লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
{পাঁচ ফুট সাত/আট ইঞ্চি উচ্চতার ভুঁড়িহীন মোটাসোটা শরীর, চওড়া ঘাড় আর গোলাকার মুখমণ্ডলে একটু লম্বা বাঁকানো নাক, জোড়া ভ্রূ, স্বল্প দৈর্ঘ্যের দাড়ি-গোফ আর কাঁধ পর্যন্ত লম্বা কালো চুল; সেইসাথে গায়ের ত্বকে লালচে ফর্সা মানুষ মুহাম্মদ, প্রথম দর্শনে ভয় কাজ করে; কিন্তু সময় দিলে স্বাভাবিক লাগে সবকিছুই; খুব কম হাসেন, দাঁত দেখান না মোটেই; সময়ের সাথে সাথে মানুষ পড়তে পারার অসামান্য দক্ষতা আর নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা তৈরি হয়েছে তাঁর; যে কোনো বিষয়বস্তুকে অল্প কথায় সহজে প্রকাশ করতে পারেন!
বিশ্বাসহীন কথা বলেন না; আল্লাহ, ফেরেশতা, ইহকাল, পরকাল, বিচার, বেহেস্ত ও দোযখে আস্থা তাঁর; বিশ্বাস করেন, তিনি আল্লাহ কর্তৃক নিয়োজিত একজন পথপ্রর্দশক; নামাজ পড়তে পড়তে পা ফুলিয়ে ফেলেন; আকাশে মেঘ দেখলে কেয়ামত আসার ভয়ে ভীতু হয়ে পড়েন!
মানুষ মুহাম্মদের সামান্য দিক এটুকু; কিন্তু এই মানুষটি তৈরি হয়েছেন কী নিদারুণ সময়ের পরীক্ষায়, তা বুঝতে না পারলে কোরআন ও ইসলাম বুঝতে পারাও অপূর্ণ থেকে যায়।
জন্মের আগেই হয়েছেন এতিম; প্রথম যাকে মা বলে চিনতে শিখেছেন, পাঁচ বছরে বয়সে বুঝলেন, তিনি তাঁর নিজের মা নন; যখন আসল মা খুঁজে পেলেন; সেই সঙ্গ বছর পেরুলো না; দাদা আর চাচার বাসায় পরাশ্রয়ীর মত বড় হতে থাকেন মুখচোরা স্বল্পভাষী আত্মকেন্দ্রিক প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ হিসেবে। প্রতি বছর হজ্জ আর ওকাজ মেলার সময় হাজার মানুষের আনাগোনা, গরীব-ধনীর বিভেদ; মরুভূমির কঠিন জীবন, ১০ বছর পর পর কাবা ডুবিয়ে দেওয়া বন্যা; গোত্রে গোত্রে বিভেদ, অপূর্ণ প্রথম প্রেম; প্রথম স্ত্রীর বাড়িতে ঘরজামাই জীবন; ছয়/সাত বছর বয়সের প্রথম ছেলে সন্তানকে নিজের হাতে মাটিতে দাফন করার কষ্ট আর অতিরিক্ত মানসিক চাপের সময় জ্ঞান হারানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে উনচল্লিশ বছর বয়সে এসে নিজেকে নবী হিসাবে আবিষ্কার করেন মুহাম্মদ। তারপরেই ক্রমশ পাল্টাতে থাকেন তিনি। ৬২ বছর বয়সে যখন মারা যান, তখন তাঁর অনুগামীরা আল্লাহ আর মুহাম্মদের নামে পুরো পৃথিবী জয় করার সাহসের সাথে সাথে বিনা দ্বিধায় মানুষের মুণ্ডু কাটার মত মনোবলে বলীয়ান হয়ে ওঠে! কী ছিলো মুহাম্মদের মতবাদে? কেমন ছিলো তাঁর বেঁচে থাকার প্রতিটি দিন? কেন তার মতবাদে বর্তমানেও সাধু আর জঙ্গি একসাথে তৈরি হয়? এসবের উত্তর জানতে প্রথমেই আমাদের নিতে হবে দর্শকের ভূমিকা; আমরা শুধু দেখতে থাকবো, কীভাবে একজন মানুষের ভেতর ডক্টর জেকিল এন্ড মিষ্টার হাইড (Strange Case of Dr Jekyll and Mr Hyde -1886, by Robert Louis Stevenson) একসাথে বেড়ে ওঠে!
নিচের ছবিটি ভালভাবে দেখে রাখুন; আগামী পর্বে এই ছবিটির ব্যাখ্যা আমাদের অনেক ধাঁধার জবাব দিয়ে দেবে; কারণ আমরা ক্রমশ মুহাম্মদের জীবনে প্রবেশ করতে শুরু করছি।
হাই রেজলুশনের মূল ছবিটির ডাউনলোড লিংক (১.৮৯ মেগাবাইট)
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ৫ম পর্ব; এই পর্বেও থাকছে ধারাবহিক ভাবে ছয় অংশ। অনুবাদের ভাষা ৫০ টির বেশি বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৫ তম প্রকাশ; সূরা আল হুমাযাহ (১০৪) (পরনিন্দাকারী) ৯ আয়াত:
১. প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ,
২. যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে
৩. সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে!
৪. কখনও না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে।
৫. আপনি কি জানেন, পিষ্টকারী কী?
৬. এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি,
৭. যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে।
৮. এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে,
৯. লম্বা লম্বা খুঁটিতে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৬ তম প্রকাশ; সূরা আল গাশিয়াহ (৮৮) (কেয়ামত) ১৭ থেকে ২৬ আয়াত:
১৭. তারা কি উষ্ট্রের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কীভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে?
১৮. এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কীভাবে উচ্চ করা হয়েছে?
১৯. এবং পাহাড়ের দিকে যে, তা কীভাবে স্থাপন করা হয়েছে?
২০. এবং পৃথিবীর দিকে যে, তা কীভাবে সমতল বিছানো হয়েছে?
২১. অতএব, আপনি উপদেশ দিন, আপনি তো কেবল একজন উপদেশদাতা,
২২. আপনি তাদের শাসক নন,
২৩. কিন্তু যে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও কাফের হয়ে যায়,
২৪. আল্লাহ তাকে মহা আযাব দেবেন।
২৫. নিশ্চয় তাদের প্রত্যাবর্তন আমারই নিকট,
২৬. অতঃপর তাদের হিসাব-নিকাশ আমারই দায়িত্ব।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৭ তম প্রকাশ; সূরা আত ত্বীন (৯৫) (ডুমুর) ৮ আয়াত
১. শপথ আঞ্জীর (ডুমুর) ও যয়তুনের,
২. এবং সিনাই প্রান্তরস্থ তূর পর্বতের,
৩. এবং এই নিরাপদ নগরীর।
৪. আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।
৫. অতঃপর তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি নিচ থেকে নিচে।
৬. কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে অশেষ পুরস্কার।
৭. অতঃপর কেন তুমি অবিশ্বাস করছ কেয়ামতকে ?
৮. আল্লাহ কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন?
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৮ তম প্রকাশ; সূরা আল ক্বিয়ামাহ্ (৭৫) (পুনরত্থান দিবস) ১৯ আয়াত
১. আমি শপথ করি কেয়ামত দিবসের,
২. আরও শপথ করি সেই মনের, যে নিজেকে ধিক্কার দেয়-
৩. মানুষ কি মনে করে যে, আমি তার অস্থিসমূহ একত্রিত করব না?
৪. পরন্ত আমি তার অঙ্গুলিগুলো পর্যন্ত সঠিকভাবে সন্নিবেশিত করতে সক্ষম।
৫. বরং মানুষ তার ভবিষ্যৎ জীবনেও ধৃষ্টতা করতে চায়
৬. সে প্রশ্ন করে - কেয়ামত দিবস কবে?
৭. যখন দৃষ্টি চমকে যাবে,
৮. চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে।
৯. এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে-
১০. সে দিন মানুষ বলবে: পলায়নের জায়গা কোথায়?
১১. না, কোথাও আশ্রয়স্থল নেই।
১২. আপনার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাঁই হবে।
১৩. সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে ছেড়ে দিয়েছে।
১৪. বরং মানুষ নিজেই তার নিজের সম্পর্কে চক্ষুষ্মান।
১৫. যদিও সে তার অজুহাত পেশ করতে চাইবে।
১৬. তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্যে আপনি দ্রুত ওহী আবৃত্তি করবেন না।
১৭. এর সংরক্ষণ ও পাঠ আমারই দায়িত্ব।
১৮. অতঃপর আমি যখন তা পাঠ করি, তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন।
১৯. এরপর বিশদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ২৯ তম প্রকাশ; সূরা আর রাহমান (৫৫) (পরম করুণাময়), ৮ আয়াত
১. করুণাময় আল্লাহ।
২. শিক্ষা দিয়েছেন কোরআন,
৩. সৃষ্টি করেছেন মানুষ,
৪. তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনা।
৫. সূর্য ও চন্দ্র হিসাবমত চলে।
৬. এবং তৃণলতা ও বৃক্ষাদি সেজদারত আছে।
৭. তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন তুলাদণ্ড।
৮. যাতে তোমরা সীমালংঘন না কর তুলাদণ্ডে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৩০ তম প্রকাশ; সূরা আল আলা (৮৭) (মহীয়ান) ৮ থেকে ১৯ আয়াত
৮. আমি আপনার জন্যে সহজ শরীয়ত সহজতর করে দেবো।
৯. উপদেশ ফলপ্রসূ হলে উপদেশ দান করুন,
১০. যে ভয় করে, সে উপদেশ গ্রহণ করবে,
১১. আর যে, হতভাগা, সে তা উপেক্ষা করবে,
১২. সে মহা-অগ্নিতে প্রবেশ করবে।
১৩. অতঃপর সেখানে সে মরবেও না, জীবিতও থাকবে না।
১৪. নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়
১৫. এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।
১৬. বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,
১৭. অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।
১৮. এটা লিখিত রয়েছে পূর্ববতী কিতাবসমূহে;
১৯. ইব্রাহীম ও মূসার কিতাবসমূহে।
(চলবে)
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন