লিখেছেন মেসবাহ উস সালেহীন
Apocalypse একটা গ্রিক শব্দ। এর মানে হচ্ছে ‘ঘোমটা সরানো’ কিংবা সত্য প্রকাশ করা। বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মেই অ্যাপোক্যালিপ্স কিংবা কেয়ামত কিংবা আর্মাগেডন কিংবা মহাপ্রলয়ের কথা উল্লেখ আছে।
এই কেয়ামতের মিথ-এর জন্ম হল কীভাবে, সেটা জানার জন্য মরগান ফ্রিম্যান সবার আগে গেলেন ইজরাইলে। জেরুলালেম শহরে তাঁর সাথে দেখা হল Yoram Hazony নামক ইহুদি-ধর্ম এবং রাজনীতি বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ-এর সাথে।
তার কাছ থেকে জানা যায়, রাজা হেরোদ ২০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ইহুদিদের প্রার্থনার জন্য একটা বিশাল মন্দির গড়ে তোলেন। ৭০ সালে রোমানরা জেরুজালেম দখল করে এবং এই মন্দির ধ্বংস করে। মন্দিরের একটিমাত্র দেয়াল অক্ষত থেকে যায়। মন্দিরটা আর পুনঃনির্মাণ করা হয়নি।ইহুদিরা কেবলমাত্র এই একটি দেয়ালের (ওয়েস্টার্ন ওয়াল) সামনে এসেই প্রার্থনা করে বর্তমানে। দেয়ালের সামনে এসে তারা বিড়বিড় করে দেয়ালের সাথেই কথা বলে। ১৯৬৭ সালে এই দেয়ালটির দখল ইহুদিরা ফিরে পায়। তার আগে অন্যান্য ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর দখলে ছিল এই ওয়েস্টার্ন ওয়াল। ৭০ বছর ধরে স্বাধীন ইজরাইন রাষ্ট্র গঠিত হলেও ইহুদিরা নতুনভাবে মন্দিরটা বানাচ্ছে না। কারণ এই ওয়েস্টার্ন ওয়াল যে এলাকার অংশ (তাকে বলে টেম্পল মাউন্ট, এখানে ইসলাম এবং খ্রিষ্টান ধর্মের আরো অনেক পবিত্র ধর্মীয় উপাদান আছে), মন্দির বানাতে গেলে অন্য ধর্মের গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে কট্টর ইহুদিরা মনে করে, এই মন্দির ছাড়া তাদের ধর্ম অসম্পূর্ণ। তারা আশা করতে থাকে, কবে একজন নতুন মেসায়া (ইসলাম ধর্মের কনসেপ্ট অনুযায়ী শেষ যমানার ইমাম মেহেদী) এসে মন্দিরটা কমপ্লিট করবেন।
ইহুদিদের এই মেসায়া কেয়ামতের আগে আসবেন। তাঁর কোনো অলৌকিক ক্ষমতা থাকবে না। পুরোপুরি সাধারণ একজন মানুষ হবেন।তিনি ইজরাইল রাস্ট্রের রাজা হবেন। ইজরাইল জাতিকে পুনর্গঠিত করবেন, অন্য ধর্মের মানুষদের সাথে সম্প্রীতি তৈরি করবেন এবং মন্দিরটা পুননির্মাণ করবেন — এইটুকুই তার দায়িত্ব। তারপরে সারা বিশ্ব সুখে-শান্তিতে ভরে যাবে। সকল যুদ্ধ-বিগ্রহ থেমে যাবে।
ইয়োরাম হাযোনিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, মন্দির নিয়ে বর্তমান সময়ে ইহুদিরা কী ভাবছে? তিনি বললেন, ইহুদিরা মনে করে, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম।’ আগে ন্যায় এবং শান্তি-সম্প্রীতি ছিল। তারা সেই শান্তির প্রতীক হিসেবেই নতুনভাবে মন্দিরটা বানাতে চায়।
ইহুদি ধর্মের মত আরো অনেক ধর্মেও (ইসলামসহ) এইরকম একটা ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে যে, কেয়ামতের আগে অনেক সুখ-শান্তি বিরাজ করবে।
জেরুজালেম থেকে এরপর নরমান ফ্রিম্যান ঘুরতে যান ডেড সি’র কাছে কুমরান গুহা নামে পরিচিত একটা জায়গায়। ইহুদিদের একটা সম্প্রদায়, নাম এসেনস (essenes) ১০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই গুহায় এসে আশ্রয় নিয়েছিল। তারা গুহায় অনেক পুথি লিখেছিল। সেই পুথিগুলো এখনো আছে। উইকিপিডিয়াতে ডেড সি স্ক্রল নামে আর্টিকেল আছে এই বিষয়ে। ওই সময়ে ইহুদি এবং রোমানদের ভেতরে অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হচ্ছিল। কুমরান গুহার ইহুদী essenes পণ্ডিতরা কেয়ামত নিয়ে অনেক ধরনের ভবিষ্যৎবাণী করে গেছেন। এই ভবিষ্যৎবানীতে বলা হয়েছে, কেয়ামত হবে খুব খারাপ, যুদ্ধ আর ধ্বংসলীলার মাঝে হবে কেয়ামত। ইহুদি অন্যান্য মূলধারার সম্প্রদায় কিন্তু মনে করে, নতুন মেসায়া এসে সুখ-শান্তি দিয়ে যাবে, সেই সুখের ভেতরে হবে কেয়ামত।
এসেন্স-রা তাদের আস্তানায় বসে কেয়ামতের জন্য প্রস্তুতি নিত। তাদের ধর্মীয় রিচুয়ালেও কিছুটা ভেরিয়েশন এসেছিল। আরকিওলোজিস্টরা পানি রাখার মত বিশাল ট্যাঙ্কি খুঁজে পেয়েছেন। আশেপাশের নমুনা দেখে মনে করা হয়, এই ট্যাংকিগুলোতে রাখা হত রক্ত, সেই রক্ত উপাসনার কাজে লাগত। তাদের বিশ্বাস ছিল, আলোর সন্তানদের সাথে যুদ্ধ হবে অন্ধকারের সন্তানদের। আলোর সন্তানদের সাহায্যে আকাশ থেকে অনেক অশরীরি প্রাণী (ফেরেস্তা!) আসবে।
এসেন্সদের কেয়ামত এসেছিল ৬৮ সালে। রোমানরা এই জায়গা আক্রমন করে সকল গুহাবাসীকে খুন করে।
খ্রিষ্টান ধর্মের একটা পুরনো বই হচ্ছে book of revelation - মোটামুটি ১০০ সালে এটি লেখা হয়েছে। এই বইয়ে বলা হয়েছে, কেয়ামতের সময় অ্যান্টিক্রাইস্টের সাথে একটা প্রচণ্ড লড়াই হবে। অ্যান্টিক্রাইস্ট কে? "অ্যান্টিক্রাইস্ট একজন মানুষ, তার নাম্বার হচ্ছে ৬৬৬, যে কোনো বোধশক্তিসম্পন্ন মানুষই তাকে দেখলে চিনতে পারবে" (ধারণা করা হয়, অ্যান্টিক্রাইস্টের কপালে ৬৬৬ লেখা থাকবে)।
এই অ্যান্টিক্রাইস্ট নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। অনেক সিনেমা বানানো হয়েছে। the omen (অশুভ সংকেত) নামে একটা ট্রিলজি উপন্যাস খুব বিখ্যাত। এই উপন্যাস থেকে সিনেমাও হয়েছে। এখানকার কাহিনী অনুযায়ী, ১৯০৬ সালের জুন মাসের ৬ তারিখ অ্যান্টিক্রাইস্ট জন্ম নেয় আমেরিকান এক সিনেটরের পরিবারে। তার নাম হয় ডেমিয়েন থর্প। পারিবারিক ব্যবসা এবং রাজনীতির মাধ্যমে খুব দ্রুতই ক্ষমতা পেয়ে যান। তারপর পুরা দুনিয়ায় ধ্বংস চালাতে থাকেন। যেখানে যেখানে পারেন, যুদ্ধ বাধান। তার কপালে ইংরেজি অক্ষরে লেখা আছে 666; এই লেখা ঢাকার জন্য তিনি সামনে লম্বা চুল রাখেন (ইসলামি মিথ অনুযায়ী, দজ্জাল নামে এক ব্যক্তি আসবে। তার কপালে আরবিতে লেখা থাকবে কাফের, যেটা কিছুটা ইংরেজি ৬৬৬ এর মতই দেখতে); অনেকে মনে করেন, হিটলারের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ৬৬৬ নাম্বার বন্দী হচ্ছেন অ্যান্টিক্রাইস্ট।
মরগান ফ্রিম্যান বুক অফ রিভিলেশন দেখতে গিয়েছিলেন ভ্যাটিকান সিটিতে। সেখানে ৬৬৬ লেখা হয়েছে হিব্রু ভাষায়। এক গবেষকের কাছে তিনি ব্যাখ্যা পেলেন, ৬৬৬ মানে হচ্ছে রাজা নিরো। "রোম যখন পুড়ছিল, নিরো তখন বাশি বাজাচ্ছিল নামে" একটা প্রবাদ পড়েছিলাম আমরা, মনে আছে? এর ইকুইভ্যালেন্ট বাংলা অনুবাদ হচ্ছে - কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। এই নিরো ছিল পেগান ধর্মের অনুসারী (মূর্তিপূজারি) খ্রিষ্টানরা তখন কেবল রোমে আসা শুরু করেছে। নিরো খ্রিষ্টানদের খুব অত্যাচার করতেন। তার সার্কাসের জন্য প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থা করার জন্য তিনি খ্রিষ্টানদের ক্রুশে ঝুলিয়ে তাদের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতেন। ৬৪ সালে রোমের প্রধান গির্জার পুরোহিতকে তিনি পা ওপরে মাথা নিচে করে ক্রুশবিদ্ধ করেছিলেন। ওই সময়কার একেবারে প্রথম দিককার খ্রিষ্টানদের ওপর অনেক অনেক অত্যাচার করেছিলেন। তিনি মারা গেলেও খ্রিষ্টানরা আশংকা করেছিলেন, তার মৃত আত্মা ফিরে এসে খ্রিষ্টানদের ক্ষতি করবে। তাই বুক অফ রিভিলেশনে তার কথা লেখা হয়েছে।
আরবী, হিব্রু কিংবা এইরকম কয়েকটি ভাষায় প্রতিটি অক্ষরের একটা করেস্পন্ডিং নিউমেরিক ভ্যালু থাকে। যেমন– ইংরেজির ক্ষেত্রে a=1, b=2, c=3, d=4... এরকম। তবে এই ভ্যালুগুলি সিরিয়ালি নাও থাকতে পারে। যেমন আরবিতে, সম্ভবত, প্রথম ১০ টি অক্ষরের ভ্যালু ১ করে বাড়ে, তারপরে কয়েকটা অক্ষরের ভ্যালু ৫ করে বাড়ে, শেষের দিকে ১০ কিংবা ৫০/১০০ করে বাড়ে। বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম লিখতে যে অক্ষরগুলো লাগে, সেই অক্ষরগুলোর করেস্পন্ডিং ভ্যালু একসাথে লিখে যোগ করলে যোগফল হয় ৭৮৬; এইজন্য অনেকে চিঠি লেখার সময়, দলিলপত্রে কিংবা পরীক্ষার খাতায় বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম না লিখে শুধু ৭৮৬ লিখে রাখে। মরগ্যান ফ্রিম্যান আবিষ্কার করলেন, হিব্রু ভাষায় রাজা নিরো (Kaiser neron) লিখলে তার করেসপন্ডিং ভ্যালু দাঁড়ায় ৬৬৬।
ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, কেয়ামতের আগে দজ্জাল নামে একটা মানুষ আসবে। সে খুব অত্যাচার করবে মানুষের উপরে। অনেক মানুষ মারা যাবে। দজ্জালকে খুন করার জন্য প্রথমে ইমাম মেহেদী এবং পরে ঈসা নবী পৃথিবীতে আসবেন এবং দজ্জালকে খুন করবেন। তখন সবাই অনেক সুখে শান্তিতে বাস করবে। এই সুখের ভেতরেই কেয়ামত হবে। ইস্রাফিল ফেরেস্তা বাঁশিতে ফুঁ দেবেন। সেই ফুঁ-এর শব্দ পৃথিবীর সবাই শুনতে পাবে (আমরা জানি যে, বাতাস না থাকলে শব্দ প্রবাহিত পারে না। অতএব পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে কোনো শব্দ তৈরি হলে সেটা পৃথিবীর মানুষ শুনতে পারবে না), হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্পের মত সেই বাঁশির শব্দ শুনে সবাই দৌড়াতে থাকবে।দৌড়াতে দৌড়াতে সবাই মারা যাবে। পৃথিবী এবং অন্য সকল গ্রহ-নক্ষত্র মিলিত হয়ে একটা সমতল ভূমি তৈরি হবে। যারা মারা গিয়েছিল, সবাই তখন জ্যান্ত হবে, সবাই একটা করে নতুন শরীর পাবে। সূর্য খুব নিকটে চলে আসবে। মাথার কয়েক হাত ওপরে থাকবে সূর্য। তাপমাত্রা অনেক বাড়বে (তবে সূর্য দেখতে কত বড় লাগবে সেটা বলা নেই। সূর্যের আকার পৃথিবীর চেয়ে ১৩ লাখ গুণ বড়। অনেক দূরে আছে বলে বোঝা যায় না।), তখন সকল মানুষের পাপপুৰেণ্যর বিচার করে তাদের বেহেস্তে অথবা দোজখে থাকার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
কিছু কিছু ইসলামী দল মনে করে, ইতিমধ্যেই কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে। যেমন আল কায়দা কিংবা আই এস। হিজবুত তাহরিরের একজন প্রাক্তন সদস্যের সাথে হোস্টের দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা হয় এই বিষয়টা নিয়ে। তার ভাষ্যমতে, ইসলামী খিলাফতের এই কনসেপ্টটা হিজবুত তাহরিরই প্রথম এনেছে, পরে আল কায়দা বা অন্যরা সেই একই আইডোলোজি নিয়ে কাজ করেছে। সব মুসলমানই কোরান–হাদিসের ভবিষ্যৎবাণী বিশ্বাস করে, কিন্তু আইএস এই আয়াতগুলো নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের জন্য কাজে লাগাচ্ছে।
কয়েক বছর আগে একটা গুজব উঠেছিলো - মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডার অনুযায়ি ২১শে ডিসেম্বর ২০১২ তে পৃথিবী ধ্বংস হবে। পৃথিবী এখনো বহাল তবিয়তে টিকে আছে। নরম্যান ফ্রিম্যান গুয়াতেমালায় মায়াদের প্রাচীন রাজধানীতে গিয়ে তাদের ক্যালেন্ডারটি দেখে এলেন।এখানে ২০১২ সালে পৃথিবী ধ্বংস হবে, এমন কোনো কথা নেই। ২১/১২/২০১২ তারিখে জাস্ট একটা মিলেনিয়াম শেষ হবে (ওদের ভাষায় বাকতুন, ৪০০ বছর); এর পরে নতুন মিলেনিয়াম শুরু। তবে দেখা গেল, মায়াদের ধর্মবিশ্বাসে কেয়ামতের কোনো ভবিষ্যৎবানী নেই আসলে। অনন্তকাল পৃথিবী টিকে থাকবে - এই রকমই বলা হয়েছে।
২০০০ সালের ৫ই মে বাংলাদেশেও একটা গুজব উঠেছিল যে, এইদিন পৃথিবী ধ্বংস হবে। কাহিনী হচ্ছে, ৫ ই মে পৃথিবী এবং সৌরজগতের আরো কয়েকটা গ্রহ একই লাইনে চলে আসবে বলে জ্যোতির্বিদরা গণনা করেছিলেন। একই লাইনে আসার ফলে এদের মধ্যকার আকর্ষণ বলের কোনো তারতম্য ঘটে কি না - এই নিয়ে অনেকের কৌতূহল ছিল। কিন্তু কিছু মানুষ এখান থেকেই গুজব তৈরি করে দিল যে, ৫ ই মে কেয়ামত।
কেয়ামতের কথা বৌদ্ধধর্মেও নেই। সেখানে বলা হয়েছে, জিনিসগুলো বদল হয়, এক রূপ থেকে আরেক রুপে, কিন্তু ধ্বংস হয় না। নরমান ফ্রিম্যান গিয়েছিলেন সারনাথ-এ, বৌদ্ধ ভিক্ষু কার্মাপার সাথে দেখা করতে। তিনি তাকে বসিয়ে দিলেন ধ্যান করতে।
হিন্দুধর্ম নিয়ে এই এপিসোডে আলোচনা করা হয়নি। হিন্দুধর্মে জন্মান্তরবাদ আছে। মুসলিমদের মত সমষ্টিগতভাবে সবার বিচার একসাথে হবে, এমন কোনো কেয়ামত নেই — কিন্তু ব্যক্তিগত বিচারের ব্যবস্থা আছে। তবে কোনো এক পর্যায়ে সম্ভবত হিন্দুধর্মে কেয়ামত কিংবা স্বর্গ-নরকে যাওয়ার ধারণা বিদ্যমান ছিল। মহাভারতের যুদ্ধে সত্যবাদী যুধিষ্ঠির নিজের দলকে জেতানোর স্বার্থে একটা মিথ্যা বলেছিলেন। এই মিথ্যা বলার কারণে এত বড় মহাপুরুষ হওয়া সত্ত্বেও যুধিষ্ঠিরকে সামান্য সময়ের জন্য নরকে যেতে হয়েছিল। এছাড়া আরো অনেক বিধানের ক্ষেত্রেও জন্মান্তরবাদ এবং স্বর্গ-নরকের কথা পাশাপাশিই এসেছে। যেমন, সিগারেট (তামাক) খেলে রৌরব নরকে অনন্তকাল যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, তামাক খেলে পরজন্মে শূকর হয়ে জন্মাতে হবে।
একেবারে শেষের দিকে নরম্যান ফ্রিম্যান যান একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে, কেন মানুষ কেয়ামত বিশ্বাস করে বা এটা নিয়ে এত আগ্রহী কেন? সাইকিয়াট্রিস্ট ছোট একটা পরীক্ষা দেখান। একজন রোগীকে বলেন, "আপনার সামনের মনিটরে তাকান। ৩-২-১-০ এইভাবে কাউন্টডাউন হচ্ছে। ০ হয়ে যাওয়ার পরে একটা সাউন্ড হবে। আপনি শান্ত হয়ে বসুন। সাউন্ডে আপনার ব্রেইনে কেমন রিঅ্যাকশন হয়, সেটা দেখব।" একই টেস্ট আরেকবার করা হয়, তবে তখন বলা হয়, "৩-২-১-০ কাউন্টডাউনের মাঝে যে কোনো সময় শব্দ হবে। আপনি রেডি থাকেন।"
দেখা যায়, মানুষ যখন নির্দিষ্ট কোনো ঘটনার সময় সম্পর্কে জানে, তখন সে অনেক শান্ত থাকে, কিন্তু সঠিক সময়টা যখন জানে না, তখন অনেক অশান্তিতে থাকে। এইজন্য মানুষ জানতে চায়, কেয়ামত ঠিক কখন ঘটবে, তার জন্য প্রস্তুত থাকতে চায়।
সারমর্ম (ব্যক্তিগত মতামত):
কেয়ামত থাকুক কিংবা না থাকুক, কেয়ামত নিয়ে রাজনীতি করা সংগঠন অনেক আছে। আইএস-এর কথা আগেই বলেছি। আইএস তাদের ইমাম মেহেদি বানিয়েছে আবু বকর আল বাগদাদিকে। হিজবুত তাহরির ২০১০-১১ সালের দিকে বাংলাদেশে ‘দজ্জাল’ নামে একটা বই কয়েক লাখ কপি বিক্রি করেছে। ওদের অ্যানালাইসিস অনুযায়ী, দজ্জাল কোনো মানুষ নয়, আমেরিকান সিভিলাইজেশনই হচ্ছে দজ্জাল। এই দজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ওদের মেসায়া/ইমাম মেহেদী হচ্ছে হজরত বায়াজিদ খান পন্নী। আল কায়েদার আমিরিউল মুমেনিন আর আমিরুল জিহাদ নামে ২ জন আলাদা মেসায়া থাকে সব সময়। শিয়া মুসলমানদের ভেতরেও নিজস্ব ইমাম (মেসায়া) আছে, তবে এই ইমাম সব সময়ই থাকে, ১৪০০ বছর ধরেই চলে আসছে। কাদিয়ানীদের (আহমেদিয়া মুসলিম) বিশ্বাস অনুযায়ী, ইমাম মেহেদী ১৯৩০ সালে এসেছিলেন, মারাও গেছেন। বাহাই ধর্মমতে, ১৮৫০ সালে আবির্ভূত হওয়া হযরত বাহাউল্লাহই ছিলেন মেসায়া। প্রত্যেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সম্প্রদায়েরই নিজস্ব মেসায়া আছে। যাদের কেউ নেই, তারা বিশ্বাস করে যে, আগামীতে ইমাম মেহেদী দেখা দেবেন (বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি মুসলিম এই বিশ্বাসের অনুসারী)।
নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের জন্য কোরান–হাদিসের ইমাম মেহেদি সম্পর্কিত ভবিষ্যৎবানীকে সবাই নিজের নিজের সুবিধা মত অনুবাদ/মডিফাই করে নিয়েছে। একটা উদাহরন দিই। ইসলাম বা ইহুদি ধর্মের বইগুলো অনুযায়ী, কেয়ামতের আগে শেষ ভয়ানক লড়াই হবে জেরুজালেমে। কিন্তু আইএস-এর দখলে জেরুজালেম নেই। তারা কী করেছে? তারা আয়াতের অর্থ একটু বদল করে বলছে, এই আয়াতে বলা হয়েছে, শেষ লড়াই হবে দাবিক-এ। সিরিয়ায় দাবিক নামে একটা গ্রাম খুজে নিয়ে সেখানে আইএস তাদের রাজধানীর মত বানিয়েছে।খ্রিষ্টান মেসায়াদের অনেক ঘটনা ইউটিউবে পাবেন। আমি এই রকম একজন মেসায়ার লিংক দিলাম। এই লোক আমেরিকায় নিজেকে মেসায়া দাবি করে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে মেয়েদের সাথে সেক্স করত, একটা সেনাবাহিনীর মত বানিয়ে সরকারের সাথে লড়াই করার প্নরস্তুতি নিচ্ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন