লিখেছেন বিজ্ঞানী দহাজি
প্রথমেই বলে রাখি, আমাকে অনেকেই ইসলাম বিদ্বেষী বলে ইতোমধ্যেই আখ্যা দিয়েছেন। যদি বলেন যে, ধর্মের প্রতি আক্রমণাত্মক ধারণা পোষণ করা মানে ধর্মবিদ্বেষী হওয়া, তাহলে দুঃখিত, আমি ধর্ম বা ইসলামবিদ্বেষী নই। আর যদি আপনার মনে হয় যে, একটা ধর্মের বর্বর, অমানবিক দিকগুলো তুলে ধরা এবং তা সময়ক্রমে প্রকাশ করাটাই ধর্মবিদ্বেষ, তাহলে আমি ধর্মবিদ্বেষী, এবং মূলত ইসলামবিদ্বেষী।
১. আমার ইসলামবিদ্বেষী হওয়ার কারণ:
আমার জন্ম একটি মুসলিম পরিবারে। পরিবারের সবাই ধার্মিক। শুধু ধার্মিক বললে ভুল হবে, গোঁড়া ধার্মিক। ইসলামকে তাই খুব কাছে থেকে জানার সুযোগ হয়েছে। নিজেও আপন ধর্মটাকে ভালোবাসতাম। একটা অহংকার কাজ করতো মনের ভেতর যে, আমি মুসলিম। একটা ধর্মের সম্পর্কে মোটা মোটা বই পড়া আর সেই ধর্মটাকে পালন করা দুটোর মাঝে একটা ছোট কিন্তু গভীর পার্থক্য রয়েছে। অনেকটাই জীববিজ্ঞান প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসের মত। যাই হোক, শৈশবেই কোরআন শিক্ষার সুযোগ হয় পরিবারের সুবাদে। তবে এটাকে শিক্ষা বলাটা আসলে শুধু ভুল নয়, বড় রকমের ভুল হবে। কয়েক দফা কোরআন খতমের পর নিজের তোতাপাখি রূপটা সামনে আসে। অর্থহীন শব্দগুচ্ছকে যেহেতু বাক্য বলা যায় না, ঠিক সেরকমই কোরআন আমার কাছে একটা অর্থহীন বই ছিলো, কারণ আমি তার অর্থ বুঝতাম না। তোতাপাখির মত আওড়িয়ে চলতাম বার বার। মনে তখনই খেয়াল জন্মালো, এটা আমার অহংকারের ধর্মের প্রতি অবিচার। ধর্মকে আরো কাছ থেকে জানার ইচ্ছা হলো। পরের চিত্রটা ভিন্ন, কোরআনের অর্থ বোঝার পর অনেকগুলো হাদিস পড়ে নিজস্ব ধার্মিক গভীরতা বাড়িয়ে তোলার প্রচেষ্টার ফল স্বরূপ দেখলাম, আমি যে শুধু তোতাপাখি থেকে মানুষ হতে পেরেছি তা নয়, আমি মুসলিম থেকে মানুষ হতে পেরেছি। আমার প্রাক্তন পরিচয় - আমি মুসলিম। তাই ইসলামই হয়ে ওঠে আমার লেখার মূল বিষয়। ইসলামের ইতিহাসকেই অত্যন্ত সঙ্গত কারণে বেছে নিই বিশ্লেষণের জন্য। আর সেই সূত্র ধরেই আজ আমার পরিচয় - ইসলামবিদ্বেষী।
২. খবরের পাতায়:
কিছুদিন আগে একটা খবর শুনলাম, হাইকোর্ট রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখলো এবং কামাল উদ্দিন, সুফিয়া কামালসহ দেশের বিশিষ্ট ১৫ নাগরিকের করা রিট খারিজ করে দিলো।
এটা অবাক করার মত কিছু নয়। কারণ, ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশ বলে মুসলিম সম্প্রদায় গর্ববোধ করে, সে দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ১৪০০ বছরের পুরোনো একটা অনুভূতি যখন তীব্র হয়ে ওঠে, তখন সম্ভবত ২০০৪ সাল (বাংলা ভাইয়ের সময়ের জঙ্গি ততপরতা আমার আলোচনার বিষয়বস্তু নয়); তখন আমার প্রিয় একজন লেখক হুমায়ুন আজাদকে (শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি স্যারকে) হত্যা করার চেষ্টায় তাঁর ওপরে চালানো হয় বর্বর হামলা। এর জের হিসেবে কয়েক মাস পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তারপর এই অনুভূতির তীব্রতা প্রকট হয় ২০১৩ ও ২০১৫ সালে। একটি রুটিনের মত করে অভিজিৎ রায় (আমার নবম শ্রেণীর জীবনে যার 'অসম্ভবের বিজ্ঞান' লেখাটি আমাকে মুগ্ধ করেছিলো), ওয়াশিকুর রহমান বাবু, রাজীব হায়দার, অনন্ত বিজয় রায় ইত্যাদি লেখক, ব্লগার হত্যা হতে থাকে। এখানেই শেষ নয়। লেখক, ব্লগারের গণ্ডি পেরিয়ে এবার মন্দিরের পুরোহিত, খ্রিষ্টান দোকানী, বৌদ্ধ ভিক্ষু সবার হত্যার খবরে ভরপুর থাকত খবরের কাগজগুলো। "আল্লাহু আকবার" বলে শিরচ্ছেদের খবর শুনি প্রতিদিনই। তারপর... এবার আর খুন নয় হামলা। হলি আর্টিজানের ঘটনাটি হয়ত একটু স্তিমিত করে দেশকে। কিন্তু ৯০ ভাগ মুসলিম এখনও গর্বিত। হয় অনেক আন্দোলন, প্রতিবাদ। কিন্তু শেষমেশ, হাত শূন্য। তার মাঝেই তনু ধর্ষণ, রিশা খুন ইত্যাদি বিষয়গুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। হয় সমভাবে প্রতিবাদ। ফলাফল একই। সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আর নাসিরনগরের ঘটনাই মুখ্য আলোচনার বিষয় হিসেবে আছে। এর মাঝেই কেউ কেউ সাঁওতালদের নিয়ে অনলাইনে নিজ নিজ প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছেন। এত সব বিচিত্রতা আর নিত্যনতুন ইস্যু অনেকটাই সয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম থেকে বাতিল করা হতে পারে বলে নতুন ইস্যু তৈরি হয়েছে, তা সত্যি আমার নিস্তরঙ্গ জীবনে আরেকবার শিহরণ জাগিয়েছে।
বস্তুত, রাষ্ট্রধর্ম বাতিলই হতে পারে সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশকে মুক্ত করার একমাত্র উপায়। এবার যারা আমাকে ইসলাম বিদ্বেষী বলে আখ্যায়িত করেছেন, তারা নিশ্চয়ই বলে উঠবেন আমার এই বক্তব্য ইসলাম এর প্রতি আক্রমণাত্মক। আপনাদের প্রতি আমার বক্তব্য, রাষ্ট্রধর্ম বলে একটা ধর্ম কেন প্রয়োজন, যখন দেশে সকল ধর্মের মানুষই বাস করে। আর দেশের নাগরিক হিসেবে সকলের সমান অধিকার। এখন আপনি নিশ্চয়ই সংখ্যার অনুপাত বিশ্লেষণ করার দাবি জানাবেন? আপনি মুসলিম নাকি সাম্প্রদায়িক নন? আর ধর্ম যদি সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে হয়, সে ধর্ম কখনও রাষ্ট্রধর্ম হতে পারে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন