন, রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই স্বীয় কক্ষপথে বিচরণ করে।' (সুরা আম্বিয়া-৩৩) - এর পর তিনি সূর্যের আবর্তন সম্পর্কে কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য উল্লেখ করেন। সূর্য বিচরণ করে আপন কক্ষপথে, ঠিক আছে। কিন্তু পৃথিবী? পৃথিবী স্থির হলেও কিন্তু সূর্যের বিচরণ সম্ভব। এবং কোরানে এটাই বলেছে, কারণ কোরানে কোথাও বলা হয়নি যে, পৃথিবী নিজ অক্ষে আবর্তন করে। স্থির পৃথিবীর ধারণা থেকেই সুর্যের আবর্তনের ধারণার জন্ম। ঠিক যেই জিনিসটা ব্যাখ্যা করার জন্যই ওপরের ইতিহাস, এবং টলেমি যে ভূ-কেন্দ্রিক মডেল উপস্থাপন করেছিলেন, তাতেই সূর্যের এই পরিভ্রমণের ব্যাখ্যা উল্লেখিত। উক্ত আয়াতে বলা হয়েছে চাঁদ এবং সূর্য নিজ কক্ষে বিচরণ করে, সেখানে অন্যান্য গ্রহ বা পৃথিবী সম্পর্কে বলা হয়নি। এখানে আমরা জানি যে, চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে এবং আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, সুর্য পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, কারণ আমরা সুর্যকে প্রতিদিন পূব আকাশে উদয় ও পশ্চিমে অস্ত যেতে দেখি। সেখানে চাঁদ ও সূর্যকে একত্রে আবর্তনকারী দাবিটি সম্পূর্ণভাবেই ভ্রান্ত ও অবৈজ্ঞানিক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন