বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬

লওহে মাহফুজের সন্ধানে: ক্যাটম্যান সিরিজ - ২৬

লিখেছেন ক্যাটম্যান

মুক্তচিন্তা চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কারণে ধর্মান্ধ মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠীর নৃশংস হামলার শিকার হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নিলয়, ফয়সল আরেফিন দীপন ও নাজিমুদ্দিন সামাদ সহ নিহত ও আহত সকল মুক্তচিন্তকের স্মরণে এই লেখাটি অপরিমেয় ভালোবাসার স্মারক স্বরূপ নিবেদন করছি।


উপর্যুক্ত বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, ইস্রায়েল সন্তানদেরকে মিশর থেকে বের করে আনার উদ্দেশ্যে পরমেশ্বর যখন মূসাকে ফারাওর কাছে প্রেরণ করতে চাইলেন, তখন মূসা কীভাবে তার আত্মবিশ্বাসহীনতা উপস্থাপন করলেন এবং নিজের অযোগ্যতা তুলে ধরে দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করলেন। ফলশ্রুতিতে পরমেশ্বর মূসার মুখের সঙ্গে সঙ্গে থাকার ও কী বলতে হবে তা তাকে শিখিয়ে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মূসা তার কল্পিত পরমেশ্বরের আশ্বাসে আশ্বস্ত না হয়ে স্বীয় দায়িত্বভার এড়াতে গড়িমসি করতে লাগলেন। মূসার এমন অবিমৃশ্যকারিতায় বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হয়ে স্বকপোলকল্পিত পরমেশ্বর বাধ্য হলেন মূসার অভিপ্রায় অনুসরণ করে তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হারূনকে তার সহযোগী নবী মনোনীত করতে। একইভাবে স্বকপোলকল্পিত পরমেশ্বর মূসাকে এটাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, মূসাকেই ঈশ্বরের ভূমিকা পালন করতে হবে। অর্থাৎ মূসার অনুগত নবীর ভূমিকা পালন করবে হারূন এবং নবী হারূনকে নিয়ন্ত্রণকারী ঈশ্বরের ভূমিকা পালন করবে মূসা। আর এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যে, স্বয়ং মূসা সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ঈশ্বর এবং স্বকপোলকল্পিত পরমেশ্বর বরং মনিব মূসার আজ্ঞাবহ দাস।

তবে আল-কুরআনের বর্ণনায় মূসার ঐশ্বরিক ভূমিকা স্বীকার করা না হলেও, মূসার চাহিদার প্রেক্ষিতেই যে জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হারূনকে তার সহযোগী নবী মনোনীত করা হয়েছে, তা সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করা হয়েছে। যেমন:
মূসা বলিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করিয়া দাও। এবং আমার কর্ম সহজ করিয়া দাও। আমার জিহবার জড়তা দূর করিয়া দাও— যাহাতে উহারা আমার কথা বুঝিতে পারে। আমার জন্য করিয়া দাও একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনবর্গের মধ্য হইতে; আমার ভ্রাতা হারূনকে; তাহার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় কর, ও তাহাকে আমার কর্মে অংশী কর, যাহাতে আমরা তোমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করিতে পারি প্রচুর; এবং তোমাকে স্মরণ করিতে পারি অধিক। ‘তুমি তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।’ তিনি বলিলেন, হে মূসা! তুমি যাহা চাহিয়াছ তাহা তোমাকে দেওয়া হইল। [সূরা তা-হা: ২৫-৩৬]
স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক মূসাকে ডাকিয়া বলিলেন, ‘তুমি জালিম সম্প্রদায়ের নিকট যাও, ‘ফির‘আওনের সম্প্রদায়ের নিকট; উহারা কি ভয় করে না ?’ তখন সে বলিয়াছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আশংকা করি যে, উহারা আমাকে অস্বীকার করিবে, এবং আমার হৃদয় সংকুচিত হইয়া পড়িতেছে, আর আমার জিহ্বা তো সাবলীল নাই! সুতরাং হারূনের প্রতিও প্রত্যাদেশ পাঠাও। [সূরা শু‘আরা: ১০-১৩]
‘আমার ভ্রাতা হারূন আমা অপেক্ষা বাগ্মী; অতএব তাহাকে আমার সাহায্যকারীরূপে প্রেরণ কর, সে আমাকে সমর্থন করিবে। আমি আশংকা করি উহারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলিবে।’ আল্লাহ বলিলেন, ‘আমি তোমার ভ্রাতার দ্বারা তোমার বাহু শক্তিশালী করিব এবং তোমাদের উভয়কে প্রাধান্য দান করিব। [সূরা কাসাস: ৩৪-৩৫]
অর্থাৎ মূসার অভিপ্রায় অনুসরণ করেই যে পরমেশ্বর যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, আল-কুরআনের উপর্যুক্ত বর্ণনাসমূহেও সে বিষয়টি স্পষ্ট।

যাহোক, মূসার কল্পিত পরমেশ্বর মূসার অভিপ্রায় অনুসরণ করে ইস্রায়েলের জনগণের মাঝে বসবাসের জন্যে একটি পবিত্রধাম নির্মাণ করার আদেশ প্রদান করেছেন। তবে পরমেশ্বর প্রদত্ত এমন আদেশের পেছনে মূসার সুদূরপ্রসারী এক পরিকল্পনা বিদ্যমান; যে পরিকল্পনা তিনি বহু পূর্বেই প্রণয়ন করেছিলেন। কারণ, মূসা ভালোভাবেই জানতেন যে, দীর্ঘকালব্যাপী মিশরে বসবাস করায় ইস্রায়েলের জনগণ প্রাচীন মিশরীয় পৌত্তলিক সংস্কৃতি ব্যাপকভাবে আত্মীকরণ করেছে। ফলে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে ব্যাপকভাবে চর্চিত সেই পৌত্তলিক সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত হওয়া ইস্রায়েলের জনগণের জন্যে কোনো সহজসাধ্য বিষয় ছিল না। বরং প্রাচীন মিশরীয় পৌত্তলিক সংস্কৃতির চর্চা ও যাজকতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য পোষণই ছিল তাদের জন্যে সহজসাধ্য বিষয়। পৌত্তলিক সংস্কৃতির চর্চা ও যাজকতন্ত্রের প্রতি অনুগত থাকতেই তারা অভ্যস্ত ছিল। তাই মূসা যখন পর্বতে আরোহণপূর্বক চল্লিশদিন চল্লিশরাত অবস্থান করে স্বকপোলকল্পিত ঈশ্বরের পক্ষে দশ আজ্ঞা বিশিষ্ট প্রস্তরফলক নির্মাণ, বিভিন্ন বিধান ও আজ্ঞা প্রণয়নে ব্যস্ত; ইস্রায়েলের জনগণ তখন মূসার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে হতাশ হয়ে মূসার যোগানকৃত ঈশ্বরের বিকল্প হিসাবে প্রাচীন মিশরীয় পৌত্তলিক সংস্কৃতির অনুকরণে একটি সোনার বাছুর মূর্তি নির্মাণ করে এবং নিজেদের পথপ্রদর্শক পরমেশ্বর জ্ঞানে সেই সোনার বাছুর মূর্তির উপাসনায় লিপ্ত হয়।

এই ঘটনাই প্রমাণ করে, ইস্রায়েলের জনগণ মূসার অনুসারী হওয়া সত্ত্বেও তাদের জীবন ও মননে প্রাচীন মিশরীয় পৌত্তলিক সংস্কৃতির প্রভাব কতটা ব্যাপক। আর তা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে হলে প্রাচীন মিশরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রথা, ধর্ম ও সংস্কৃতির যৌক্তিক অনুসন্ধান বিশেষভাবে আবশ্যক। যেমন — উপর্যুক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে যদি বিবেচনা করি, সেক্ষেত্রে প্রাচীন মিশরীয় মিথ অনুসন্ধান করে জানা যায়, তৎকালীন ফারাও বা রাজাগণ প্রজাদের মাঝে এমন ধারণা প্রচার করতেন যে, ফারাওয়ের সমস্ত ক্ষমতা একটি প্রাণীর মধ্যে নিহিত থাকে। যখনই কোনো ফারাও ক্ষমতা গ্রহণ করতেন, তিনি কোনো একটি প্রাণীকে ঈশ্বর ঘোষণা দিতেন এবং সেই প্রাণীকে ঈশ্বর জ্ঞানে উপাসনা করতেন। ফারাও বা রাজার পরিবর্তন হলে ঈশ্বরও পরিবর্তন হতো। নতুন ফারাও এসে নতুন কোনো প্রাণীকে নতুন ঈশ্বর ঘোষণা দিতেন এবং প্রাণীরূপী সেই নতুন ঈশ্বরের উপাসনা করতেন। আর এর মধ্য দিয়ে তৎকালীন ফারাও বা রাজাগণ স্বকপোলকল্পিত ঈশ্বরকে পুঁজি করে নানাবিধ যাজকতন্ত্র প্রবর্তন করতেন; যা নিজেদের শাসনক্ষমতা সংহতকরণ ও প্রজাদের নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী ছিল। প্রাচীন মিশরীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ পর্যবেক্ষণ ও যাচাই করলে তেমন ধারণার স্বীকৃতি মেলে।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার রাজধানী থিবসে অবস্থিত কর্নাক মন্দিরটি এক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে, যা প্রাচীন মিশরীয় পৌত্তলিক সংস্কৃতি ও যাজকতন্ত্রের অন্যতম নিদর্শন বলে স্বীকৃত। উল্লিখিত মন্দির চত্বরের বাইরে এক স্থানে দুই সারিতে কতগুলো ভেড়ার মূর্তি বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেই স্থানটি র‍্যাম এভিনিউ বা ভেড়া সরণি বলে পরিচিত। দ্বিতীয় রামেসেস, যাকে আমরা মূসার সমসাময়িক ফারাও বা ফেরাউন বলে জানি, ( যদিও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের ধারণা, দ্বিতীয় রামেসেস মূসার সমসাময়িক ফারাও নন; বরং তিনি মূসার সময়পূর্ব ফারাও ছিলেন। ) তার আমলে এই ভেড়া সরণি নির্মিত হয়েছে। চুনাপাথর কেটে স্ফিংসের অবয়বে এই মূর্তিসমূহ বানানো হয়েছে। প্রতিটি মূর্তির মুখ ভেড়ার মুখের ন্যায় এবং শরীর সিংহের ন্যায়। দুই সারিতে একুশটি করে ভেড়ার মূর্তি। ভেড়ার মূর্তিগুলো সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে আছে। প্রতিটি মূর্তির হাঁটুর কাছে একটি করে মানবমূর্তি রয়েছে। প্রত্যেকটি মানবমূর্তি দ্বারা এক একজন ফারাও বা সম্রাট এবং মানবমূর্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ভেড়ার মূর্তি দ্বারা স্ব স্ব ফারাও বা সম্রাটের ঈশ্বরকে বুঝানো হয়েছে। সম্রাট দ্বিতীয় রামেসেস মনে করতেন যে, কর্নাক মন্দিরের সবচেয়ে  সুরক্ষিত অংশে বা গর্ভগৃহে থাকা প্রধান দেবতা আমুন-রা এই পথ দিয়ে নীলনদে যেতেন। দেবতা আমুন-রা’র প্রতীক ছিল এই সমস্ত ভেড়া। এ থেকে বোঝা যায়, প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তিকে ঈশ্বর জ্ঞানে উপাসনা করার রীতিটি অতি প্রচলিত রীতি হিসাবেই বিবেচিত হত। সে কারণে প্রাচীন মিশরীয় পৌত্তলিক সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত ইস্রায়েলের জনগণের নিকট মূসার যোগানকৃত পরমেশ্বরের বিকল্প হিসাবে সোনা দ্বারা নির্মিত একটি বাছুরের মূর্তিকে নিজেদের পথপ্রদর্শক পরমেশ্বর ঘোষণা ও তার উপাসনায় লিপ্ত হওয়াটা ছিল খুবই সাধারণ ঘটনা। যা করতে মূসার অনুসারী ইস্রায়েলের জনগণকে সামান্যতম বেগ পেতে হয় নি। তাই বাইবেলে বর্ণিত হয়েছে:
পর্বত থেকে নেমে আসতে মোশীর দেরি হচ্ছে দেখে লোকেরা আরোনের কাছে একত্রে সমবেত হয়ে তাঁকে বলল, ‘ওঠ, আমাদের পুরোভাগে চলবেন এমন দেবতাকে আমাদের জন্য তৈরি কর, কেননা ওই যে মোশী মিশর দেশ থেকে আমাদের এখানে এনেছে, তার যে কী হল, তা আমরা জানি না।’ আরোন তাদের বললেন, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের কানের সোনার দুল খুলে আমার কাছে নিয়ে এসো।’ তাই সমস্ত লোক কান থেকে সোনার দুল খুলে আরোনের কাছে নিয়ে গেল। তাদের হাত থেকে সেইসব নিয়ে তিনি খোদকারের একটা যন্ত্র দিয়ে নকশা গঠন করে ঢালাই করা একটা বাছুর তৈরি করলেন; তখন লোকেরা বলে উঠল, ইস্রায়েল এ-ই তোমার পরমেশ্বর, যিনি মিশর দেশ থেকে তোমাকে এখানে এনেছেন ! তা দেখে আরোন তার সামনে একটি বেদি তৈরি করে ঘোষণা করলেন, ‘আগামীকাল প্রভুর উদ্দেশে উৎসব হবে।’ পরদিন খুব সকালে উঠে জনগণ আহুতি দিল ও মিলন-যজ্ঞবলি নিয়ে এল। জনগণ খাওয়া-দাওয়া করতে বসল, তারপর উঠে ফুর্তি করতে লাগল। [যাত্রাপুস্তক ৩২ : ১- ৬]
প্রাচীন মিশরীয় পৌত্তলিক সংস্কৃতি ও যাজকতন্ত্রের প্রতি ইস্রায়েলের জনগণের এহেন দুর্বলতা আদিতে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বলেই সুচতুর মূসা তার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ ব্যপদেশে তাদের মাঝে প্রাচীন মিশরীয় পৌত্তলিকতাবাদী যাজকতন্ত্রের অনুকরণে নতুন এক যাজকতন্ত্র প্রবর্তনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন; যে পরিকল্পনা ইস্রায়েলের জনগণকে মিশর দেশ থেকে বের করে আনার অব্যবহিত পরেই তাদের নিকট মূসা তার কল্পিত পরমেশ্বরের মধ্য দিয়ে উপস্থাপনের প্রয়াস পেয়েছেন। বাইবেলে যার বর্ণনা নিম্নরূপ:
মিশর দেশ থেকে ইস্রায়েল সন্তানদের বেরিয়ে আসার পর তৃতীয় অমাবস্যায়, ঠিক সেই দিনেই, তারা সিনাই মরুপ্রান্তরে এসে পৌঁছল। তারা রেফিদিম থেকে শিবির তুলে সিনাই মরুপ্রান্তরে এসে পৌঁছলে সেই মরুপ্রান্তরে শিবির বসাল; ইস্রায়েল পর্বতের ঠিক সামনেই শিবির বসাল।
তখন মোশী পরমেশ্বরের কাছে উঠে গেলেন, আর প্রভু পর্বত থেকে তাঁকে ডেকে বললেন, ‘তুমি যাকোবকুলকে একথা বলবে, ইস্রায়েল সন্তানদের কাছে একথা ঘোষণা করবে: আমি মিশরীয়দের প্রতি যা করেছি, তা তোমরা নিজেরাই দেখেছ; এও দেখেছ, কীভাবে আমি ঈগলের ডানায়ই তোমাদের বহন করে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। এখন, তোমরা যদি আমার প্রতি সম্পূর্ণ বাধ্য হয়ে আমার সন্ধি পালন কর, তবে সকল জাতির মধ্যে তোমরাই হবে আমার নিজস্ব অধিকার, কেননা সমস্ত পৃথিবী আমার! আর আমার কাছে তোমরা হবে যাজকদের এক রাজ্য, এক পবিত্র জনগণ। এই সমস্ত কথা তুমি ইস্রায়েল সন্তানদের বলবে।’ [যাত্রাপুস্তক ১৯: ১-৬]
(চলবে)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন