লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কী কারণে খায়বারের নিরপরাধ জনপদবাসীদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেছিলেন; এই আক্রমণে তিনি তাঁদের ওপর কী ধরনের অমানুষিক নৃশংসতা প্রদর্শন করেছিলেন; তাঁদেরকে পরাস্ত করার পর তিনি কীভাবে তাঁদের সমস্ত সম্পদ এবং মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা ও শিশুদের বন্দী করে দাস ও যৌনদাসীরূপে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন; কী শর্তে তিনি তাঁদের পুরুষদের হত্যা না করে এক বস্ত্রে বিতাড়িত করার অনুমতি প্রদান করেছিলেন ও পরবর্তীতে তিনি কী শর্তে তাঁদেরকে তাঁদেরই জমিগুলোয় শ্রমিক হিসাবে কাজ করার অনুমতি দিয়েছিলেন; মুহাম্মদের মৃত্যুর পর উমর ইবনে খাত্তাব তাঁদের কী হাল করেছিলেন; ইত্যাদি বিষয়ের বিশদ আলোচনা গত তেইশটি পর্বে করা হয়েছে।
খায়বার বিজয় সম্পন্ন করার পর মুহাম্মদ তাঁর পরবর্তী আগ্রাসন চালান সেখান থেকে ৮ মাইল দূরবর্তী (মদিনা থেকে ৮৭ মাইল) ফাদাক নামের এক সমৃদ্ধ মরূদ্যানের (Oasis) লোকদের ওপর। মদিনায় স্বেচ্ছানির্বাসনের (সেপ্টেম্বর, ৬২২ সাল) পর থেকে শুরু করে খায়বার বিজয় সম্পন্ন করা পর্যন্ত (জুন-জুলাই, ৬২৮ সাল) গত ছয়টি বছরের মদিনা জীবনে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অবিশ্বাসী জনপদের ওপর যে আগ্রাসী হামলাগুলো চালিয়েছিলেন, তার প্রায় সবগুলোই ছিল সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে। মুহাম্মদের এই ফাদাক আগ্রাসন ছিল তার ব্যতিক্রম। কী প্রক্রিয়ায় মুহাম্মদ ফাদাক দখল করেছিলেন, তার বিস্তারিত বর্ণনা আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকরা তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে লিখে রেখেছেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) অব্যাহত বর্ণনা: [1] [2]
'যখন আল্লাহর নবী খায়বার বিজয় সম্পন্ন করেন, আল্লাহর নবী খায়বারের লোকদের কী হাল করেছেন, তা যখন ফাদাকের জনগণ শুনতে পায়, আল্লাহ তাদের মনে ভীতির সঞ্চার করে। তারা তাঁর কাছে এই শর্তে শান্তি প্রস্তাব পাঠায় যে, তারা তাদের উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তাঁকে দিয়ে দেবে। তাঁর খায়বার অবস্থানকালে (তাবারী: 'কিংবা পথিমধ্যে') কিংবা মদিনা প্রত্যাবর্তনের পর তাদের বার্তাবাহক তাঁর কাছে আসে ও তিনি তাদের শর্তগুলো মেনে নেন। এইভাবে ফাদাক পরিণত হয় তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তিরূপে, কারণ তা কোনো ঘোড়া কিংবা উটের পিঠে চড়ে আক্রমণের মাধ্যমে অর্জিত হয়নি [পর্ব-২৮]।'
‘কী ঘটেছে, তা যখন ফাদাকের জনগণ শুনতে পায়, তারা আল্লাহর নবীর কাছে যে আবেদন করে, তা হলো: তারা তাঁর কাছে তাদের সম্পত্তি পরিত্যাগ করে চলে যাবে, তিনি যেন তাদেরকে প্রাণে না মেরে বিতাড়িত হবার সুযোগ দান করেন; তিনি তাতে রাজি হন। এ ব্যাপারে যে ব্যক্তিটি মধ্যস্থতা করে, সে হলো বানু হারিথা গোত্রের মুহায়িসা বিন মাসুদ (Muhayyisa b. Mas'ud) নামের এক ভাই।'
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বিস্তারিত বর্ণনা: [3]
‘তারা বলেছেন: যখন আল্লাহর নবী খায়বার বিজয় করেন, তিনি ফাদাক-এর কাছাকাছি গমন করেন ও মুহায়িসা বিন মাসুদ-কে ফাদাকের জনগণের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার জন্য পাঠান, তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করেন এই বলে যে, যেমন করে তারা খায়বারের জনগণের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, তেমন করে তারা তাদের এলাকায় আগমন করবে ও তাদের ওপর আক্রমণ চালাবে।
মুহায়িসা বলেছে: আমি তাদের কাছে যাই ও তাদের সাথে দু'দিন অবস্থান করি, তারা চেষ্টা করে সুযোগের অপেক্ষার, বলে, "নাটায় আছে আমির, ইয়াসির, উসায়ের, আল-হারিথ ও ইহুদি নেতা মারহাব; আমরা মনে করি না যে, মুহাম্মদ তাদের কাছে ঘেঁষতে পারবে। প্রকৃতপক্ষেই, সেখানে দশ হাজার সৈন্য আছে।" মুহায়িসা বলে: যখন আমি তাদের শয়তানী দেখতে পাই, আমি ফিরে আসার মনস্থ করি, কিন্তু তারা বলে, "তোমার সাথে আমরা আমাদের লোক পাঠাবো, যারা আমাদের জন্য শান্তি প্রস্তাব পেশ করবে", কারণ তারা মনে করেছিলো যে, ইহুদিরা মুসলমানদের আক্রমণ ঠেকাতে পারবে। তারা এই রকম করতেই থাকে যতক্ষণে না খবর আসে যে নাইম দুর্গের ইহুদি ও তাদের সাহায্যকারী লোকদের হত্যা করা হয়েছে [পর্ব-১৩৪]। ঐ বিষয়টি তাদের শক্তিকে দুর্বল করে ও তারা মুহায়িসা-কে বলে, "আমরা তোমাকে যা বলেছি, তা তুমি গোপন রেখো, তাহলে এই অলংকারগুলো হবে তোমার!" তারা তাদের মহিলাদের অনেক অলংকার-সামগ্রী সংগ্রহ করেছিলো। মুহায়িসা বলে, "বরং, তোমাদের কাছ থেকে যা শুনলাম, তা আমি আল্লাহর নবীকে জ্ঞাত করাবো," অতঃপর তারা যা বলেছিল, তা সে আল্লাহর নবীকে জ্ঞাত করায়।
মুহায়িসা বলেছে: কিছু ইহুদিকে সঙ্গে নিয়ে তাদের নেতাদের মধ্যে থেকে নান বিন ইয়াওসা নামের এক নেতা আমার সাথে আসে ও আল্লাহর নবীর সাথে যে চুক্তিটি করে, তা হলো,