শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৬

ইসলামী পাটিগণিত - ৪

লিখেছেন আবুল কাশেম


নামায এবং পাপের গণনা

প্রতিদিন (২৪ ঘণ্টায়) পাঁচবার নামায পড়া ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে এক অন্যতম স্তম্ভ। নিয়মিত সঠিকভাবে নামায না পড়া শুধুমাত্র পাপই নয়, অনেক ইসলামী স্বর্গ, যেমন ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, সৌদি আরব, ইত্যাদি দেশগুলোতে এ এক দণ্ডনীয় অপরাধ। নবী নিজেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যে, যারা রীতিমত নামায আদায় করে না, উনি তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে চান। এখানে একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দেওয়া হল। এই ধরনের অনেক হাদিস আছে।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৬১, হাদীস ৬২৪। উমর ইব্‌নে হাফ্‌স (র.)...আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে নবী (সা.) বলেছেনঃ মুনাফিকদের উপর ফজর ও ইশার সালাতের চাইতে অধিক ভারী সালাত আর নেই। এ দু’ সালাতের কী ফযীলত, তা যদি তারা জানত, তা হলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হত। (রাসূলুল্লাহ্‌ (সা.) বলেন), আমি সংকল্প করে ছিলাম যে মুআয্‌যিনকে ইকামত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামতি করতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে এরপরও যারা সালাতে আসেনি, তাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই। 
এক মুমিন তার জীবিতকালে ন্যূনতম কতবার নামায আদায় করবেন, তার একটু হিসাব করা যাক। 

ইসলামী বিধান অনুযায়ী, নামায শিক্ষা শুরু হয় একজন শিশু যখন সাত বছর বয়সী হয়। আর দশ বছরে উপনীত হলে নামায ফরজ বা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। নিয়মিত নামায না পড়লে দশ বছর থেকে মারধোরও করা যেতে পারে। ধরা যাক, এক মুমিনের আয়ুষ্কাল পঁচাশি (৮৫) বছর। অর্থাৎ পঁচাশি বছর পর্যন্ত একাধারে দৈনিক পাঁচবার তাকে নামায আদায় করতে হবে।

সুতরাং জীবিত থাকাকালীন নামায আদায়ের সময় হবে ৮৫-১০ = ৭৫ বছর। এক বছরে ৩৬৫ দিন হিসাবে ধরা যাক।

সর্বমোট নামায আদায় করতে হবে ৭৫ গুণ ৫ গুণ ৩৬৫ = ১৩৬ ৮৭৫ বার বা ১ লক্ষ ছত্রিশ হাজার আটশত পঁচাত্তর বার।

এই হিসাব ধরা হয়েছে—শুধুমাত্র ঘরে, একাকী নামায আদায়ের ওপর।

এই হিসাবে প্রতি শুক্রবার অর্থাৎ জুমার নামায ও অত্যধিক নফল নামায বাদ দেওয়া হয়েছে।

এক বছরে ৫২ জুমা নামায হবে।

তাহলে সারা জীবনে জুমার নামাজ পড়তে হবে ৭৫ গুণ ৫২ = ৩ ৯০০ বার। এই সংখ্যাটি ওপরে নির্ণীত সংখ্যার সাথে যোগ করা যেতে পারে। জুমার নামায বাধ্যতামূলক—এবং এই নামায গৃহে পড়া যাবে না। জুমার নামায মসজিদে পড়া বাধ্যতামূলক।

কিন্তু হাদিস পড়ে বোঝা যায়, এক মুমিনকে এত বার নামায আদায় করার প্রয়োজন নেই। 
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৫৮, হাদীস ৬১৭। আবদুল্লাহ্‌ ইবন ইউসুফ (র.)...আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ জামা’আতে সালাতের ফযীলত একাকী আদায়কৃত সালাতের সাতাশ’ গুন বেশী। 
এখন ওপরে হিসাবকৃত ১৩৬ ৮৭৫ কে ২৭ দিয়ে ভাগ করলে প্রায় ৫ ০৬৯ বার নামায হয়।

এই ৫ ০৬৯ বার কে ৫ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ১০১৩.৮ দিন।

১০১৩.৮ দিনকে ৩৬৫ দিয়া ভাগ করলে পাওয়া যায় প্রায় ২.৮ বছর বা দুই বছর নয় মাসের মতো।

এর এর অর্থ হচ্ছে: একজন মুমিন প্রতিদিন ধরে ২ বছর ৯ মাস তার নিকটস্থ মসজিদে যাতায়াত করে পাঁচটি বাধ্যতামূলক নামায আদায় করলেই তার জীবনের সব নামায আদায় হয়ে যাবে। এরপর তার আর নামায পড়ার দরকার নেই; শুধুমাত্র শুক্রবারের জুমার নামায পড়া ছাড়া। অর্থাৎ, তেরো বছরে উপনীত হবার পূর্বেই তা’র নামাযের পালা শেষ হয়ে যাবে। অন্তত ওপরের হাদিস অনুযায়ী গণনা করলে তাইই পাওয়া যায়।

মজার ব্যাপারই বটে!

অন্য এক হাদিসে ২৭ গুণের স্থলে ২৫ গুণ বলা হয়েছে, যেমন উক্ত হাদিস বই-এর ৬১৮ নম্বর হাদীস।

এখন আরও একটি হাদিস পড়া যাক:
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৫৮ হাদীস ৬১৮। মূসা ইব্‌ন ইসমাঈল (র.)...আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির জামা’আতের সাথে সালাতের সওয়াব, তার নিজের ঘরে বাজারে আদায়কৃত সালাতের সাওয়াব দ্বিগুন করে পঁচিশ গুন বাড়িয়ে দেয়া হয় (১)। এর কারণ এই যে, সে যখন উত্তমরূপে উযূ করল, তারপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা করল তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়। সালাত আদায়ের পর সে যতক্ষণ নিজ সালাতের স্থানে থাকে, ফিরিশ্‌তাগণ তার জন্য এ বলে দু’আ করতে থাকেন—“হে আল্লাহ্‌! আপনি তার উপর রহমত বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করুন।” আর তোমাদের কেউ যতক্ষণ সালাতের অপেক্ষায় থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সালাতে রত বলে গণ্য হয়। 
পাদটীকা (১): এ হাদীসে শুধু পঁচিশ গুণ বৃদ্ধ্বি হওয়াই বলা হয়নি, বরং দ্বিগুণ করে পঁচিশ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

নিচের হাদিসটি পড়া যাক: 
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ৩২৭, হাদীস ১১১৭। আবদুল্লাহ ইব্‌ন ইউসুফ (র.)...আবূ হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ মাসজিদুল হারাম ব্যতীত আমার এ মসজিদে সালাত আদায় করা অপরাপর মসজিদে এক হাজার সালাতের চাইতে উত্তম। 
ধরা যাক, এক মুমিন মদিনায় গিয়ে এক মাস (৩০ দিন) থাকলো এবং প্রতিদিন নবীর মসজিদে গিয়ে পাঁচ নামায আদায় করল।

এর পুরস্কার হবে ১০০০ গুণ ৫ গুণ ৩০ = ১৫০ ০০০।

এখন সেই মুমিন যদি ওপরে দেখানো হিসাব মত মসজিদে নামাজ আদায় করে থাকে, অর্থাৎ মদিনায় যাবার আগে, তা’হলে মদিনা থেকে ফেরার পর তার নামায বাকি থাকে--

১৩৬ ৮৭৫ বিয়োগ ১৫০ ০০০ = -১৩ ১২৫

এই সংখ্যাটি বিয়োগাত্মক (নিগেটিভ) হয়েছে এই কারণে যে, ঐ মুমিনের সারা জীবনে যে সালাতের প্রয়োজন ছিল তা’র চাইতেও অনেক বেশি সালাত সে আদায় করে ফেলেছে তিরিশ দিন মদীনায় নবীর মসজিদে সালাত আদায় করে।

তা’হলে কোনো মুমিন কাবা শরীফে এক নামায আদায় করলে কত পুণ্য পাবে? অনেকদিন আগে আমি ‘আলিম’ সফটওয়্যার কিনেছিলাম। সেই সফটওয়্যার এখন আমার নতুন কম্পুটারে চলে না। আগ্রহী পাঠকেরা ‘আলীম’ সফট্‌ওয়্যার কিনে অথবা ডাউনলোড করে নিচের অনুবাদকৃত হাদিসের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।
Transmitted by Ibn Majah. (Al-Tirmidhi, Number 247- taken from the Alim CD-ROM Version Narrated Anas ibn Malik
Allah's Messenger (peace be upon him) said: The prayer of a person in his house is a single prayer; his prayer in the mosque of his tribe has the reward of twenty-five prayers; his prayers in the mosque in which the Friday prayer is observed has the reward of five hundred; his prayer IN THE MOSQUE OF AQSA (i.e. BAYT AL-MAQDIS) has a reward of fifty thousand prayers; his prayer in MY MOSQUE (the Prophet's mosque in Medina) has a reward of fifty thousand prayers; and the prayer in the Sacred Mosque (Ka'bah) at Makkah has a reward of one hundred thousand prayers. 
বাংলা অনুবাদ হচ্ছে:
আনাস ইবনে মালিক বর্ণনা করেছেন:
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: এক ব্যক্তি তার নিজস্ব গৃহে নামায আদায় করলে তার মর্তবা হবে এক। সে যদি তার গোত্রের মসজিদে নামায পড়ে তার মর্তবা হবে পঁচিশটি নামাযের সমান। সে জুমার মসজিদে নামায আদায় করলে তার মর্তবা পাবে পাঁচশত গুণ। আল-আকসা মসজিদে এক নামায পড়ার মর্তবা হচ্ছে পঞ্চাশ হাজার নামাযের সমান। আমার মসজিদে এক নামায পড়লে তার মর্তবা হবে হবে পঞ্চাশ হাযার নামাযের সমান। আর কাবার মসজিদে এক নামাযের মর্তবা হবে এক লক্ষ নামাযের সমান।
এখন পাপের হিসাব করা যাক। একজন মুমিন তার জীবদ্দশায় কত পাপ করবে, তার সঠিক হিসাব কেউ জানে না। তবে আমরা ধরে নিতে পারি যে, প্রত্যেকদিন সে বারোটি পাপ করে। চিন্তা করা যায় যে, সে দৈনিক পাপ করছে এইভাবে:

দুই হাতে দুই পাপ
দুই পায়ে দুই পাপ
দুই চোখে দুই পাপ
দুই কর্ণে দুই পাপ
এক মুখে এক পাপ
এক জিহবায় এক পাপ
এক লিঙ্গে (স্ত্রী অথবা পুরুষ) এক পাপ
এক নাসিকায় এক পাপ
সর্বমোট বারো পাপ। অবশ্যই এই পাপের তালিকায় অনেক কিছুই বাদ পড়েছে—মস্তিষ্কের পাপ (কুচিন্তা), আঙ্গুলের পাপ, যৌনতার পাপ (বিভিন্ন প্রকার)—এই সব আর কি।

তাই জীবিত অবস্থায় (দশ থেকে পঁচাশি বছর পর্যন্ত) তার পাপের সংখা হবে ১২ গুণ ৭৫ গুণ ৩৬৫ = ৩২৮ ৫০০০ টি (৩ লক্ষ ২৮ হাজার ৫০০)।

এই বিশাল পাপ থেকে মুক্তির উপায় কী?

অনেক পাপই অযুর সাথে মুছে ফেলা হয়। যেমন, দুই হাত ধৌতের সময় দুই পাপ ধৌত হয়ে যায়…এই রকম ভাবে একবার অযু করলে ন্যূনতম বারোটি পাপ আল্লাহ্‌ পাক ক্ষমা করে দেন। অযু শেষে আবার নতুন করে পাপ করা চলবে, এই চক্র চলবে দিন রাত সব সময়ই। 

কিন্তু এই বারো পাপের চাইতেও অসংখ্য পাপ এক মুমিন দৈনিক করে থাকে। এই সব অগুনতি পাপ থেকে মুক্তির কী উপায়?

এর এক সহজ উত্তর হচ্ছে সালাত।

দেখুন এই হাদিস:
সহীহ মুসলিম, বাংলাদেশ ইসলামীক সেন্টার ঢাকা, খণ্ড ২, পৃঃ ৩২২, হাদীস ১২৪০। আবূ হুরায়রা (রা) রাসূলুল্লাহ (সা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাযের শেষে তেত্রিশবার আল্লাহ্‌র তাসবীহ বা পবিত্রতা বর্ণনা করবে, তেত্রিশবার আল্লাহ্‌র তাহমীদ বা প্রশংসা করবে এবং তেত্রিশবার তাকবীর বা আল্লাহ্‌র মহত্ব বর্ণনা করবে আর এইভাবে নিরানব্বই বার হওয়ার পর শততম পূর্ণ করতে বলবে—“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীকা লাহু-লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি আিইয়েন কাদীর” অর্থাৎ আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক ও লা-শারীক। সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র তিনিই। সব প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম—তার গোনাহ্‌সমূহ সমুদ্রের ফেনারাশির মত অসংখ্য হলেও মাফ দেওয়া হয়। 
এই হাদিসে পরিষ্কার হয় না—সারা জীবনের পাপ নাকি এক দিন বা তদীয় অংশের পাপ। যদি সারা জীবনের পাপ হয়ে থাকে তবে পাপমোচনের এর চাইতে ভাল পন্থা আর কী হতে পারে? আর যদি দৈনিক পাপের জন্য হয়ে থাকে—তবে গণনা করে নিন কয়বার এই পন্থা নিতে হবে জীবনের সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য। 

এর চাইতেও ভালো পন্থা আছে: ওপরে উদ্ধৃত বুখারী শরীফ হাদিস ৬১৮-তে। এই হাদিসে বলা হয়েছে:
‘...সে যখন উত্তমরূপে উযূ করল, তারপর একমাত্র সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা করল তার প্রতি কদমের বিনিময়ে একটি মর্তবা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গুনাহ মাফ করা হয়’।
ওপরের হিসাব অনুযায়ী, মসজিদের উদ্দেশে ২৩৭ ৭৫০ বার কদম ফেললেই আল্লাহ্‌ পাক সব পাপ মাফ করে দেবেন। 

ইসলামী পাপ থেকে মুক্তি পাবার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা হবে হজ্জ পালন। একবার হজ্জ পালন করলেই জীবনের সমস্ত পাপ খণ্ডন হয়ে যাবে—প্রতিটি হাজি হয়ে যাবে নবজাত শিশু। কিন্তু এই হজ্ব হতে হবে হজ্বের মৌসুমে—অন্য সময় নয়, অর্থাৎ উমরা করলে সমস্ত পাপমোচন হবে না—হয়ত বা আংশিক হতে পারে।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, তৃতীয় খণ্ড, পৃঃ ৭০, হাদীস ১৪৩১। আদম (র.)...আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে হজ্ব করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত রইল, সে নবজাতক শিশু, যাকে তার মা এ মুহুর্তেই প্রসব করেছে, তার ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরবে। 
আরও একটি হাদিস দেখা যাক:
এহিয়াও উলুমিদ্দীন, বাংলা অনুবাদ মাওলানা মুহিউদ্দিন খান,দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ ১৭। হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি নামাযে দাঁড়িয়ে কোরআন তেলাওয়াত করে, সে প্রত্যেক হরফের বদলে একশ’টি সওয়াব পায়। যে নামাযে বসে কোরআন তেলাওয়াত করে সে প্রত্যেক হরফের বদলে পঞ্চাশটি সওয়াব পায় এবং যে ওযু ছাড়া পাঠ করে সে দশটি নেকী পায়। রাতের বেলায় নামাযে দাঁড়িয়ে পড়া সর্বোত্তম। কেননা, রাতের বেলায় মন খুব একাগ্র থাকে। 
উইকিপিডিয়া ঘাঁটাঘাঁটি করে জানা গেল যে, কোরানে ৩৩০ ১১৩টি হরফ আছে; হরফ বলতে এখানে আরবি হরফই বলা হচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই—কারণ কোরানের অনুবাদ, সে যে ভাষায়ই হউক না কেন, তা’ নাকি কোরান নয়—এটা সব ইসলামী পণ্ডিতদের অভিমত।

দেখা যাক, একবার কোরান তেলাওয়াত সম্পন্ন করলে কতটুকু সওয়াব বা পুণ্য পাওয়া যাবে। ধরা যাক, সে নামাযে বসে সম্পূর্ণ কোরান তেলাওয়াত করল। আর যদি সে আংশিক কোরান তেলাওয়াত করে, তবে নিচের হিসাবটি সংশোধন করে নিতে হবে।

৫০ গুণ ৩৩০ ১১৩ =১৬ ৫০৫ ৬৫০ (ষোল মিলিয়নেরও বেশী)
অনেকেই বলে থাকেন, একজন সাচ্চা মুমিনের উচিত হবে মাসে একবার কোরান তেলায়াত করা। তাহলে বছরে বারো বার, এবং তার জীবদ্দশায় হবে এই প্রকার—

১৬ ৫০৫ ৬৫০ গুণ ১২ গুণ ৭৫ = ১৪ ৮৫৫ ০৮৫ ০০০ (প্রায় ১৫ বিলিয়ন বা ১৫০০ কোটি)

এই অবিশ্বাস্য নেকী পাওয়া কল্পনারও বাইরে। এর অর্থ হচ্ছে, এক মুমিন যত পাপই করুক না কেন, নামায, কোরান তেলাওয়াত দ্বারা সমস্ত পাপের থেকে সে মুক্তি পাবেই। আর সর্বশেষ পন্থা হচ্ছে, শুধু একবার হজ্ব করলেই সমস্ত পাপ আল্লাহ্‌ পাক ধুয়ে মুছে সাফ করে দেবেন।

এই হিসেব থেকে আমরা পরিষ্কার বুঝতে পারি, কেন সমস্ত ইসলামী বিশ্ব পাপ এবং দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।

শেষ প্রশ্ন হতে পারে—নবী করীম কি কোনো পাপ করেছেন কিংবা এখনও করে চলেছেন? 

আমরা কোরানে দেখি যে, আল্লাহ্‌ তা’লা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তাঁর সবচাইতে প্রিয় নবী অনেক পাপ করেছেন। দেখুন:
৪০:৫৫ অতএব, আপনি সবর করুন। নিশ্চয় আল্লাহ্‌র ওয়াদা সত্য। আপনি আপনার গোনাহের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং সকাল‑সন্ধ্যায় আপনার পালনকর্তার প্রশংসাসহ পবিত্রতা বর্ণনা করুন।
৪৭:১৯ যেনে রাখুন, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ত্রুটির জন্যে এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ্‌ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত।
নবী সারা জীবনে সম্ভাব্য কত পাপ করেছেন, তার একটা ধারণা নিচের হাদিসে পাওয়া যায়।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, বুখারী শরীফ, নবম খণ্ড, পৃঃ ৫৫৩, হাদীস ৫৮৬৮। আবুল ইয়ামান (র)…আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্‌র কসম! আমি প্রত্যহ সত্তরবারেরও বেশী ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি।
উপরের হাদিস থেকে অনুমান করা যেতে পারে রাসূলুল্লাহ দৈনিক গড়পড়তা সত্তরটি পাপ করতেন। এখন সহজেই আমরা হিসাব করে নিতে পারি তাঁর জীবদ্দশায় কী পরিমাণ পাপ করেছিলেন।

কিন্তু আল্লাহ্‌ অতিশয় চালাক। তাই নিম্নের আয়াতে আল্লাহ্‌ পাক নবীর সমস্ত অতীত এবং ভবিষ্যতের পাপ মার্জনা করে দিয়েছেন। অতীতের পাপ বলতে কী বোঝায়, তা বোধগম্য। কিন্তু ভবিষ্যতের পাপ বলতে আল্লাহ্‌ পাক কী বলেছেন, তা পরিষ্কার নয়। এমন হতে পারে যে, ভবিষ্যতের পাপ বলতে নবীর মরণোত্তর পাপ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, মৃত্যুর পরে ইসলামী স্বর্গে গিয়েও নবী পাপ করছেন—এখনও। কিন্তু আল্লাহ্‌ সেই সব পাপ মাফ করে দেবেন।
৪৮:১ নিশ্চয় আমি আপনার জন্যে এমন একটা ফয়সালা করে দিয়েছি, যা সুস্পষ্ট
৪৮:২ যাতে আল্লাহ্‌ আপনার অতীত ও ভবিষ্যতে ত্রুটিসমূহ মার্জনা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরল পথে পরিচালিত করেন।
অন্যান্য যে সব আয়াতে নবীর পাপের বর্ণনা আছে সেগুলো হচ্ছে: ৯৪:২ এবং ৯৪:৩।

আর একটা সুখবর হচ্ছে—নাস্তিক এবং ইসলাম-বিদ্বেষীরা যারা অনেকবার কোরান আবৃত্তি করেছে, তারাও যে তাদের পাপ থেকে হয়ত ছাড়া পেয়ে যাবে, তা ওপরের হিসাব থেকে প্রতীয়মান হয়। তাই নাস্তিক, ইসলামফোব, ইসলাম ঘৃণাকারী, হারামখোর, হারামজাদা…এদের উচিত হবে আরও বেশি বেশি কোরান পড়া।

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন