লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
ইসলাম-বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা খায়বার যুদ্ধ উপাখ্যানের আলোচনার প্রাক্কালে গর্বভরে আলী ইবনে আবু তালিবের যে-বীরত্বগাথার উপাখ্যান প্রচার করেন, তার "রক্ত মূল্য" কত ছিলো; স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও আলী ইবনে আবু তালিব-এর নেতৃত্বে মুহাম্মদ অনুসারীরা খায়বারের অসংখ্য লোককে বন্দী করে দাস ও যৌনদাসীকরণ ও সমস্ত সম্পত্তি লুণ্ঠন করা ছাড়াও তাঁদের মোট কতজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে অমানুষিক নৃশংসতায় হত্যা করেছিলেন; কী কারণে শুধু ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খ্রিষ্টাব্দ) সম্পাদিত “সিরাত রসুল আল্লাহ”, আল-তাবারীর সিরাত ও সমস্ত মুখ্য হাদিস গ্রন্থ পড়ে খায়বার যুদ্ধে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের বীভৎস নৃশংস কর্মকাণ্ডের প্রকৃত স্বরূপ জানা সম্ভব নয় - ইত্যাদি বিষয়ের আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
আল-তাবারীর (৮৩৯-৯২৩ সাল) বর্ণনা: [1] [2] [3]
পূর্ব প্রকাশিতের (পর্ব: ১৩৪) পর:
ইবনে হুমায়েদ < সালামাহ < মুহাম্মদ ইবনে ইশাক < বানু আসলাম গোত্রের আবদুল্লাহ বিন আবি বকর হইতে বর্ণিত:
বানু আসলাম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বানু সাহম গোত্রের লোকেরা আল্লাহর নবীর কাছে আসে ও বলে, "হে আল্লাহর নবী, আল্লাহর কসম আমরা খরা-তাড়িত জনগণ ও নিঃসম্বল (ইবনে হিশাম: ‘--আল্লাহর নবীর কাছে আসে ও অভিযোগ করে যে, তারা যুদ্ধ করেছে, কিন্তু কোনো কিছুই অর্জন করতে পারেনি')।" কিন্তু তারা দেখে যে, আল্লাহর নবীর কাছে এমন কিছু নেই, যা তিনি তাদের দিতে পারেন।
তাই আল্লাহর নবী বলেন, "হে আল্লাহ, তাদের অবস্থা তুমি জানো - তাদের কোনো শক্তি নেই ও আমার কাছে এমন কিছু নেই, যা আমি তাদেরকে দিতে পারি। খায়বারে সর্বশ্রেষ্ঠ দুর্গটি তুমি তাদের [বিজয়ের] জন্য উন্মুক্ত করো, এমন একটি যেখানে আছে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য ও চর্বিযুক্ত মাংস।" পরদিন সকালে আল্লাহ তাদের [বিজয়ের] জন্য যা উন্মুক্ত করে, তা হলো - আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গ। খায়বারে এমন কোনো দুর্গ ছিল না, যেখানে এর চেয়ে অধিক পরিমাণ খাদ্য ও চর্বিযুক্ত মাংস মজুত ছিলো।’
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বিস্তারিত বর্ণনা: [3]
'আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গটি ছিল আল-নাটায়। ইহুদিদের এই দুর্গে ছিলো খাদ্য, মাংস, গবাদিপশু ও সাজসরঞ্জাম। এর ভেতরে ছিল পাঁচ শত সৈন্য। লোকেরা (মুসলমান) দিনের পর দিন যুদ্ধাবস্থায় অবস্থান করে, কিন্তু একমাত্র যে-খাবারটি তারা খেতে পায়, তা হলো 'আল-আলাফ'। [4]
মুয়াত্তিব আল-আসলামি হইতে বর্ণিত:
আমরা আল-আসলাম গোত্রের জনগণ, যখন আমরা খায়বারে পৌঁছাই, তখন ছিলাম নিঃস্ব। আমরা দশ দিন যাবৎ নাটার দুর্গগুলোর কাছে থেকেছি, কিন্তু আমরা তেমন কোনো খাবার খেতে পাইনি। আসলাম গোত্রের লোকেরা আসমা বিন হারিথা-কে ডেকে আনে ও বলে, "আল্লাহর নবী মুহাম্মদের কাছে যাও ও তাঁকে বলো যে, আসলাম-এর লোকেরা তাঁকে সালাম জানিয়েছে, আর তাঁকে জানাও যে, আমরা ক্ষুধার জ্বালায় সম্পূর্ণরূপে ক্লান্ত ও দুর্বল।"
বুরায়েদা বিন আল-হুসায়েব বলে, "আল্লাহর কসম, আমি আজকের মত এমন অবস্থা কখনোই প্রত্যক্ষ করিনি, আরবরা এটি যা করছে!" হিন্দ বিনতে হারিথা বলে, "আল্লাহর কসম, আমারা আশা করছিলাম যে, আল্লাহর নবীর এই মিশন হবে আমাদের উন্নতির চাবিকাঠি।" অতঃপর আসমা বিন হারিথা তাঁর কাছে আসে ও বলে, "হে আল্লাহর নবী, আসলাম গোত্রের লোকেরা বলছে: 'নিশ্চিতই আমরা ক্ষুধার জ্বালায় সম্পূর্ণরূপে ক্লান্ত ও দুর্বল, সুতরাং আপনি আমাদের জন্য আল্লাহকে বলুন।"
আল্লাহর নবী তাদের জন্য দোয়া করেন ও বলেন, "আল্লাহর কসম, আমার হাতে এমন কিছু নেই, যা আমি তাদেরকে দিতে পারি।" তারপর তিনি লোকদের সম্পর্কে চিৎকার করে বলেন, "হে আল্লাহ, খায়বারে সর্বশ্রেষ্ঠ দুর্গটি তাদের জন্য উন্মুক্ত করো, যেখানে আছে অনেক খাদ্য ও মাংস।" অতঃপর তিনি যুদ্ধের ঝাণ্ডাটি আল-হুবাব বিন আল-মুনধির বিন আল-জামুহ-কে দেন ও তিনি লোকদের উজ্জীবিত করেন; অতঃপর আল্লাহ আমাদের জন্য আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গ বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা প্রত্যাবর্তন করিনি।
উম্মে মুতা আল-আসলামিয়া বলেছে যে, সে অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে আল্লাহর নবীর খায়বার অভিযান প্রত্যক্ষ করেছিলো, সে বলেছে: প্রকৃতপক্ষেই আমি আসলাম গোত্রের লোকদের দেখেছি, যখন তারা আল্লাহর নবীর কাছে তাদের দুরবস্থার বিষয়ে অভিযোগ করছিলো। আল্লাহর নবী লোকদের উজ্জীবিত করেন ও লোকেরা উজ্জীবিত হয়। আমি দেখেছি যে, আসলাম গোত্রের লোকেরাই প্রথম আল-সাব বিন মুয়াধ দুর্গের নিকট পৌঁছে, যার মধ্যে ছিল পাঁচশত সৈন্য। যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ তা দখল করে নেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেদিন সূর্য অস্তমিত যায়নি।
- অনুবাদ, টাইটেল, ও [**] যোগ - লেখক।
>>> বানু আসলাম গোত্রটি ছিলো বানু খোজাগোত্রেরই এক অংশ, যারা মুহাম্মদের সাথে জোটবদ্ধ ছিলেন (বিস্তারিত: 'হুদাইবিয়া সন্ধি: চুক্তি ভঙ্গ -পাঁচ [পর্ব- ১২৯]!’); তাদের এলাকা ছিল মদিনা ও মক্কার পশ্চিম অঞ্চলে [5]। মুহাম্মদ ইবনে ইশাক, আল-তাবারী ও আল-ওয়াকিদির ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে, খায়বার যুদ্ধের প্রাক্কালে বানু আসলাম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত বানু সাহম গোত্রের লোকেরা আল্লাহর নবীর কাছে এসে তাদের দুরবস্থার কথা জানায় ও তাঁকে অভিযোগ করে এই বলে যে, তারা যুদ্ধ করেছে কিন্তু তারা কোনো কিছুই আয়ত্ত করতে পারেনি। তারা দশদিন যাবত প্রায় অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন অতিবাহিত করছে ও সম্পূর্ণরূপে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে।
তাদের এই দুরবস্থার কথা শুনে মুহাম্মদ আল্লাহর কাছে দোয়া করেন এই বলে যে, আল্লাহ যেন তাদেরকে খায়বারের সবচেয়ে খাদ্য ও সম্পদশালী দুর্গটি দখলের ব্যবস্থা করে তার ভেতরের সমস্ত খাদ্য ও সম্পদ লুণ্ঠন কারার তৌফিক দান করেন!
আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনায় যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হলো - খায়বারের জনপদবাসী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের ওপর আক্রমণ করতে আসেননি। তাঁরা নিরপরাধ। আক্রমণকারী মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা (বিস্তারিত: পর্ব-১৩০)। মুহাম্মদ তাঁর হুদাইবিয়া যাত্রায় অংশগ্রহণকারী অনুসারীদের অত্যন্ত হতাশাগ্রস্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ও তাঁর নবী-গৌরব ও নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে হুদাইবিয়া সন্ধি শেষে মদিনায় প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে 'সুরা আল-ফাতাহ' রচনা করে তাঁর ঐ অনুসারীদের যে "লুটের মাল-এর ওয়াদা করেছিলেন (বিস্তারিত: পর্ব- ১২৪)”, তারই পূর্ণতা প্রদানের প্রয়োজনে খায়বারের এই নিরপরাধ সম্পদশালী ইহুদি জনগণের ওপর মুহাম্মদের এই আগ্রাসী আক্রমণ!
উন্মুক্ত শক্তি প্রয়োগে অবিশ্বাসী জনপদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাঁদের খুন, জখম, দাস ও যৌন দাসী-করণ, সম্পদ লুণ্ঠন, নিরীহ বাণিজ্য ফেরত বনিকদের কাফেলায় রাহাজানি, খুন, তাঁদের ধরে নিয়ে এসে মুক্তিপণ দাবি - ইত্যাদি সমস্তই ইসলামী বিধানে 'জিহাদ' নামের সর্বশ্রেষ্ঠ সৎকর্মের অংশ।
মৃত মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা 'জিহাদ' নামের এই অত্যন্ত অমানবিক ও বীভৎস কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করার কারণে পুরস্কৃত হয়ে এখন তাঁর বর্ণিত জান্নাত নামের অনন্ত সুখের লীলাভূমিতে অতি মনোরম নহরের পাশের আঙ্গুরের বাগানে বসে মদ্যপান ও আঙুর খেতে খেতে অনন্য সুন্দরী অগণিত হুরিদের সাথে যৌনকর্ম সম্পন্ন করছেন, নাকি অসংখ্য নিরপরাধ মানুষদের ওপর বীভৎস অত্যাচার, নিপীড়নের ও হত্যা করার কারণে তাঁর বর্ণিত জাহান্নাম নামের অনন্ত আযাবের কারাগারে দাহ্য আলকাতরার জামা পরিধান ও মুখমণ্ডল আগুনে আচ্ছন্ন অবস্থায় (কুরান:১৪:৫০) ঢোঁক গিলে পুঁজ-মেশানো পানি পানসহ (কুরান:১৪:১৬-১৭ ও ১৮:২৯) যাবতীয় বীভৎস শাস্তি (পর্ব: ২৬) ভোগ করছেন, তা জানা কখনোই সম্ভব নয়।
কিন্তু, যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হলো:
১. যে-মুহাম্মদ সহায় সম্বলহীন অবস্থায় (পর্ব: ৪২) রাতের অন্ধকারে চুপিচুপি মদিনায় পালিয়ে এসেছিলেন, তাঁর আবিষ্কৃত এই 'জিহাদ-এর কল্যাণে’ মাত্র দশ বছরে (৬২২-৬৩২ সাল) তিনি নিজেকে তৎকালীন আরবের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন!
২. যে-মুহাম্মদ সহায় সম্বলহীন অবস্থায় প্রায় এক বস্ত্রে মদিনায় পালিয়ে এসেছিলেন, সামান্য বাসস্থান ও ভরণপোষণের জন্য যাকে প্রতিনিয়ত নির্ভর করতে হয়েছিলো মদিনাবাসী স্বল্প আয়ের অনুসারীদের ওপর, সেই নিঃসম্বল মুহাম্মদ তাঁর আবিষ্কৃত এই 'জিহাদ'-এর কল্যাণে মাত্র দশ বছরে আরবের সবচেয়ে সচ্ছল ও সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদের একজন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন! এক নিঃসম্বল মানুষের অবস্থান থেকে মুহাম্মদ এই দশ বছরে এতটাই সচ্ছল ও সমৃদ্ধশালী হয়েছিলেন যে, তিনি এই সময়ের মধ্যে একুশ জন মহিলাকে বিবাহ করে তাঁদেরকে পত্নীর মর্যাদা দিয়ে তাঁদের প্রত্যেককে সচ্ছল অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানসহ যাবতীয় ভরণপোষণের জোগান দিতে পারতেন; মৃত্যুকালে যিনি নয় জন পত্নী জীবিত রেখে গিয়েছিলেন (পর্ব:১০৮)।
জগতের প্রায় সকল মুহাম্মদ-অনুসারী ও বহু অমুসলিম দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মদ ছিলেন এক অসচ্ছল দরিদ্র পার্থিব ক্ষমতা-লোভ-লালসাহীন ব্যক্তি, যার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনায় অত্যন্ত স্পষ্ট!
"Poor Muhammad is a myth!"
৩. আদি উৎসের ওপরে বর্ণিত বর্ণনা ও 'ত্রাস, হত্যা ও হামলার আদেশ' এর গত এক শত আটটি পর্বের আলোচনায় বিভিন্ন সময়ে আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি যে, "জিহাদের এই ফজিলত" মুহাম্মদ শুধু একই ভোগ করেননি! তিনি তাঁর অনুসারীদের 'চাহিদার প্রতি' সর্বদাই লক্ষ্য রাখতেন। এক বিশেষ নিয়মে জিহাদে অংশগ্রহণকারী মুহাম্মদের সকল অনুসারী জিহাদের এই ফজিলত উপভোগ করতেন। কী সেই বিশেষ নিয়ম, তার আলোচনা 'সন্ত্রাসী নবযাত্রা (পর্ব: ২৮)' পর্বে করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই, যেসব মুহাম্মদ-অনুসারী মুহাম্মদের আদেশে সহায়-সম্বলহীন অবস্থায় মদিনায় হিজরত করেছিলেন, কোনোরূপ সৎ-উপার্জনক্ষম পেশায় নিযুক্ত না থেকেও মাত্র দশ বছরে তারা চূড়ান্ত ক্ষমতা ও সচ্ছলতায় উন্নীত হতে পেরেছিলেন এই 'জিহাদ'-এরই কল্যাণে।
মুহাম্মদের মৃত্যুর পর একদা নিঃসম্বল এই মুহাজির মুহাম্মদ অনুসারীরা 'জিহাদের ফজিলতে' শাসকের মর্যাদায় উন্নীত হতে পেরেছিলেন; অতঃপর তারা মুহাম্মদের এই বিশেষ ফর্মুলাটি ব্যবহার করে দিগ্বিদিকের অবিশ্বাসী জনগণদের অমানুষিক নৃশংসতায় পরাস্ত করে আরব সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা ও জীবিকার সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এগার শত বছরেরও বেশি সময় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার পরেও মুহাম্মদের মতবাদে বিশ্বাসী মুসলমান সম্প্রদায়ের বর্তমান সামগ্রিক অবস্থান কোথায়, তার আলোচনা 'কুরানের ফজিলত(পর্ব-১৫)!' পর্বে করা হয়েছে।
>> খাদিজাকে বিবাহ করার পর থেকে মৃত্যুকাল অবধিমুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ জীবিকার প্রয়োজনে কখনো কোনো উপার্জনক্ষম পেশায় লিপ্ত ছিলেন, এমন ইতিহাস কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। খাদিজাকে বিয়ের পর তাঁর ভরণপোষণ চলতো খাদিজার সম্পদ ও অনুগ্রহে। চল্লিশ বছর বয়সের পর তাঁর পেশা ছিল, "ধর্মপ্রচার!"জগতের সকল পীর-ফকির-কামেল-গুরু-বাবাজীদের পেশার মতই! এই সকল পীর-ফকির-কামেল-গুরু-বাবাজীদের সাথে মুহাম্মদের পেশার বিশেষ পার্থক্য এই যে, তাঁদের তুলনায় মুহাম্মদ অনেক অনেক বেশি সফল (পর্ব: ১৪)! কুরান, সিরাত ও হাদিসের বর্ণনায় যা আমরা নিশ্চিতরূপে জানি, তা হলো, মুহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ তাঁর ভক্তদের 'বিশ্বাস-কে' পুরোপুরি ব্যবহার করে মাত্র দশ বছরে আরবের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী ব্যক্তিদের একজন হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। মুহাম্মদ "তাঁর পেশায়" জগতের সবচেয়ে সফলকাম (Successful) ব্যক্তিদের একজন। শুধু 'ধর্মপ্রচার' পেশায় কোনো সচ্চরিত্র ও ন্যায়বান প্রচারকের জীবিকার ব্যবস্থা হয় না, যদি না সেই প্রচারক ‘তাঁর ভক্তদের ব্যবহার করে' তাঁর নিজের জীবিকার একটা ব্যবস্থা করতে পারেন।
মুহাম্মদ তা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সুচারুরূপে সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন।
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-তাবারী ও আল-ওয়াকিদির মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। ইবনে ইশাকের মূল ইংরেজি অনুবাদ ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক: তথ্যসূত্র [2]।
The narrative of Al-Tabari: [1]
‘According to Ibn Humayd < Salamah <Muhammad ibn Ishaq <Abdullah b Abi Bakr – a member of the Aslam: The Banu Sahm, who were a part of Aslam came to the Messenger of God and said, “Messenger of God, by God we have been struck by drought and possses nothing.”But they found that the Messenger of God had nothing to give them. So the Prophet said: “O God, Though Knowest their condition – that they have no strength and I have nothing to give them. Open to them [for conquest] the greatest of the fortresses of Khaybar, the one most abounding in food and fat meat.” The next morning God opened the fortress of Al-Sab b Muadh for them [to conquer]. There was no fortress in Khaybar more abounding in food and fat meat than it.’
The detailed narrative of Al-Waqidi: [3]
‘The fortress of al-Sab b Muadh was in al-Nata. Within the fortress of the Jew were food, fat, cattle and utensils. There were five hundred soldiers in it. The people (Muslims) had stayed for days fighting, but the only food they ate was al-Alaf [4]. Muattib al-Aslami said: We were a people of the Aslam, destitute when we arrived in Khaybar. We stayed ten days at the fortress of Nata and we did not eat any food. The Aslam sent for Asma b Haritha and said, “Go to Muhammad, the Messenger of God, and say that the Aslam extend to you greetings, and inform him that we are exhausted from hunger and weakness.” Burayda b al-Husayb said, “By God, I have never saw such an affair as today, and Arabs doing this!” Hind binte Haritha said, “By God, we hoped that a mission to the Messenger of God would be a key for the better.” So Asma bt Haritha came to him and said, “O Messnger of God the Aslam say: Surely we are exhausted from hunger and weakness, so ask God for us.” The Messnger of God prayed for them and said, “By God, there is nothing in my hands that I can hand them.” Then he shouted with the people and said, “O God, open for them the greatest fortress containing more food and more fat.” Then he handed the flag to al-Hubab b al-Mundhir b al-Jamuh, and he charged the people, and we did not return until God conquered the fortress of al-Sa’b b Muadh for us. Umm Muta al-Aslamiyya, who said that she had witnessed Khaybar with the Messenger of God and other women, said: Indeed I saw the Aslam when they complained to the Messenger of God of the misfortune of their situation. The Messenger of God charged the people and the people rose. I saw the Aslam were the first to reach the fortress of al-Sab b Muadh in which were five hundred soldiers. The sun did not set on that day until God conquered it.’
(চলবে)
[কুরানের উদ্ধৃতি সৌদি আরবের বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ (হারাম শরীফের খাদেম) কর্তৃক বিতরণকৃত বাংলা তরজমা থেকে নেয়া, অনুবাদে ত্রুটি-বিচ্যুতির দায় অনুবাদকারীর। কুরানের ছয়জন বিশিষ্ট ইংরেজি অনুবাদকারীর ও চৌত্রিশ-টি বিভিন্ন ভাষায় পাশাপাশি অনুবাদ এখানে।]
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1]“তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৭৭
[2] অনুরূপ বর্ণনা: “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫১২
[3]“কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৬৫৮-৬৫৯; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩২৪-৩২৫
[4] 'আল-আলাফ'- ঘাস-আগাছা-ভুট্টা জাতীয় বিভিন্ন উদ্ভিদ মিশ্রণে তৈরি এক ধরণের পশু খাদ্য।
[5] Ibid “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী; নোট নম্বর ২৯৭, পৃষ্ঠা (Leiden) - ১৫৩১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন