রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর (পর্ব ২২)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


{৬১৬ সালের দিকে রোম সাম্রাজ্যের কিছু অংশ দখল করে নেয় পারসিয়ান (ইরান) সাম্রাজ্য; মূলত ইরাক ও সিরিয়া নিয়ে রোম ও পারসিয়ান সাম্রাজ্যের মধ্যে প্রায় সাড়ে-তিনশ বছরের উত্তেজনা ছিলো; এ অংশগুলোর মালিকানা দাবি করতো দু'পক্ষই, যুদ্ধে হাতবদল হতো মাঝে মধ্যেই, কিন্তু তাতে বিরোধ কমতো না মোটেই! মুহাম্মদের কাছে যখন রোমের পরাজয়ের সংবাদ পৌঁছায়, মুহাম্মদ তার স্বভাবসুলভ প্রতিভায় ৯৪ নং প্রকাশ সামনে নিয়ে আসেন; এবং বলেন, খুব দ্রুতই রোমানরা আবারও জয় করে নেবে সেসব অংশ! রোমানদের এই পরাজয়ে মুহাম্মদ এতটাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন; অনুসারীদের বলেই ফেলেন, একদিন পুরো রোম সাম্রাজ্য মুসলিমদের দখলে চলে আসবে! এসব অবশ্য ভিন্ন ইতিহাস।

আবু-জেহেলের সফল দিক-নির্দেশনায়, মক্কাবাসীদের বুঝতে বাকি রইল না, মুহাম্মদ একজন সুপ্ত কাব্য প্রতিভার মানুষ; প্রাচীন রূপকথার সাথে ইহুদি-খ্রিষ্টান মিথগুলোকে মিশিয়ে প্রকাশ করাই তার কাজ; আর এ কাজে মক্কার বসবাসকারী ইহুদি-খ্রিষ্টান মানুষগুলো তাকে সহযোগিতা করছে। সে যদি সত্যি সত্যি আল্লাহর নবী/রসূল হয়ে থাকে, তবে কেন কোরআন বই হিসেবে একত্রে আসে না? কেন কোরআন আরবি ভাষায়? কেন কোনো ফেরেশতা তার সাথে সাথে থাকে না? কেন তাকে সাধারণ মানুষের মতই চলাফেরা করতে হয়? কেনো সে সম্পদশালী হয় না?

মুহাম্মদ অবশ্যই কবি, উন্মাদ, মিথ্যাবাদী ও যাদুগ্রস্থ!

মুহাম্মদ বরাবরের মতই ভয়-ভীতি-লোভ মিশিয়ে ৯৫-৯৬ নং প্রকাশে অনুসারীদের কাছে এসব বিষয়ের উত্তর দেবার চেষ্টা করেন। তবে কোরআন এতটাই একপেশে অবস্থানে ছিলো মক্কার ১৩ বছর সময়কালীন; মুহাম্মদের অনুসারী ছাড়া কোনো অভিযোগের উত্তর কখনোই অভিযোগকারীদের কাছে পৌঁছায়নি!

মুহাম্মদের নবী-দাবির বুজরুকি ধরতে কুরাইশা’রা একেবারে একটি ভিন্ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করেন; এবং এ যাত্রায় ফাঁদে ধরা পড়েন মুহাম্মদ; অবস্থা এমন দাঁড়ায়, মক্কার হাওয়া-বাতাস-খাদ্য-পানি নিষিদ্ধ হয়ে যায় তার জন্য! 

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২২ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ১৫ তম চার অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৩ তম প্রকাশ: সূরা আন্ নাবা (৭৮) (মহাসংবাদ), ৩৭ থেকে ৪০ আয়াত:

৩৭. যিনি আকাশ, পৃথিবী আর এগুলোর মাঝে যা কিছু আছে সব কিছুর প্রতিপালক, তিনি অতি দয়াময়, তাঁর সম্মুখে কথা বলার সাহস কারো হবে না।

৩৮. সেদিন রূহ আর ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াবে, কেউ কোন কথা বলতে পারবে না, সে ব্যতীত যাকে পরম করুণাময় অনুমতি দেবেন, আর সে যথার্থ কথাই বলবে।

৩৯. এ দিনটি সত্য, সুনিশ্চিত, অতএব যার ইচ্ছে সে তার প্রতিপালকের দিকে আশ্রয় গ্রহণ করুক।

৪০. আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; সেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম প্রত্যক্ষ করবে এবং কাফির বলতে থাকবে: হায়রে হতভাগা আমি! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম!

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৪ তম প্রকাশ: সূরা আর রুম (৩০) (রোমান জাতি), ১৭ বাদে ১ থেকে ২৭ আয়াত:

১. আলিফ লাম মীম।

২. রোমানরা পরাজিত হয়েছে।

৩. নিকটবর্তী এলাকায় এবং তারা তাদের পরাজয়ের পর অতিসত্বর বিজয়ী হবে,

৪. কয়েক বছরের মধ্যেই, পূর্বের ও পরের সিদ্ধান্ত আল্লাহরই; আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে,

৫. আল্লাহর সাহায্যে, তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

৬. এটা আল্লাহরই প্রতিশ্রুতি; আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না।

৭. তারা পার্থিব জীবনের বাহ্যিক দিক সম্বন্ধে অবগত, আর আখিরাত সম্বন্ধে তারা গাফিল।

৮. তারা কি নিজেদের অন্তরে ভেবে দেখে না যে, আল্লাহ আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও এতদুভয়ের অন্তবর্তী সব কিছু সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবেই এক নির্দিষ্ট কালের জন্য? কিন্তু মানুষের মধ্যে অনেকেই তাদের রবের সাক্ষাতে অবিশ্বাসী।

৯. তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে না এবং দেখে না যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছে? শক্তিতে তারা ছিল তাদের অপেক্ষা প্রবল; তারা জমি চাষ করত, তারা (পূর্ববর্তীরা) ওটা আবাদ করত তাদের অপেক্ষা অধিক। তাদের নিকট এসেছিল তাদের রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ; বস্তুতঃ তাদের প্রতি যুলম করা আল্লাহর কাজ ছিল না, বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলম করেছিল।

১০. অতঃপর যারা মন্দ কাজ করত, তাদের পরিণাম হয়েছিল মন্দ; কারণ তারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করেছিল আর সেগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত।

১১. আল্লাহ প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতঃপর তিনি পুনরায় সৃষ্টি করবেন। এরপর তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।

১২. আর যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে পড়বে।

১৩. তাদের দেব-দেবীগুলো তাদের জন্য সুপারিশ করবে না এবং তারাই তাদের দেব-দেবীগুলোকে অস্বীকার করবে।

১৪. যেদিন কিয়ামাত সংঘটিত হবে, সেদিন মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়বে।

১৫. অতএব যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কাজ করেছে, তারা জান্নাতে আনন্দে থাকবে।

১৬. আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও পরকালের সাক্ষাৎকার অস্বীকার করেছে তারাই শাস্তি ভোগ করতে থাকবে।

১৮. আর অপরাহ্নে ও মধ্যাহে; এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকল প্রশংসা তাঁরই।

১৯. তিনিই জীবন্তকে বের করেন মৃত থেকে আর মৃতকে বের করেন জীবন্ত থেকে। যমীনকে তিনিই পুনরায় জীবিত করেন তার মৃত্যুর পর, এভাবেই তোমাদেরকে বের করা হবে।

২০. তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছ।

২১. এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে যাতে তোমরা তাদের সাথে শান্তিতে বাস করতে পার এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।

২২. এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।

২৩. এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাত ও দিনে তোমাদের নিদ্রা এবং তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ। এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে শ্রবণকারী সম্প্রদায়ের জন্য।

২৪. এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে প্রদর্শন করেন বিদ্যুৎ, ভয় ও ভরসা সঞ্চারক রূপে এবং তিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন এবং তদ্বারা ভূমিকে ওর মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন, এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য।

২৫. তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হল এই যে, আকাশ ও পৃথিবী তাঁর হুকুমেই দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে মাটি থেকে উঠার জন্য ডাক দেবেন একটি ডাক, তখন তোমরা উঠে আসবে।

২৬. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সব তাঁরই, সকলই তাঁর প্রতি অনুগত।

২৭. তিনিই সৃষ্টির সূচনা করেন, অতঃপর তার পুনরাবৃত্তি করবেন আর তা তার জন্য খুবই সহজ। আকাশ ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত তাঁর জন্যই, তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৫ তম প্রকাশ: সূরা আল ফুরকান (২৫) (সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণকারী গ্রন্থ), ৬৮, ৬৯, ৭০ বাদে ১ থেকে ৭৭ আয়াত:

১. মহা কল্যাণময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাহর উপর সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী (কোরআন) নাযিল করেছেন, যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে।

২. যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি; সার্বভৌমত্বে তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে।

৩. আর তারা তাঁর পরিবর্তে উপাস্য রূপে গ্রহণ করেছে অপরকে যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদের অপকার অথবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না এবং জীবন, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখে না।

৪. কাফিরেরা বলে: এটা মিথ্যা ব্যতীত কিছু নয়, সে এটা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে; অবশ্যই তারা যুল্‌ম ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছে।

৫. এবং তারা বলে: এগুলি তো সেকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলি সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।

৬. বল: এটা তিনিই অবতীর্ণ করেছেন যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমুদয় রহস্য অবগত আছেন; তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৭. তারা বলে: এ কেমন রাসূল, যে আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে? তার কাছে কোনো ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হল না, যে তার সাথে থাকত সতর্ককারী রূপে?

৮. তাকে ধন-ভাণ্ডার দেয়া হয়নি কেন, অথবা কেন একটি বাগান দেয়া হল না, যা হতে সে খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে? সীমালংঘনকারীরা আরও বলে: তোমরা তো এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তিরই অনুসরণ করছ।

৯. দেখ, তারা তোমার কী উপমা দেয়। তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তারা পথ পাবে না।

১০. কত মহান তিনি যিনি ইচ্ছা করলে তোমাকে দিতে পারেন এটা অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর বস্তু - উদ্যানসমূহ, যার নিম্নদেশে নদ-নদী প্রবাহিত এবং দিতে পারেন প্রাসাদসমূহ।

১১. বরং তারা কিয়ামাতকে অস্বীকার করেছে এবং যারা কিয়ামাতকে অস্বীকার করে তাদের জন্য আমি প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুন।

১২. আগুন যখন তাদেরকে বহু দূরবর্তী স্থান থেকে দেখবে, তখন তারা শুনতে পারে তার ক্রুদ্ধ গর্জন ও হুঙ্কার।

১৩. যখন তাদেরকে এক সঙ্গে বেঁধে জাহান্নামের কোন সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষেপ করা হবে, তখন সেখানে তারা মৃত্যুকে ডাকবে।

১৪. তাদেরকে বলা হবে: আজ তোমরা একবারের জন্য ধ্বংস কামনা কর না, বরং বহুবার ধ্বংস হওয়ার কামনা করতে থাক।

১৫. তাদেরকে জিজ্ঞেস কর: এটাই শ্রেয়, নাকি স্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে মুত্তাকীদেরকে! এটাই তাদের পুরস্কার ও প্রত্যাবর্তন স্থল।

১৬. সেখানে তারা যা কামনা করবে, তা’ই পাবে এবং তারা স্থায়ী হবে। এই প্রতিশ্রুতি পূরণ তোমার রবেরই দায়িত্ব।

১৭. এবং যেদিন তিনি একত্রিত করবেন তাদেরকে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করত তাদেরকে, তিনি সেদিন জিজ্ঞেস করবেন: তোমরাই কি আমার এই বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলে, নাকি তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল?

১৮. তারা বলবে: আপনি পবিত্র ও মহান! আপনার পরিবর্তে আমরা অন্যকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করতে পারি না। আপনিই তো এদেরকে ও এদের পিতৃ-পুরুষদেরকে ভোগ-সম্ভার দিয়েছিলেন। পরিণামে তারা উপদেশ বিস্মৃত হয়েছিল এবং পরিণত হয়েছিল এক ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে।

১৯. (আল্লাহ মুশরিকদেরকে বলবেন) ‘তোমরা যা বলতে সে ব্যাপারে তারা তোমাদেরকে মিথ্যে প্রমাণিত করেছে। কাজেই তোমরা না পারবে (তোমাদের শাস্তি) প্রতিরোধ করতে আর না পাবে সাহায্য। তোমাদের মধ্যে যে অন্যায়কারী আমি তাকে গুরুতর শাস্তি আস্বাদন করাব।

২০. তোমার পূর্বে আমি যে সব রাসূল প্রেরণ করেছি, তারা সবাই আহার করত ও হাটে-বাজারে চলাফেরা করত। হে লোক সকল! আমি তোমাদের মধ্যে এককে অপরের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ করেছি। তোমরা ধৈর্য ধারণ করবে কি? তোমার রাব্ব সব কিছু দেখেন।

২১. যারা আমার সাক্ষাৎ আশা করে না তারা বলে, আমাদের কাছে ফেরেশতা নাযিল করা হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাই না কেন? তারা নিজেদের অন্তরে অহংকার পোষণ করে আর তারা মেতে উঠেছে গুরুতর অবাধ্যতায়।

২২. যেদিন তারা ফেরেশতাদেরকে দেখতে পাবে, অপরাধীদের জন্য সেদিন কোনো সুখবর থাকবে না, আর (ফেরেশতাগণ বলবে তোমাদের সুখ-শান্তির পথে আছে) দুর্লঙ্ঘ বাধা।

২৩. আমি তাদের কৃতকর্মগুলি বিবেচনা করব, অতঃপর সেগুলিকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।

২৪. সেদিন জান্নাতবাসীদের বাসস্থান হবে উৎকৃষ্ট এবং বিশ্রামস্থল হবে মনোরম।

২৫. সেদিন মেঘমালা সহ আকাশ বিদীর্ণ হবে আর ফেরেশতাদেরকে ধীরে ধীরে নীচে নামিয়ে দেয়া হবে।

২৬. সেদিন প্রকৃত রাজত্ব হবে দয়াময় আল্লাহর এবং কাফিরদের জন্য সেদিন হবে কঠিন।

২৭. অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম।

২৮. হায় দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধু রূপে গ্রহণ না করতাম!

২৯. আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল আমার নিকট উপদেশ পৌঁছার পর; শাইতান তো মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।

৩০. রসূল বলবে - ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জাতির লোকেরা এ কুরআনকে পরিত্যক্ত গণ্য করেছিল।’

৩১. এভাবেই আমি প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের মধ্য হতে শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, পথ প্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার প্রতিপালকই যথেষ্ট।

৩২. কাফিরেরা বলে: সমগ্র কুরআন তার নিকট একবারেই অবতীর্ণ হল না কেন? এভাবেই অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমার হৃদয় ওর দ্বারা মজবুত হয় এবং তা সম্পূর্ণ রুপে আস্তে আস্তে আত্মস্থ করতে পার।

৩৩. তারা তোমার নিকট এমন কোনো সমস্যা উপস্থিত করেনি, যার সঠিক সমাধান ও সুন্দর ব্যাখ্যা আমি তোমাকে দান করিনি।

৩৪. যাদেরকে মুখে ভর দিয়ে দিয়ে চলা অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্র করা হবে, তাদেরই স্থান হবে অতি নিকৃষ্ট এবং তারাই পথভ্রষ্ট।

৩৫. আমি তো মূসাকে কিতাব দিয়েছিলাম এবং তার ভাই হারূনকে তার সাহায্যকারী করেছিলাম।

৩৬. এবং বলেছিলাম: তোমরা সেই সম্প্রদায়ের নিকট যাও যারা আমার নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করেছে; অতঃপর আমি তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছিলাম।

৩৭. আর নূহের সম্প্রদায় যখন রাসূলদের প্রতি মিথ্যারোপ করল, তখন আমি তাদেরকে নিমজ্জিত করলাম এবং তাদেরকে মানবজাতির জন্য নিদর্শন স্বরূপ করে রাখলাম; যালিমদের জন্য আমি মর্মন্তদ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।

৩৮. সে রকমই আমি ধ্বংস করেছি ‘আদ, সামূদ, কূপবাসী আর তাদের মধ্যবর্তী বহু বহু বংশধরকে।

৩৯. আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছিলাম, আর তাদের সকলকেই আমি সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করেছিলাম।

৪০. তারাতো সেই জনপদ দিয়েই যাতায়াত করে যার উপর বর্ষিত হয়েছিল অকল্যাণের বৃষ্টি; তাহলে কি তারা এটা প্রত্যক্ষ করে না? বস্তুতঃ তারা পুনরুত্থানের আশংকা করে না।

৪১. তারা যখন তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে শুধু ঠাট্টা-বিদ্রুপের পাত্র রূপে গণ্য করে এবং বলে: এ-ই কি সে, যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন!

৪২. সে তো আমাদেরকে আমাদের দেবতাদের হতে দূরে সরিয়ে দিত, যদি না আমরা তাদের আনুগত্যে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকতাম। যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা জানবে, কে সর্বাধিক পথভ্রষ্ট।

৪৩. তুমি কি দেখ না তাকে, যে তার কামনা বাসনাকে উপাস্য রূপে গ্রহণ করে? তবুও কি তুমি তার যিম্মাদার হবে?

৪৪. তুমি কি মনে কর যে, তাদের অধিকাংশ শোনে ও বোঝে? তারা তো পশুরই মত; বরং তারা আরও অধম।

৪৫. তুমি কি তোমার পালনকর্তাকে দেখ না, তিনি কিভাবে ছায়াকে বিলম্বিত করেন? তিনি ইচ্ছা করলে একে স্থির রাখতে পারতেন। এরপর আমি সূর্যকে করেছি এর নির্দেশক।

৪৬. অতঃপর আমি একে আমার দিকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে আনি।

৪৭. তিনিই তো তোমাদের জন্যে রাত্রিকে করেছেন আবরণ, নিদ্রাকে বিশ্রাম এবং দিনকে করেছেন বাইরে গমনের জন্যে।

৪৮. আর তিনিই তাঁর রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদস্বরূপ বায়ু পাঠিয়েছেন এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করেছি, 

৪৯. তদ্দ্বারা মৃত ভূভাগকে সঞ্জীবিত করার জন্যে এবং আমার সৃষ্ট জীবজন্তু ও অনেক মানুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে।

৫০. আর আমি এটা তাদের মধ্যে বিতরণ করি যাতে তারা স্মরণ করে; কিন্তু অধিকাংশ লোক শুধু অকৃতজ্ঞতাই প্রকাশ করে।

৫১. আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদের জন্য একজন সতর্ককারী প্রেরণ করতে পারতাম।

৫২. কাজেই তুমি কাফিরদের আনুগত্য করো না: আর কুরআনের সাহায্যে তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কর- কঠোর সংগ্রাম।

৫৩. তিনিই দুই সমুদ্রকে মিলিতভাবে প্রবাহিত করেছেন; একটি মিষ্টি, সুপেয় এবং অপরটি লবণাক্ত, খর; উভয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছেন এক অন্তরায়, এক অনতিক্রম্য ব্যবধান।

৫৪. এবং তিনিই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পানি হতে; অতঃপর তিনি তার বংশগত ও বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছেন। তোমার রাব্ব সর্বশক্তিমান।

৫৫. তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত করে যা তাদের উপকার করতে পারে না, অপকারও করতে পারে না; কাফিরতো স্বীয় রবের বিরোধী।

৫৬. আমি তো তোমাকে শুধু সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী রূপেই প্রেরণ করেছি।

৫৭. বল: আমি তোমাদের নিকট এ জন্য কোন প্রতিদান চাই না, তবে যে ইচ্ছা করে সে তার রবের পথ অবলম্বন করুক।

৫৮. তুমি নির্ভর কর তাঁর উপর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। তিনি তাঁর বান্দাদের পাপ সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত।

৫৯. তিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী এবং ওগুলির মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেন; অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন; তিনিই রাহমান। তাঁর সম্বন্ধে যে অবগত আছে তাকে জিজ্ঞেস করে দেখ।

৬০. তাদেরকে যখন বলা হয়, দয়াময়কে সেজদা কর, তখন তারা বলে, দয়াময় আবার কে? তুমি কাউকে সেজদা করার আদেশ করলেই কি আমরা সেজদা করব? এতে তাদের পলায়নপরতাই বৃদ্ধি পায়।

৬১. কত মহান তিনি, যিনি নভোমন্ডলে সৃষ্টি করেছেন তারকারাজি এবং তাতে স্থাপন করেছেন প্রদীপ ও জ্যোতির্ময় চাঁদ!

৬২. এবং যারা উপদেশ গ্রহণ করতে ও কৃতজ্ঞ হতে চায়, তাদের জন্য তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত এবং দিনকে পরস্পরের অনুগামী রূপে।

৬৩. আর রহমানের বান্দা তারাই যারা যমীনে নম্রভাবে চলাফেরা করে আর অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে সম্বোধন করলে তারা বলে- ‘শান্তি’, (আমরা বিতর্কে লিপ্ত হতে চাই না)।

৬৪. আর তারা রাত কাটায় তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সেজদায় অবনত ও দণ্ডায়মান অবস্থায়।

৬৫. আর তারা বলে: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি দূর কর, তার শাস্তি তো ভয়াবহ বিপদ।’

৬৬. নিশ্চয়ই আশ্রয়স্থল ও বসতি হিসাবে ওটা কত নিকৃষ্ট!

৬৭. আর যখন তারা ব্যয় করে, তখন তারা অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়।

৭১. আর যে ব্যক্তি তাওবাহ করে আর সৎকাজ করে, সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে- পূর্ণ প্রত্যাবর্তন।

৭২. আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং যখন তারা অসার ক্রিয়া-কলাপের সম্মুখীন হয় তখন স্বীয় মর্যাদার সাথে তা পরিহার করে চলে

৭৩. আর তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে যারা তার প্রতি বধির ও অন্ধের ন্যায় আচরণ করে না (শুনেও শোনে না, দেখেও দেখে না- এমন করে না)।

৭৪. আর যারা প্রার্থনা করে: হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান কর যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দাও।

৭৫. তাদেরকে প্রতিদান স্বরূপ দেয়া হবে জান্নাত, যেহেতু তারা ধৈর্যশীল। তাদেরকে সেখানে অভ্যর্থনা করা হবে অভিবাদন ও সালাম সহকারে।

৭৬. সেখানে তারা চিরকাল বসবাস করবে, কত উত্তম সেখানে অবস্থান ও আবাসস্থল!

৭৭. বলুন, আমার পালনকর্তা পরওয়া করেন না যদি তোমরা তাঁকে না ডাক। তোমরা মিথ্যা বলেছ। অতএব সত্বর নেমে আসবে অনিবার্য শাস্তি।

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৬ তম প্রকাশ: সূরা ত্বোয়া-হা (২০) (ত্বোয়া-হা), ১৩০, ১৩১ বাদে ৫৩ থেকে ১৩৫ আয়াত:

৫৩. যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন বিছানা এবং তাতে করে দিয়েছেন তোমাদের চলার পথ, তিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন। আমি উহা দ্বারা বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি।

৫৪. তোমরা আহার কর ও তোমাদের গবাদিপশু চরাও; অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিবেক সম্পন্নদের জন্য।

৫৫. আমি মাটি হতে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি; তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিব এবং তা হতে পুনর্বার বের করব।

৫৬. আমি তো তাকে আমার সমস্ত নিদর্শন দেখিয়েছিলাম; কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করেছে ও অমান্য করেছে।

৫৭. সে বলল: হে মূসা! তুমি কি আমাদের নিকট এসেছ তোমার যাদু দ্বারা আমাদেরকে আমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করে দেয়ার জন্য?

৫৮. আমরাও অবশ্যই তোমার নিকট উপস্থিত করব এর অনুরূপ যাদু। সুতরাং আমাদের ও তোমার মাঝে নির্ধারণ কর এক নির্দিষ্ট সময় এবং এক মধ্যবর্তী স্থান, যার ব্যতিক্রম আমরাও করব না এবং তুমিও করবে না।

৫৯. মূসা বলল: তোমাদের নির্ধারিত সময় উৎসবের দিন এবং সেদিন পূর্বাহ্নে জনগণকে সমবেত করা হোক।

৬০. তখন ফেরাউন উঠে গেল, অতঃপর তার কলা-কৌশল একত্র করল, তারপর ফিরে এল।

৬১. মূসা তাদেরকে বলল, ‘হায় তোমাদের দুর্ভাগ্য! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যে আরোপ করো না, করলে তিনি তোমাদেরকে ভয়ানক শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করে দেবেন। যে মিথ্যে আরোপ করে, সে-ই ব্যর্থ হয়।’

৬২. তারা নিজেদের মধ্যে নিজেদের কাজ সম্বন্ধে বিতর্ক করল এবং তারা গোপনে পরামর্শ করল।

৬৩. তারা বলল: এই দু’জন অবশ্যই জাদুকর, তারা চায় তাদের জাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ হতে বহিষ্কার করতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থার অস্তিত্ব বিনাশ করতে।

৬৪. অতএব তোমরা তোমাদের জাদু ক্রিয়া সংহত কর, অতঃপর সারিবদ্ধ হয়ে উপস্থিত হও এবং যে আজ জয়ী হবে সেই সফল হবে।

৬৫. তারা বলল: হে মূসা! হয় তুমি নিক্ষেপ কর অথবা প্রথমে আমরাই নিক্ষেপ করি।

৬৬. মূসা বলল: বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। তাদের যাদুর প্রভাবে অকস্মাৎ মূসার মনে হল যে, তাদের দড়ি ও লাঠিগুলি ছুটাছুটি করছে।

৬৭. মূসা তার অন্তরে কিছু ভীতি অনুভব করল।

৬৮. আমি বললাম, ‘ভয় করো না, তুমিই বিজয়ী হবে।’

৬৯. তোমার ডান হাতে যা আছে, তা নিক্ষেপ কর, তারা যা করেছে এটা তা সব গিলে ফেলবে, তারা যা করেছে তাতো কেবল জাদুকরের কলা-কৌশল। জাদুকর যে রূপ ধরেই আসুক না কেন, সফল হবে না।’

৭০. (মূসার স্পষ্ট নিদর্শন যখন দেখল) তখন জাদুকরেরা (আল্লাহর প্রতি) সাজদায় লুটিয়ে পড়ল। তারা বলল, ‘আমরা হারূন ও মূসার প্রতিপালকের উপর ঈমান আনলাম।’

৭১. ফেরাউন বলল, ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রধান যে তোমাদেরকে জাদু শিখিয়েছে। কাজেই আমি অবশ্য অবশ্যই তোমাদের হাত আর পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব আর খেজুর গাছের শাখায় তোমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই শূলে চড়াব আর তখন তোমরা অবশ্য অবশ্যই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার ‘আযাব বেশি শক্ত আর বেশি স্থায়ী।

৭২. তারা বললঃ আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ওপর তোমাকে কিছুতেই আমরা প্রাধান্য দেব না, সুতরাং তুমি কর যা তুমি করতে চাও, তুমি তো শুধু এই পার্থিব জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার।

৭৩. আমরা আমাদের প্রতিপালকের উপর ঈমান এনেছি যাতে তিনি আমাদের অপরাধ ক্ষমা করেন, আর যে জাদু করতে তুমি আমাদেরকে বাধ্য করেছ তাও (ক্ষমা করেন), আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ ও স্থায়ী।

৭৪. যে কেউ তার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী অবস্থায় উপস্থিত হবে তার জন্যে আছে জাহান্নাম, সেখানে সে না মরবে, আর না বাঁচবে।

৭৫. আর যারা তাঁর নিকট উপস্থিত হবে ঈমানদার অবস্থায়, সৎ কাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা

৭৬. বসবাসের এমন পুষ্পোদ্যান রয়েছে যার তলদেশে দিয়ে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এটা তাদেরই পুরস্কার, যারা পবিত্র হয়।

৭৭. আমি অবশ্যই মূসার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছিলাম এই মর্মে, আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রজনীযোগে বহির্গত হও এবং তাদের জন্য সমুদ্রের মধ্য দিয়ে এক শুস্ক পথ নির্মাণ কর; পিছন হতে এসে তোমাকে ধরে ফেলা হবে এই আশংকা কর না এবং ভয়ও কর না।

৭৮. অতঃপর ফেরাউন তার সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের পিছু নিল, অতঃপর সমুদ্র তাদের উপর চড়াও হল আর তাদেরকে ডুবিয়ে দিল।

৭৯. ফেরাউন তার জাতিকে বিপথগামী করেছিল এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখায়নি।

৮০. হে বনী-ইসরাঈল! আমি তোমাদেরকে তোমাদের শক্রুর কবল থেকে উদ্ধার করেছি, তুর পাহাড়ের দক্ষিণ পার্শ্বে তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দান করেছি এবং তোমাদের কাছে ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ প্রেরণ করেছি।

৮১. তোমাদেরকে আমি যা দান করেছিলাম তা হতে ভাল ভাল বস্তু আহার কর এবং এই বিষয়ে সীমা লংঘন কর না, করলে তোমাদের উপর আবার ক্রোধ অবধারিত এবং যার উপর আমার ক্রোধ অবধারিত সে তো ধ্বংস হয়ে যায়।

৮২. আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।

৮৩. হে মূসা! তোমার সম্প্রদায়কে পশ্চাতে ফেলে তোমাকে জলদি করতে বাধ্য করল কিসে?

৮৪. মূসা বলল, ‘এই তো তারা আমার পদচিহ্ন ধরে আসছে, আমি আপনার কাছে জলদি এলাম, হে আমার প্রতিপালক! যাতে আপনি সন্তুষ্ট হন।’

৮৫. তিনি বললেন: আমি তোমার সম্প্রদায়কে পরীক্ষায় ফেলেছি তোমার চলে আসার পর এবং সামেরী তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে।

৮৬. তখন মূসা রাগে-দুঃখে তার জাতির কাছে ফিরে গেল। সে বলল, ‘হে আমার জাতি! তোমাদের প্রতিপালক কি তোমাদের সঙ্গে ওয়াদা করেননি, এক উত্তম ওয়াদা। ওয়াদা (পূরণের সময় আসতে) কি তোমাদের নিকট সুদীর্ঘ মনে হয়েছে, নাকি তোমরা চেয়েছ যে, তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের শাস্তি নেমে আসুক, যে কারণে তোমরা আমার কাছে দেয়া তোমাদের ওয়াদা ভঙ্গ করলে?’

৮৭. তারা বলল: আমরা তোমার প্রতি প্রদত্ত অঙ্গীকার স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি; তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামেরীও নিক্ষেপ করে।

৮৮. তখন সে (আগুন থেকে) গো-বৎসের প্রতিকৃতি বের করল, মনে হত সেটা যেন হাম্বা রব করছে। অতঃপর তারা বলল, ‘এটাই তোমাদের উপাস্য আর মূসারও উপাস্য, কিন্তু মূসা ভুলে গেছে।’

৮৯. তারা কি দেখে না যে, এটা তাদের কোন কথার উত্তর দেয় না এবং তারে কোনো ক্ষতি ও উপকার করার ক্ষমতাও রাখে না?

৯০. হারূন তাদেরকে আগেই বলেছিল, ‘হে আমার জাতির লোকেরা! এর (অর্থাৎ গো-বৎসের) দ্বারা তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে, তোমাদের প্রতিপালক হলেন দয়াময় (আল্লাহ), কাজেই তোমরা আমার অনুসরণ কর আর আমার কথা মান্য কর।

৯১. তারা বলল, ‘আমাদের কাছে মূসা ফিরে না আসা পর্যন্ত আমরা সদাসর্বদা এর সাথেই সংযুক্ত হয়ে থাকব।

৯২. মূসা বললঃ হে হারূণ! তুমি যখন দেখলে যে, তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে তখন কিসে তোমাকে নিবৃত্ত করল?

৯৩. যে তুমি আমার অনুসরণ করলে না? তাহলে তুমিও কি আমার আদেশ অমান্য করেছ?

৯৪. হারূন বলল, ‘হে আমার মায়ের পুত্র! আমার দাড়ি ধরে টেন না, আর আমার (মাথার) চুল ধরেও টেন না, আমি ভয় করেছিলাম তুমি বলবে যে, বানী ইসরাঈলের মাঝে তুমি বিভেদ সৃষ্টি করেছ আর তুমি আমার কথা পালন করনি।’

৯৫. মূসা বলল, ‘এখন তোমার ব্যাপারটা কী, হে সামিরী?’

৯৬. সে বলল, ‘আমি দেখেছি যা ওরা দেখেনি, অতঃপর আমি প্রেরিত ব্যক্তির (অর্থাৎ জিবরীলের) পদচিহ্ন থেকে এক মুঠো মাটি নিলাম, অতঃপর আমি তা নিক্ষেপ করলাম (বাছুরের প্রতিকৃতিতে); আমার মন আমাকে এ মন্ত্রণাই দিল।’

৯৭. মূসা বলল, ‘তুই দূর হ! এ জীবনে তোর জন্য এ শাস্তিই থাকল যে, তুই বলবি- আমাকে স্পর্শ করো না, আর তোর জন্য একটা নির্দিষ্ট ওয়াদা আছে যার খেলাফ হবে না। আর তোর ইলাহর পানে চেয়ে দেখ যাকে তুই ঘিরে থাকতি, আমি তাকে অবশ্য অবশ্যই জ্বলন্ত আগুনে জ্বালিয়ে দেব, আর তাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবশ্য অবশ্যই সাগরে নিক্ষেপ করব।’

৯৮. তোমাদের উপাস্য তো কেবল আল্লাহ্‌, তিনিই তো, তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। তিনি সবকিছু বেষ্টন করে আছেন জ্ঞানের দ্বারা।

৯৯. পূর্বে যা ঘটেছে উহার সংবাদ আমি এভাবে তোমার নিকট বিবৃত করি এবং আমি আমার নিকট হতে তোমাকে দান করেছি উপদেশ।

১০০. যে এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কেয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে।

১০১. তারা এ অবস্থাতেই স্থায়ীভাবে থাকবে, কিয়ামাতের দিন এ বোঝা তাদের জন্য কতই না মন্দ হবে!

১০২. যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেই দিন আমি অপরাধীদেরকে দৃষ্টিহীন অবস্থায় সমবেত করব।

১০৩. তারা চুপিসারে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করবে যে, (দুনিয়াতে) দশ দিনের বেশি তোমরা অবস্থান করনি।

১০৪. তারা কি বলবে তা আমি ভাল জানি। তাদের মধ্যে যে অপেক্ষাকৃত সৎ পথে ছিল সে বলবে: তোমরা এক দিনের বেশি অবস্থান করনি।

১০৫. তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে, তুমি বল: আমার প্রতিপালক ওগুলিকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন।

১০৬. অতঃপর তিনি তাকে (অর্থাৎ ভূমিকে) মসৃণ সমতলভূমি করে ছাড়বেন।

১০৭. তাতে তুমি দেখবে না কোনো বক্রতা ও উচ্চতা।

১০৮. সেদিন তারা আহবানকারীর অনুসরণ করবে, এ ব্যাপারে এদিক ওদিক করতে পারবে না; দয়াময়ের সামনে সব শব্দ স্তদ্ধ হয়ে যাবে; সুতরাং মৃদু পদধ্বনি ছাড়া তুমি কিছুই শুনতে পাবে না।

১০৯. দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন, সে ব্যতীত কারও সুপারিশ সেদিন কোনো কাজে আসবে না।

১১০. তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু রয়েছে তা তিনি অবগত, কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারে না।

১১১. সেই চিরঞ্জীব চিরস্থায়ীর সামনে সব মুখমণ্ডল অবনমিত হবে এবং সে ব্যর্থ হবে যে জুলুমের বোঝা বহন করবে।

১১২. এবং যে সৎ কাজ করে ঈমানদার হয়, তার আশংকা নেই অবিচারের এবং ক্ষতিরও।

১১৩. এ রূপেই আমি কুরআনকে অবতীর্ণ করেছি আরবি ভাষায় এবং তাতে বিশদভাবে বিবৃত করেছি সতর্কবাণী, যাতে তারা ভয় করে অথবা এটা হয় তাদের জন্য উপদেশ।

১১৪. আল্লাহ সর্বোচ্চ, প্রকৃত অধিপতি, তোমার প্রতি (আল্লাহর) আয়াত সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তুমি কুরআন পাঠের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করো না। আর বল, ‘হে আমার প্রতিপালক! জ্ঞানে আমায় সমৃদ্ধি দান করুন।’

১১৫. আমি তো ইতোপূর্বে আদমের প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম, কিন্তু সে ভুলে গিয়েছিল; আমি তাকে সংকল্পে দৃঢ় পাইনি।

১১৬. স্মরণ কর, যখন ফেরেশতাগণকে বলেছিলাম, ‘তোমরা আদমকে সেজদা কর,’ তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করল, সে অমান্য করল।

১১৭. অতঃপর আমি বললাম: হে আদম! এ তোমার ও তোমার স্ত্রীর শত্রু; সুতরাং সে যেন কিছুতেই তোমাদেরকে জান্নাত হতে বের করে না দেয়, দিলে তোমরা দুর্দশায় পতিত হবে।

১১৮. তোমার জন্য এটাই রইল যে, তুমি জান্নাতে ক্ষুধার্ত হবে না এবং নগ্নও হবে না।

১১৯. ‘আর সেখানে তুমি পিপাসার্তও হবে না এবং রৌদ্রদগ্ধও হবে না’।

১২০. অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রনা দিল, বলল: হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা?

১২১. অতঃপর তারা উভয়েই এর ফল ভক্ষণ করল, তখন তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান খুলে গেল এবং তারা জান্নাতের বৃক্ষ-পত্র দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে শুরু করল। আদম তার পালনকর্তার অবাধ্যতা করল, ফলে সে পথভ্রষ্ট হয়ে গেল।

১২২. এরপর তার পালনকর্তা তাকে মনোনীত করলেন, তার প্রতি ক্ষমা পরায়ণ হলেন এবং তাকে পথ নির্দেশ করলেন।

১২৩. তিনি বললেন: তোমরা উভয়েই এখান থেকে এক সঙ্গে নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। এরপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে হেদায়েত আসে, তখন যে আমার বর্ণিত পথ অনুসরণ করবে, সে পথভ্রষ্ঠ হবে না এবং কষ্টে পতিত হবে না।

১২৪. আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ আর তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ অবস্থায়।’

১২৫. সে বলবে: হে আমার পালনকর্তা আমাকে কেন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করলেন? আমি তো চক্ষুষ্মান ছিলাম।

১২৬. আল্লাহ বলবেন: এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।

১২৭. এমনিভাবে আমি তাকে প্রতিফল দেব, যে সীমালঙ্ঘন করে এবং পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন না করে। তার পরকালের শাস্তি কঠোরতর এবং অনেক স্থায়ী।

১২৮. আমি এদের পূর্বে অনেক সম্প্রদায়কে ধবংস করেছি। যাদের বাসভুমিতে এরা বিচরণ করে, এটা কি এদেরকে সৎপথ প্রদর্শন করল না? নিশ্চয় এতে বুদ্ধিমানদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।

১২৯. তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে পূর্ব সিদ্ধান্ত এবং একটি কাল নির্দিষ্ট না থাকলে শাস্তি অবশ্যম্ভাবী হয়ে যেত।

১৩২. তোমার পবিরার-পরিজনকে নামাযের নির্দেশ দাও আর তাতে অবিচল থাক। তোমার কাছে আমি রিযক চাই না, আমিই তোমাকে রিযক দিয়ে থাকি, উত্তম পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য নির্দিষ্ট।

১৩৩. আর তারা বলে, সে আমাদের কাছে তার পালনকর্তার কাছ থেকে কোন নিদর্শন আনয়ন করে না কেন? তাদের কাছে কি প্রমাণ আসেনি, যা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে আছে?

১৩৪. যদি আমি এদেরকে ইতিপূর্বে কোন শাস্তি দ্বারা ধ্বংস করতাম, তবে এরা বলত: হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি আমাদের কাছে একজন রসূল প্রেরণ করলেন না কেন? তাহলে তো আমরা অপমানিত ও হেয় হওয়ার পূর্বেই আপনার নিদর্শনসমূহ মেনে চলতাম।

১৩৫. বলঃ প্রত্যেকেই প্রতীক্ষা করছে, সুতরাং তোমরাও প্রতীক্ষা কর, অতঃপর তোমরা জানতে পারবে কারা রয়েছে সরল পথে এবং কারা সৎ পথ প্রাপ্ত হয়েছে।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: কতদুর সহ্য করা যায় বলেন, আবু-জেহেলের সহ্যক্ষমতাও চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যেতে শুরু করে; তিনি মুহাম্মদের নবুয়্যতের পরীক্ষা নেবার পরিকল্পনা করেন, যদি মুহাম্মদ পাশ না করতে পারে; তবে তার সকল অনুসারী সহ পুরো হাশিম গোত্রকে তিনি এমন এক অবস্থায় নিয়ে যাবেন; তাদের অবস্থা “না ঘরকা না ঘাটকা” করে ফেলবেন!

আবু জেহেল সফল হয়েছিলেন; পুরো ৬ টি বছর মুহাম্মদের চোখের ঘুম হারাম করে ফেলেছিলেন তিনি; আর এই একটি কারণেই মুহাম্মদ আবু-জেহেল’কে মুসলিমদের ফেরাউন বলে মনে করতেন!

নতুন বছরের নতুন পর্ব তাই আবু-জেহেলের নামে বরাদ্দ রইল; অপেক্ষায় থাকুন তার ক্ষমতা দেখবার জন্য!

(চলবে)

1 টি মন্তব্য:

  1. চরম মূর্খ আপনি।বেশি ভাল রেজাল্ট করতে পারেন নি ছাত্রজীবনে বুঝা যায়।

    উত্তরমুছুন