আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বরাহেও আছেন, বিষ্ঠাতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি বোরখাতেও আছেন, বিকিনিতেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি জলাশয়েও আছেন, মলাশয়েও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি উটমূত্রেও আছেন, কামসূত্রেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি আরশেও আছেন, ঢেঁড়শেও আছেন # আল্যা সর্বব্যাপী – তিনি হাশরেও আছেন, বাসরেও আছেন

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৭

কোরআন যেভাবে অবতীর্ণ: মক্কা - তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকা (পর্ব ২৩)

লিখেছেন নরসুন্দর মানুষ


{মক্কায় মুহাম্মদ তার ধর্মমতের প্রচার করেছেন কয়েকটি ধাপে; গোপন প্রচারের সময়কাল ছিলো ৩ বছর। চতুর্থ বছরে ৩৯ নং প্রকাশের সূরা আল লাহাব/মাসাদ থেকে শতভাগ প্রকাশ্য প্রচার শুরু হয়। 

মুহাম্মদের চাচা ‘হামজা’, দ্বিতীয় খলিফা ‘উমর’, বড় চাচার ছেলে আবু সুফিয়ানের ভাই ‘উবায়দা’ সহ প্রায় সকল কুরাইশ নেতাদের পরিবারেই ইসলাম প্রবেশ করে চতুর্থ বছর থেকে সপ্তম বছরের বৃত্তের ভেতরেই! 

ইসলাম প্রচারের ৭ম বর্ষে এসে মুহাম্মদ নতুন করে প্রবল ধাক্কা পান, যা শুরু হবে আজকের পর্ব থেকেই; মদিনায় পলায়নের আগ পর্যন্ত এ ভূমিকম্পের ‍স্থিরতা আসবে না আর! ইসলাম গবেষকগণ মক্কা অধ্যায়কে ৪ ভাগে ভাগ করেন; আর তাই আমরাও এই সিরিজকে কিছুটা এগিয়ে নিয়ে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলাম; এবং এর নাম রাখা হলো: 

(মক্কা - তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকা)

এ অধ্যায়ে আমরা মুহাম্মদের না ঘরের না ঘাটের সময়কালীন প্রকাশ করা কোরআনের খতিয়ান তুলে ধরবো; যার সময়কাল মাত্র তিন বছর। যে সকল পাঠক সিরিজটি নিয়মিত পড়ছেন, ৭ম থেকে ২২ তম পর্ব পর্যন্ত অধ্যায়টিকে ‘মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে সাত বছর’ এর বদলে ‘মক্কা - দ্বিতীয় অধ্যায়: দেড় কিলোমিটারে চার বছর’ করে নিলেই সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টি। 


কোরআনের আয়াত বাতিল করার মতই এটি আমার সিদ্ধান্ত বদল বলতে পারেন। এমনিতেই কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্ত নেবার জন্য আমি মাঝে মধ্যেই ফাঁপরে* থাকি; বর্তমানেও ফাঁপর-কাল চলছে; তাই ঠিক করলাম নবী মুহাম্মদকে একটু ফাঁপরে না ফেললে মনের ঝাল মিটছে না; আর এই কাজে সাহায্য করার জন্য আমাদের সাথেই আছেন মুহাম্মদের দূর সম্পর্কের চাচা ‘আবু জেহেল’!

আবু জেহেল এখন কুরাইশদের প্রধান মুখপাত্র, বাদবাকি সকলকে সহযোগী বলা যেতে পারে। সকলে মিলেই সিদ্ধান্ত নিলেন, মুহাম্মদ সত্যিই নবী-রসূল কি না; পরীক্ষা করা দরকার! মক্কায় যারা ইহুদি-খ্রিষ্টান ধর্মমত পালন করে অথবা এ বিষয়ে জানে, তাদের জ্ঞানের পরিধি মাধ্যমিক পর্যায়ের; মুহাম্মদের তথ্যের মূল উৎস যেহেতু এরাই, তাই প্রশ্নপত্র করতে হবে উচ্চ মাধ্যমিকের!

ইয়াথরিবের (মদিনা) ইহুদী যাজকদের সাথে পরামর্শ করার জন্য লোক পাঠানো হলো; এক মাস সময়ের মধ্যে প্রশ্নপত্র চলে এলো মক্কায়! মুহাম্মদকে বলা হলো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে; অতি আত্মবিশ্বাসী মুহাম্মদ বললেন, কালই এসব প্রশ্নের উত্তর পাবেন! আমার মত তারও শুরু হলো ফাঁপর-কাল!

প্রশ্ন ১: আসহাবে কাহফ (গুহাবাসী) কারা ছিলেন?
প্রশ্ন ২: খিযিরের ঘটনাটি কী?
প্রশ্ন ৩: যুলকারনাইনের ঘটনাটি কী?

মুহাম্মদ বাসায় এসে উপলব্ধি করলেন, তিনটি প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই; যেহেতু তিনি জানেন না, তাই তার কল্পনার আল্লাহ/জিব্রাইল উত্তরও নিয়ে আসে না! সত্যিই চরম ফাঁপরে পড়লেন মুহাম্মদ; একে নবী হিসাবে তার সম্মান যায়-যায়, আর সাহাবীদের চোখও কাতর হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকেই!

৭ দিন পার হয়ে যায়; মুহাম্মদের বুজরুকি বুঝতে কুরাইশদের বাকি থাকে না। মুহাম্মদ সাধারণত কাউকে প্রশ্ন করে কিছু জানতে চাইতেন না; তিনি তার সমানে হওয়া আলোচনা থেকে তথ্য সংগ্রহ করতেন; মানুষ পড়তে পারার ক্ষমতা ছিলো তার সবচেয়ে বড় গুণ! মক্কায় তার তথ্য সংগ্রহের জায়গা ঘুরেও তিনি কোনো উত্তরের সন্ধান পেলেন না! 

১০ দিন পার হয়ে গেল; কুরাইশরা ভণ্ড নবী মুহাম্মদকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন; এবং দুটো ধাপে সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পদক্ষেপ চূড়ান্ত করলেন! এই সিরিজের আগামী পর্বে এই ‍সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন আমরা অবশ্যই দেখবো!

১৫ দিন পর মুহাম্মদ ৯৭ তম প্রকাশ: সূরা আল কাহফ (১৮) (গুহা) পুরোটা প্রকাশ করলেন; এবং প্রশ্ন তিনটির উত্তর দিলেন। সাথে বললেন, কুরাইশদের কাছে কথা দেবার সময় আমি আল্লার ওপর ভরসা করে কথা বলিনি, তাই আল্লাহ আমাকে ফাঁপরে রেখে এতদিন পর উত্তর পাঠালেন; এজন্য সকলকেই যে কোনো বিষয়ে কথা দেবার আগে ‘ইনশাল্লাহ’ বলা উচিত! 

যদি প্রশ্ন করেন: ১৫ দিন পরে মুহাম্মদ প্রশ্নের উত্তর কোথায় পেলেন? 

প্রিয় পাঠক, মাথা খাটান। সহজ প্রশ্ন! যদি বুঝতে পারেন, তবে সমস্যা মিটলো; তা না হলে আপনিও ফাঁপরে থাকুন আগামী পর্ব পর্যন্ত! 

৯৭ তম প্রকাশের ৯ থেকে ২৬ নং আয়াতে মুহাম্মদ প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন, ৬০ থেকে ৮২ নং আয়াতে মূসা নবীর উদাহরণ টেনে দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন; ৮৩ থেকে ৯২ নং আয়াতে তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বিলম্ব পরীক্ষা ফি হিসাবে আরও দুটো গল্প শুনিয়েছেন ২৭ থেকে ৪৪ ও ৯৩ থেকে ১০২ নং আয়াতে।

কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রকাশের আজ ২৩ তম পর্ব; এই পর্বে থাকছে মক্কা - তৃতীয় অধ্যায়: না ঘরকা না ঘাটকার ১ম এক অংশ। অনুবাদের ভাষা একাধিক বাংলা/ইংরেজি অনুবাদ অনুসারে নিজস্ব।}

নবী মুহাম্মদ দ্বারা ৯৭ তম প্রকাশ: সূরা আল কাহফ (১৮) (গুহা), ২৮নং আয়াত বাদে ১ থেকে ১১০ আয়াত:

১. সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাযিল করেছেন এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি।

২. একে করেছেন সুপ্রতিষ্ঠিত তাঁর কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য এবং বিশ্বাসীগণ, যারা সৎকাজ করে তাদেরকে এই সুসংবাদ দেয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উত্তম পুরস্কার

৩. তারা তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।

৪. এবং সতর্ক করার জন্য তাদেরকে যারা বলে যে, আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করেছেন।

৫. এ সম্পর্কে তাদের কোনো জ্ঞান নেই, আর তাদের পিতৃপুরুষদেরও ছিল না। তাদের মুখ থেকে বের হয় বড়ই সাংঘাতিক কথা। তারা যা বলে তা মিথ্যে ছাড়া কিছুই নয়।

৬. তারা এ বাণীতে (কুরআনে) বিশ্বাস না করার কারণে মনে হচ্ছে (মুহাম্মদ) তুমি তার দুঃখে তোমার নিজের জান বিনাশ করে দেবে।

৭. পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে, আমি সেগুলিকে ওর শোভনীয় করেছি মানুষকে এই পরীক্ষা করার জন্য যে, তাদের মধ্যে কর্মে কে শ্রেষ্ঠ?

৮. আমি অবশ্যই তার ওপর যা আছে, তা বৃক্ষলতাহীন শুকনো ধূলা মাটিতে পরিণত করব।

(প্রথম প্রশ্নের উত্তর)

৯. তুমি কি মনে কর যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে বিস্ময়কর ছিল?

১০. যুবকরা যখন গুহায় আশ্রয় নিল, তখন তারা বলেছিল: হে আমাদের পালনকর্তা, আপনি নিজ হতে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের কাজকর্ম সঠিকভাবে পরিচালনার ব্যবস্থা করুন।

১১. অতঃপর আমি তাদেরকে গুহায় কয়েক বছর ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে দিলাম।

১২. পরে তাদেরকে জাগ্রত করলাম এটা জানার জন্য যে, (গুহাবাসীরা আর যাদের যুগে তারা জাগ্রত হয়েছিল সে যুগের লোকেরা এ) দু'টি দলের মধ্যে কোনটি তাদের অবস্থানকালের সঠিক হিসাব করতে পারে।

১৩. আমি তাদের সঠিক বৃত্তান্ত তোমার কাছে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক, তারা তাদের প্রতিপালকের ওপর ঈমান এনেছিল আর আমি তাদের হিদায়াত (ঈমানী চেতনাকে) বৃদ্ধি করে দিয়েছিলাম।

১৪. আর আমি তাদের চিত্ত দৃঢ় করেছিলাম; তারা যখন উঠে দাঁড়াল, তখন বলল: আমাদের পালনকর্তা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর পালনকর্তা; আমরা কখনই তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করব না; যদি করি তাহলে তা অতিশয় গর্হিত হবে।

১৫. এরা আমাদেরই স্ব-জাতি, এরা তাঁর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে। তারা এদের সম্পর্কে প্রকাশ্য প্রমাণ উপস্থিত করে না কেন? যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তার চাইতে অধিক অন্যায়কারী আর কে?

১৬. তোমরা যখন তাদের হতে বিচ্ছিন্ন হলে এবং তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করে তাদের হতে, তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর; তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের কর্মসমূহকে ফলপ্রসূ করার ব্যবস্থা করবেন।

১৭. তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বাম দিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে শায়িত। এসবই আল্লাহর নিদর্শন। আল্লাহ যাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন, সে সৎ পথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনও তার কোন পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না।

১৮. তুমি মনে করতে, তারা জাগ্রত, কিন্তু তারা ছিল নিদ্রিত; আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডানে ও বামে এবং তাদের কুকুর ছিল সম্মুখের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে; তাকিয়ে তাদেরকে দেখলে তুমি পিছন ফিরে পালিয়ে যেতে এবং তাদের ভয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়তে।

১৯. এবং এভাবেই আমি তাদের জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পরের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করে; তাদের একজন বলল: তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? কেহ কেহ বলল: এক দিন অথবা এক দিনের কিছু অংশ; কেহ কেহ বলল: তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ তা তোমাদের রাব্বই ভাল জানেন; এখন তোমাদের একজনকে তোমাদের এই মুদ্রাসহ নগরে প্রেরণ কর; সে যেন দেখে কোন্ খাদ্য উত্তম এবং তা হতে যেন কিছু খাদ্য নিয়ে আসে তোমাদের জন্য; সে যেন বিচক্ষণতার সাথে কাজ করে এবং কিছুতেই যেন তোমাদের সম্বন্ধে কেহকেও কিছু জানতে না দেয়।

২০. তারা যদি তোমাদের বিষয় জানতে পারে, তাহলে তোমাদেরকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করবে অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নিবে এবং সেক্ষেত্রে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।

২১. এবং এভাবে আমি মানুষকে তাদের বিষয় জানিয়ে দিলাম যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য এবং কিয়ামাতে কোনো সন্দেহ নেই; যখন তারা তাদের কর্তব্য বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করছিল তখন অনেকে বলল: তাদের ওপর সৌধ নির্মাণ কর; তাদের রাব্ব তাদের বিষয় ভাল জানেন; তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল তারা বলল: আমরা তো নিশ্চয়ই তাদের উপর মাসজিদ নির্মাণ করব।

২২. অজানা বিষয়ে অনুমানের উপর নির্ভর করে কেহ কেহ বলে: তারা ছিল তিন জন, তাদের চতুর্থটি ছিল তাদের কুকুর; এবং কেহ কেহ বলে: তারা ছিল পাঁচ জন, ষষ্ঠটি ছিল তাদের কুকুর; আবার কেহ কেহ বলে: তারা ছিল সাত জন, অষ্টমটি ছিল তাদের কুকুর; বল: আমার রাব্বই তাদের সংখ্যা ভাল জানেন; তাদের সংখ্যা অল্প কয়েকজনই জানে; সাধারণ আলোচনা ব্যতীত তুমি তাদের বিষয়ে বিতর্ক কর না এবং তাদের কেহকেও তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ কর না।

২৩. কোন বিষয় সম্পর্কে কক্ষনো বল না যে, ‘ওটা আমি আগামীকাল করব।’

২৪. ‘আল্লাহ ইচ্ছা করলে’ -এই কথা না বলে যদি ভুলে যাও, তাহলে তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর ও বল: সম্ভবতঃ আমার প্রতিপালক আমাকে গুহাবাসীর বিবরণ অপেক্ষা সত্যের নিকটতর পথ নির্দেশ করবেন।

২৫. আর তারা তাদের গুহায় অবস্থান করেছে তিনশ বছর এবং এর সাথে অতিরিক্ত হয়েছিল নয় বছর।

২৬. তুমি বলঃ তারা কত কাল ছিল, তা আল্লাহই ভাল জানেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অজ্ঞাত বিষয়ের জ্ঞান তাঁরই; তিনি কত সুন্দর দ্রষ্টা ও শ্রোতা! তিনি ছাড়া তাদের অন্য কোন অভিভাবক নেই; তিনি কেহকেও নিজ কর্তৃত্বে শরীক করেন না।

(বোনাস গল্প - এক)

২৭. তুমি তোমার প্রতি প্রত্যাদিষ্ট তোমার প্রতিপালকের কিতাব আবৃত্তি কর; তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেহ নেই; তুমি কখনই তাঁকে ব্যতীত অন্য কোন আশ্রয় পাবে না।

২৯. আর বলে দাও, ‘সত্য এসেছে তোমাদের রব্বের নিকট হতে, কাজেই যার ইচ্ছে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছে সত্যকে অস্বীকার করুক।’ আমি (অস্বীকারকারী) যালিমদের জন্য আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি যার লেলিহান শিখা তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে গলিত শিশার ন্যায় পানি দেয়া হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল দগ্ধ করবে, কতই না নিকৃষ্ট পানীয়! আর কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল!

৩০. যারা বিশ্বাস করে এবং সৎ কাজ করে আমি তাদেরকে পুরস্কৃত করি, যে সৎ কাজ করে আমি তার কর্মফল নষ্ট করি না।

৩১. তাদেরই জন্য আছে স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাদেরকে স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে, তারা পরিধান করবে সূক্ষ্ম ও স্থূল রেশমের সবুজ বস্ত্র ও সমাসীন হবে সুসজ্জিত আসনে; কত সুন্দর পুরস্কার ও উত্তম আশ্রয়স্থল!

৩২. তুমি তাদের কাছে দু'ব্যক্তির দৃষ্টান্ত বর্ণনা কর, যাদের একজনকে আমি দিয়েছিলাম দুটি আঙুরের বাগান, আর ওগুলোকে খেজুর গাছ দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলাম আর ও দুটির মাঝে দিয়েছিলাম শষ্যক্ষেত।

৩৩. উভয় উদ্যানই ফল দান করত এবং এতে কোন ক্রটি করত না এবং উভয়ের ফাঁকে ফাঁকে প্রবাহিত করেছিলাম ঝর্ণাধারা।

৩৪. লোকটির উৎপাদন ছিল প্রচুর। একদিন কথাবার্তা বলার সময় সে তার প্রতিবেশীকে বলল, ‘আমি সম্পদে তোমা হতে শ্রেষ্ঠ, আর জনবলে তোমা হতে শক্তিশালী।’

৩৫. নিজের প্রতি যুলম করে সে তার বাগানে প্রবেশ করল। সে বলল, ‘আমি ধারণা করি না যে, এটা কোনোদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।

৩৬. আমি মনে করি না যে, কিয়ামাত হবে। আর যদি আমাকে আমার প্রতিপালকের কাছে ফিরিয়ে নেয়া হয়ই, তাহলে অবশ্য অবশ্যই আমি পরিবর্তে আরো উৎকৃষ্ট স্থান পাব।

৩৭. কথার প্রসঙ্গ টেনে তার সাথী বলল, ‘তুমি কি তাঁকে অস্বীকার করছ যিনি তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর বীর্য হতে, অতঃপর তোমাকে পূর্ণাঙ্গ দেহসম্পন্ন মানুষ বানিয়ে দিয়েছেন?

৩৮. কিন্তু আমি তো এ কথাই বলি, আল্লাহই আমার পালনকর্তা এবং আমি কাউকে আমার পালনকর্তার শরীক মানি না।

৩৯. তুমি যখন তোমার বাগানে প্রবেশ করলে, তখন কেন বললে না, ‘আল্লাহ যা ইচ্ছে করেছেন (তা-ই হয়েছে), আল্লাহ ছাড়া কারো কোনো শক্তি নেই। যদিও তুমি আমাকে ধনে-জনে তোমার চেয়ে কম দেখ,

৪০. সম্ভবতঃ আমার প্রতিপালক আমাকে তোমার বাগান অপেক্ষাও উত্তম কিছু দান করবেন আর তোমার বাগানের ওপর আসমান হতে কোনো বিপদ পাঠিয়ে দেবেন, ফলে তা শূন্য ময়দানে পরিণত হবে।

৪১. কিংবা তার পানি ভূ-গর্ভে চলে যাবে, ফলে তুমি কক্ষনো তার খোঁজ পাবে না।’

৪২. ধ্বংস তার ফল-ফসলকে ঘিরে ফেলল, আর তাতে সে যা খরচ করেছিল, তার জন্য হাত মলতে লাগল। তা ছিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ভূমিসাৎ হয়ে গিয়েছিল। সে বলল, ‘হায়, আমি যদি আমার পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক না করতাম!’

৪৩. এবং আল্লাহ ব্যতীত তাকে সাহায্য করার কোনো লোকজন ছিল না এবং সে নিজেও প্রতিকার করতে পারল না।

৪৪. এ ক্ষেত্রে সাহায্য করার অধিকার আল্লাহরই যিনি সত্য; পুরস্কার দানে ও পরিণাম নির্ধারণে তিনিই শ্রেষ্ঠ।

৪৫. তাদের কাছে পেশ কর পার্থিব জীবনের উপমা - এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যদ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়, অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়; আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।

৪৬. ধন-সম্পদ আর সন্তানাদি পার্থিব জীবনের শোভা-সৌন্দর্য, আর তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার লাভের জন্য স্থায়ী সৎকাজ হল উৎকৃষ্ট আর আকাঙ্ক্ষা পোষণের ভিত্তি হিসেবেও উত্তম। 

৪৭. আর যেদিন আমি পাহাড়কে চলমান করব এবং তুমি যমীনকে দেখতে পাবে দৃশ্যমান, আর আমি তাদেরকে একত্র করব। অতঃপর তাদের কাউকেই ছাড়ব না।

৪৮. তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের সামনে সারিবদ্ধভাবে হাজির করা হবে (আর তাদেরকে বলা হবে), ‘তোমরা আমার কাছে এসেছ তেমনিভাবে যেভাবে আমি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু তোমরা তো ধারণা করেছিলে যে, আমার কাছে তোমাদের সাক্ষাতের নির্দিষ্টকাল আমি কক্ষনো উপস্থিত করব না।’

৪৯. এবং সেদিন উপস্থিত করা হবে ‘আমলনামা এবং তাতে যা লিপিবদ্ধ আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদেরকে দেখবে আতংকগ্রস্ত এবং তারা বলবেঃ হায়! দুর্ভোগ আমাদের! এটা কেমন গ্রন্থ! ওটা তো ছোট বড় কিছুই বাদ দেয়নি, বরং ওটা সমস্ত হিসাব রেখেছে। তারা তাদের কৃতকর্ম সম্মুখে উপস্থিত পাবে; তোমার রাব্ব কারও প্রতি যুলম করেন না। 

৫০. স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছিলাম, ‘আদামকে সাজদাহ কর।’তখন ইবলিশ ছাড়া তারা সবাই সাজদাহ করল। সে ছিল জ্বীনদের অন্তর্ভুক্ত। সে তার প্রতিপালকের নির্দেশ লঙ্ঘন করল। এতদসত্ত্বেও তোমরা কি আমাকে বাদ দিয়ে তাকে আর তার বংশধরকে অভিভাবক বানিয়ে নিচ্ছ? অথচ তারা তোমাদের দুশমন। যালিমদের এই বিনিময় বড়ই নিকৃষ্ট!

৫১. আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকালে আমি তাদেরকে ডাকিনি এবং তাদের সৃজনকালেও নয়, এবং বিভ্রান্তকারীদের সাহায্য গ্রহণ করা আমার কাজ নয়।

৫২. সেদিন তিনি বলবেন, ‘তোমরা যাদেরকে আমার শরীক মনে করতে তাদেরকে ডাক।’তখন তারা তাদেরকে ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের ডাকে সাড়া দেবে না। আর আমি উভয় দলের মাঝে রেখে দেব এক ধ্বংস-গহ্বর।

৫৩. অপরাধীরা আগুন অবলোকন করে আশংকা করবে, যেন ওরা ওতেই পতিত হবে, বস্তুতঃ ওটা হতে ওরা পরিত্রাণ পাবে না।

৫৪. আমি মানুষের জন্য এই কুরআনে বিভিন্ন উপমার দ্বারা আমার বাণী বিশদভাবে বর্ণনা করেছি; মানুষ অধিকাংশ ব্যাপারেই বিতর্ক প্রিয়।

৫৫. তাদের কাছে যখন পথের নির্দেশ আসে তখন ঈমান আনতে আর তাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাইতে মানুষকে এ ছাড়া আর অন্য কিছুই বাধা দেয় না যে, (তারা অপেক্ষায় থাকে যে) অতীতের জাতিগুলোর সঙ্গে যা করা হয়েছে, কখন তাদের সঙ্গেও তাই করা হবে অথবা কখন ‘আযাবকে তারা সরাসরি সামনে দেখতে পাবে।

৫৬. আমি রসূলদেরকে পাঠিয়ে থাকি একমাত্র সুসংবাদদাতা আর সতর্ককারী হিসেবে। কিন্তু কাফিরগণ মিথ্যা যুক্তি পেশ করে বিতর্ক করছে তা দিয়ে সত্যকে দুর্বল করে দেয়ার উদ্দেশে, আর তারা আমার নিদর্শন ও ভয় দেখানোকে হাসি-তামাশার বিষয় বানিয়ে নিয়েছে।

৫৭. কোনো ব্যক্তিকে তার রবের নিদর্শনাবলী স্মরণ করিয়ে দেয়ার পর সে যদি তা হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায়, তাহলে তার অপেক্ষা অধিক সীমা লংঘনকারী আর কে? আমি তাদের অন্তরের ওপর আবরণ দিয়েছি, যেন তারা কুরআন বুঝতে না পারে এবং তাদেরকে বধির করেছি; তুমি তাদেরকে সৎ পথে আহবান করলেও তারা কখনও সৎ পথে আসবে না।

৫৮. এবং তোমার প্রতিপালক ক্ষমাশীল, দয়াবান। তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদেরকে শাস্তি দিতে চাইলে তিনি তাদের শাস্তি ত্বরান্বিত করতেন; কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে এক প্রতিশ্রুত মুহুর্ত, যা হতে তাদের পরিত্রাণ নেই।

৫৯. ঐ সব জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম যখন তারা বাড়াবাড়ি করেছিল, আর তাদের ধ্বংস সাধনের জন্য একটা প্রতিশ্রুত সময় স্থির করেছিলাম।

(দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর)

৬০. স্মরণ কর সেই সময়ের কথা যখন মূসা তার সঙ্গীকে বলেছিল: দুই সমুদ্রের সংযোগস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না, আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব।

৬১. তারা যখন উভয়ের সঙ্গমস্থলে পৌঁছল, তারা নিজেদের মাছের কথা ভুলে গেল; ওটা সুরঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে নেমে গেল।

৬২. যখন তারা আরও অগ্রসর হল, মূসা তার সঙ্গীকে বলল: আমাদের প্রাতঃরাশ নিয়ে এসো, আমরা তো আমাদের এই সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

৬৩. সে বলল: আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, আমরা যখন শিলাখন্ডে বিশ্রাম করছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শাইতানই এ কথা বলতে আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল; মাছটি আশ্চর্যজনকভাবে নিজের পথ করে নেমে গেল সমুদ্রে।

৬৪. মূসা বলল: আমরা তো ঐ স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম; অতঃপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল।

৬৫. অতঃপর তারা সাক্ষাৎ পেল আমার দাসদের মধ্যে একজনের, যাকে আমি আমার নিকট হতে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান।

৬৬. মূসা তাকে বলল: সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে তা হতে আমাকে শিক্ষা দিবেন - এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?

৬৭. সে বলল: তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারবে না।

৬৮. যে বিষয় তোমার জ্ঞানায়ত্ত নয়, সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ করবে কেমন করে?

৬৯. মূসা বলল: আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না।

৭০. সে বলল: আচ্ছা, তুমি যদি আমার অনুসরণ করই, তাহলে কোনো বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন কর না, যতক্ষণ না আমি সে সম্বন্ধে তোমাকে কিছু বলি।

৭১. অতঃপর তারা যাত্রা শুরু করল। পরে যখন তারা নৌকায় আরোহণ করল, তখন সে তাতে ছিদ্র করে দিল; মূসা বলল: আপনি কি আরোহীদেরকে নিমজ্জিত করে দেয়ার জন্য তাতে ছিদ্র করলেন? আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।

৭২. সে বলল: আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সঙ্গে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না?

৭৩. মূসা বলল: আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অত্যধিক কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।

৭৪. অতঃপর তারা চলতে লাগল, চলতে চলতে তাদের সাথে এক বালকের সাক্ষাৎ হলে সে তাকে হত্যা করল; তখন মূসা বলল: আপনি এক নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন হত্যার অপরাধ ছাড়াই! আপনি তো এক গুরুতর অন্যায় কাজ করলেন।

৭৫. সে বলল: আমি কি বলিনি যে, তুমি আমার সাথে কিছুতেই ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না?

৭৬. (মূসা) বলল: এরপর যদি আমি আপনাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করি, তাহলে আপনি আমাকে সঙ্গে রাখবেন না; তখন আমার ওযর আপত্তি চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যাবে।

৭৭. অতঃপর উভয়ে চলতে লাগল; চলতে চলতে তারা এক জনপদের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছল এবং তাদের নিকট খাদ্য চাইল। কিন্তু তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল; অতঃপর সেখানে তারা এক পতনোম্মুখ প্রাচীর দেখতে পেল এবং সে ওটাকে সুদৃঢ় করে দিল; (মূসা) বলল: আপনি তো ইচ্ছা করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারতেন।

৭৮. সে বলল: এখানেই তোমার ও আমার মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হল; যে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ করতে পারনি, আমি তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করছি।

৭৯. নৌকাটির ব্যাপারে - (কথা এই যে), ওটা ছিল কতিপয় দরিদ্র ব্যক্তির, তারা সমুদ্রে জীবিকা অন্বেষণ করত; আমি ইচ্ছা করলাম নৌকাটিকে ক্রটিযুক্ত করতে; কারণ তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে বল প্রয়োগে প্রত্যেক (নিখুত) নৌকা ছিনিয়ে নিত।

৮০. আর কিশোরটি, তার মাতাপিতা ছিল ঈমানদার - আমি আশংকা করলাম যে, সে বিদ্রোহাচরণ ও কুফরীর দ্বারা তাদের বিব্রত করবে।

৮১. অতঃপর আমি চাইলাম যে, তাদের রাব্ব যেন তাদেরকে তার পরিবর্তে এক সন্তান দান করেন, যে হবে পবিত্রতায় মহত্তর ও ভক্তি ভালবাসায় ঘনিষ্টতর।

৮২. আর ঐ প্রাচীরটি - ওটা ছিল নগরবাসী দুই পিতৃহীন কিশোরের, এর নিম্নদেশে আছে তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিল সৎকর্ম পরায়ণ। সুতরাং তোমার প্রতিপালক দয়াপরবশ হয়ে ইচ্ছা করলেন যে, তারা বয়ঃপ্রাপ্ত হোক এবং তারা তোমার রবের দেয়া তাদের ধনভাণ্ডার উদ্ধার করুক; আমি নিজ হতে কিছু করিনি; তুমি যে বিষয়ে ধৈর্য ধারণে অপারগ হয়েছিলে এটাই তার ব্যাখ্যা।

(তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর)

৮৩. তারা তোমাকে যুলকারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; তুমি বলে দাও: আমি তোমাদের নিকট তার বিষয় বর্ণনা করব।

৮৪. আমি তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায় ও পন্থা নির্দেশ করেছিলাম।

৮৫. অতঃপর সে একটি পথ অবলম্বন করল।

৮৬. চলতে চলতে যখন সে সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছল তখন সে সূর্যকে এক পঙ্কিল পানিতে অস্ত যেতে দেখল এবং সে সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল; আমি বললাম: হে যুলকারনাইন! তুমি তাদেরকে শাস্তি দিতে পার অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে

৮৭. সে বলল: যে কেহ সীমা লংঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দিব। অতঃপর সে তার রবের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে এবং তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন।

৮৮. তবে যে বিশ্বাস করে এবং সৎ কাজ করে তার জন্য প্রতিদান স্বরূপ আছে কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দিব।

৮৯. আবার সে এক পথ ধরল।

৯০. চলতে চলতে যখন সে সূর্যোদয় স্থলে পৌঁছল, তখন সে দেখলো - ওটা এমন এক সম্প্রদায়ের ওপর উদিত হচ্ছে যাদের জন্য সূর্য তাপ হতে আত্মরক্ষার কোন অন্তরাল আমি সৃষ্টি করিনি।

৯১. প্রকৃত ঘটনা এটাই যে, তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি।

৯২. আবার সে এক পথ ধরল।

(বোনাস গল্প - দুই)

৯৩. চলতে চলতে সে যখন পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে পেল, যারা তার কথা মোটেই বুঝতে পারছিল না।

৯৪. তারা বলল: হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে; আমরা কি তোমাকে রাজস্ব দিব এই শর্তে যে, তুমি আমাদের ও তাদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দেবে?

৯৫. সে বলল: আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উৎকৃষ্ট; সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে এক মাযবূত প্রাচীর গড়ে দিব।

৯৬. তোমরা আমার নিকট লৌহপিণ্ডসমূহ আনয়ন কর; অতঃপর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে যখন লৌহস্তূপ দুই পর্বতের সমান হল তখন সে বলল: তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। যখন ওটা অগ্নিবৎ উত্তপ্ত হল তখন সে বলল: তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো, আমি ওটা ঢেলে দিই ওর উপর।

৯৭. এরপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তা অতিক্রম করতে পারল না বা ভেদ করতে পারল না।

৯৮. যুলকারনাইন বলল: এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ; যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি ওটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য।

৯৯. সেদিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দেব একের পর এক তরঙ্গের আকারে এবং শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে; অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করব।

১০০. আর সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট

১০১. যাদের চক্ষু ছিল অন্ধ, আমার নিদর্শনের প্রতি এবং যারা শুনতেও ছিল অপারগ।

১০২. যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করেছে, তারা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে? আমি সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের অভ্যর্থনার জন্য প্রস্তুত রেখেছি জাহান্নাম।

১০৩. বল: আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব কর্মে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাপারে?

১০৪. ওরাই তারা, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎ কাজ করছে।

১০৫. ওরাই তারা, যারা অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী ও তাঁর সাথে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কাজ নিষ্ফল হয়ে যায়; সুতরাং কিয়ামাত দিবসে তাদের জন্য কোনো ওজনের ব্যবস্থা রাখব না।

১০৬. জাহান্নাম-এটাই তাদের প্রতিফল, যেহেতু তারা কুফরী করেছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলগণকে গ্রহণ করেছে বিদ্রূপের বিষয়স্বরূপ।

১০৭. যারা ঈমান আনে ও সৎ কাজ করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে জান্নাতুল ফিরদাউস।

১০৮. সেখানে তারা স্থায়ী হবে; তা হতে স্থানান্তর কামনা করবেনা।

১০৯. বল: আমার প্রতিপালকের কথা লিপিবদ্ধ করার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয় তাহলেও আমার প্রতিপালকের কথা শেষ হবার পূর্বেই সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে - সাহায্যার্থে এর অনুরূপ আরও সমুদ্র নিয়ে এলেও। 

১১০. বল: আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। সুতরাং যে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎ কাজ করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদাতে কাউকেও শরীক না করে।

আয়াত প্রকাশের মনোজগত: মুহাম্মদ ধরা পড়েই গেলেন; এবার কুরাইশরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন; তাকে কি হত্যা করা হবে? অথবা তাকে বহিষ্কার করা হবে মক্কা থেকে? নাকি অন্য কোনো পদক্ষেপ নেবে কুরাইশরা! মুহাম্মদের আয়াত প্রকাশের ভাষা কি পাল্টে যাবে? বিগত সাত বছরে আমরা ৯৬ টি প্রকাশ পেয়েছি মুহাম্মদ থেকে, এ সংখ্যার অনুপাত কি বাড়বে আগামীতে? 

সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ফিরছি দ্রুত, শুধু ফাঁপর সময়টুকু কাটুক!

ধন্যবাদ।

‘ফাঁপর’ একটি আঞ্চলিক শব্দ, এটি ঝামেলা-যন্ত্রণা-চাপ-ফাঁদ-দমবন্ধ শব্দগুলোর মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন