লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কী কারণে খায়বারের নিরপরাধ জনপদবাসীদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেছিলেন; এই আক্রমণে তিনি তাঁদের ওপর কী ধরনের অমানুষিক নৃশংসতা প্রদর্শন করেছিলেন; তাঁদেরকে পরাস্ত করার পর তিনি কীভাবে তাঁদের সমস্ত সম্পদ এবং মা, বোন, স্ত্রী, কন্যা ও শিশুদের বন্দী করে দাস ও যৌনদাসীরূপে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন; কী শর্তে তিনি তাঁদের পুরুষদের হত্যা না করে এক বস্ত্রে বিতাড়িত করার অনুমতি প্রদান করেছিলেন ও পরবর্তীতে তিনি কী শর্তে তাঁদেরকে তাঁদেরই জমিগুলোয় শ্রমিক হিসাবে কাজ করার অনুমতি দিয়েছিলেন; মুহাম্মদের মৃত্যুর পর উমর ইবনে খাত্তাব তাঁদের কী হাল করেছিলেন; ইত্যাদি বিষয়ের বিশদ আলোচনা গত তেইশটি পর্বে করা হয়েছে।
খায়বার বিজয় সম্পন্ন করার পর মুহাম্মদ তাঁর পরবর্তী আগ্রাসন চালান সেখান থেকে ৮ মাইল দূরবর্তী (মদিনা থেকে ৮৭ মাইল) ফাদাক নামের এক সমৃদ্ধ মরূদ্যানের (Oasis) লোকদের ওপর। মদিনায় স্বেচ্ছানির্বাসনের (সেপ্টেম্বর, ৬২২ সাল) পর থেকে শুরু করে খায়বার বিজয় সম্পন্ন করা পর্যন্ত (জুন-জুলাই, ৬২৮ সাল) গত ছয়টি বছরের মদিনা জীবনে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা বিস্তীর্ণ অঞ্চলের অবিশ্বাসী জনপদের ওপর যে আগ্রাসী হামলাগুলো চালিয়েছিলেন, তার প্রায় সবগুলোই ছিল সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে। মুহাম্মদের এই ফাদাক আগ্রাসন ছিল তার ব্যতিক্রম। কী প্রক্রিয়ায় মুহাম্মদ ফাদাক দখল করেছিলেন, তার বিস্তারিত বর্ণনা আদি উৎসের বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকরা তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে লিখে রেখেছেন।
মুহাম্মদ ইবনে ইশাকের (৭০৪-৭৬৮ সাল) অব্যাহত বর্ণনা: [1] [2]
'যখন আল্লাহর নবী খায়বার বিজয় সম্পন্ন করেন, আল্লাহর নবী খায়বারের লোকদের কী হাল করেছেন, তা যখন ফাদাকের জনগণ শুনতে পায়, আল্লাহ তাদের মনে ভীতির সঞ্চার করে। তারা তাঁর কাছে এই শর্তে শান্তি প্রস্তাব পাঠায় যে, তারা তাদের উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তাঁকে দিয়ে দেবে। তাঁর খায়বার অবস্থানকালে (তাবারী: 'কিংবা পথিমধ্যে') কিংবা মদিনা প্রত্যাবর্তনের পর তাদের বার্তাবাহক তাঁর কাছে আসে ও তিনি তাদের শর্তগুলো মেনে নেন। এইভাবে ফাদাক পরিণত হয় তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তিরূপে, কারণ তা কোনো ঘোড়া কিংবা উটের পিঠে চড়ে আক্রমণের মাধ্যমে অর্জিত হয়নি [পর্ব-২৮]।'
‘কী ঘটেছে, তা যখন ফাদাকের জনগণ শুনতে পায়, তারা আল্লাহর নবীর কাছে যে আবেদন করে, তা হলো: তারা তাঁর কাছে তাদের সম্পত্তি পরিত্যাগ করে চলে যাবে, তিনি যেন তাদেরকে প্রাণে না মেরে বিতাড়িত হবার সুযোগ দান করেন; তিনি তাতে রাজি হন। এ ব্যাপারে যে ব্যক্তিটি মধ্যস্থতা করে, সে হলো বানু হারিথা গোত্রের মুহায়িসা বিন মাসুদ (Muhayyisa b. Mas'ud) নামের এক ভাই।'
আল-ওয়াকিদির (৭৪৮-৮২২ খ্রিষ্টাব্দ) বিস্তারিত বর্ণনা: [3]
‘তারা বলেছেন: যখন আল্লাহর নবী খায়বার বিজয় করেন, তিনি ফাদাক-এর কাছাকাছি গমন করেন ও মুহায়িসা বিন মাসুদ-কে ফাদাকের জনগণের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার জন্য পাঠান, তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করেন এই বলে যে, যেমন করে তারা খায়বারের জনগণের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, তেমন করে তারা তাদের এলাকায় আগমন করবে ও তাদের ওপর আক্রমণ চালাবে।
মুহায়িসা বলেছে: আমি তাদের কাছে যাই ও তাদের সাথে দু'দিন অবস্থান করি, তারা চেষ্টা করে সুযোগের অপেক্ষার, বলে, "নাটায় আছে আমির, ইয়াসির, উসায়ের, আল-হারিথ ও ইহুদি নেতা মারহাব; আমরা মনে করি না যে, মুহাম্মদ তাদের কাছে ঘেঁষতে পারবে। প্রকৃতপক্ষেই, সেখানে দশ হাজার সৈন্য আছে।" মুহায়িসা বলে: যখন আমি তাদের শয়তানী দেখতে পাই, আমি ফিরে আসার মনস্থ করি, কিন্তু তারা বলে, "তোমার সাথে আমরা আমাদের লোক পাঠাবো, যারা আমাদের জন্য শান্তি প্রস্তাব পেশ করবে", কারণ তারা মনে করেছিলো যে, ইহুদিরা মুসলমানদের আক্রমণ ঠেকাতে পারবে। তারা এই রকম করতেই থাকে যতক্ষণে না খবর আসে যে নাইম দুর্গের ইহুদি ও তাদের সাহায্যকারী লোকদের হত্যা করা হয়েছে [পর্ব-১৩৪]। ঐ বিষয়টি তাদের শক্তিকে দুর্বল করে ও তারা মুহায়িসা-কে বলে, "আমরা তোমাকে যা বলেছি, তা তুমি গোপন রেখো, তাহলে এই অলংকারগুলো হবে তোমার!" তারা তাদের মহিলাদের অনেক অলংকার-সামগ্রী সংগ্রহ করেছিলো। মুহায়িসা বলে, "বরং, তোমাদের কাছ থেকে যা শুনলাম, তা আমি আল্লাহর নবীকে জ্ঞাত করাবো," অতঃপর তারা যা বলেছিল, তা সে আল্লাহর নবীকে জ্ঞাত করায়।
মুহায়িসা বলেছে: কিছু ইহুদিকে সঙ্গে নিয়ে তাদের নেতাদের মধ্যে থেকে নান বিন ইয়াওসা নামের এক নেতা আমার সাথে আসে ও আল্লাহর নবীর সাথে যে চুক্তিটি করে, তা হলো,
[১] তাঁরা জীবিত থাকতে পারে,
[২] তিনি তাদেরকে বিতাড়িত করবেন, ও
[৩] তারা তাদের যা কিছু সম্পদ তার সবকিছু তাঁর কাছে পরিত্যাগ করে চলে যাবে; এবং তিনি তা-ই করেন।
বলা হয়: তারা আল্লাহর নবীকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলো, তা হলো এই যে, তারা তাদের আবাসভূমি ছেড়ে চলে যাবে, কিন্তু আল্লাহর নবী তাদের সম্পদগুলো থেকে কোনো কিছু নেবেন না। অতঃপর যখন ফসল কাটা ও গোলাজাত করার সময় হবে, তারা তা কাটার জন্য ফিরে আসবে। আল্লাহর নবী তা প্রত্যাখ্যান করেন, মুহায়িসা তাদেরকে বলে, "তোমাদের না আছে শক্তি, না আছে জনবল ও না আছে দুর্গ। যদি আল্লাহর নবী একশ লোক পাঠান, তারা তোমাদের তাড়িয়ে তাঁর কাছে নিয়ে যাবে।"
তাদের মধ্যে যে চুক্তিটি সম্পন্ন হয় তা হলো, অর্ধেক ভূসম্পত্তি ও জমিগুলো থাকবে তাদের জন্য, আর অর্ধেক হবে আল্লাহর নবীর জন্য। আল্লাহর নবী তাতে সম্মত হন। এই তথ্যটিকেই নিশ্চিত করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তদনুসারেই আল্লাহর নবী তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেন, তিনি তাদের আক্রমণ করেননি।'
যখন উমর ইবনে খাত্তাবের খেলাফতের শাসনকাল, তিনি খায়বারের ইহুদিদের বিতাড়িত করেন [পর্ব-১৫০]। উমর তাদের কাছে ঐ লোকদের পাঠান, যারা তাদের জন্য তাদের জমি ও ফসলাদির মূল্যায়ন করতেন। তিনি আবু আল-হেইথাম বিন আল-তেয়িহান, ফারওয়া বিন আমর বিন হেইয়ান বিন সাকহার ও যায়েদ বিন থাবিত-কে সেখানে পাঠান; তাদের জন্য তারা সেখানের উৎপন্ন খেজুর ও জমিগুলোর মূল্য নির্ধারণ করেন। উমর ইবনে খাত্তাব তা হস্তগত করেন ও তাদেরকে উৎপন্ন খেজুর ও জমির অর্ধেক মূল্য পরিশোধ করেন। যার পরিমাণ দাঁড়ায় পঞ্চাশ হাজার দেরহাম কিংবা তার ও বেশি।সেটি ছিল ঐ পরিমাণ অর্থ, যা ইরাক থেকে তার কাছে পাঠানো হতো। উমর তাদেরকে আল-শাম অভিমুখে বিতাড়িত করেন। বলা হয় যে, তিনি আবু খেইথামা আল-হারিথি-কে সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করার জন্য পাঠিয়েছিলেন।'---
- অনুবাদ, টাইটেল, [**] ও নম্বর যোগ - লেখক।
>>> আদি উৎসে মুহাম্মদ ইবনে ইশাক ও আল-ওয়াকিদির ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা কোনোরূপ সরাসরি আক্রমণ না করেই ফাদাক দখল করে নিয়েছিলেন। আর তা তারা করেছিলেন খায়বারের মত তাঁদের ওপর ও নৃশংস আক্রমণ চালানো হবে - এই হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে! মুহাম্মদের দূত মারফত তাঁর এই হুমকির খবর শোনার পর ফাদাকের জনগণ প্রাণভয়ে এত বেশি ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন যে, তাঁরা মুহাম্মদের কাছে তাঁদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে যে আকুতি করেছিলেন তা হলো, "তাঁদেরকে যেন প্রাণে না মেরে বিতাড়িত হবার সুযোগ দেয়া হয়! বিনিময়ে তাঁরা তাঁদের সমস্ত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ মুহাম্মদের কাছে হস্তান্তর করবেন!”
যেহেতু বিনা যুদ্ধেই মুহাম্মদ 'ফাদাক' হস্তগত করেছিলেন, তাই পুরো এই সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন মুহাম্মদ একাই [বিস্তারিত: 'সন্ত্রাসী নবযাত্রা' (পর্ব-২৮)']। অতঃপর খায়বার-বাসীদের মত তাঁরাও তাঁদের নিজ জমিতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করে সেখান থেকে উৎপন্ন ফল ও ফসলের অর্ধেক দিতেন মুহাম্মদকে।
খায়বারের জনগণের ওপর এই অমানুষিক নৃশংস আক্রমণ ছাড়াও বানু কুরাইজা গণহত্যার সময় (মার্চ-এপ্রিল, ৬২৭ সাল) থেকে শুরু করে খায়বার আগ্রাসন পর্যন্ত মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীরা অবিশ্বাসী জনপদের ওপর কী পরিমাণ আগ্রাসী আক্রমণ ও অমানুষিক নৃশংসতা প্রদর্শন করেছিলেন, তার বিস্তারিত আলোচনা 'বানু কুরাইজা গণহত্যা (পর্ব: ৮৭-৯৫) এবং হুদাইবিয়া সন্ধি পূর্ববর্তী সাত মাস (পর্ব-১০৯) ও উম্মে কিরফা হত্যাকাণ্ড (পর্ব-১১০)!' পর্বে করা হয়েছে। গত চোদ্দ মাস অবধি মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের এ সকল অমানুষিক নৃশংসতার ইতিহাস ‘ফাদাক’ অধিবাসীরা নিশ্চিত রূপেই অবগত ছিলেন। এই সন্ত্রাসীরা এখন তাঁদের প্রায় দোর প্রান্তে উপস্থিত হয়েছে! তারা আক্রমণ চালিয়েছে তাঁদের অতি নিকটবর্তী অঞ্চল খায়বারের লোকদের ওপর! অমানুষিক পাশবিকতায় তারা হত্যা করেছে সেই জনপদের মানুষদের! তাঁদের স্থাবর ও অস্থাবর সমস্ত সম্পদ এবং মহিলা ও শিশুদের বন্দী করে দাস ও যৌনদাসী রূপে রূপান্তরিত করে ভাগাভাগি করে নিয়েছে নিজেদের মধ্যে! এমত পরিস্থিতিতে নিজেদের জীবন ও মা-বোন-স্ত্রী-কন্যা ও শিশুদের দাস ও যৌনদাসী রূপে রূপান্তরিত হওয়ার অভিশাপ থেকে রক্ষা করার প্রচেষ্টায় ফাদাক অধিবাসীদের কাছে যে একটি মাত্র পথ খোলা ছিল, তা হলো, মুহাম্মদের কাছে তাঁদের সর্বস্ব হস্তান্তর করে প্রাণ ভিক্ষা ও বিতাড়িত হবার সুযোগ দানের আকুতি করা! তাঁরা ঠিক সেই কাজটিই করেছিলেন।
মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের সংঘটিত এই সকল অমানবিক কর্মকাণ্ডের ইতিহাস আদি উৎসে মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণনায় অত্যন্ত স্পষ্ট ও প্রাণবন্ত। তা সত্ত্বেও তথাকথিত মডারেট (ইসলামে কোনো কোমল, মোডারেট বা উগ্রবাদী শ্রেণীবিভাগ নেই) ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবত নির্লজ্জ মিথ্যাচার ও চাতুরির মাধ্যমে সাধারণ সরলপ্রাণ অজ্ঞ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে চলেছেন। মুহাম্মদের খায়বার আগ্রাসনের বৈধতা প্রদানে তারা সচরাচর যে অজুহাতটি হাজির করেন, তা হলো, “খায়বারের ইহুদিরা মক্কার কুরাইশদের সাথে এক জোট হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে 'খন্দক যুদ্ধ' সংঘটিত করেছিল।” কিন্তু তারা ঘুণাক্ষরেও প্রকাশ করেন না যে, তাঁদের এই কর্মটির পেছনের কারণ হলো মুহাম্মদ স্বয়ং (বিস্তারিত: পর্ব-৭৭)। আর ফাদাকের অধিবাসীরা মুহাম্মদ কিংবা তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে কখনোই কোনো আক্রমণে জড়িত ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তাঁরা মুহাম্মদ ও তাঁর অনুসারীদের আগ্রাসী আক্রমণের হাত থেকে পরিত্রাণ পাননি।
মুহাম্মদের এই অনৈতিক নৃশংস আগ্রাসনের বৈধতা প্রদানে ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা কীভাবে মিথ্যার বেসাতি সাজান, তার একটি নমুনা হলো এই:
“খায়বার যুদ্ধের সময় দো-জাহানের নবীকুল শিরোমণি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও তাঁর অনুসারীরা কতই না কষ্ট সহ্য করেছেন। দিনের পর দিন তাঁরা অনাহারে ও অর্ধাহারে থেকে কাফের ষড়যন্ত্রকারী ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। এই ইহুদিরা ইসলামকে ধ্বংস করার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে সর্বদাই লিপ্ত থাকতো! তাই তো আল্লাহ পাক কুরানে ইরশাদ ফরমাইয়াছেন, "হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত (৫:৫১)।" তাইতো আল্লাহ নিজে এই জাতির প্রতি লানত বর্ষণ করেছেন, "ইহুদীরা বলে ওযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র’। এ হচ্ছে তাদের মুখের কথা। এরা পূর্ববর্তী কাফেরদের মত কথা বলে। আল্লাহ এদের ধ্বংস করুন --(৯:৩০)।" এই ইহুদিরাই হলো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু, আল্লাহ বলেছেন, "আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ওমুশরেকদের কে পাবেন (৫:৮২)--"। তাই আল্লাহর নবী এই ইহুদিদের মদিনাথেকে বিতাড়িত করেছিলেন (পর্ব: ৭৫)। তারা খায়বারে এসে ঘাঁটি গেড়েছিল ও ইসলাম-কে ধ্বংস করার চক্রান্তে লিপ্ত ছিলো। তারাকুরাইশদের সাথে জোটবদ্ধ হয়েখন্দক যুদ্ধ সংঘটিত করেছিল (পর্ব-৭৭)। আল্লাহর নবী খবর পেয়ে তাদের-কে আক্রমণ করেন ও আল্লাহর কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে ইহুদিদের লাঞ্ছিত করেন। বলেন, ‘সোবহান আল্লাহ!"'
'ইসলাম' নামক মতবাদে কী কারণে এর অনুসারীদের মগজ ধোলাই অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের তুলনায় সহজ ও তীব্র - তার আলোচনা "ইসলামী ‘প্রোপাগান্ডার’ স্বরূপ (পর্ব-৪৩)" পর্বে করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী কায়দায় হুমকি প্রদানে লুণ্ঠিত 'ফাদাক' নামের এই উর্বর মরূদ্যানটি মুহাম্মদ তাঁর কন্যা ফাতিমা ও জামাতা আলী ইবনে আবু তালিবকে দান করেন। অতঃপর, ফাতিমা ও আলী এই লুটের মালের উপার্জন থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। মুহাম্মদের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তাঁরই প্রিয় অনুসারীরা এই লুটের মালের অংশীদারিত্ব থেকে ফাতিমা ও আলীকে কীভাবে বঞ্চিত ও অপমানে অপদস্থ করেছিলেন, তার বিস্তারিত আলোচনা আগামী পর্বে করা হবে।
ইসলামী ইতিহাসের ঊষালগ্ন থেকে আজ অবধি প্রায় প্রতিটি ইসলাম বিশ্বাসী প্রকৃত ইতিহাস জেনে বা না জেনে ইতিহাসের এ সকল অমানবিক অধ্যায়গুলো যাবতীয় চতুরতার মাধ্যমে বৈধতা দিয়ে এসেছেন। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিধায় বাংলা অনুবাদের সাথে আল-ওয়াকিদির মূল ইংরেজি অনুবাদের অংশটিও সংযুক্ত করছি। ইবনে ইশাকের মূল ইংরেজি অনুবাদ ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক: তথ্যসূত্র [1]
The detailed narrative of Al-Waqidi (748-822 AD): [3]
THE AFFAIR OF FADAK
They said: When the Messenger of God approached Khaybar, he went close to Fadak and sent Muḥayyiṣa b. Mas‛ūd to invite the people of Fadak to Islam, filling them with fear that they would attack them as they had attacked the people of Khaybar, and descend on their fields. Muḥayyiṣa said: I went to them and stayed with them for two days, and they tried to wait for an opportunity, saying, “In Naṭāare ‛Āmir, Yāsir, Usayr, al-Ḥārith and the lord of the Jews, Marḥab; we do not think Muḥammad would draw near pursuing them. Indeed, in it are ten thousand soldiers.” Muḥayyiṣa said: When I saw their evil, I desired to ride back, but then they said, “We will send men with you who will take the peace for us,” for they thought that the Jews would resist the Muslims. They continued thus until news arrived of the killing of the people of the fortress of Nā‛im including the people of help. That weakened their strength and they said to Muḥayyiṣa, “Hide about us what we say to you and you shall have this jewelry!” They had collected much of the jewelry of their women. Muḥayyiṣa said, “Rather, I will inform the Messenger of God about what I heard from you,” and he informed the Messenger of God of what they said. Muḥayyiṣa said: A man from their leaders, called Nūn b. Yawsha, came with me, with a group of Jews, and made an agreement with the Messenger of God that they would retain their blood, and he would dislodge them, and they would leave what lies between him and their property, and he did. It was said: They proposed to the Prophet that they go out from their land but that the Prophet should not take anything from their property. And when it was harvest time they would come and cut it. The Prophet refused [Page 707] to accept that, and Muḥayyiṣa said to them, “You have neither power nor men nor fortress. If the Messenger of God sent you a hundred men they would drive you to him.” The agreement occurred between them, that to them was half of the land with its soil, and half for the Messenger of God. The Messenger of God accepted that. This is the most confirmed. The Messenger of God established them according to that, and he did not attack them.
When it was the caliphate of ‛Umar b. al-Khaṭṭāb, he expelled the Jews of Khaybar. ‛Umar sent those who would evaluate their land to them. He sent Abū l-Haytham b. al-Tayyihān, Farwa b. ‛Amr b. Ḥayyān b. Ṣakhar and Zayd b. Thābit and they evaluated the dates and the land for them. ‛Umar b. al-Khaṭṭāb took it and paid them half of the value of the dates and their soil. That reached fifty thousand dirham or more. That was the money that came to him from Iraq. ‛Umar expelled them to al-Shām. It was said that he sent Abū Khaythama al-Ḥāarithī to evaluate it.’
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
[1] “সিরাত রসুল আল্লাহ”- লেখক: মুহাম্মদ ইবনে ইশাক (৭০৪-৭৬৮ খৃষ্টাব্দ), সম্পাদনা: ইবনে হিশাম (মৃত্যু ৮৩৩ খৃষ্টাব্দ), ইংরেজি অনুবাদ: A. GUILLAUME, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, করাচী, ১৯৫৫, ISBN 0-19-636033-1, পৃষ্ঠা ৫২৩ ও ৫১৫; বিনামূল্যে ডাউনলোড লিঙ্ক:
[2] অনুরূপ বর্ণনা: “তারিক আল রসুল ওয়াল মুলুক”- লেখক: আল-তাবারী (৮৩৮-৯২৩ খৃষ্টাব্দ), ভলুউম ৮, ইংরেজী অনুবাদ: Michael Fishbein, University of California, Los Angeles, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৮৭, ISBN 0-7914-3150—9 (pbk), পৃষ্ঠা (Leiden) ১৫৮৩ ও ১৫৮৯
[3] “কিতাব আল-মাগাজি”- লেখক: আল-ওয়াকিদি (৭৪৮-৮২২ খৃষ্টাব্দ), ed. Marsden Jones, লন্ডন ১৯৬৬; ভলুম ২, পৃষ্ঠা ৭০৬-৭০৭; ইংরেজি অনুবাদ: Rizwi Faizer, Amal Ismail and Abdul Kader Tayob; ISBN: 978-0-415-86485-5 (pbk); পৃষ্ঠা ৩৪৭-৩৪৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন