লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ
পর্ব ১ > পর্ব ২ > পর্ব ৩ > পর্ব ৪ > পর্ব ৫ > পর্ব ৬ > পর্ব ৭ > পর্ব ৮ > পর্ব ৯ > পর্ব ১০ > পর্ব ১১ > পর্ব ১২ > পর্ব ১৩ > পর্ব ১৪ > পর্ব ১৫ > পর্ব ১৬ > পর্ব ১৭ > পর্ব ১৮ > পর্ব ১৯ > পর্ব ২০
{কোরআন যদি সকল জ্ঞানের ভাণ্ডার হয়, এবং নবী মুহাম্মদ কোরানের রচয়িতা হয়ে থাকেন; তবে এইসব তথ্যের উৎস কী? আর মক্কার মত মরুভূমি-ঘেরা গোত্র-সভ্যতার কেন্দ্রে থেকে কীভাবে সংগ্রহ করলেন এতসব তথ্য? প্রশ্ন জাগা কি স্বাভাবিক নয়!
চলুন উত্তর খুঁজি ভিন্নভাবে! একজন কাব্য-সাহিত্য-সঙ্গীতস্রষ্টার মনোজগত যদি বোঝার চেষ্টা করি, যখন কবি-লেখক-গায়কদের কোনো বিষয়ের বোধ-ঘোর-মোহভাষা জাগ্রত হয়, তা তার কবিতায়-লেখায়-গানে প্রকাশ হয়; লক্ষ্য করলে দেখবেন, এই বোধ-ঘোর-মোহভাষা কিছুদিন থেকে কিছুমাস পর্যন্ত একই ধারায় একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশ হতে থাকে। বলা যেতে পারে, কবি-লেখক-গায়কদের বৃত্তবন্দী থাকতে হয় তখন।
প্রিয় পাঠক, গত পর্বের সাথে এই পর্বের সকল প্রকাশ মুহাম্মদের এই একই বিষয়ে ঘুরপাক খাওয়া নির্দেশ করে। কেবলমাত্র আয়াত প্রকাশের কারণের ভিন্নতা ছাড়া কিছুই নতুন নেই, ভাষা-গল্প-লোভ-ক্ষোভ-হিংসা সব একই একই! আর ১ থেকে ৯২ নং প্রকাশ পর্যন্ত নবী মুহাম্মদ যতটুকু তথ্য-গল্প-জ্ঞান প্রসব করেছেন, তার উৎস মক্কা, সিরিয়া ও উকাজের বাৎসরিক মেলার সংমিশ্রণে! এ পর্বের ৯২ নং প্রকাশ সম্পর্কে যতটুকু তথ্য ইসলামী সূত্রে জানতে পারি, তা নির্দেশ করে - মুহাম্মদ প্রতিবছর উকাজের মেলা চষে বেড়াতেন। সেইসাথে হাত ধরে ধরে উল্লেখপূর্বক প্রমাণ করা সম্ভব, মক্কায় শতাধিক খ্রিষ্টান, ইহুদি ও এক-ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষের বসবাস ছিলো; তাই ইসলাম এবং কোরআনের মক্কা অধ্যায়ের বেশিরভাগ গল্পের মূল উৎস মক্কা নিজেই, একজন গাঁজা সেবনকারী যেমন জানেন তার শহরে কোথায় গাঁজা পাওয়া যায়, মধুর খোঁজ তিনি রাখেন না, তেমনই কবি চেনে কবি, ব্যবসায়ী চেনে ব্যবসায়ীকে!
গ্রামীণ প্রবাদ বলে:
রতনে রতন চেনে
ভোমরা চেনে মধু;
লঞ্চের খালাসী চেনে
চিংড়ী মাছ আর কদু;
আর শুয়োরে কচু!
মুহাম্মদ তেমনটাই তার প্রয়োজনীয় তথ্যের ৮০ শতাংশ মক্কা থেকেই সংগ্রহ করেছেন; তার সফলতা এটাই, তিনি সকল তথ্যকে মিশ্রিত করে নতুন বোতলে ছন্দময় সুপেয় (আরবীতে অবশ্যই) সরবত তৈরি করতে পেরেছিলেন! তবে তাকে আর যা-ই বলেন না কেনো, সকল জ্ঞানের ভাণ্ডার বলে 'জ্ঞান' শব্দটির অপমান করবেন না।
মুহাম্মদ ব্যবসায়ী ছিলেন; এমনকি মক্কা থেকে পালিয়ে মদিনায় চলে আসার বছর পর্যন্ত মুহাম্মদ সরাসরি নিজের এবং তার অনুসারীদের অর্থ বাণিজ্য কাফেলায় বিনিয়োগ করতেন। নিজেকে নবী দাবী করার আগ পর্যন্ত, বিশেষত ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মিত বাণিজ্য কাফেলায় গমনও তার কাজের অংশ ছিলো। পঁয়ত্রিশ বছর বয়স থেকে মুহাম্মদ পাল্টে যান; পাগলামী, ধ্যান আর অন্তর্মুখী স্বভাব তাকে ৫ বছর সময়ে তথ্য-উপাত্তের বন্টন করতে শেখায়; এবং ৪০ বছর বয়সে এসে তারই যে প্রকাশ শুরু হয়; তাই আজ আমরা কোরআন নামে জানি!
ওপরের দুটো অধ্যায়ের প্রতিটি শব্দের তথ্য প্রমাণসহ ব্যাখ্যা করা সম্ভব, কিন্তু তার জন্য এ সিরিজটিকে ভিন্ন রাস্তায় নেবার প্রয়োজন আপাতত নেই বলে মনে হচ্ছে। শুধু একটা মজার তথ্য দিই: ৩৫ বছর বয়সে মুহাম্মদের পাল্টে যাবার পেছনে ছিলো একটি মৃত্যু, একটি বন্যা, একটি নতুন শিশুসন্তান, মুহাম্মদের নগ্নতা, একটি অগ্নিকাণ্ড ও একটি পুনর্নির্মাণ!
মানুষ মুহাম্মদের ‘নবী মুহাম্মদ’ হওয়ার আগের জীবন এতটাই বিচিত্র আর বহুমাত্রিক ছিলো, তার সকল প্রমাণ কোরআন, হাদিস আর প্রাচীন নবী-জীবনীগ্রন্থের পাতায় পাতায় লুকিয়ে রাখা থাকলেও, কেন তা আজ পর্যন্ত তুলে আনা হয়নি; ভাবতে খুব অবাক লাগে!
চল্লিশ বছরের ভিন্নমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গী, এক-ঈশ্বরবাদকে জানার চেষ্টা, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে না পাওয়ার যন্ত্রণা, শরীর-মস্তিস্কের অসুখ আর পারিবারিক সূত্রে পাওয়া সুপ্ত কাব্যপ্রতিভার সংমিশ্রণে মুহাম্মদ জন্ম দিয়েছেন কোরআন! যা তার মৃত্যু পরবর্তী ৩০০ বছরে ব্যাখ্যা-ব্যাখ্যায়-শ্রদ্ধা-শ্রদ্ধায় অলৌকিক মহাগ্রন্থের রূপ নিয়েছে। এর বাইরে কোরআনকে একটি চর্বিতচর্বন জীবনকাব্য হিসেবে মর্যাদা দেওয়া চলে বড়জোর!
কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২১ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছরের ১৪ তম চার অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৮৯ তম প্রকাশ: সূরা হা-মীম সেজদাহ্ (৪১) (সুস্পষ্ট বিবরণ), ১ থেকে ৮ আয়াত:
১. হা মীম।
২. ইহা দয়াময়, পরম দয়ালুর নিকট হতে অবতীর্ণ।
৩. এটা এক কিতাব, বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে এর আয়াতসমূহ আরবি ভাষায়, কুরআনরূপে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য
৪. সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা শোনে না।
৫. তারা বলে: তুমি যার প্রতি আমাদেরকে আহবান করছ সেই বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণে আচ্ছাদিত, কর্ণে আছে বধিরতা এবং তোমার ও আমাদের মধ্যে আছে অন্তরাল; সুতরাং তুমি তোমার কাজ কর এবং আমরা আমাদের কাজ করি।
৬. বল, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ, অতএব তাঁর দিকেই সোজা হয়ে থাক এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ,
৭. যারা যাকাত প্রদান করেনা এবং তারা আখিরাতেও অবিশ্বাসী।
৮. যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তাদের জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯০ তম প্রকাশ: সূরা আয্-যুখরুফ (৪৩) (সোনাদানা), ১ থেকে ৫৩, ৫৫ থেকে ৬৫, ৮১ থেকে ৮৯ আয়াত:
১. হা, মীম।
২. শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের!
৩. আমি এটা অবতীর্ণ করেছি আরাবী ভাষায় কুরআন রূপে, যাতে তোমরা বুঝতে পার।
৪. নিশ্চয় এ কোরআন আমার কাছে সমুন্নত অটল রয়েছে লওহে মাহফুযে।
৫. আমি কি তোমাদের হতে এই উপদেশবাণী সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নিব এই কারণে যে, তোমরা সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়?
৬. পূর্ববর্তী লোকদের কাছে আমি অনেক রসূলই প্রেরণ করেছি।
৭. এবং যখনই তাদের নিকট কোনো নবী এসেছে, তারা তাকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে।
৮. তাদের মধ্যে যারা এদের অপেক্ষা শক্তিতে প্রবল ছিল, তাদেরকে আমি ধ্বংস করেছিলাম; আর এভাবে চলে আসছে পূর্ববর্তীদের অনুরূপ দৃষ্টান্ত।
৯. তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর: কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে: এগুলি তো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহ
১০. যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে করেছেন শয্যা এবং ওতে করেছেন তোমাদের চলার পথ, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার;
১১. এবং যিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন পরিমিত। অতঃপর তদ্দ্বারা আমি মৃত ভূ-ভাগকে পুনরুজ্জীবিত করেছি। তোমরা এমনিভাবে উত্থিত হবে।
১২. এবং যিনি যুগলসমূহের প্রত্যেককে সৃষ্টি করেন এবং যিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেন এমন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু, যাতে তোমরা আরোহণ কর
১৩. যাতে তোমরা ওদের পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বসতে পার, তারপর তোমাদের রবের অনুগ্রহ স্মরণ কর, যখন তোমরা ওর উপর স্থির হয়ে বস এবং বল: পবিত্র ও মহান তিনি যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে।
১৪. আমরা অবশ্যই আমাদের পালনকর্তার দিকে ফিরে যাব।
১৫. তারা তাঁর বান্দাদের মধ্য হতে তাঁর অংশ সাব্যস্ত করেছে। মানুষ তো স্পষ্টই অকৃতজ্ঞ।
১৬. তিনি কি তাঁর সৃষ্টি থেকে কন্যাসন্তান গ্রহণ করেছেন এবং তোমাদের জন্য মনোনীত করেছেন পুত্রসন্তান?
১৭. দয়াময় আল্লাহর প্রতি তারা যা আরোপ করে, তাদের কেহকে সেই সন্তানের সংবাদ দেয়া হলে তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায় এবং সে দুঃসহ মর্ম যাতনায় ক্লিষ্ট হয়।
১৮. তারা কি আল্লাহর প্রতি আরোপ করে এমন সন্তান, যে অলংকারে আবৃত হয়ে লালিত-পালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ককালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ?
১৯. তারা নারী স্থির করে ফেরেশতাগণকে, যারা আল্লাহর বান্দা। তারা কি তাদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে? এখন তাদের দাবি লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।
২০. তারা বলে: দয়াময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের পূজা করতাম না। এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই; তারা তো শুধু মিথ্যাই বলছে।
২১. আমি কি তাদেরকে কুরআনের পূর্বে কোনো কিতাব দিয়েছি, অতঃপর তারা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছে?
২২. বরং তারা বলে: আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে পেয়েছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।
২৩. এভাবে তোমার পূর্বে যখনই আমি কোনো জনপদে সতর্ককারী (নবী-রসূল) পাঠিয়েছি, তখনই তাদের সম্পদশালী লোকেরা বলেছে - আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এক ধর্মমত পালনরত পেয়েছি আর আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করছি।
২৪. সে বলত, তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের ওপর পেয়েছ, আমি যদি তদপেক্ষা উত্তম বিষয় নিয়ে তোমাদের কাছে এসে থাকি, তবুও কি তোমরা তাই বলবে? তারা বলত, তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ, তা আমরা মানব না।
২৫. অতঃপর আমি তাদেরকে তাদের কর্মের প্রতিফল দিলাম; দেখ, মিথ্যাচারীদের পরিণাম কী হয়েছে!
২৬. স্মরণ কর, ইবরাহীম তার পিতা এবং সম্প্রদায়কে বলেছিল: তোমরা যাদের পূজা কর, তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
২৭. সম্পর্ক আছে শুধু তাঁরই সাথে, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই আমাকে সৎ পথে পরিচালিত করবেন।
২৮. এ কথাটিকে সে অক্ষয় বাণীরূপে তার সন্তানদের মধ্যে রেখে গেছে, যাতে তারা আল্লাহর দিকেই আকৃষ্ট থাকে।
২৯. বরং আমিই তাদেরকে এবং তাদের পূর্বপুরুষদেরকে সুযোগ দিয়েছিলাম ভোগের; অবশেষে তাদের নিকট এলো সত্য ও স্পষ্ট প্রচারক রাসূল।
৩০. যখন সত্য তাদের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, এটা যাদু, আমরা একে মানি না।
৩১. এবং তারা বলে: এই কুরআন কেন অবতীর্ণ করা হল না দুই জনপদের কোনো প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির ওপর?
৩২. তারা কি আপনার পালনকর্তার রহমত বন্টন করে? আমি তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করেছি পার্থিব জীবনে এবং একের মর্যাদাকে অপরের ওপর উন্নীত করেছি, যাতে একে অপরকে সেবক রূপে গ্রহণ করে। তারা যা সঞ্চয় করে, আপনার পালনকর্তার রহমত তদপেক্ষা উত্তম।
৩৩. সত্য প্রত্যাখ্যানে মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়বে, এই আশংকা না থাকলে দয়াময় আল্লাহকে যারা অস্বীকার করে, তাদেরকে আমি দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি, যাতে তারা আরোহণ করে।
৩৪. এবং তাদের গৃহের জন্য দিতাম রৌপ্য নির্মিত দরজা, বিশ্রামের জন্য পালঙ্ক, যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত।
৩৫. এবং স্বর্ণের নির্মিতও। আর এই সবই তো শুধু পার্থিব জীবনের ভোগ সম্ভার। মুত্তাকীদের জন্য তোমার রবের নিকট রয়েছে আখিরাতের কল্যাণ।
৩৬. যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হয়, আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শাইতান, অতঃপর সে হয় তার সহচর।
৩৭. শয়তানরাই মানুষকে সৎপথে বাধা দান করে, আর মানুষ মনে করে যে, তারা সৎপথে রয়েছে।
৩৮. অবশেষে যখন সে আমার নিকট উপস্থিত হবে, তখন সে শাইতানকে বলবে: হায়! আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান থাকত! কত নিকৃষ্ট সহচর সে!
৩৯. যেহেতু তোমরা সীমালংঘন করেছিলে, তাই আজ তোমাদের এই অনুতাপ তোমাদের কোনো কাজে আসবে না, তোমরা তো সবাই শাস্তিতে শরীক।
৪০. তুমি কি শোনাতে পারবে বধিরকে? অথবা যে অন্ধ এবং যে ব্যক্তি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে, তাকে কি পারবে সৎ পথে পরিচালিত করতে?
৪১. আমি যদি তোমার মৃত্যু ঘটাই, তবুও আমি তাদেরকে শাস্তি দিব।
৪২. অথবা আমি তাদেরকে যে শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করেছি, যদি আমি তোমাকে তা প্রত্যক্ষ করাই, তাহলে তাদের ওপর আমার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।
৪৩. অতএব তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়েছে, তাকে তুমি সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর। নিশ্চয় তুমি সরল পথের ওপর রয়েছ।
৪৪. নিশ্চয়ই ইহা (কুরআন) তোমার এবং তোমার সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ, তোমাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।
৪৫. তোমার পূর্বে আমি যে সব রাসূল প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে তুমি জিজ্ঞেস কর, আমি কি দয়াময় আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য স্থির করেছিলাম, যার ইবাদাত করা যায়?
৪৬. মূসাকে আমি আমার নিদর্শনসহ ফিরআউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট পাঠিয়েছিলাম; সে বলেছিল: আমি জগতসমূহের রবের পক্ষ হতে প্রেরিত রাসূল।
৪৭. সে তাদের নিকট আমার নিদর্শনসহ আসা মাত্র তারা তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে লাগল।
৪৮. আমি তাদেরকে এমন কোনো নিদর্শন দেখাইনি, যা ওর অনুরূপ নিদর্শন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ নয়। আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম, যাতে তারা প্রত্যাবর্তন করে।
৪৯. তারা বলেছিল: হে যাদুকর! তোমার প্রতিপালকের নিকট তুমি আমাদের জন্য তা প্রার্থনা কর, যা তিনি তোমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন; তাহলে আমরা অবশ্যই সৎ পথ অবলম্বন করব।
৫০. অতঃপর যখন আমি তাদের উপর হতে শাস্তি বিদূরিত করলাম, তখনই তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে লাগল।
৫১. ফিরআউন তার সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বলে ঘোষণা করল: হে আমার সম্প্রদায়! মিসর রাজ্য কি আমার নয়? এই নদীগুলি আমার পাদদেশে প্রবাহিত, তোমরা কি দেখ না?
৫২. আমি কি শ্রেষ্ঠ নই এই ব্যক্তি হতে, যে হীন এবং স্পষ্ট কথা বলতে অক্ষম?
৫৩. মূসাকে কেন দেয়া হল না স্বর্ণবলয়, অথবা তার সাথে কেন এলো না মালাইকা/ফেরেশতা দলবদ্ধভাবে?
৫৫. যখন তারা আমাকে ক্রোধান্বিত করল, তখন আমি তাদেরকে শাস্তি দিলাম এবং নিমজ্জিত করলাম তাদের সবাইকে।
৫৬. অতঃপর পরবর্তীদের জন্য আমি তাদেরকে করে রাখলাম অতীত ইতিহাস ও দৃষ্টান্ত।
৫৭. যখন মারইয়াম তনয়ের দৃষ্টান্ত উপস্থিত করা হয়, তখন তোমার সম্প্রদায় শোরগোল শুরু করে দেয়।
৫৮. এবং বলে: আমাদের দেবতাগুলি শ্রেষ্ঠ, না ঈসা? তারা শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই তোমাকে এ কথা বলে। বস্তুত তারা তো শুধু বাক-বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়।
৫৯. সে তো ছিল আমারই এক বান্দা, যাকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম এবং করেছিলাম বাণী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত।
৬০. আমি ইচ্ছা করলে তোমাদের মধ্য হতে মালাইকা/ফেরেশতা সৃষ্টি করতে পারতাম, যারা পৃথিবীতে উত্তরাধিকারী হত।
৬১. ঈসা তো কিয়ামাতের নিদর্শন; সুতরাং তোমরা কিয়ামাতে সন্দেহ পোষণ কর না এবং আমাকে অনুসরণ কর। এটাই সরল পথ।
৬২. শাইতান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই নিবৃত্ত না করে, সে তো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
৬৩. ঈসা যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ এলো, তখন সে বলল: আমি তো তোমাদের নিকট এসেছি প্রজ্ঞাসহ এবং তোমরা যে বিষয়ে মতভেদ করছ তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্য। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার অনুসরণ কর।
৬৪. আল্লাহই আমার প্রতিপালক এবং তোমাদের প্রতিপালক। অতএব তাঁর ইবাদাত কর; এটাই সরল পথ।
৬৫. অতঃপর তাদের কতিপয় দল মতানৈক্য সৃষ্টি করল; সুতরাং যালিমদের জন্য দুর্ভোগ, যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির।
৮১. বল, দয়াময় আল্লাহর কোন সন্তান থাকলে আমি সর্বপ্রথম তার এবাদত করব।
৮২. তারা যা বর্ণনা করে, তা থেকে নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের পালনকর্তা, আরশের পালনকর্তা পবিত্র।
৮৩. অতএব, তাদেরকে বাকচাতুরী ও ক্রীড়া-কৌতুক করতে দিন সেই দিবসের সাক্ষাত পর্যন্ত, যার ওয়াদা তাদেরকে দেয়া হয়।
৮৪. তিনিই উপাস্য নভোমণ্ডলে এবং তিনিই উপাস্য ভুমণ্ডলে। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ,
৮৫. বরকতময় তিনিই, নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু যার। তাঁরই কাছে আছে কেয়ামতের জ্ঞান এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
৮৬. তিনি ব্যতীত তারা যাদের পুজা করে, তারা সুপারিশের অধিকারী হবে না, তবে যারা সত্য স্বীকার করত ও বিশ্বাস করত।
৮৭. তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে তাহলে তারা অবশ্যই বলবে: আল্লাহ! তবুও তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে?
৮৮. রসূলের এই উক্তির কসম, হে আমার পালনকর্তা, এ সম্প্রদায় তো বিশ্বাস স্থাপন করে না।
৮৯. অতএব, আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং বলুন, ‘সালাম’। তারা শীঘ্রই জানতে পারবে।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯১ তম প্রকাশ: সূরা আল আম্বিয়া (২১) (নবীগণ), ১ থেকে ১১২, আয়াত:
১. মানুষের হিসাব-কিতাবের সময় নিকটবর্তী; অথচ তারা বেখবর হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
২. যখনই তাদের নিকট তাদের রবের কোনো নতুন উপদেশ আসে, তখন তারা তা শ্রবণ করে কৌতুকচ্ছলে।
৩. তাদের অন্তর থাকে অমনোযোগী, সীমা লংঘনকারীরা গোপনে পরামর্শ করে: এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, তবুও কি তোমরা দেখে শুনে যাদুর কবলে পড়বে?
৪. বল: আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কথাই আমার পালনকর্তা অবগত আছেন এবং তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
৫. তারা এটাও বলে: এ সব অলীক কল্পনা হয় সে উদ্ভাবন করেছে, না হয় সে একজন কবি; অতএব সে আনয়ন করুক আমাদের নিকট এক নিদর্শন, যেরূপ নিদর্শনসহ প্রেরিত হয়েছিল পূর্ববর্তীগণ।
৬. তাদের পূর্বে যে সব জনপদ আমি ধ্বংস করেছি, ওর অধিবাসীরা ঈমান আনেনি; তাহলে কি তারা ঈমান আনবে?
৭. তোমার পূর্বে আমি অহীসহ মানুষই পাঠিয়েছিলাম; তোমরা যদি না জান, তাহলে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর।
৮. আর আমি তাদেরকে এমন দেহবিশিষ্ট করিনি যে, তারা আহার্য গ্রহণ করত না। তারা চিরস্থায়ীও ছিল না।
৯. অতঃপর আমি তাদের প্রতি আমার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলাম, আমি তাদেরকে ও যাদেরকে ইচ্ছা রক্ষা করেছিলাম এবং যালিমদেরকে করেছিলাম ধ্বংস।
১০. আমি তো তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি কিতাব, যাতে আছে তোমাদের জন্য উপদেশ, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?
১১. আমি কত জনপদের ধ্বংস সাধন করেছি যার অধিবাসীরা ছিল পাপী এবং তাদের পর সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি।
১২. অতঃপর যখন তারা আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করল, তখনই তারা জনপদ হতে পালাতে লাগল।
১৩. তাদেরকে বলা হল: পলায়ন কর না এবং ফিরে এসো তোমাদের ভোগ সম্ভারের নিকট এবং তোমাদের আবাসগৃহে, হয়তো এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হতে পারে।
১৪. তারা বলল: হায়, দুর্ভোগ আমাদের, আমরা অবশ্যই পাপী ছিলাম।
১৫. তাদের এই আর্তনাদ চলতে থাকে, যতক্ষণ না আমি তাদেরকে কর্তিত শস্য ও নির্বাপিত আগুন সদৃশ করি।
১৬. আকাশ ও পৃথিবী এবং যা এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে তা আমি ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি।
১৭. আমি যদি ক্রীড়ার উপকরণ চাইতাম, তাহলে আমি আমার নিকট যা আছে, তা দিয়েই ওটা করতাম, আমি তা করিনি।
১৮. কিন্তু আমি সত্য দ্বারা আঘাত হানি মিথ্যার ওপর; ফলে ওটা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দুর্ভোগ তোমাদের! তোমরা যা বলছ তার জন্য।
১৯. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে তা তাঁরই, তাঁর সান্নিধ্যে যারা আছে তারা অহংকার করে তাঁর ইবাদাত করা হতে বিমুখ হয় না এবং ক্লান্তিও বোধ করে না।
২০. তারা দিন-রাত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, শৈথিল্য করে না।
২১. তারা মাটি হতে তৈরি যে সব দেবতা গ্রহণ করেছে, সেগুলি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম?
২২. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যদি আল্লাহ ছাড়া বহু উপাস্য থাকত, তাহলে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা হতে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র, মহান।
২৩. তিনি যা করেন, সেই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।
২৪. তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে? বল, তোমরা তোমাদের প্রমাণ আন। এটাই আমার সঙ্গীদের কথা এবং এটাই আমার পুর্ববর্তীদের কথা। বরং তাদের অধিকাংশই সত্য জানে না; অতএব তারা টালবাহানা করে।
২৫. তোমার পূর্বে আমি যে রাসূলই প্রেরণ করেছি, তাকে এ আদেশই প্রেরণ করেছি যে, আমি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই। সুতরাং আমারই এবাদত কর।
২৬. তারা বলে: দয়াময় আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি পবিত্র মহান! তারা তো তাঁর সম্মানিত বান্দা।
২৭. তারা তাঁর আগে বেড়ে কথা বলে না; তারা তো তাঁর আদেশ অনুসারেই কাজ করে।
২৮. তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা কিছু আছে, তা তিনি অবগত। তারা সুপারিশ করে শুধু তাদের জন্য যাদের প্রতি তিনি সন্তষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত।
২৯. তাদের মধ্যে যে বলবে: তিনি ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি প্রতিফল দিব জাহান্নাম, এভাবেই আমি যালিমদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।
৩০. যারা কুফরী করে, তারা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল ওতপ্রোতভাবে; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি হতে; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না?
৩১. এবং আমি পৃথিবীতে সৃষ্টি করেছি সুদৃঢ় পর্বত, যাতে পৃথিবী তাদেরকে নিয়ে এদিক-ওদিক টলে না যায় এবং আমি তাতে করে দিয়েছি প্রশস্ত পথ, যাতে তারা গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে পারে।
৩২. এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ। কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৩৩. তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন, সূর্য আর চন্দ্র, প্রত্যেকেই তার চক্রাকার পথে সাঁতার কাটছে।
৩৪. তোমার পূর্বেও আমি কোনো মানুষকে চিরস্থায়ী করিনি। তুমি যদি মারা যাও, তাহলে তারা কি চিরস্থায়ী হবে?
৩৫. জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করি এবং আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
৩৬. কাফিরেরা যখন তোমাকে দেখে, তখন তারা তোমাকে শুধু বিদ্রূপের পাত্র রূপেই গ্রহণ করে। তারা বলে: এই কি সে যে তোমাদের দেবতাগুলির সমালোচনা করে? অথচ তারাই তো ‘রাহমান’ এর উল্লেখের বিরোধিতা করে।
৩৭. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে তাড়াহুড়ার প্রবণতা দিয়ে। অচিরেই আমি তোমাদেরকে দেখাব আমার নিদর্শনাবলী। সুতরাং তোমরা তাড়াহুড়া করো না।
৩৮. আর তারা বলে: তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তাহলে বল, এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে?
৩৯. হায়! যদি কাফিরেরা সেই সময়ের কথা জানতো, যখন তারা তাদের সম্মুখ ও পশ্চাত হতে আগুন প্রতিরোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে সাহায্য করাও হবে না।
৪০. বস্তুত ওটা তাদের উপর আসবে অতর্কিতে এবং তাদেরকে হতভম্ব করে দেবে; ফলে তারা ওটা রোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশ দেয়া হবে না।
৪১. তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা হয়েছিল; পরিণামে তারা যা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করত, তা বিদ্রূপকারীদেরকে পরিবেষ্টন করেছিল।
৪২. বল: ‘রাহমান’ এর পরিবর্তে কে তোমাদেরকে রক্ষা করছে রাতে ও দিনে? তবুও তারা তাদের রবের স্মরণ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৪৩. তাহলে কি আমি ব্যতীত তাদের এমন আরাধ্য আছে, যারা তাদেরকে রক্ষা করতে পারে? তারা তো নিজেদেরকেই সাহায্য করতে পারে না এবং আমার বিরুদ্ধে তাদের সাহায্যকারীও থাকবে না।
৪৪. বস্তুতঃ আমিই তাদেরকে এবং তাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে ভোগ সম্ভার দিয়েছিলাম; অধিকন্ত তাদের আয়ুষ্কালও হয়েছিল দীর্ঘ; তারা কি দেখছে না যে, আমি তাদের দেশকে চতুর্দিক হতে সংকুচিত করে আনছি; তবুও কি তারা বিজয়ী হবে?
৪৫. বল: আমি তো শুধু অহী দ্বারাই তোমাদেরকে সতর্ক করি, কিন্তু যারা বধির, তাদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, তখন তারা সতর্কবাণী শোনে না।
৪৬. তোমার প্রতিপালকের গযবের একটা নিঃশ্বাস যদি তাদের ওপর পতিত হয়, তবে তারা অবশ্য অবশ্যই বলে উঠবে, ‘হায় আমাদের দুর্ভাগ্য! আমরাই তো ছিলাম অপরাধী।’
৪৭. এবং কিয়ামাত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারও প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কাজ যদি সরিষার দানা পরিমাণ ওজনেরও হয়, তাও আমি উপস্থিত করব। হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।
৪৮. আমি তো মূসা ও হারূনকে দিয়েছিলাম মীমাংসাকারী গ্রন্থ, জ্যোতি এবং মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ
৪৯. যারা না দেখেই তাদের পালনকর্তাকে ভয় করে এবং কেয়ামতের ভয়ে শঙ্কিত।
৫০. এটি কল্যাণময় উপদেশ; আমিই এটি অবতীর্ণ করেছি; তবুও কি তোমরা এটাকে অস্বীকার করবে?
৫১. আমি এর পূর্বে ইবরাহীমকে সৎ পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্বন্ধে ছিলাম সম্যক অবগত।
৫২. যখন সে তার পিতা ও তার সম্প্রদায়কে বলল: এই মূর্তিগুলি কী, যাদের পূজায় তোমরা রত রয়েছ?
৫৩. তারা বলল: আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি।
৫৪. সে বলল: তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরাও রয়েছ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।
৫৫. তারা বলল: তুমি কি আমাদের নিকট সত্য এনেছ, নাকি তুমি কৌতুক করছ?
৫৬. সে বলল: না, তিনিই তোমাদের পালনকর্তা যিনি নভোমণ্ডল ও ভুমণ্ডলের পালনকর্তা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন; এবং আমি এই বিষয়েরই সাক্ষ্যদাতা।
৫৭. কসম আল্লাহর! তোমরা পেছন ফিরে চলে গেলেই আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর বিরুদ্ধে অবশ্য অবশ্যই একটা কৌশল গ্রহণ করব।
৫৮. অতঃপর সে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল মূর্তিগুলিকে, তাদের বড় (প্রধান) মূর্তিটি ব্যতীত, যাতে তারা তার দিকে ফিরে আসে।
৫৯. তারা বলল: আমাদের উপাস্যগুলির প্রতি এরূপ করল কে? সে নিশ্চয়ই সীমালংঘনকারী।
৬০. কেহ কেহ বলল: আমরা এক যুবককে ওদের সমালোচনা করতে শুনেছি, তাকে বলা হয় ইবরাহীম।
৬১. তারা বলল: তাকে উপস্থিত কর লোক সম্মুখে, যাতে তারা সাক্ষ্য দিতে পারে।
৬২. তারা বলল: ইবরাহীম! তুমিই কি আমাদের উপাস্যগুলির উপর এরূপ করেছ?
৬৩. সে বলল: সেই তো এটা করেছে, এই তো এদের প্রধান। এদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি এরা কথা বলতে পারে।
৬৪. তখন তারা মনে মনে চিন্তা করে দেখল এবং একে অপরকে বলতে লাগল: তোমরাই তো সীমালংঘনকারী।
৬৫. অতঃপর তাদের মাথা নত হয়ে গেল এবং তারা বলল: তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলে না।
৬৬. সে বলল: তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর যারা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না, ক্ষতিও করতে পারে না?
৬৭. ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! তোমরা কি বুঝবে না?
৬৮. তারা বলল: তাকে পুড়িয়ে দাও এবং সাহায্য কর তোমাদের দেবতাগুলিকে, যদি তোমরা কিছু করতে চাও।
৬৯. আমি বললাম: হে আগুন! তুমি ইবরাহীমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।
৭০. তারা তার ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু আমি তাদেরকে করে দিলাম সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
৭১. আর আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই দেশে যেথায় আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।
৭২. এবং আমি ইবরাহীমকে দান করেছিলাম ইসহাক এবং পুরস্কার স্বরূপ ইয়াকূব; এবং প্রত্যেককেই করেছিলাম সৎকর্মপরায়ণ।
৭৩. আর আমি তাদেরকে করেছিলাম নেতা; তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ প্রদর্শন করত। তাদের কাছে আমি অহী প্রেরণ করেছিলাম সৎ কাজ করতে, সালাত কায়েম করতে এবং যাকাত প্রদান করতে; তারা আমারই ইবাদাত করত।
৭৪. এবং লূতকে দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান, আর তাকে উদ্ধার করেছিলাম এমন এক জনপদ হতে যার অধিবাসীরা লিপ্ত ছিল অশ্লীল কাজে। তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়; সত্যত্যাগী।
৭৫. এবং তাকে আমি আমার অনুগ্রহভাজন করেছিলাম; সে ছিল সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত।
৭৬. স্মরণ কর নূহকে; পূর্বে সে যখন আহবান করেছিল, তখন আমি সাড়া দিয়েছিলাম তার আহবানে এবং তাকে ও তার পরিজনবর্গকে মহাসংকট হতে উদ্ধার করেছিলাম।
৭৭. এবং আমি তাকে সাহায্য করেছিলাম সেই সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যারা আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করেছিল, তারা ছিল এক মন্দ সম্প্রদায়; এ জন্য তাদের সবাইকে আমি নিমজ্জিত করেছিলাম।
৭৮. এবং স্মরণ কর দাউদ ও সুলাইমানের কথা, যখন তারা বিচার করছিল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে; তাতে রাতে প্রবেশ করেছিল কোনো সম্প্রদায়ের মেষ; আমি প্রত্যক্ষ করছিলাম তাদের বিচার।
৭৯. অতঃপর আমি সুলায়মানকে সে ফায়সালা বুঝিয়ে দিয়েছিলাম এবং আমি উভয়কে প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দিয়েছিলাম। আমি পর্বত ও পক্ষীসমূহকে দাউদের অনুগত করে দিয়েছিলাম; তারা আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত। এই সমস্ত আমিই করেছিলাম।
৮০. আমি তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম যাতে ওটা তোমাদের যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে; সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে না?
৮১. এবং সুলাইমানের বশীভূত করে দিয়েছিলাম উদ্দাম বায়ুকে; ওটা তার আদেশক্রমে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি। প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে আমিই সম্যক অবগত।
৮২. এবং শাইতানদের মধ্যে কতক তার জন্য ডুবুরীর কাজ করত, এটা ছাড়া অন্য কাজও করত; আমি তাদের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতাম।
৮৩. আর স্মরণ কর আইয়ুবের কথা, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিল: আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি, আপনি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।
৮৪. তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিয়েছিলাম, তাদের সাথে তাদের মত আরও দিয়েছিলাম আমার বিশেষ রাহমাত রূপে এবং ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ।
৮৫. আর স্মরণ কর ইসমাঈল, ইদরীস এবং যুলকিফল- এর কথা, তাদের প্রত্যেকেই ছিল ধৈর্যশীল।
৮৬. আমি তাঁদেরকে আমার রহমাতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত করেছিলাম। তাঁরা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ।
৮৭. এবং মাছওয়ালার কথা স্মরণ কর তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেন: তুমি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গুনাহগার।
৮৮. তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে উদ্ধার করেছিলাম দুশ্চিন্তা হতে এবং এভাবেই আমি মু'মিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি।
৮৯. এবং স্মরণ কর যাকারিয়ার কথা, যখন সে তার রাব্বকে আহবান করে বলেছিল: হে আমার রাব্ব! আমাকে একা ছেড়ে দিবেন না, আপনি চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী
৯০. অতঃপর আমি তার আহবানে সাড়া দিয়েছিলাম এবং তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়াকে, আর তার জন্য তার স্ত্রীকে যোগ্যতাসম্পন্ন করেছিলাম; তারা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা করত, তারা আমাকে ডাকত আশা ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমার নিকট বিনীত।
৯১. আর স্মরণ কর সেই নারীকে, যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল এবং আমি তার মধ্যে আত্মা ফুঁকে দিয়েছি, এবং তাকে ও তার পুত্রকে করেছিলাম বিশ্ববাসীর জন্য এক নিদর্শন।
৯২. এই যে তোমাদের জাতি, এটা তো একই জাতি এবং আমিই তোমাদের রাব্ব, অতএব আমার ইবাদাত কর।
৯৩. কিন্তু মানুষ নিজেদের কার্যকলাপে পরস্পরের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে; প্রত্যেকেই প্রত্যাবর্তিত হবে আমার নিকট।
৯৪. অতঃপর যে বিশ্বাসী অবস্থায় সৎকর্ম সম্পাদন করে, তার প্রচেষ্টা অস্বীকৃত হবে না এবং আমি তা লিপিবদ্ধ করে রাখি।
৯৫. যে সব জনপদকে আমি ধ্বংস করেছি, তার অধিবাসীদের ফিরে না আসা অবধারিত
৯৬. যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধনমুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।
৯৭. অমোঘ প্রতিশ্রুত কাল আসন্ন হলে অকস্মাৎ কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবে: হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এ বিষয়ে উদাসীন; না, বরং আমরা ছিলাম সীমালংঘনকারী।
৯৮. তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর, সেগুলি তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সবাই তাতে প্রবেশ করবে।
৯৯. যদি তারা উপাস্য হত, তাহলে তারা জাহান্নামে প্রবেশ করত না; তাদের সবাই তাতে স্থায়ী হবে।
১০০. সেখানে থাকবে তাদের আর্তনাদ এবং সেখানে তারা কিছুই শুনতে পাবে না।
১০১. যাদের জন্য আমার নিকট থেকে পূর্ব হতে কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে, তাদেরকে তা হতে দূরে রাখা হবে।
১০২. তারা ওর ক্ষীণতম শব্দও শুনতে পাবে না এবং সেখানে তারা তাদের মন যা চায় চিরকাল তা ভোগ করবে।
১০৩. মহাত্রাস তাদেরকে চিন্তান্বিত করবে না এবং ফেরেশতারা তাদেরকে অভ্যর্থনা করবে: আজ তোমাদের দিন, যে দিনের ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল।
১০৪. সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে ফেলবো, যেভাবে গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব; প্রতিশ্রুতি পালন আমার কর্তব্য, আমি এটা পালন করবই।
১০৫. আমি উপদেশের পর কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার যোগ্যতাসম্পন্ন বান্দারা পৃথিবীর অধিকারী হবে।
১০৬. এতে রয়েছে বাণী, সেই সম্প্রদায়ের জন্য, যারা ইবাদাত করে।
১০৭. আমি তো তোমাকে বিশ্ব জগতের প্রতি শুধু রাহমাত রূপেই প্রেরণ করেছি।
১০৮. বল: আমাকে তো এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য। সুতরাং তোমরা কি আজ্ঞাবহ হবে?
১০৯. যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে তুমি বল: আমি তোমাদেরকে যথাযথভাবে জানিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, আমি জানি না, তা আসন্ন, না দূরস্থিত।
১১০. তিনি জানেন যা কথায় ব্যক্ত কর এবং যা তোমরা গোপন কর।
১১১. আমি জানি না, হয়তো এটা তোমাদের জন্য এক পরীক্ষা এবং জীবন উপভোগ কিছু কালের জন্য।
১১২. রাসূল বলেছিল: হে আমার পালনকর্তা! আপনি ন্যায়ের সাথে ফাইসালা করে দিন, আমাদের রাব্ব তো দয়াময়, তোমরা যা বলেছ, সে বিষয়ে একমাত্র সহায়স্থল তিনিই।
নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯২ তম প্রকাশ: সূরা আল জিন (৭২) (জিন সম্প্রদায়), ১ থেকে ২৮, আয়াত:
১. বল: আমার প্রতি অহী প্রেরিত হয়েছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করেছে এবং বলেছে, আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শ্রবণ করেছি
২. যা সঠিক পথ নির্দেশ করে; ফলে আমরা এতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনও আমাদের রবের সাথে কোনো শরীক স্থির করব না।
৩. আর আমাদের প্রতিপালকের মর্যাদা অতি উচ্চ, তিনি গ্রহণ করেননি কোনো স্ত্রী আর কোনো সন্তান।
৪. এবং আমাদের মধ্যকার নির্বোধরা আল্লাহ সম্বন্ধে অতি অবাস্তব উক্তি করত।
৫. অথচ আমরা মনে করতাম মানুষ এবং জিন, আল্লাহ সম্বন্ধে কখনও মিথ্যা আরোপ করবে না।
৬. আর যে কতিপয় মানুষ কতক জিনের শরণ নিত, ফলে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত।
৭. আর জিনরা বলেছিল: তোমাদের মত মানুষও মনে করে যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ কেহকেও পুনরুত্থিত করবেন না।
৮. এবং আমরা চেয়েছিলাম আকাশের তথ্য সংগ্রহ করতে। কিন্তু আমরা দেখতে পেলাম কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ।
৯. আর পূর্বে আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শোনার জন্য বসতাম। কিন্তু এখন কেহ সংবাদ শুনতে চাইলে সে তার ওপর নিক্ষেপের জন্য প্রস্তুত জ্বলন্ত উল্কাপিন্ডের সম্মুখীন হয়।
১০. আমরা জানি না, জগতবাসীর অমঙ্গলই অভিপ্রেত, নাকি তাদের পালনকর্তা তাদের মঙ্গল করার ইচ্ছা রাখেন।
১১. এবং আমাদের কতক সৎ কর্মপরায়ণ এবং কতক এর ব্যতিক্রম, আমরা ছিলাম বিভিন্ন পথের অনুসারী;
১২. এখন আমরা বুঝেছি যে, আমরা পৃথিবীতে আল্লাহকে পরাভূত করতে পারব না এবং পলায়ন করেও তাঁকে ব্যর্থ করতে পারব না।
১৩. আমরা যখন পথ-নির্দেশক বাণী শুনলাম, তখন তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলাম। যে ব্যক্তি তার রবের প্রতি ঈমান আনে, তার কোনো ক্ষতি কিংবা জোর জবরদস্তির আশংকা থাকবে না।
১৪. আমাদের কতক আত্মসমপর্ণকারী এবং কতক সীমা লংঘনকারী; যারা আত্মসমর্পণ করে তারা সুচিন্তিতভাবে সত্য পথ বেছে নেয়।
১৫. অপর পক্ষে সীমা লংঘনকারী তো জাহান্নামেরই ইন্ধন।
১৬. তারা যদি সত্য পথে প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাদেরকে আমি প্রচুর বারি বর্ষণের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করতাম
১৭. যাতে আমি তা দিয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করতে পারি। আর যে তার পালনকর্তার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাকে তিনি কঠিন আযাবে প্রবেশ করাবেন।
১৮. এবং এই যে মাসজিদসমূহ, আল্লাহরই জন্য। সুতরাং আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কেহকেও ডেক না।
১৯. আর এই যে, যখন আল্লাহর বান্দা তাঁকে ডাকার জন্য দণ্ডায়মান হল, তখন তারা তার নিকট ভিড় জমালো।
২০. বল: আমি আমার প্রতিপালককে ডাকি এবং তাঁর সাথে কেহকে শরীক করি না।
২১. বল: আমি তোমাদের মঙ্গল-অমঙ্গলের মালিক নই।
২২. বল: আল্লাহর শাস্তি হতে কেহ আমাকে রক্ষা করতে পারবেনা এবং আল্লাহ ব্যতীত আমি কোনো আশ্রয় পাব না।
২৩. কেবল আল্লাহর বাণী পৌঁছানো এবং তা প্রচার করাই আমার কাজ। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।
২৪. যখন তারা প্রতিশ্রুতি প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা বুঝতে পারবে, কে সাহায্যকারীর দিক দিয়ে দুর্বল এবং কে সংখ্যায় স্বল্প।
২৫. বল: আমি জানি না তোমাদেরকে যে শাস্তির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা কি আসন্ন, নাকি আমার রাব্ব এর জন্য কোনো দীর্ঘ মেয়াদ স্থির করবেন?
২৬. তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারও নিকট প্রকাশ করেন না
২৭. তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। সেক্ষেত্রে আল্লাহ রাসূলের অগ্রে এবং পশ্চাতে প্রহরী নিয়োজিত করেন,
২৮. রাসূলগণ তাদের পালনকর্তার বাণী পৌঁছে দিয়েছেন কি না জানার জন্য। রাসূলগণের নিকট যা আছে, তা তাঁর জ্ঞানগোচর এবং তিনি সমস্ত কিছুর বিস্তারিত হিসাব রাখেন।
আয়াত প্রকাশের মনোজগত: আলোচনা চলেছে মক্কার বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে, মুহাম্মদ যদি সত্যিই আল্লার নবী-রসূল হয়ে থাকেন, তবে তাকে পরীক্ষা করা হোক! যদি মুহাম্মদ পাশ করেন, তবে যা ভাবার ভাবা যাবে; আর যদি না করেন, তবে মুহাম্মদ এবং তার গোত্রসহ অনুসারীদের একঘরে করা ছাড়া উপায় থাকবে না তাদের।
ইতিহাস বলে, মুহাম্মদ সে পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি; আর মুহাম্মদের অলৌকিক গালগল্পের শুরুই হয় এই অকৃতকার্য হবার মনোকষ্ট থেকে। আশা করছি, অচিরেই এ বিষয়ে আয়াত চলে আসবে, ততক্ষন আমিও অপেক্ষায় রইলাম!
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন