আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

ম আর ন-এর গল্প

লিখেছেন শুভ্র আহমেদ

ম আর ন দুই প্রতিবেশি। একই বয়সী। একসাথে পড়েছেন, বেড়ে উঠেছেন। তাদের গল্প শোনা যাক। 

১.
ম পড়াশোনায় অনেক ভাল। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অনেক ভাল রেজাল্ট করে কলেজে ভর্তি হলেন। 
ন পড়ায় অতটা ভাল না। মোটামুটি একটা রেজাল্ট করে কলেজে এলেন।

ম ধার্মিক। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। কোরান-হাদিস খুব জানেন। 
ন ধর্ম মানেন না। তিনি নাস্তিক। তবে তিনিও কোরান-হাদিস বেশ জানেন।

সামনে তাদের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা। 

২.
দুজনেই নতুন যুবক। শরীরের চাহিদা অনেক। 

ম ধর্মবিধান মেনে হস্তমৈথুন করেন না। কারণ তিনি জানেন, এটা হারাম। কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতেও পারেন না। অস্থির থাকেন। পড়ায় মন দিতে পারেন না। ঠিক করলেন, তিনি রোজা রাখবেন। কেননা হাদিসে রাসুল সঃ যৌননিয়ন্ত্রণের জন্য রোজা রাখতে বলেছেন। রোজা রাখার ফলে যৌননিয়ন্ত্রণ হল কি না, জানা গেল না। তবে ম বুক ব্যথা ও মাথাব্যথায় আক্রান্ত হলেন। অসুস্থতার কারণে তাঁর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষাটাও আশানুরূপ হল না। অনেক চেষ্টা করেও মাঝে মাঝেই ম নিজেকে আটকাতে পারতেন না, ফলে তিনি হস্তমৈথুন করে ফেলতেন। এবার তিনি ভাবলেন, পরীক্ষার খারাপ ফলাফল তাঁর এই পাপের ফসল। 

ওদিকে ন জানেন, হস্তমৈথুন স্বাস্থ্যসম্মত। তিনি প্রয়োজনমাফিক সেটা করতেন। ফুরফুরে মেজাজে থাকতেন। তার পরীক্ষাটা খুব ভাল না হলেও মন্দ হল না। ঠিক করলেন, ভার্সিটিতে গিয়ে আরো ভাল করে পড়বেন। 

৩.
ম ভার্সিটিতে থাকা অবস্থায়ই বিয়ে করে ফেলেন। কারণ নবীজি যুবকদের তাড়াতাড়ি বিয়ের তাগিদ দিয়েছেন।

ন ঠিক করলেন, তিনি আরো পরে বিয়ে করবেন। আপাতত একটা প্রেম করা যাক। 

তখন তাদের বয়স ২২ বছর।

৪.
ম-এর বিয়েটা ছিল অ্যারেঞ্জড। প্রেম-ট্রেম হারাম বলে তিনি ঐ পথ মাড়াননি। বিয়ের পর স্ত্রীকে পেয়ে বেশ হতাশ হলেন। মেয়ে সুন্দরী, কিন্তু মন-মানসিকতায় তাঁর আর স্ত্রীর অনেক তফাত। 

ন প্রায় বছরখানেক প্রেম করার পর বুঝলেন, প্রেমিকার সাথে তার অনেক অমিল। তিনি তখন এই সম্পর্কটি ভেঙে দিলেন। 

৫.
ম আর ন দু'জনেই টিউশনি করতেন। 

ছাত্র হিসেবে ভাল হলেও ম শুধু ছেলে আর বাচ্চাদের পড়াতেন। বেগানা মেয়েদের পড়াতেন না। 

ন-এর কাছে ছেলে-মেয়ের চেয়ে ছাত্রত্বই বড়। তিনি সবাইকে পড়াতেন। তাঁর আয়টাও তাই ভাল ছিল ম-এর চেয়ে। 

৬.
আট বছর পর যখন ন বিয়ে করছেন, ম তখন ৪ সন্তানের জনক। 

৭.
ম জন্মনিরোধ নিতেন না, কারণ তিনি জানতেন, "মুখ দিয়েছে যে আহার দেবে সে।"

ন জানতেন, সুখে থাকতে পরিকল্পনার বিকল্প নেই, তাই তিনি সন্তানের জন্য তাড়াহুড়ো করলেন না। 

৮.
ম আর ন দু'জনই পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরি নিয়েছেন। দু'জনই সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। 

ম ঘুষ খেতেন না, কারণ এটা হারাম। 

ন খেতেন না, কারণ এটা অনৈতিক। 

৯.
ম যখন পঞ্চম সন্তানের পিতা, ন-এর তখন প্রথম সন্তান এল। 

১০.
ন আর তার স্ত্রী দুজনেই চাকরি করতেন, তাই তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল। 

ম একা চাকরি করতেন, তাই পরিবারে লোক যত বাড়ছিল, তত বাড়ছিল অস্বচ্ছলতাও। 

১১.
ম-এর যখন তিন ছেলে দুই মেয়ে, ন-এর তখন একটাই মেয়ে। 

১২.
ম তাঁর সন্তানদের পড়ার খরচ কমানোর জন্য তিন ছেলেকে কওমি মাদ্রাসাতে ভর্তি করে দিলেন। 

ন-এর টাকা পয়সার টানাটানি ছিল না, তাই ভাল মানের একটা স্কুলেই বাচ্চাটা পড়তে থাকল। 

১৩.
ম-এর বড় ছেলেটা পড়াশোনায় ভাল না। কওমির পড়া তার ভাল লাগে না। তাই সে এই পড়া ছেড়ে বেরিয়ে এল। এতে ম ক্ষুদ্ধ হয়ে ছেলেকে মারধোর করলেন। তখন বড় ছেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করল। তাকে অনেক ঝামেলা করে বাঁচানোর পর ম ভয় পেয়ে গেলেন। তিনি আর বড় ছেলেকে ঘাঁটান না। মেজো ছেলেটা পড়াশোনায় ভাল। সে ভালই পড়ছে। 

ন-এর মেয়েটা পড়ায় তার বাবার মত। ভালও না, মন্দও না। পড়াশোনা তারও ভাল লাগে না। তবু সে পড়া চালিয়ে যায়, কারণ সে জানে, পড়া ভাল লাগুক বা না লাগুক, সেটা করতে হয়। 

১৪.
ম-এর বড় ছেলেটি শাসনের অভাবে বখে যেতে থাকে। মাঝে মাঝেই বাবার কাছে টাকা চায়, ছেলে না আবার আত্মহত্যা করে ফেলে - এই ভয়ে ম ধার করে হলেও টাকা দেন। 

ন তাঁর একমাত্র মেয়েকে ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন গল্পের বই দিয়ে তার পাঠাভ্যাস গড়ে তুলেছেন। এর ফলে সে বিকশিত হতে থাকে। ভাল-মন্দ জ্ঞান প্রখর হয়। 

১৫.
ম-এর ছোট ছেলেটি একদিন একটা কাগজে বাঘের ছবি আঁকায় ম রেগে গিয়ে কাগজ ছিঁড়ে ফেলেন। প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম বলে ছেলেকে তিরস্কার করেন। 

ন-এর মেয়ে একদিন পেন্সিল দিয়ে একটা বিড়াল এঁকে ফেলে। ন এটা দেখে খুশি হয়ে মেয়েকে রং-পেন্সিল এনে দেন। ন-এর মেয়ের আঁকার প্রতিভা বিকশিত হতে থাকে। 

১৬.
ছ'টি সন্তান হওয়ার পর ম বাধ্য হয়ে জন্মনিরোধক ব্যবহার শুরু করেন। তিনি এই সংসার আর টানতে পারছিলেন না। 

ওদিকে ন-এর তখনও একটি সন্তান। 

১৭.
ম তাঁর বড় মেয়েকে বিয়ের বয়স হবার আগেই বিয়ে দিয়ে দিলেন। মুখে স্বীকার না করলেও সবাই জানে, সংসারের খরচ বাঁচাতেই এই কাজটি করেছেন তিনি। অকালে মা হতে গিয়ে মেয়েটি মারা যায়। 

ন-এর একমাত্র মেয়েটি তখন আরো সুন্দর সুস্বাস্থ্য নিয়ে বাড়ছে। তার ভাই-বোন নেই, তবু সে একা বোধ করে না, কারণ তার মা-বাবা তার দুই বন্ধু। 

১৮.
ম-এর মেজো ছেলেটি মেধাবী। সে হঠাৎ করে ইসলামকে ভুল বুঝে নাস্তিক হয়ে যায়। কওমির ছাত্র বলে সে নিজের জীবনের এমন পরিবর্তন দেখে মারাত্বক আঘাত পেয়ে মনস্তাত্ত্বিক সমস্যায় পড়ে যায়। 

ন-এর একমাত্র মেয়েটি ছোটবেলা থেকেই জানে, অলৌকিক বলে কিছু নেই। 

১৯.
ম তাঁর মেজো ছেলের চিকিৎসার জন্য ঝাঁড়ফুক করাতে থাকেন। বিভিন্ন আলেমের কাছে ধর্না দেন। তিনি বিশ্বাস করেন, আল্লাহই শেফাদাতা। এতে প্রচুর টাকা খরচ হয়, কিন্তু সফলতা মেলে না। 

ন-এর মেয়ে তখন জেলা চিত্র অংকন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতে নিয়েছে। ন তখন মহা খুশি। 

২০.
ম-এর মেজো মেয়ের একটা টিউমার ধরা পড়ে। ম অভাবের কারণে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা না করিয়ে কবিরাজি লাইনে চেষ্টা করতে থাকেন। 

ন-এর মেয়েরও একই রকম টিউমার ধরা পড়ে, কিন্তু ন দ্রুত চিকিৎসা করানোয় রোগ ভাল হতে থাকে। 

২১.
ম-এর মেয়ে যখন অনেক বেশি অসুস্থ, ন-এর মেয়ে তখন পুরো আরোগ্যলাভ করেছে। 

২২.
ম আর ন দু'জনের বেতনই বেড়েছিল কয়েক বছরে।

কিন্ত ম-এর চাহিদা ছিল ন-এর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। তাই ম-কে বাধ্য হয়ে ঋণী হতে হচ্ছিল। 

ওদিকে ন তখন উপার্জনের বেঁচে যাওয়া অংশটি জমাচ্ছেন। 

২৩.
ম যখন তাঁর মেয়ের চিকিৎসার জন্য সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে ভারত গেছেন, ন তখন তাঁর একটু একটু করে জমানো টাকায় স্ত্রী-কন্যাসহ দিল্লিতে ভ্রমণ করছেন। 

২৪.
ম-এর এখন অনেক দুঃখ। বড় ছেলেটি স্থানীয় গুণ্ডা। মেজোটি পাগল। ছোটটি আদর যত্ন পায় না। মেজো মেয়েটি বড় একটা অসুখে ভুগছে। টাকা পয়সার টানাটানি। ধার-দেনা করে চললেও তাও পারছেন না আর। 

ন তখন বেশ সুখে আছেন। একমাত্র মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে সুখী পরিবার। 

২৫.
ম এবার বাধ্য হয়ে ঘুষ খেতে শুরু করলেন। আজীবন সৎ জীবনযাপন করলেও অভাব তাকে বাধ্য করল অসৎ হতে। 

ন তখনও সৎভাবে অর্থোপার্জন করছেন। তাঁর অভাব নেই, তাই ঘুষ খাবারও দরকার নেই। 

২৬.
ঘুষ খাবার অভিযোগে ম-এর যে বছর চাকরি যায়, ন সেই বছরই সততার পুরস্কার স্বরূপ অফিসের বড় কর্তা হলেন। 

২৭.
ম-এর জীবন এখন নরক। চাকরি নেই, ছেলেরাও পড়ালেখা করেনি। 

ন যেন স্বর্গে আছেন। মেয়েটি এবার চারুকলায় ভর্তি হল। বাবা-মা আর মেয়ে সবার জীবন এখন অনেক রঙিন। 

২৮.
ম-এর বখে যাওয়া বড় ছেলেটি আদম ব্যবসা করছে। ম জেনেশুনে হারাম টাকা খাচ্ছেন। তিনি নিরুপায়। 

ন-এর একমাত্র মেয়ে টুকটাক টিউশনি করছে। নিজে খুলেছে একটা আর্ট স্কুলও। 

২৯.
আদম ব্যবসার কারণে ম-এর বড় ছেলে আটক। পাগল ছেলেটি নিরুদ্দেশ। 

ন এর একমাত্র মেয়েটি চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিদেশ যাচ্ছে। 

৩০.
আজ ম-এর ত্রিশতম বিবাহবার্ষিকী। বিবাহবার্ষিকীর কথা মনে পড়তেই ম-এর মনে হল, এসব দিবস পালন করা ইসলামে হারাম। 

ম-এর মেজাজ-মর্জি সব সময় খারাপ থাকে, ম-এর স্ত্রীর সাথেও সম্পর্ক খারাপ। ম-এর ছোট ছেলেটা তাবিজ-কবজ, তাসবিহ খতম ইত্যাদির মাধ্যমে আয়ের চেষ্টা করে। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেয়েটা মৃত্যুপথযাত্রী। 

আজ ন-এর বাইশতম বিবাহ বার্ষিকী। তিনি আর তার স্ত্রী-কন্যা অনেক দারুণভাবে দিনটি পালন করবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন