বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর (পর্ব ১৪)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


{ক: ‘হে আরববাসী, তোমাদের যদি মেয়েসন্তান এতই বেশি মনে হয় যে, তাদেরকে হত্যা করতে হবে; আমাকে দিয়ে দিও, আমি লালন-পালন করবো’: এমনটাই বলেছিলেন, মুহাম্মদের এক শিক্ষাগুরু ‘যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল’!

খ: ‘এই আবদুল্লা, চেহারা তো সোনার মত ঝকঝকা বানাইছো, আসো আমার কাছে, আদর কইরা দেই; টাকা পয়সা লাগবো না, এমনিতেই বিয়া বসুম তোমার সাথে!’ জবাবে উত্তর, ‘শোনো, আমার এইসব পছন্দ না, আর এখন আমি কাজে যাচ্ছি, জ্বালাইও না!’: এমনটাই কথা হয়েছিলো, মক্কার এক সুন্দরী নারী আর মুহাম্মদের পিতা আবদুল্লাহ’র সাথে!

গ: ‘শোনো, গতবার এই বাচ্চাটার বড় চাচার ছেলেরে দুধ খাওয়াইতে নিছিলা, টাকা-পয়সা ভালই পাইছো, কিন্তু এই এতিমরে নিয়া লাভ নাই!’ জবাবে উত্তর, ‘দেখো, কিছু না পাওয়ার থাইকা তো কিছু পাওয়া ভাল; দুধ তো খাওয়ামু আমি, তুমি এত টেনশন নিও না!’: এমনটাই ছিল মুহাম্মদের ধাত্রী ‘হালিমা’ এবং তার স্বামীর কথোপকথন!

ঘ: ‘চাচা বয়স তো ২৩ বছর পার হলো, বিয়ে-শাদী করা দরকার, আপনার মেয়ে ‘ফাকিতা/ফাকতিহা/হিন্দ’ (উম্মে-হানী)-কে পছন্দ আমার, সেও আমারে পছন্দ করে; আপনি যদি আমাদের বিয়েটা দিয়ে দেন!’: নবী মুহাম্মদ, চাচা ‘আবু তালিব’-কে নিজের বিয়ে নিয়ে সরাসরি প্রস্তাব দিয়েছিলেন; এবং এই প্রস্তাবে মুহাম্মদের মন ভাঙার ঘটনাও ঘটে। চাচা ‘আবু তালিব’-এর সরাসরি পদক্ষেপে মুহাম্মদের বিয়ে হয় তৃতীয় স্বামী হিসেবে, তিন বছর বেশি বয়স্ক*, তিন সন্তানের জননী, খাদিজা’র সাথে। মুহাম্মদ ঘরজামাই হিসেবে খাদিজার বাড়িতে ওঠেন; এবং মক্কায় যতদিন ছিলেন, এই বাড়িই ছিলো মুহাম্মদের আশ্রয়!

ঙ: ‘আমি মুসলমান হয়েছি, তুমি যদি মুসলিম না হও, তবে তোমারে তালাক দিমু!’ জবাবে উত্তর, ‘আপনে বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে ধর্মত্যাগী হইছেন; আর আমার সাথে রং দেখাচ্ছেন, যান আপনার সাথে সংসার করুম না!’: এমনটাই ছিলো আবু-বকর এবং তার প্রথম স্ত্রীর মধ্যে কথোপকথন!

আমরা কিছু খণ্ডচিত্র দেখলাম মক্কা আর বেদুঈন নারী সমাজের; কিন্তু একটি বিষয় অবাক করে আমায়; আরবের তৎকালীন নারী ও তার অধিকারের বিষয়টি, ইসলামী বর্ণনার বাইরে খুব কম সংখ্যার চিন্তাবিদ-আস্তিক-নাস্তিক পরিষ্কারভাবে বোঝেন! এর একমাত্র কারণ: সকলেই সেই সময়টাকে চোখ বন্ধ করে দেখতে পান না; তাই আংশিক চিন্তা ভর করে মাথায়; আর তাই হয়ে দাড়ায় ভুল ব্যাখ্যার কারণ!

যদিও এ সিরিজটির বিষয় আলাদা, তবুও কম কথায় কিছু কিছু বিষয় তুলে আনতে চেষ্টা করছি; আগামী কয়েক পর্বে ‘আরবের নারী’ নিয়ে প্রচলিত চিন্তাকে, ভেজা কাপড় চিপে শুকিয়ে ফেলার জন্য যা যথেষ্ট! শুধু আমার সাথে চোখ বন্ধ করুন!

ভাবুন, এমনি চারটি আলাদা আলাদা দেশের কথা, যারা মক্কার চারপাশে ৩ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন, এবং ১ মাসের দুরত্বে অবস্থিত; মূল ভাষা আরবি হলেও সিলেট আর চট্রগ্রামের মত ৭ টি আঞ্চলিক ভাষায় বিভক্ত হয়ে গেছে তা।

মক্কা থেকে ১৫ দিন দূরত্বে ইয়াসবিরে (মদিনায়) কোনো সংবাদ পাঠালে ১ মাস সময় লাগে তার উত্তর পেতে! আপনি আজ ‘কেমন আছো’ লিখলে ১ মাস পর উত্তর পাবেন ‘ভাল আছি’। যতক্ষণ সূর্যের আলো আছে, সব সচল, সন্ধ্যা হলেই অন্ধকার নেমে আসে পুরো আরব জুড়ে। এক সাথে থাকার পরও চারটি বিছিন্ন দেশের নারী দৃষ্টিভঙ্গি যারা এক রকম মনে করেন; তাদের এক কথায় বলা যেতে পারে অন্ধ! যদি ২০১৬ সালের ১ সেকেন্ডের মোবাইল দূরত্বে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেট আর বাংলাদেশের বেদে-চাকমা-পাহাড়ী নারী-দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদা হয়; তবে ৬১০ সালের ৩ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন, এবং ১ মাসের দূরত্বে অবস্থিত তায়েফ, মরুভুমির বেদুঈন, ইয়াসরিব, ইয়েমেন ও তাবুক- এর নারীরা এক মন-মানসিকতার হবেন কোন হিসাবে! 

দয়া করে চাকমা নারী-দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সিলেটের, আর ঢাকার নারী-দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বেদে সমাজের নারীদের তুলনা করার মত বোকামী করবেন না! আমরা মুক্তচিন্তার মানুষেরা বোকা নই, আগামী পর্ব পর্যন্ত আরও জানতে অপেক্ষা করবো নিশ্চই, আজ এটুকই থাক! 

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ১৪ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ৭ম তিন অংশঅনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৬০ তম প্রকাশ; সূরা আল হিজর (১৫) (পাথুরে পাহাড়), ৮৭ বাদে ১ থেকে ৯৯ আয়াত:

১. আলিফ লাম রা। এগুলি আয়াত, মহাগ্রন্থের, সুস্পষ্ট কুরআনের।
২. যারা কুফরী করেছে, তারা একসময় কামনা করবে যদি তারা মুসলিম হত!
৩. আপনি ছেড়ে দিন তাদেরকে, খেয়ে নিক এবং ভোগ করে নিক এবং আশায় ব্যাপৃত থাকুক। অতি সত্বর তারা জেনে নেবে।
৪. আমি কোনো জনপদকে তার নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ধ্বংস করিনি।
৫. কোনো জাতিই তাদের সুনির্ধারিত সময় থেকে আগে বাড়তে পারে না আর পিছাতেও পারে না।
৬. তারা বলে: ওহে, যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয়ই উম্মাদ।
৭. তুমি সত্যবাদী হলে আমাদের নিকট মালাইকা/ফেরেশতাদেরকে হাযির করছ না কেন?
৮. যথাযথ কারণ ছাড়া আমি ফেরেশতা পাঠাই না, পাঠালে কাফিরদেরকে আর কোনো অবকাশ দেয়া হবে না।
৯. নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।
১০. তোমার পূর্বে আমি পূর্বের অনেক সম্প্রদায়ের নিকট রাসূল পাঠিয়েছি।
১১. ওদের কাছে এমন কোনো রসূল আসেননি, যাদের সাথে ওরা ঠাট্টাবিদ্রূপ করতে থাকেনি।
১২. এমনিভাবে আমি এ ধরনের আচরণ পাপীদের অন্তরে বদ্ধমূল করে দিই।
১৩. তারা এতে ঈমান আনবে না, আর পূর্ববর্তীদের (ব্যাপারে আল্লাহর) রীতি তো বিগত হয়েছে।
১৪. যদি তাদের জন্য আমি আকাশের দরজা খুলে দিই এবং তারা সারাদিন তাতে আরোহণ করতে থাকে।
১৫. তবুও তারা বলত, নিশ্চয় আমাদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়া হয়েছে, বরং আমরা তো যাদুগ্রস্ত সম্প্রদায়।
১৬. আকাশে আমি গ্রহ-নক্ষত্র সৃষ্টি করেছি এবং ওকে করেছি সুশোভিত, দর্শকদের জন্য।
১৭. আর আমি তাকে সুরক্ষিত করেছি প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে।
১৮. কিন্তু যে চুরি করে শুনে পালায়, তার পশ্চাদ্ধাবন করে উজ্জ্বল উল্কাপিণ্ড।
১৯. পৃথিবীকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং ওতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি; আমি ওতে প্রত্যেক বস্তু উৎপন্ন করেছি সুপরিমিতভাবে।
২০. আর আমি ওতে জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমাদের জন্য, আর তোমরা যাদের জীবিকাদাতা নও তাদের জন্যও।
২১. আর প্রতিটি বস্তুরই ভাণ্ডারসমূহ রয়েছে আমার কাছে এবং আমি তা অবতীর্ণ করি কেবল নির্দিষ্ট পরিমাণে।
২২. আমি বৃষ্টিগর্ভ বায়ু পরিচালনা করি অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি, এরপর তোমাদেরকে তা পান করাই। বস্তুতঃ তোমাদের কাছে এর ভাণ্ডার নেই।
২৩. আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।
২৪. আর অবশ্যই আমি জানি তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং অবশ্যই জানি পরবর্তীদেরকে।
২৫. আর তোমার পালনকর্তাই তাদেরকে একত্রিত করে আনবেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানময়।
২৬. আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে।
২৭. আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি লেলিহান অগ্নিশিখা থেকে।
২৮. আর আপনার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদেরকে বললেন: আমি পচা কর্দম থেকে তৈরি বিশুষ্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্ট একটি মানব জাতির পত্তন করব।
২৯. অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও।
৩০. অতঃপর, ফেরেশতারা সকলেই সিজদা করল। 
৩১. কিন্তু ইবলিস - সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হল না।
৩২. আল্লাহ বলবেন, ‘হে ইবলিস! তোমার কী হল যে, তুমি সাজদাহকারীদের দলভুক্ত হলে না?’
৩৩. সে উত্তরে বলল: ছাঁচে ঢালা শুষ্ক ঠনঠনে মৃত্তিকা হতে যে মানুষ আপনি সৃষ্টি করেছেন, আমি তাকে সাজদাহ করার নই।
৩৪. আল্লাহ বললেন: তবে তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। তুমি বিতাড়িত।
৩৫. এবং তোমার প্রতি ন্যায় বিচারের দিন পর্যন্ত অভিসম্পাত।
৩৬. ইবলীস বলল: হে আমার রাব্ব! পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত আমাকে অবকাশ দিন।
৩৭. আল্লাহ বললেন: তোমাকে অবকাশ দেয়া হল।
৩৮. অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।
৩৯. সে বলল: হে আমার পালনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব।
৪০. তবে তাদের মধ্য হতে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত।
৪১. আল্লাহ বললেন: এটা আমা পর্যন্ত সোজা পথ।
৪২. যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোমার কোনো ক্ষমতা নেই; কিন্তু পথভ্রান্তদের মধ্য থেকে যারা তোমার পথে চলে।
৪৩. ‘আর নিশ্চয় জাহান্নাম তাদের সকলের প্রতিশ্রুত স্থান’।
৪৪. এর সাতটি দরজা আছে। প্রত্যেক দরজার জন্যে এক একটি পৃথক দল আছে।
৪৫. নিশ্চয় খোদাভীরুরা বাগান ও নির্ঝরিণীসহূহে থাকবে।
৪৬. ‘তোমরা তাতে প্রবেশ কর শান্তিতে, নিরাপদ হয়ে’।
৪৭. তাদের অন্তরে যে ক্রোধ ছিল, আমি তা দূর করে দেব। তারা ভাই-ভাইয়ের মত সামনা-সামনি আসনে বসবে।
৪৮. সেখানে তাদেরকে অবসাদ স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান হতে বহিষ্কৃতও হবে না।
৪৯. আমার বান্দাদেরকে বলে দাও: নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
৫০. এবং ইহাও যে, আমার শাস্তিই যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।
৫১. আর তুমি তাদেরকে ইবরাহীমের মেহমানদের সংবাদ দাও।
৫২. যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল: ‘সালাম’ তখন সে বলেছিল: আমরা তোমাদের আগমনে আতংকিত।
৫৩. তারা বলল: ভয় কর না, আমরা তোমাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি।
৫৪. সে বলল: তোমরা কি আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ আমি বার্ধক্যগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও? তোমরা কি বিষয়ে সুসংবাদ দিচ্ছ?
৫৫. তারা বলল, ‘আমরা তোমাকে যথার্থ সুসংবাদ দিচ্ছি। সুতরাং তুমি নিরাশদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’।
৫৬. সে বলল: যারা পথভ্রষ্ট তারা ব্যতীত আর কে তার রবের অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়?
৫৭. সে বলল: হে প্রেরিতগণ! অতঃপর তোমরা কি বিশেষ কাজ নিয়ে এসেছ?
৫৮. তারা বলল: আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্রেরণ করা হয়েছে।
৫৯. তবে লূতের পরিবারবর্গের বিরুদ্ধে নয়, আমরা অবশ্যই তাদের সকলকে রক্ষা করব।
৬০. ‘তবে তার স্ত্রী ছাড়া, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, নিশ্চয় সে শাস্তিপ্রাপ্তদের দলভুক্ত’।
৬১. এরপর যখন ফেরেশতাগণ লূতের পরিবারের কাছে আসল,
৬২. সে বলল, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক’।
৬৩. তারা বলল: না, তারা যে বিষয়ে সন্দিগ্ধ ছিল আমরা তোমার নিকট তা নিয়ে এসেছি।
৬৪. আমরা তোমার নিকট সত্য সংবাদ নিয়ে এসেছি এবং অবশ্যই আমরা সত্যবাদী।
৬৫. ‘সুতরাং তুমি তোমার পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড় রাতের একাংশে, আর তুমি তাদের পেছনে চল, আর তোমাদের কেউ পেছনে ফিরে তাকাবে না এবং যেভাবে তোমাদের নির্দেশ করা হয়েছে সেভাবেই চলতে থাকবে’।
৬৬. আমি তাকে এ বিষয়ে প্রত্যাদেশ দিলাম যে, প্রত্যুষে তাদেরকে সমূলে বিনাশ করা হবে।
৬৭. আর শহরের অধিবাসীরা উৎফুল্ল হয়ে উপস্থিত হল।
৬৮. লূত বলল, তারা আমার মেহমান। অতএব আমাকে লাঞ্ছিত করো না।
৬৯. তোমরা আল্লাহকে ভয় কর ও আমাকে লজ্জিত করো না।
৭০. তারা বলল: আমরা কি দুনিয়াবাসী লোককে আশ্রয় দিতে আপনাকে নিষেধ করিনি?
৭১. তিনি বললেন: যদি তোমরা একান্ত কিছু করতেই চাও, তবে আমার কন্যারা উপস্থিত আছে।
৭২. তোমার জীবনের শপথ! ওরা তো আপন নেশায় মত্ত ছিল।
৭৩. অতএব সূর্যোদয়কালে বিকট আওয়াজ তাদের পেয়ে বসল।
৭৪. আর আমি সে জনপদকে উল্টে (ওপর-নিচ) করে দিলাম আর তাদের ওপর পাকানো মাটির প্রস্তর বর্ষণ করলাম।
৭৫. অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য।
৭৬. ওটা লোক চলাচলের পথপার্শ্বে এখনও বিদ্যমান।
৭৭. নিশ্চয় এতে ঈমানদারদের জন্যে নিদর্শন আছে।
৭৮. নিশ্চয় গহীন বনের অধিবাসীরা পাপী ছিল।
৭৯. সুতরাং আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছি, ওদের উভয়ই প্রকাশ্য পথপার্শ্বে অবস্থিত।
৮০. আর নিশ্চয় পাথুরে-পাহাড়ের বাসিন্দারাও রসূলগণকে প্রত্যাখ্যান করেছিল।
৮১. আমি তাদেরকে আমার নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করেছিল।
৮২. তারা পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করত নিরাপদ বসবাসের জন্য।
৮৩. অতঃপর এক প্রত্যুষে তাদের ওপর একটা শব্দ এসে আঘাত করল। 
৮৪. সুতরাং তারা যা অর্জন করেছিল, তা তাদের কোন কাজে আসেনি।
৫৫. আকাশসমূহ ও পৃথিবী এবং এ দু’য়ের অন্তবর্তী কোন কিছুই আমি অযথা সৃষ্টি করিনি; এবং কিয়ামাত অবশ্যম্ভাবী; সুতরাং তুমি পরম সৌজন্যের সাথে তাদেরকে ক্ষমা কর।
৮৬. নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক তিনি সর্বস্রষ্টা, সর্বজ্ঞ।
৮৮. আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে ভোগ বিলাসের যে উপকরণ দিয়েছি, তার প্রতি তুমি কখনও তোমার চক্ষুদ্বয় প্রসারিত কর না; তাদেরকে যা দেয়া হয়েছে, সেই জন্য তুমি ক্ষোভ কর না; তুমি মু’মিনদের জন্য তোমার বাহু অবনমিত কর।
৮৯. আর বল: আমি তো একজন ভয় প্রদর্শনকারী মাত্র।
৯০. যে ধরনের সতর্কীকরণ পাঠানো হয়েছিল (আল্লাহর কিতাবকে) বিভক্তকারী (ইয়াহূদী ও খ্রীষ্টান)দের ওপর।
৯১. যারা কুরআনকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে।
৯২. সুতরাং, তোমার প্রভুর কসম! আমরা নিশ্চয়ই তাদের সবাইকে প্রশ্ন করব
৯৩. সেই বিষয়ে, যা তারা করে।
৯৪. অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ তা প্রকাশ্যে প্রচার কর এবং মুশরিকদের উপেক্ষা কর।
৯৫. আমিই যথেষ্ট তোমার জন্য, বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে।
৯৬. যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্য সাব্যস্ত করে। অতএব অতি সত্বর তারা জেনে নেবে।
৯৭. আমি তো জানি যে, তারা যা বলে তাতে তোমার অন্তর সংকুচিত হয়।
৯৮. অতএব তুমি তোমার পালনকর্তার সৌন্দর্য স্মরণ কর এবং সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও।
৯৯. আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার পালনকর্তার ইবাদাত কর।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৬১ তম প্রকাশ; সূরা আল ক্বাদর (৯৭) (মহিমান্বিত), ১ থেকে ৫ আয়াত:

১. নিশ্চয়ই আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রাতে;
২. আর মহিমান্বিত রাত সম্বন্ধে তুমি জান কি?
৩. মহিমান্বিত রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।
৪. এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।
৫. শান্তিময় সেই রাত, ফজরের সূচনা পর্যন্ত।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৬২ তম প্রকাশ; সূরা আয-যারিয়াত (৫১) (বিক্ষেপকারী বাতাস), ৭ থেকে ৬০ আয়াত:

৭. বহু পথ বিশিষ্ট আকাশের শপথ।
৮. তোমরা তো পরস্পরবিরোধী কথায় লিপ্ত।
৯. যে ভ্রষ্ট, সেই এ থেকে মুখ ফেরায়,
১০. মিথ্যাচারীরা ধ্বংস হোক! 
১১. যারা অজ্ঞ ও উদাসীন
১২. তারা জিজ্ঞেস করে: কর্মফল দিন কবে হবে?
১৩. সেই দিন, যখন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে অগ্নিতে,
১৪. তোমরা তোমাদের শাস্তি আস্বাদন কর। তোমরা একেই ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিল।
১৫. খোদাভীরুরা জান্নাতে ও ঝর্ণাধারার মাঝে থাকবে।
১৬. এমতাবস্থায় যে, তারা গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদেরকে দেবেন। নিশ্চয় ইতিপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ,
১৭. তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করত নিদ্রায়, 
১৮. রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত,
১৯. এবং তাদের ধন সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।
২০. বিশ্বাসকারীদের জন্যে পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে,
২১. এবং তোমাদের মধ্যেও। তোমরা কি অনুধাবন করবে না?
২২. আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযকের উৎস ও প্রতিশ্রুত সবকিছু।
২৩. আকাশ ও পৃথিবীর পালনকর্তার কসম, তোমাদের কথাবার্তার মতই এটা সত্য।
২৪. তোমার নিকট ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি?
২৫. যখন তারা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল: সালাম, তখন সে বলল: সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক।
২৬. অতঃপর সে গৃহাভ্যন্তরে গেল এবং একটি মাংসল তাজা গো-বৎস নিয়ে এল।
২৭. তাদের সামনে রাখল এবং বলল: তোমরা খাচ্ছ না কেন?
২৮. এতে তাদের সম্পর্কে সে মনে মনে ভীত হল। তারা বলল, ‘ভয় পেয়ো না, তারা তাকে এক বিদ্বান পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিল’।
২৯. তখন তার স্ত্রী চিৎকার করতে করতে সামনে এসে গাল চাপড়িয়ে বলল: এই বৃদ্ধা বন্ধ্যার সন্তান হবে?
৩০. তারা বলল: তোমার পালনকর্তা এরূপই বলেছেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
৩১. ইব্রাহীম বলল: হে প্রেরিত ফেরেশতাগণ, তোমাদের উদ্দেশ্য কী?
৩২. তারা বলল: আমাদেরকে এক অপরাধী সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে।
৩৩. তাদের ওপর নিক্ষেপ করার জন্য মাটির শক্ত ঢেলা,
৩৪. যা তোমার প্রতিপালকের নিকট চিহ্নিত হয়ে আছে সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য।
৩৫. অতঃপর সেখানে যারা ঈমানদার ছিল, আমি তাদেরকে উদ্ধার করলাম।
৩৬. এবং সেখানে একটি পরিবার ব্যতীত কোন আত্মসমর্পনকারী (মুসলিম) আমি পাইনি
৩৭. যারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিকে ভয় করে, আমি তাদের জন্যে সেখানে একটি নিদর্শন রেখেছি।
৩৮. এবং নিদর্শন রেখেছি মূসার বৃত্তান্তে, যখন আমি তাকে প্রমাণসহ ফির‘আউনের নিকট প্রেরণ করেছিলাম।
৩৯. অতঃপর সে শক্তিবলে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বললঃ সে হয় যাদুকর, না হয় পাগল।
৪০. সুতরাং আমি তাকে ও তার দলবলকে শাস্তি দিলাম এবং তাদেরকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম; সে তো ছিল তিরস্কারযোগ্য।
৪১. আর 'আদ জাতির ক্ষেত্রেও। দেখো! আমরা তাদের বিরুদ্ধে পাঠিয়েছিলাম এক বিধ্বংসী ঝড়।
৪২. এটা যা কিছুর ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল তাকেই চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছিল।
৪৩. আরও নিদর্শন রয়েছে সামূদের ঘটনায়; যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল, কিছুকাল মজা লুটে নাও।
৪৪. অতঃপর তারা তাদের পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল এবং তাদের প্রতি বজ্রঘাত হল এমতাবস্থায় যে, তারা তা দেখেছিল।
৪৫. তারা উঠে দাঁড়াতে পারল না এবং তা প্রতিরোধ করতেও পারল না।
৪৬. আমি ধ্বংস করেছিলাম তাদের পূর্বে নূহের সম্প্রদায়কে, তারা ছিল সত্যত্যাগী সম্প্রদায়।
৪৭. আমি স্বীয় ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই ব্যাপক ক্ষমতাশালী।
৪৮. আমি ভূমিকে বিছিয়েছি। আমি কত সুন্দরভাবেই না বিছাতে সক্ষম।
৪৯. আমি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করেছি জোড়ায় জোড়ায়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
৫০. আল্লাহর দিকে ধাবিত হও; আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত সতর্ককারী।
৫১. তোমরা আল্লাহর সাথে কোনো উপাস্য সাব্যস্ত করো না। আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট সতর্ককারী।
৫২. এভাবে তাদের পূর্ববর্তীদের নিকট যখনই কোনো রাসূল এসেছে, তারা বলেছে: তুমি তো এক যাদুকর, না হয় উম্মাদ!
৫৩. তারা কি একে অপরকে এই মন্ত্রণাই দিয়ে এসেছে? বস্তুতঃ তারা এক সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।
৫৪. অতএব, তুমি ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, এতে তুমি তিরস্কৃত হবে না।
৫৫. এবং উপদেশ দিতে থাক, কারণ উপদেশ মুমিনদের উপকারে আসে।
৫৬. আমি সৃষ্টি করেছি জিন ও মানুষকে এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদাত করবে।
৫৭. আমি তাদের কাছে জীবিকা চাই না এবং এটাও চাই না যে, তারা আমাকে আহার্য যোগাবে।
৫৮. আল্লাহই তো জীবিকাদাতা শক্তির আধার, পরাক্রান্ত।
৫৯. অতএব, এই যালেমদের প্রাপ্য তাই, যা ওদের অতীত সহচরদের প্রাপ্য ছিল। কাজেই ওরা যেন আমার কাছে তা তাড়াতাড়ি না চায়।
৬০. কাফিরদের জন্য দুর্ভোগ তাদের ঐ দিনের যে দিনের বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: ১২ তম পর্বে আমরা জাদুকর মুহাম্মদকে খুঁজছিলাম; বলেছিলাম অপেক্ষায় থাকুন, আয়াত চলে আসবে! যদি এই পর্বের তিনটি প্রকাশ পড়ে থাকেন, তবে জাদুকর মুহাম্মদের খোঁজ মিলেছে নিশ্চয়! আর কোরআনের প্রতিটি প্রকাশের বিস্তারিত আয়াতভিত্তিক ঘটনার পূর্ণ বর্ণনা দিয়ে লেখা সম্ভব; কিন্ত তাতে এই সিরিজটি শেষ করতে ৬/৭ বছর সময় লাগবে! তাই অনেক আয়াত প্রকাশের মনোজগত নিজ দায়িত্বে খুঁজে নিন; অথবা অপেক্ষায় থাকুন এই ‍সিরিজটি শেষ হবার! আমার পুরো "কোরআনের মুক্তচিন্তার তাফসীর" করার ইচ্ছা আছে!

* বি. দ্র. মুহাম্মদের বিয়ে হয়, তৃতীয় স্বামী হিসেবে, তিন বছর বেশি বয়স্ক, তিন সন্তানের জননী, খাদিজা'র সাথে। তিন বছর বেশি বয়স্ক, মানে; বিয়ের সময় খাদিজার বয়স ৪০ ছিল না, দ্রুতই হিসাবটা পাবেন নতুন সিরিজে! (সিরিজের নাম: বিশ্বাসের দরজায় করাঘাত!)।

(চলবে)

৩টি মন্তব্য:

  1. " তিন বছর বেশি বয়স্ক"?
    "বিশ্বাসের দরজায় করাঘাত!" শুধু উত্তরের আশায় পড়া জিনিস আবার পড়ে আসলাম ১-২০ পর্যন্ত, উত্তর পাইলাম না। উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম, ঝললি করেন!

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. যাক এই সুযোগে ২০ পর্ব পর্যন্ত পড়া হয়েছে!
      খাদিজা মূলত ২৮ বছর বয়সের ছিলেন বিবাহের সময়!
      বিষয়টি নিয়ে একটি বড় রচনা পর্ব অাঁকারে করার কথা ছিলো পচারকের সাথে!

      বিভিন্ন কারণে সেটা প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি!

      তবে লেখার ইচ্ছা অাছে!

      মুছুন
  2. এই সুযোগে নয়, ইহা ইতোপূর্বেও পঠিত হইয়াছিল। তবে দো'বার পড়াতে ক্ষতি বৃদ্ধি হয়নি। এই ২৮ বত্সরের ব্যাপারটা আমার কাছে অতিব চিত্তাকর্ষক ঠেকিতেছে। যেমনটি ছিল 'চন্দ্র দ্বিখন্ডত হওয়ার' রচনা খানা।
    সে যাহাই হওক, সবুর করিলাম, মেওয়া আপনার হস্তে।
    আপনার লেখনী ও বিষয় দুটাই আমার কাছে চমকপ্রদ! - TruthToSaveGeneration

    উত্তরমুছুন