লিখেছেন পুতুল হক
৯১.
আমাদের বাসায় বাইশ-তেইশ বছরের একটা ছেলে আসে কোনো একটা কাজে। সে শিবিরের কর্মী। শিবির সম্পর্কে আমি ঐ ছেলেটার কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারি। ছেলেটা খুব গান-পাগল। যতক্ষণ থাকে, তার মোবাইলে গান বাজে বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি। একদিন বাজাচ্ছিল ওদের দলের ছেলেদের গাওয়া ইসলামিক গান। আমি খুব কৌতূহল নিয়ে শুনেছি। গানগুলোতে নামাজ-রোজা করার কথা বলা হয়, কিন্তু তাঁর চাইতে বেশি ছড়ানো হয় হিংসা, ঘৃণা। যারা সাধারণ শিক্ষা পায়, তাঁদেরকে ওরা বলে - শিক্ষিত শয়তান। শিক্ষিত শয়তান তারাই, যারা মুসলমান হয়েও দ্বীনি এলেম শিক্ষা না করে ইহুদি-নাসারাদের দেয়া শিক্ষা নেয় এবং দুনিয়াদারীর কাজে মশগুল থাকে। এই শিক্ষিত শয়তানদের সম্পর্কে এতো ঘৃণা ছড়ানো হয় যে, আমি আঁতকে উঠেছিলাম ওরা আমাদের সম্পর্কে কী ভাবে ভেবে। এরপর সব ক্ষোভ ঢালা হয় হিন্দু এবং ইহুদিনা-সারাদের ওপর। দশ লাইনের একটি গানের আট লাইন জুড়ে থাকে শিক্ষিত শয়তান, হিন্দু আর ইউরোপ-আমেরিকার প্রতি ঘৃণা। "মহানবীর অপমান করছে", "ইসলাম নষ্ট করছে" ইত্যাদি বলে শিক্ষিত শয়তান আর বিধর্মীদেরকে ওদের জীবনের একমাত্র শত্রু বলে বর্ণনা করে। পৃথিবীতে এতো হানাহানির মূল কারণ এইসব বিধর্মীরা। এদের কারণে মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়া থেকে দূরে সরে নানান পাপকর্ম করছে। পৃথিবীতে শান্তি ফেরাবার একটাই পথ; সেটা হচ্ছে - এইসমস্ত ইসলামের শত্রুদের শেষ করা।
৯২.
মাদ্রাসা ও এতিমখানায় তারাই যায়, যারা নিরুপায় - অন্তত অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটাই হয়। দরিদ্র শিশুরা একটা অভাবী সংসারে জন্মাবার পর কিছু দেখা, বোঝা বা শোনার আগেই ভীড় করে মাদ্রাসায়। ওদের জগৎ মানে মাদ্রাসা, স্বপ্ন মানে বেহেশত। ভিন্ন কিছু ভাবার ক্ষমতা এদের মধ্যে জন্মাতে দেয়া হয় না। যে বিশ্বাস ওদের মনে গেঁথে দেয়া হয়েছে, তাকে অবিশ্বাস করার জন্য যতটুকু সুযোগের প্রয়োজন হয়, সেটা ওরা পায় না। ওরা অক্ষম, সব ব্যপারে দরিদ্র। ইসলাম একটা সুখের জীবনের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু ইসলামের সেবক হয়েও সুখ থাকে ওদের নাগালের বাইরে। এরজন্য সব দোষ ওরা শিক্ষিত শয়তান এবং বিধর্মীদের ওপরে দেয়। ওদের সব অভাব, কষ্ট আর যন্ত্রণার জন্য দায়ী 'ইসলামের শত্রুরা'; তাই গানগুলো অক্ষমের ক্ষোভ, বাগাড়ম্বরপূর্ণ প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। অত্যন্ত সুকৌশলে এদেরকে কেবল অনুসারী হিসেবে গড়া হয়। নেতৃত্ব দেবার কোনো যোগ্যতা এদের নেই। নিশানা ঠিক করে দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তির দিক থেকে প্রতিবন্ধী অসম্পূর্ণ মানুষ হিসেবে এদের তৈরি করা হয়। শফি হুজুরের ডাকে এরা লাখে লাখে ছুটে এসেছিল ঢাকায় ইসলাম রক্ষা করে কাঙ্ক্ষিত সুখ লাভের আশায়। এরা যে কতটা অক্ষম, সেদিনই বুঝেছিলাম এদের এভাবে হেরে যেতে দেখে এবং বুঝেছিলাম এদের ভয় পাবার কিছু নেই। ভয়টা আসবে এবং আসে প্রকৃত শিক্ষিত শয়তানদের মধ্য থেকে।
৯৩.
প্রতিদিন পৃথিবীর লোকসংখ্যা বাড়ছে। এই বাড়তি মুখগুলোতে খাবার তুল দিতে হয়, তাদের রোগের চিকিৎসা দিতে হয়, কাপড় দিতে হয়। ইসলামী জীবনবিধান এই সমস্যার সমাধান কীভাবে করে? উত্তর অনেকের জানা। আহারের চিন্তা নেই - মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি। রোগ হলে উষ্ট্রমূত্র। এক কাপড় তালি দিয়ে পরতে থাকবে। ব্যস, পৃথিবীর সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেলো। দুই দিনের দুনিয়া, গরু-ছাগলের মত করে কাটিয়ে দিলে হয়। এতো ভাবনা, এতো আবিষ্কার, এতো নাচ-গান, ইমারতের কী দরকার? এই হচ্ছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনবিধান। এবার চলুন, আমরা ইসলামী বিনোদন করি। সহি বিনোদন একটাই - যৌনতা। সেটাও আবার শুধু পুরুষদের। মেয়েরা যৌনসামগ্রী। খাওয়া, পরা, বিনোদন, সব তো হল। এবার তবে পরকালের ভাবনা ছাড়া আর আছেটা কী? এটুকুতে ইসলাম সন্তুষ্ট থাকলে বলার কিছু থাকতো না। কিন্তু সেটা তো সে করছে না। সুযোগ পেলেই বিধর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। লুট করছে, খুন করছে, ধর্ষণ করছে। কেন রে, বাবা? তোমরা তোমাদের জীবনবিধান নিয়ে থাকো। আমাদেরকে জীবনবিধান কেন দিতে আসো?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন