রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৬

বিশ্বাসের দরজায় করাঘাত!: পর্ব ০৮ – (গ-তে গান, ব-তে বাজনা!)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


বছর তিনেক আগের ঘটনা। এক লালন-ভক্তের সাথে আড্ডা হচ্ছিলো; দারুণ তাঁর গানের কন্ঠ, ‘মিলন হবে কত দিনে’- বলে যখন গলায় টান দিচ্ছিলেন, বুকের ভেতরটা হু-হু করে উঠেছিলো! আর যখন শুনি ‘জাত গেলো, জাত গেলো বলে এ কি আজব কারখানা’, তখন লালনের প্রশংসা করতে ইচ্ছে করে। চা-সিঙ্গারা-একতারা আর গানে যখন আসর সরগরম, তখনই মাগরিবের আজান দিয়ে দিলো। 

লালন-ভক্ত বলে উঠলেন, ‘ভাই ২০ মিনিটের একটা ব্রেক নিয়ে নামাজটা পড়ে আসি!’ 
আমি বেদ্বীন-কাফের মানুষ বলে উঠলাম, ‘এতক্ষণ হারামের চর্চা করে নামাজ পড়লে সেটা কি কবুল হবে?’ 

লালন-ভক্তের ক্ষোভের কারণ হয়ে গেলাম সাথে সাথেই। আমার ইসলামী জ্ঞান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বললেন, ‘কে বলছে গান-বাজনা হারাম! আপনাকে তো যথেষ্ট বুঝদার বলেই জানতাম। কী প্রমাণ দিতে পারবেন হাদিস-কোরআন থেকে?’ 

আমি বললাম: ‘দেখুন, যেহেতু এই গবেষণা নিয়েই সময় কাটে বেশির ভাগ, পকেটেই সকল বিষয়ের সকল প্রমাণ থাকে সবসময়; আপনি নামাজ পড়ে আসুন!’

তারপরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত: মোবাইলে হাদিস-কোরআন-তাফসীর সহ প্রয়োজনীয় তথ্যসূত্রের সংগ্রহ থাকে সবসময়ই, সেখান থেকে তাঁকে যা দেখিয়েছিলাম, তাই আজ আপনাদের দেখাবো।

কোরআনে আছে: ‘মানুষের মাঝে কেউ কেউ এমন আছে, যে আল্লাহর রাস্তা (ইসলাম) হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার কথাবার্তা (গান-বাজনা) খরিদ/সংগ্রহ করে’ (সূরা লোকমান, আয়াত ৬): সাহাবী ইবনে মাসঊদ, আল্লাহর কসম করে বলেছেন, উক্ত আয়াতে ‘অসার কথাবার্তা’ বলতে গানকে বুঝানো হয়েছে। [১]

নবী মুহাম্মদ বলেছেন,
‘অবশ্যই আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক গোষ্ঠী হবে,
যারা স্বাধীন মানুষের কেনা-বেচা, রেশম ব্যবহার, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল গণ্য করবে’। [২]

নবী মুহাম্মদ আরও বলেছেন,
‘অবশ্যই এই উম্মতের মধ্যে ভূমিধ্বস, আসমান থেকে নিক্ষিপ্ত গযব 
ও দৈহিক রূপান্তরের শাস্তির প্রাদুর্ভাব দেখা দিবে। 
এসব তখনই ঘটবে যখন তারা মদ্যপান শুরু করবে, গায়িকা রাখবে ও বাদ্যযন্ত্র বাজাবে’। [৩]

নবী মুহাম্মদ ঢোল-তবলা বাজাতে নিষেধ করেছেন। [৪]
এবং বাঁশিকে দুষ্ট লোক ও বোকার কণ্ঠস্বর নামে আখ্যায়িত করেছেন। [৫]

ইসলাম অনুসারে অসার ক্রীড়া-কৌতুক, গান-বাজনা এবং তাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাদি হারাম; যেমন- তানপুরা, সারেঙ্গি, মন্দিরা, বাঁশি, তবলা, বেহালা, একতারা, দোতারা, হার্প, পিয়ানো, গিটার, ম্যান্ডোলিন ইত্যাদি।

এমনকি কোরআন-হাদীসে নিষিদ্ধ তৎকালীন বাদ্যযন্ত্র থেকে বর্তমানের যন্ত্রগুলো বেশি মোহ ও তন্ময়তা সৃষ্টি করে। এমনকি বাদ্যযন্ত্রের নেশা মদের নেশা থেকেও অনেক বড় হয়ে দাঁড়ায়। আর যদি বাদ্যযন্ত্রের সাথে গান ও সুর সংযোজিত হয় তাহলে পাপের পরিধি বেড়ে যায়, হারামও কঠিন হয়। সেই সাথে গানের কথাগুলি যদি প্রেম-ভালবাসা, রূপচর্চা, যৌন-উদ্দীপনা সৃষ্টিকারী বিষয়ে হয়, তাহলে তো কথাই নেই।

তবে আপনার মত সুবিধাবাদীরা বলেন: গান দ্বারা যদি আল্লাহ ও রাসূলের প্রশংসা করা হয়, জিহাদের প্রতি অনুপ্রাণিত করা হয়, ইসলামের অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা হয়, চরিত্র গঠনের চেষ্টা করা হয়, পাপ-পঙ্কিলতা থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়, তাহলে বাদ্যযন্ত্রবিহীন এ জাতীয় গান বৈধ। যদিও এটা মেনে নেওয়া মানে পানিতে নেমে না ভিজেই গোসল সেরে উঠতে পারা! 

আমি আমার প্রমাণ দিলাম, এবার আপনি প্রমাণ করুন, কোরআন-হাদীস অনুসারে - গ-তে গান, ব-তে বাজনা হালাল।

তাঁর সাথে আমার দেখা হয়নি আর, তবে গান-বাজনাপ্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনদের কাছে প্রশ্নটা করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না আজ! 

প্রমাণ দেখান, গান-বাজনা হালাল; কারণ আপনার মত গান-বাজনা আমারও প্রিয়!

তথ্যসূত্র:
[১]. তাফসীরে ইবনু কাছীর ৬/৩৩৩ পৃষ্ঠা।
[২]. বুখারী; মিশকাত হাদীস/৫৩৪৩।
[৩]. তিরমিযী হাদীস /২১৮৫; সিলসিলা ছহীহাহ হাদীস /২২০৩।
[৪]. বায়হাক্বী, মিশকাত হাদীস /৪৫০৩; ছহীহুল জামে হাদীস/১৭৪৭-৪৮।
[৫]. তিরমিযী হাদীস /১০০৫; ছহীহুল জামে হাদীস /৫১৯৪। 

(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন