লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯
আমার প্রথম বান্ধবী ছিলো চারুকলার মেয়ে, ছোটবেলা থেকেই তার আঁকার হাত ভালো; শিশুকালে তার প্রথম স্পষ্ট উচ্চারিত শব্দ ছিলো ‘ছবি’! যদিও সুন্দরের ব্যাখ্যা স্থান-কাল-সময় অনুসারে পাল্টায়, তবে আজও আমার চোখে সে সকল গুনের অধিকারী সুন্দর নারী; চেহারার চেয়ে তার ছবি আঁকার প্রেমে বেশি পড়েছিলাম! আমি নিজে ডাইনোসর মাপের চিত্রশিল্পী, গরু আঁকলে তার নিচে ‘এটা কিন্তু গরু’ না লিখেলে তা চেনা আমার জন্যই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়! আর সে দশ মিনিটে আমাকেই কাগজে তুলে আনতো!
তাকে সাথে নিয়ে মাঝেমধ্যেই চারুকলার বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসার সুযোগ হতো, আর সব জায়গাতেই ধর্ম প্রসঙ্গ তুলে আনা ছিলো আমার স্বভাব। কুকুরের লেজ কি সোজা হয়, বলেন!
আড্ডায় প্রায় প্রায়ই বলতাম,
‘আমি নাস্তিক হবার কারণে দোযখে যামু, আর তোরা যাবি চারুকলায় পড়ার জন্য!’
বেশিরভাগ সময় হাসি ঠাট্টায় উড়িয়ে দিতো সবাই, তবে একদিনের আড্ডায় এক বিশ্বাসী চারুশিল্পী প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি নাস্তিক - অবশ্যই দোযখে যাইবেন, আমরা তো সবাই আপনার মত নাস্তিক না; চারুকলা’য় পড়লেই দোযখে যামু বলেন কেন?’ আমি পেয়ে গেলাম গাব্বর সিং-এর ডায়ালগ: ‘আব তেরা কেয়া হোগা রে, কালিয়া!’; ইসলামী জ্ঞান দেবার সুযোগ আর ছাড়া যায়, বলেন?
নবী মুহাম্মদ বলেছেন:
‘নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবসে আল্লাহর বিচারে কঠোর শাস্তি প্রাপ্তরা হবে ছবি নির্মাতাগণ’। [1]
নবী মুহাম্মদ আল্লার পক্ষ থেকে বলেছেন:
‘যারা আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করতে তৎপর হয় তাদের থেকে বড় জালেম আর কে আছে? এতই যদি পারে তো তারা একটা শস্য দানা সৃষ্টি করুক কিংবা অণু সৃষ্টি করুক’। [2]
নবী মুহাম্মদ আরও বলেছেন:
‘প্রত্যেক ছবি নির্মাতা জাহান্নামে যাবে। সে যত ছবি অঙ্কন করেছে তার প্রত্যেকটির বিনিময়ে তার জন্য একটি করে প্রাণী তৈরী করা হবে। সে জাহান্নামে (তাকে) শাস্তি দেবে।’ [3]
নবী মুহাম্মদ আরও স্মরণ করিয়েছেন:
‘যে বাড়ীতে কুকুর ও ছবি থাকে সেই বাড়ীতে ফেরেশতা প্রবেশ করে না’। [4]
ইসলাম অনুসারে, মানুষ, পশুসহ যে কোনো প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। তা ছাপাচিত্র, খোদাইকৃত, অঙ্কিত, ভাস্কর্য কিংবা ছাঁচে ঢালাই করা - যা-ই হোক না কেন!
যদি আপনি বলেন, ‘আমি তো এসবের পূজা করি না বা সেজদা করি না’, কিন্তু শরীয়তের বিধান আপনার এই খোঁড়া যুক্তি শুনবে না। ইসলাম চারুকলাকে সবচেয়ে বড় অপরাধের মধ্যে গণ্য করে!
সুতরাং যদি আপনি চারুকলাপ্রেমী হন, আপনার আস্তিকতা-নামাজ-রোজা-ভক্তি লাভদায়ক হবে না; তাই আমি ডাকু গাব্বর সিং-এর ডায়ালগ নকল করে বলতেই পারি, ‘তেরা কেয়া হোগা রে, চারুকলা!’
তথ্যসূত্র:
[1]. বুখারী হাদীস, মুসলিম হাদীস; মিশকাত হাদীস/৪৪২৯
[2]. বুখারী হাদীস, মুসলিম হাদীস; মিশকাত হাদীস/৪৪৯৬
[3]. বুখারী হাদীস, মুসলিম হাদীস; মিশকাত হাদীস/৪৪৯৮
[4]. বুখারী হাদীস, মুসলিম হাদীস; মিশকাত হাদীস/৪৪৮৯
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন