লিখেছেন ক্যাটম্যান
একদিন বাজারে গিয়েছি মাছ ও তরিতরকারি কিনতে। প্রথমে মাছ কেনার উদ্দেশ্যে মেছুয়া বাজারে ঢুকলাম। গিয়ে দেখি, হরেকরকম মাছ নিয়ে নিকারিরা বসে আছে। মনস্থির করলাম চাপিলা মাছ কিনব, তাই একজন নিকারির নিকট চাপিলা মাছ দেখে এগিয়ে গেলাম। মাছগুলো টাটকা কি না, তা যাচাই করতে আঙুলের সাহায্যে কয়েকটি মাছ নেড়েচেড়ে দেখি যে, অধিকাংশ মাছ নরম হয়ে গেছে। তার মাঝে পচা-গলা মাছও রয়েছে। মাছের এমন করুণ অবস্থা দেখে আমি তার মাছ না কিনে সামনে পা বাড়ালাম। এভাবে আমার চলে যাওয়া দেখে সঙ্গে সঙ্গে নিকারি বলে উঠল, 'কি ভাই মাছ কিনবেন না?' আমি তাকে বললাম, 'আপনার মাছ পচা, তাই কেনা সম্ভব নয়।' নিকারি বলল, 'দুই-একটা মাছ পচছে তো কী হইছে, তাই বইলা কি এই পচা মাছ বিক্রি হইব না? এই পচা মাছও বিক্রি হইব; কিছুই পইড়া থাকব না, থাকব শুধু আল্লাহর নাম।'
নিকারির মুখে এমন জ্ঞানগর্ভ বাণী শুনে আমি থমকে গেলাম, আর ভাবলাম, তবে কি আল্লাহর নাম নিকারির পচা মাছের চেয়েও পচা? আল্লাহর নাম কি এতই বাজে যে, নিকারির পচা মাছ খদ্দেররা গ্রহণ করবে, অথচ আল্লাহর নামকে কোনো খদ্দের গ্রহণ করবে না? এমন ভাবনায় মগ্ন হয়ে এবার ঢুকলাম তরিতরকারির বাজারে। আলু কেনার উদ্দেশ্যে আলুথালু গোছের একজন আলু-ব্যাপারীর দোকানে হাজির হলাম। আলু-ব্যাপারীকে বললাম, 'আমাকে এক কেজি আলু মেপে দিন তো।' আমার চাহিদা শুনে ব্যাপারী তার দাঁড়িপাল্লায় ভালো ও পচা আলুর বাছবিচার না করে এক কেজি আলু মেপে দেয়ার উপক্রম করলেন। আমি তাকে তার দাঁড়িপাল্লা থেকে পচা আলুগুলো বাদ দিতে বলায় তিনি বললেন, 'সামান্য পচা বইলা কি এই আলু বিক্রি হইব না? এই পচা আলুও বিক্রি হইব; কিছুই পইড়া থাকব না, থাকব শুধু আল্লাহর নাম।'
এবার আলু-ব্যাপারীর মুখে এমন জ্ঞানগর্ভ বাণী শুনে আমি আবার থমকে গেলাম, আর ভাবলাম, তবে কি আল্লাহর নাম ব্যাপারীর পচা আলুর চেয়েও পচা? আল্লাহর নাম কি এতই বাজে যে, ব্যাপারীর পচা আলু খদ্দেররা গ্রহণ করবে অথচ আল্লাহর নামকে কোনো খদ্দের গ্রহণ করবে না।
এমন ভাবনায় বিস্রস্ত হয়ে এবার বেগুন কিনতে একজন বেগুন-বিক্রেতার নিকট হাজির হলাম। গিয়ে দেখি তার বেগুনের ঝাঁকায় ভালো বেগুনের মাঝে পোকায় খাওয়া বেগুনও রয়েছে। বেগুন বিক্রেতাকে বললাম, 'পোকায় খাওয়া বেগুন বাদ দিয়ে আমাকে ভালো মানের এক কেজি বেগুন মেপে দিন তো।' আমার এমন চাহিদার বিপরীতে তিনি বললেন, 'একটু পোকায় খাইছে বইলা কি এই বেগুন বিক্রি হইব না? এই পোকায় খাওয়া বেগুনও বিক্রি হইব; কিছুই পইড়া থাকব না, থাকব শুধু আল্লাহর নাম।'
এবার বেগুন-বিক্রেতার মুখে এমন জ্ঞানগর্ভ বাণী শুনে আমি আবারও থমকে গেলাম, আর ভাবলাম, তবে কি আল্লাহর নাম ব্যাপারীর পোকায় খাওয়া বেগুনের চেয়েও পোকাক্রান্ত? আল্লাহর নাম কি এতই বাজে যে, ব্যাপারীর পোকায় খাওয়া বেগুন খদ্দেররা গ্রহণ করবে অথচ আল্লাহর নামকে কোনো খদ্দের গ্রহণ করবে না। পতিতারও তো খদ্দের জোটে, তবে কি আল্লাহর নামের জন্যে একজন খদ্দেরও জুটবে না? মানবসমাজে পতিতারও আবেদন রয়েছে, কিন্তু আল্লাহর নামের কি কোনোই আবেদন নেই? আল্লাহর নাম পচা মাছ, পচা আলু, পোকায় খাওয়া বেগুন ও এমনকি পতিতাদের চেয়ে এতটাই খারাপ যে, মানবসমাজে এত কিছু থাকতে শুধু আল্লাহর নাম অবহেলাভরে পড়ে থাকবে। তবে কে এই আল্লাহ? কী তার পরিচয়? এমন কী বিশেষত্ব তার রয়েছে, যার কারণে আমাকে নিকারির মুখে, ব্যাপারীর মুখে অমন জ্ঞানগর্ভ বাণী শুনতে হলো। তাই আর কালক্ষেপণ না করে তারই অনুসন্ধানে ব্যাপৃত হলাম। পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান শেষে আল্লাহর যে সমস্ত বিশেষত্ব খুঁজে পেলাম, তা জানার পর থেকে মনে হলো, তার নাম শুধু অবহেলাভরে পড়ে থাকার বিষয় নয়, ঘৃণাসহকারে তা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপের যোগ্যও বটে।
কারণ, যে-আল্লাহর নাম ভাঙিয়ে প্রতারক মুহম্মদ প্রতারণাপূর্ণ ইসলামধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে, যে-আল্লাহর নাম ভাঙিয়ে লুটেরা মুহম্মদ অসহায় মানুষের মূল্যবান সম্পদ লুট করেছে, যে-আল্লাহর নাম ভাঙিয়ে খুনী মুহম্মদ অসংখ্য মানুষকে খুন করেছে, যে-আল্লাহর নাম ভাঙিয়ে নিপীড়ক মুহম্মদ অজস্র নারী-পুরুষকে জোরপূর্বক দাস-দাসী বানিয়ে নির্মমভাবে নিপীড়ন করেছে, যে-আল্লাহর নাম ভাঙিয়ে ধর্ষক মুহম্মদ অজস্র নারীকে ধর্ষণ করেছে, যে-আল্লাহর নাম ভাঙিয়ে অপরাধী মুহম্মদ তার কৃত যাবতীয় অপরাধের বৈধতা আদায় করেছে, যে-আল্লাহর নাম ভাঙিয়ে সন্ত্রাসী মুহম্মদের সন্ত্রাসবাদের অনুসারী ইসলামি সন্ত্রাসবাদীগণ বিশ্বব্যাপী নিরীহ মানুষের ওপরে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণ চালিয়ে আসছে, যে-আল্লাহ মানুষের দুঃখদুর্দশা লাঘবে অপারগ, যে-আল্লাহ মানুষে মানুষে বিভেদের কারণ, যে-আল্লাহ প্রতিক্রিয়াশীল পরজীবী সম্প্রদায়ের পুঁজি, যে-আল্লাহ সার্বিক প্রগতির অন্তরায়, তেমন ঘৃণার্হ আল্লাহর নাম চরম ঘৃণায় বর্জন করাই সমীচীন। আর তাই মানবসমাজে মানসম্পন্ন অথবা নিম্নমানসম্পন্ন বিষয়বস্তুর ব্যাপক অথবা কিঞ্চিৎ গ্রহণযোগ্যতা থাকলেও অকেজো ও অপ্রয়োজনীয় আল্লাহর নামের কোনোই গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই নিকারি ও সব্জি-ব্যাপারীগণ তাদের নিম্নমানসম্পন্ন পণ্যের খদ্দের প্রাপ্তির বিষয়ে আশাবাদী হলেও আল্লাহর নাম যে আস্তাকুঁড়ে অবহেলাভরে পড়ে থাকবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন। যদিও আমি টাকা দিয়ে নিকারির পচা মাছ, ব্যাপারীর পচা আলু ও পোকাক্রান্ত বেগুন কিনিনি, তবে বিনা টাকায় তাদের নিকট থেকে অমন টাটকা জ্ঞান লাভ করায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার চোখ-নাক-কান বুজে এল। তাই কোনোরকম কার্পণ্য না করে নিকারি ও সব্জি-ব্যাপারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে আমি মনে মনে বললাম, 'শুকুর আলহামদুলিনিকারি ওয়া শুকুর আলহামদুলিব্যাপারী।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন