লিখেছেন গোলাপ
"যে মুহাম্মদ (সাঃ) কে জানে সে ইসলাম জানে, যে তাঁকে জানে না সে ইসলাম জানে না।"
অমানুষিক নৃশংসতায় 'খায়বার' বিজয় সম্পন্ন করার পর স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কী প্রক্রিয়ায় খায়বারের অদূরে অবস্থিত 'ফাদাক' নামের এক সমৃদ্ধ মরূদ্যানের লোকদের ওপর তাঁর পরবর্তী আগ্রাসন চালিয়েছিলেন; ফাদাকের ভীত-সন্ত্রস্ত জনপদবাসী তাঁদের মা-বোন-স্ত্রী-কন্যা ও শিশুদের দাস ও যৌনদাসী হিসেবে রূপান্তরিত হবার অভিশাপ থেকে মুক্তি ও নিজেদের প্রাণরক্ষার প্রচেষ্টায় মুহাম্মদের কাছে কী প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন; কী শর্তে মুহাম্মদ তাঁদেরকে বিতাড়িত না করে তাঁদের পৈতৃক ভিটে-মাটিতে থাকার অনুমতি প্রদান করেছিলেন; কী কারণে সন্ত্রাসী কায়দায় লুণ্ঠিত এই ভূমিটি মুহাম্মদ একাই হস্তগত করেছিলেন; তার আলোচনা আগের পর্বে করা হয়েছে।
ফাদাকের এই লুটের মালের ইতিহাসের পর্যালোচনায় যে বিষয়টি নিয়ে আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত মুসলিম ও অমুসলিম ঐতিহাসিকদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই, তা হলো:
(১) এই সম্পত্তিটি মুহাম্মদ একাই হস্তগত করেছিলেন আল্লাহর রেফারেন্সে তাঁরই নির্দেশিত এক অনুশাসনের মাধ্যমে (কুরান ৫৯:৬-৭);
(২) মুহাম্মদের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই মুসলিম জাহানের প্রথম খুলাফায়ে রাশেদিনআবু বকর ইবনে কুহাফা “এক বিশেষ অজুহাতে” এই সম্পত্তিটি বাজেয়াপ্ত করেছিলেন, অতঃপর মুহাম্মদের প্রাণপ্রিয় কন্যা ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ তাঁর পিতার এই সম্পত্তিটি ফিরে পাওয়ার জন্য ব্যক্তিগতভাবে নিজে এবং তাঁর স্বামী আলী ইবনে আবু তালিব ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের সহায়তায় আবু বকরের কাছে বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও আবু বকর তাঁকে এই সম্পত্তিটি ফেরত দেননি।
যে বিষয়টি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে, তা হলো:
(১) আবু বকর ইবনে কুহাফা যে অজুহাতে মুহাম্মদের উত্তরাধিকারী ফাতিমা ও তাঁর পরিবারকে এই সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলেন, তা কি ছিল ন্যায়সঙ্গত?
(২) নাকি আবু বকর যে-অজুহাতের মাধ্যমে নবী-কন্যা ফাতিমা ও তাঁর একান্ত পরিবার-সদস্যদের ন্যায্য উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করার ইতিহাসের সূচনা করেছিলেন, তা ছিল মুহাম্মদের পরিবারের প্রতি তার চরম অবমাননা, অন্যায় ও প্রতিহিংসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত?
মুহাম্মদ তাঁর জীবদ্দশায় এই লুটের মালটি (গনিমত) তাঁর কন্যা ফাতিমাকে দান করেছিলেন কি না, তা নিয়ে সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে। শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত ইসলাম-বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা "তাঁদের লাইনের" পণ্ডিতদের রচিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও সুন্নিদের রচিত তথ্য-উপাত্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, মুহাম্মদ তাঁর জীবদ্দশায় এই লুটের মালটি তাঁর কন্যা ফাতিমাকে দান করেছিলেন। তাঁরা এ-ও দাবি করেন যে, যদি মুহাম্মদ তাঁর জীবদ্দশায় লুটের এই মালটি ফাতিমাকে দান না-ও করে যান, তথাপি মুহাম্মদের মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হিসাবে এই সম্পত্তির ন্যায়সঙ্গত দাবিদার হলেন তাঁর কন্যা ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ।
অন্যদিকে সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতরা "তাঁদের লাইনের" পণ্ডিতদের রচিত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও শিয়াদের রচিত তথ্য-উপাত্তের চুলচেরা বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে শিয়াদের এই দাবি নাকচ করে দেন! আজকের এই ইন্টারনেট যুগে উৎসাহী পাঠকরা "ফাদাক (Fadak)" শব্দটি সার্চ দিয়ে এ বিষয়ের বিশদ তথ্য জেনে নিতে পরেন। এ বিষয়ে ইন্টারনেটে ইসলাম বিশ্বাসী পণ্ডিত ও অপণ্ডিতদের লেখা এত বেশি আর্টিকেল আছে যে, যা থেকে নিরপেক্ষ পাঠকরাও অতিরিক্ত অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে বিভ্রান্তিতে পড়তে পারেন!
কোনো নির্দিষ্ট ঘটনা বা ঘটনা-সমষ্টি সংঘটিত হওয়ার অবস্থান থেকে স্থান ও সময়ের দূরত্ব যতই বৃদ্ধি পায়, সেই ঘটনার বর্ণনায় বিকৃতির সম্ভাবনা তত প্রকট হয়। বিশেষ করে যখন সেই ঘটনার তথ্য-উপাত্ত প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চরম বাধা-নিষেধ প্রয়োগ করা হয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ পুরস্কার ও অনুপ্রেরণা এবং/অথবা শাস্তি বা নিপীড়নের মাধ্যমে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে এই বইটির মূল অংশের সমস্ত তথ্য-উপাত্তের রেফারেন্সই মূলত ইসলামের ইতিহাসের প্রাপ্তিসাধ্য আদি উৎসের মুসলিম ঐতিহাসিকদেরই বর্ণিত ইতিহাস থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। আরও সুনির্দিষ্ট ভাবে বললে যা বলা যেতে পারে, তা হলো, কুরান ও স্বঘোষিত আখেরি নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যু পরবর্তী ২৯০ বছরের কম সময়ের মধ্যে লিখিত বিশিষ্ট মুসলিম ঐতিহাসিকদের লিখিত মুহাম্মদের পুর্নাঙ্গ জীবনীগ্রন্থ ('সিরাত') ও হাদিস গ্রন্থের (বুখারী, মুসলিম, আবু-দাউদ) তথ্য-উপাত্তের উদ্ধৃতি, অতঃপর সেই তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সর্বজনবিদিত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সে বিষয়ের আলোচনা ও পর্যালোচনা।
এই সব আদি উৎসের বিশিষ্ট "সুন্নি" মুসলিম ঐতিহাসিকরা মুহাম্মদের মৃত্যুর পর ফাদাকে অবস্থিত তাঁর এই লুণ্ঠিত ভূসম্পত্তিটির যে সকল উপাখ্যান বর্ণনা করেছেন, তা মূলত তিন মুসলিম শাসন আমলে (আবু বকর ইবনে কুহাফা, উমর ইবনে আল-খাত্তাব ও তাঁর প্রপৌত্র [নাতনির ছেলে] উমর ইবনে আবদুল আজিজ) সংঘটিত চারজন লোকের বর্ণনার ভিত্তিতে লিপিবদ্ধ করেছেন। সেই চারজন ব্যক্তি হলেন: আয়েশা বিনতে আবু বকর, উমর ইবনে আল-খাত্তাব, মালিক বিন আউস আল-হাদাথান আন-নাসরি ও উমর ইবনে আবদুল আজিজ।
আবু বকর ইবনে কুহাফার শাসন আমল (৬৩২-৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)
ইমাম বুখারীর (৮১০-৮৭০ সাল) বর্ণনা:
‘আয়েশা হইতে বর্ণিত: আল্লাহর নবী রেখে যাওয়া সম্পত্তি যা আল্লাহ আল্লাহর নবীকে ফাই হিসাবে (অর্থাৎ, বিনা যুদ্ধে হস্তগত লুটের মাল) মদিনা ও ফাদাকে এবং খুমুস হিসাবে খায়বারে দান করেছিলেন, আল্লাহর নবীর কন্যা ফাতিমা সেই সম্পত্তিগুলো উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁকে প্রদান করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার জন্য এক লোককে আবু বকরের (যখন তিনি ছিলেন খলিফা) কাছে পাঠান। এই বিষয়ে আবু বকর বলেন, "আল্লাহর নবী বলেছেন, 'আমাদের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরযোগ্য নয় ও যা আমরা রেখে যাই, তা হয় সাদাকা, কিন্তু মুহাম্মদের (নবীর) পরিবার সদস্যরা এই সম্পত্তি থেকে খেতে পারে।' আল্লাহর কসম, আমি এই সাদাকার ব্যাপারে কোনো পরিবর্তন না করে আল্লাহর নবী তাঁর জীবদ্দশায় এ যে রীতি অনুসরণ করতেন, আমি তা-ই বহাল রাখবো।" তাই আবু বকর এর কোনো অংশ ফাতিমাকে দিতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন। তাই তিনি আবু বকরের প্রতি রাগান্বিত হন ও তার কাছ থেকে দূরে সরে যান ও মৃত্যুকাল অবধি তিনি তার সাথে কোনো কথা বলেন না। আল্লাহর নবীর মৃত্যুর পর তিনি ছয় মাস কাল জীবিত ছিলেন। যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন, আবু বকরকে কোনো সংবাদ না দিয়েতাঁর স্বামী আলী রাত্রিকালে তাঁকে দাফন করেন ও নিজেই তাঁর জানাজার নামাজ পড়ান।
যখন ফাতিমা জীবিত ছিলেন, লোকজন আলীকে অনেক শ্রদ্ধা করতো, কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর আলী লক্ষ্য করেন যে, তার প্রতি জনগণের সেই মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে। তাই আলী আবু বকরের সাথে বিষয়টি মিটমাট করতে চান ও তিনি তাকে তার আনুগত্যের শপথ করেন। আলী সেই মাসগুলোতে (অর্থাৎ আল্লাহর নবীর মৃত্যুকাল থেকে শুরু করে ফাতিমার মৃত্যুকাল পর্যন্ত) তার কাছে আনুগত্যের কোনো শপথ করেননি। আলী একজন লোককে আবু বকরের কাছে যা বলে পাঠান, তা হলো, "আমাদের কাছে এসো, কিন্তু কাউকে তোমার সঙ্গে আসতে দিও না।", কারণ উমর তার সঙ্গে আসুক তা তিনি পছন্দ করতেন না। উমর (আবু বকর কে) বলেন, "না, আল্লাহর কসম, একা একা তুমি অবশ্যই তাদের ওখানে যাবে না।" আবু বকর বলেন, "তারা আমার কী করবে বলে তুমি মনে করো? আল্লাহর কসম, আমি তাদের কাছে যাবো।"
অতঃপর আবু বকর তাদের ওখানে গমন করেন, আলী তখন উচ্চারণ করেন তাশাহ-হুদ ও (আবু বকর কে) বলেন, "আল্লাহ আপনাকে যে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছে, তা আমরা ভালভাবেই জানি ও আল্লাহ আপনার ওপর যে ভাল দিকগুলো অর্পণ করেছে, সে ব্যাপারে আমরা আপনাকে কোন্র ঈর্ষা করি না; কিন্তু শাসনভার প্রশ্নে আপনি আমাদের সাথে কোনো পরামর্শ করেননি, আমরা ভেবেছিলাম যে, আল্লাহর নবীর সাথে আমাদের নিকট আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে এ বিষয়ে আমাদের অধিকার আছে।"
যার ফলে আবু বকরের চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়। অতঃপর আবু বকর যখন কথা বলেন, তিনি বলেন, "যার হাতে আমার জীবন, তার কসম, আমার নিজের আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখার চাইতে আল্লাহর নবীর আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সু-সম্পর্ক রাখাই হলো আমার অধিক প্রিয়। কিন্তু তাঁর সম্পত্তি নিয়ে আমার ও তোমাদের মধ্যে যে বিপত্তি, আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো তা থেকে সেই সব বিষয়ে খরচ করতে যা কিছু মঙ্গলজনক; এর বিলিব্যবস্থায় যে সমস্ত নিয়ম নীতি আমি আল্লাহর নবীকে অনুসরণ করতে দেখেছি, তার কোনোকিছুই আমি বাদ দেবো না, আমি তা অনুসরণ করবো।" যার ফলে আলী আবু বকরকে বলেন, "আমি প্রতিজ্ঞা করছি যে, এই বিকেলেই আমি আমার আনুগত্যের শপথ আপনাকে দেব।"
অতঃপর আবু বকর যখন যোহর নামাজ সমাপ্ত করেন, তিনি মিম্বারে আরোহণ করেন ও উচ্চারণ করেন তাশাহ-হুদ, তারপর তিনি আলীর ও তার কাছে তার আনুগত্যের শপথ না দেওয়ার ব্যর্থতার কাহিনী উল্লেখ করেন ও তাকে মাফ করে দেন, যে অজুহাতটি তিনি উপস্থাপন করেছেন, তা তিনি গ্রহণ করেন। তারপর আলী উঠে দাঁড়ান ও তাকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য (আল্লাহর কাছে) মোনাজাত করেন, তাশাহ-হুদ উচ্চারণ করেন, আবু বকরের অধিকারের প্রশংসা করেন ও বলেন যে, তিনি যা করেছেন, তা তিনি আবু বকরের প্রতি ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে কিংবা আল্লাহ তাকে যে সুবিধা প্রদান করেছে, তার প্রতিবাদ হিসাবে করেননি।
আলী যোগ করেন, "কিন্তু আমরা যা অনুধাবন করতাম, তা হলো এ বিষয়ে (শাসনকর্তার পদে) আমাদেরও কিছু অধিকার আছে, যা হয়েছে তা হলো, এ ব্যাপারে তিনি (অর্থাৎ, আবু বকর) আমাদের সাথে কোনো পরামর্শ করেননি; এবং সে কারণেই আমরা দুঃখ পেয়েছি।"
এতে সমস্ত মুসলমানরা আনন্দিত হয়ে ওঠে ও বলে, "তুমি ঠিক কাজটিই করেছো।" তারপর মুসলমানরা আলীর সাথে বন্ধু ভাবাপন্ন হয়ে ওঠে এই কারণে যে তারা যা করেছে তা করার জন্য তিনি ফিরে এসেছেন (অর্থাৎ, আবু বকর-কে আনুগত্যের শপথ প্রদান)।‘
[মুহাম্মদের মৃত্যুর দিনটিতে মুসলিম জাহানের শাসনকর্তা নিয়োগ ইস্যুতে কী ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল ও কী প্রক্রিয়ায় আবু বকর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেনম তা জানা থাকলে আবু বকর ও আলীর মধ্যের এই কথোপকথন বোঝা সহজ হয়। এ বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে করা হবে।]
আয়েশা হইতে বর্ণিত (উম্মুল মুমেনিন): আল্লাহর নবীর মৃত্যুর পর আল্লাহর নবীর কন্যা ফাতিমা আবু বকর সিদ্দিককে তার উত্তরাধিকারের হিস্যা ফেরত দেয়ার জন্য বলেন, যা আল্লাহর নবী 'ফাই' হিসাবে (অর্থাৎ, বিনা যুদ্ধে অর্জিত) লুটের মালেরঅংশরূপে রেখে গিয়েছিলেন [পর্ব-২৮]। আবু বকর তাকে বলেন, "আল্লাহর নবী বলেছেন, 'আমাদের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তর উচিত নয়, যা আমরা (অর্থাৎ নবীরা) রেখে যাই তা হয় সাদাকা (যা ব্যবহার করতে হয় দান খয়রাতের জন্য)। ফাতিমা, আল্লাহর নবীর কন্যা রাগান্বিত হন ও তিনি আবু বকরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন; তিনি তাঁর এরূপ মনোভাব বজায় রাখেন যতদিনে না তাঁর মৃত্যু হয়।
আল্লাহর নবীর মৃত্যুর পর ফাতিমা ছয় মাস কাল জীবিত ছিলেন। তিনি আল্লাহর নবীর রেখে যাওয়া খায়বার ও ফাদাকে অবস্থিত সম্পত্তি ও মদিনায় অবস্থিত সম্পদগুলোর (দানের জন্য বরাদ্দ) উত্তরাধিকারী হিসাবে তাঁকে ফেরত দেয়ার জন্য আবু বকরকে জিজ্ঞাসা করতেন। আবু বকর তাঁকে তা দিতে অস্বীকার করতেন ও বলতেন, "আল্লাহর নবী যা করতেন, তা করা থেকে আমি এক বিন্দু বিচ্যুত হবো না, কারণ আমি ভীত এই ভেবে যে, যদি আমি আল্লাহর নবীর কাজের ঐতিহ্য থেকে বিরত হই, তাহলে আমি হবো বিপথগামী।"
(পরবর্তীতে) উমর মদিনায় অবস্থিত আল্লাহর নবীর সম্পদগুলো (সাদাকা) আলী ও আব্বাসকে প্রদান করেন, কিন্তু তিনি খায়বার ও ফাদাকে অবস্থিত আল্লাহর নবীর সম্পদগুলো তার তত্ত্বাবধানে রাখেন ও বলেন, "এই দুই সম্পত্তি হলো সাদাকার জন্য, যা আল্লাহর নবী তাঁর ব্যয় নির্বাহ ও জরুরি কাজে খরচের জন্য ব্যবহার করতেন। এখন তার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারের ওপর ন্যস্ত করা হবে।" (আল-যুহরি হইতে বর্ণিত, "আজ অবধি তারা তা এভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা আসছেন।")
আয়েশা হইতে বর্ণিত: ফাতিমা ও আব্বাস আবু বকরের কাছে গমন করেন ও ফাদাকে অবস্থিত আল্লাহর নবীর সম্পত্তি ও খায়বারের ভাগের হিস্যার উত্তরাধিকার দাবী করেন। আবু বকর তাদেরকে বলেন, "আমি শুনেছি যে আল্লাহর নবী বলেছেন, 'আমাদের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরযোগ্য নয় ও যা আমরা রেখে যাই, তা দান হিসাবে প্রদান করতে হয়। কিন্তু মুহাম্মদের পরিবার সদস্যরা এই সম্পত্তি থেকে তাদের রিযিক গ্রহণ করতে পারে।" আবু বকর আরও যোগ করেন, "আল্লাহর কসম, আল্লাহর নবীকে তাঁর জীবদ্দশায় এই সম্পত্তির ব্যাপারে যে-রীতি অনুসরণ করতে দেখেছি, তা থেকে আমি বিচ্যুত হবো না।" সেই কারণে ফাতিমা আবু বকরকে পরিত্যাগ করেন ও মৃত্যুকাল অবধি তিনি তার সাথে কোনো কথা বলেননি।
আয়েশা হইতে বর্ণিত: ফাতিমা ও আব্বাস আবু বকরের কাছে গমন করেন ও ফাদাকে অবস্থিত আল্লাহর নবীর সম্পত্তি ও খায়বারের ভাগের হিস্যার উত্তরাধিকার দাবি করেন। আবু বকর বলেন, "আমি শুনেছি যে, আল্লাহর নবী বলেছেন, 'আমাদের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরযোগ্য নয় ও যা আমরা রেখে যাই তা দান হিসাবে প্রদান করতে হয়। কিন্তু মুহাম্মদের পরিবার সদস্যরা এই সম্পত্তি থেকে তাদের রিযিক গ্রহণ করতে পারে।’ আল্লাহর কসম, আমি আমার নিজের আত্মীয়-স্বজনদের চেয়ে আল্লাহর নবীর আত্মীয়-স্বজনদের মঙ্গলের জন্য কাজ করতে ভালবাসি।"
অনুরূপ হাদিস: সহি বুখারী: ভলুম ৫, বই ৫৭,হাদিস নম্বর ৬০ [5]; ইমাম মুসলিম (৮২১-৮৭৫ সাল) এর বর্ণনা: সহি মুসলিম বই নম্বর ১৯, হাদিস নম্বর ৪৩৫৩ [6]
ইমাম আবু দাউদের (৮১৭-৮৮৯ সাল) বর্ণনা: [7]
উমর ইবনে আল-খাত্তাব হইতে বর্ণিত: মালিক ইবনে আউস আল-হাদথান বলেছেন: যে-যুক্তিগুলোর একটি উমর তার সম্মুখে পেশ করতেন, তা হলো, তিনি বলেছেন যে আল্লাহর নবী (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) তিনটি জিনিস তার একান্ত নিজের জন্য প্রাপ্ত হয়েছিলেন: বানু আল-নাদির, খায়বার ও ফাদাক। বানু আল-নাদির গোত্রের সম্পদের সমস্তই রাখা হয়েছিল তার জরুরি প্রয়োজনের জন্য, ফাদাকের সম্পদগুলো রাখা হয়েছিল ভ্রমণকারীদের জন্য ও খায়বারের সম্পদগুলো আল্লাহর নবী (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) ভাগ করেছিলেন তিনটি ভাগে: দুই ভাগ মুসলমানদের জন্য ও এক ভাগ তার পরিবারের অবদানের জন্য। তাঁর পরিবারের অবদানের জন্য খরচ করার পর যদি কিছু অবশিষ্ট থাকতো, তা তিনি গরীব মুহাজিরদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন।
উমর ইবনে খাত্তাবের শাসন আমল (৬৩৪-৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ)
‘মালিক বিন আউস আল-হাদাথান আন-নাসরি হইতে বর্ণিত: একদা উমর ইবনে আল-খাত্তাব তাকে ডেকে পাঠান, যখন তিনি তার সাথে বসেছিলেন, তার দারোয়ান ইয়ারফা সেখানে আসে ও বলে, "উসমান, আবদুর রহমান বিন আউফ, আল-যুবায়ের ও সা'দ (বিন ওয়াকাস) আপনার অনুমতির জন্য অপেক্ষ করছে, আপনি কী তা মঞ্জুর করবেন?"
উমর বলেন, "হ্যাঁ, তাদের কে ভেতরে আসতে দাও।" কিছুক্ষণ পর ইয়ারফা আবার সেখানে আসে ও বলে, "আলী ও আব্বাস আপনার অনুমতি চাচ্ছে, আপনি কি তা মঞ্জুর করবেন?" উমর বলেন, "হ্যাঁ।" অতঃপর যখন এই দুই ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশ করে, আব্বাস বলেন, "আমীরুল মুমিনীন! আমার ও এর (অর্থাৎ, আলী) এর মধ্যে ফয়সালা করে দাও।" তাদের দু'জনের মধ্যে আল্লাহর নবীর রেখে যাওয়া বনি আল-নাদির গোত্রের সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ চলছিলো, যে-সম্পদটি আল্লাহ তার নবীকে ফাই (বিনা যুদ্ধে অর্জিত লুটেরমাল) হিসাবে প্রদান করেছিল [পর্ব: ৫২ ও ৭৫]; আলি ও আব্বাস একে অপরকে নিন্দা করা শুরু করে। (উপস্থিত) লোকরা (অর্থাৎ, উসমান ও তার সঙ্গীরা) বলে, "হে আমীরুল মুমিনীন! এদের ব্যাপারের আপনি আপনার রায় প্রদান করুন, যাতে তারা প্রশমিত হয়।"
উমর বলেন, "যার আদেশে আসমান ও জমিন উভয়ই স্থির থাকে, সেই আল্লাহর ওয়াস্তে তোমাদের অনুরোধ করছি, চুপ থাকো! তোমরা কি জানো যে, আল্লাহর নবী বলেছেন, 'আমাদের (নবীদের) সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরযোগ্য নয় ও যা আমরা রেখে যাই, তা দান হিসাবে প্রদান করতে হয়,' তিনি তা বলেছেন তাঁর নিজের সম্বন্ধে?" তারা (অর্থাৎ, উসমান ও তার সঙ্গীরা) বলে, "তিনি তা বলেছেন।"
তারপর উমর আলী ও আব্বাসের দিকে ফিরে তাকান ও বলেন, "আল্লাহর ওয়াস্তে, আমি তোমাদের দু'জনকেই অনুরোধ করি! তোমরা কি জানো যে, আল্লাহর নবী এটি বলেছিলেন?" তারা হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়। তিনি বলেন, "এখন আমি তোমাদের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি। মহান আল্লাহ তার নবীকে এই ফাই নামের (অর্থাৎ, বিনা যুদ্ধে অর্জিত লুটের মাল) একটা কিছু দিয়ে অনুগ্রহ করেছে, যা সে [আল্লাহ] অন্য কাউকে দেয়নি। আল্লাহ বলেছে,
'আল্লাহ বনু-বনুযায়রের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন ("ফাই"- লুটের মাল), তজ্জন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি, কিন্তু আল্লাহ যার ওপর ইচ্ছা, তাঁর রসূলগণকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।“ (৫৯:৬)
সুতরাং এই সম্পত্তিটি বিশেষভাবে আল্লাহর নবীকে প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর কসম, আল্লাহর নবী তার সমস্তই না একমাত্র তাঁর নিজের জন্য গ্রহণ করেছিলেন, না তা থেকে তিনি তোমাদের বঞ্চিত করেছিলেন; বরং তা থেকে তিনি তোমাদের সবাইকেই প্রদান করেছিলেন ও তোমাদের মধ্যে তা ভাগাভাগি করে দিয়েছিলেন, যতক্ষণে না তা থেকে মাত্র এই পরিমাণ সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহর নবী তাঁর পরিবারের বাৎসরিক ভরণপোষণের খরচ এখান থেকে ব্যয় করতেন, তারপর যা কিছু অবশিষ্ট থাকতো, তা তিনি খরচ করতেন সেখানে যেখানে আল্লাহর সম্পদ ব্যয় করা হয় (অর্থাৎ, চ্যারিটি); আল্লাহর নবী এমনি ভাবেই কাজ করেছেন তাঁর সমস্ত জীবন। তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করেন, আবু বকর বলে, "আমিই হলাম আল্লাহর নবীর উত্তরাধিকারী।" অতঃপর তিনি (অর্থাৎ, আবু বকর) এই সম্পত্তিটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ও আল্লাহর নবী যেভাবে তার বিলিব্যবস্থা করতেন, তিনি সেভাবেই তা করতেন; তোমারা সবাই (সেই সময়) তার সেই বিষয়টি আবগত ছিলে।"
তারপর উমর আলী ও আব্বাসের দিকে ঘোরেন ও বলেন, "তোমরা দু'জনেরই মনে আছে যে, যা তোমরা বর্ণনা করেছো তার বিলিব্যবস্থা করেছিলেন আবু বকর,আল্লাহ এ বিষয়ে ভাল জানে, তিনি ছিলেন আন্তরিক, ধার্মিক, সঠিকভাবে পরিচালিত ও সঠিক পথের অনুসারী। তারপর আল্লাহ আবু বকরের মৃত্যু ঘটায় ও আমি বলি, 'আমিই হলাম আল্লাহর নবী ও আবু বকরের উত্তরাধিকারী।'
অতঃপর আমি এই সম্পত্তিটি আমার শাসন আমলের (অর্থাৎ, খেলাফত) প্রথম দুই বছর নিজের অধিকারে রাখি এবং আমি এর বিলিব্যবস্থা ঠিক সেভাবেই করি, যা আল্লাহর নবী ও আবু বকর করতেন; আল্লাহ জানে যে, আমি ছিলাম আন্তরিক, ধার্মিক, সঠিকভাবে পরিচালিত ও সঠিক পথের অনুসারী (এই বিষয়ে); এরপর তোমরা উভয়েই (অর্থাৎ, আলী ও আব্বাস) আমার কাছে এসেছিলে ও তোমাদের উভয়েরই দাবি ছিল এক ও অভিন্ন; হে আব্বাস! তুমিও আমার কাছে এসেছিলে। অতঃপর আমি তোমাদের উভয়কেই বলেছিলাম যে, আল্লাহর নবী বলেছেন, 'আমাদের সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে হস্তান্তরযোগ্য নয় ও যা আমরা রেখে যাই, তা দান হিসাবে প্রদান করতে হয়।'
তারপর আমি যখন মনস্থ করি, এটাই আমার উচিত হবে যে, আমি এই সম্পত্তিটি তোমাদের উভয়ের কাছে হস্তান্তর করি এই শর্তে যে, তোমরা আল্লাহর সামনে এই প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার করবে যে, তোমরা এর বিলিব্যবস্থা করবে ঠিক সেইভাবে, যেভাবে আল্লাহর নবী, আবু বকর ও আমি আমার শাসন আমলের শুরু থেকে করে আসছি; অন্যথায় তোমরা আমার সাথে (এই ব্যাপারে) কোনো কথা বলবে না।'
অতঃপর, তোমরা উভয়েই আমাকে বলেছিলে, 'এই শর্তে আমাদের কাছে হস্তান্তর করুন।' সেই শর্তে আমি এটি তোমাদের কাছে হস্তান্তর করেছিলাম। এখন তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদের সেটির (সিদ্ধান্ত) পরিবর্তে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত দিই? যার আদেশে আসমান ও জমিন স্থির থাকে, সেই আল্লাহর কসম, আমি যে সিদ্ধান্ত দিয়েছি তার বাইরে কখনোই অন্য কোনো সিদ্ধান্ত দেব না, যতক্ষণে না কিয়ামত আগত হয়। কিন্তু তোমরা যদি এর (অর্থাৎ, সম্পত্তি) পরিচালনা করতে অসমর্থ হও, তবে তা আমার কাছে ফেরত দাও, আমি তোমাদের পক্ষে এর পরিচালনা করবো।" ---
উমর ইবনে আবদুল আজিজের শাসন কাল (৭১৭-৭২০ সাল)
'উমর ইবনে আবদুল আজিজ হইতে বর্ণিত: আল-মুঘিরা (ইবনে শুবাহ) বলেছেন: উমর ইবনে আবদুল আজিজ-কে যখন খলিফা হিসাবে নিয়োগ করা হয়, তখন তিনি মারওয়ান পরিবারের লোকদের একত্রিত করেন ও বলেন: ফাদাক ছিল আল্লাহর নবীর (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) অধিকারভুক্ত সম্পত্তি, তিনি সেখান থেকে ব্যয় করতেন, বানু হাসিম গোত্রের গরীব লোকদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তিনি তাদের সাহায্যে সেখান থেকে অহরহ দান করতেন ও অবিবাহিত লোকদের বিবাহের খরচে সাহায্য করতেন। ফাতিমা তাঁকে অনুরোধ করেন যে, তিনি যেন তাকে তা প্রদান করেন, কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। আল্লাহর নবীর (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) জীবদ্দশায় এভাবেই বিষয়টি ছিল, যতদিনে না তাঁর জীবনের অবসান হয় (অর্থাৎ, মৃত্যু হয়)।
যখন আবু বকর শাসনকর্তা নিযুক্ত হন, তিনি তার মৃত্যু পর্যন্ত তা সেভাবেই পরিচালনা করেন, যেভাবে আল্লাহর নবী (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) তা পরিচালনা করতেন। তারপর যখন উমর ইবনে খাত্তাব শাসনকর্তা নিযুক্ত হন, তিনি তার মৃত্যুকাল অবধি তাদের মতই তা পরিচালনা করেন। তারপর এটি মারওয়ান-কে জায়গীর হিসাবে প্রদান করা হয় ও তারপর এটি আসে উমর ইবনে আবদুল আজিজ-এর কাছে।
উমর ইবনে আবদুল আজিজ বলেছেন: আমি মনে করি যে, সেই জিনিসটি করার অধিকার নেই, যা আল্লাহর নবী (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) ফাতিমা-কে প্রদান করতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেছিলেন। আমি আপনাদের ডেকেছি এই সাক্ষী হবার জন্য যে, আমি তা পূর্বাবস্থায় পুনরুদ্ধার করেছি; মানে হলো - তা যেমনটি ছিল আল্লাহর নবীর (তাঁর ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) সময়কালে।'
- অনুবাদ, টাইটেল, [**] ও নম্বর যোগ - লেখক।
>>> আদি উৎসে ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম ও ইমাম আবু দাউদের ওপরে বর্ণিত বর্ণনায় যে বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট তা হলো, এই ঘটনাটি মুহাম্মদের উত্তরাধিকারীদের কাছে তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি হস্তান্তর (ও ইসলাম জাহানের শাসনভার নিয়োগ [বুখারী- ৫:৫৯:৫৪৬]) সংক্রান্ত বিবাদ বিসংবাদের উপাখ্যান! এখানে দু'টি পক্ষ। এক পক্ষ মুহাম্মদের একান্ত নিকট আত্মীয় আলী-ফাতিমা গং, অন্য পক্ষ - মুহাম্মদের সবচেয়ে প্রথম সারীর অনুসারী আবু বকর ও ওমর গং! আলী-ফাতিমা গং দাবি করছেন যে, তারাই হলেন মুহাম্মদের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ন্যায়সঙ্গত উত্তরাধিকারী এবং আবু বকর-উমর গং-এর উচিত তাদের কাছে সেই সম্পত্তিগুলো হস্তান্তর করা। আবু বকর-উমর গং দৃঢ়ভাবে "এক অজুহাতের মাধ্যমে" তাঁদের সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করছেন, "ক্ষমতা এখন তাদের হাতে!"
এমনই একটি নির্দিষ্ট ঘটনায় যদি দুই পক্ষ সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী দাবি উপস্থাপন করেন, তবে নিঃসন্দেহে তাদের যে কোনো একজনের দাবি সত্য, অপরজনের দাবি মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দু'পক্ষ একই সাথে কখনোই সত্য হতে পারে না।অর্থাৎ, হয় এই ঘটনায় ফাতিমা-আলী গং' ছিলেন মুহাম্মদের ন্যায় সঙ্গত উত্তরাধিকারী, আবু বকর-উমর গং তাদের সেই ন্যায্য পাওনা থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বঞ্চিত করেছেন; অথবা 'ফাতিমা-আলী গং' উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এক অন্যায্য দাবি নিয়ে আবু-বকর-উমর গংদের সাথে বিবাদে জড়িয়েছেন। নিঃসন্দেহে এই দুই পক্ষের এক পক্ষ ছিলেন হিপোক্রাইট বা ভণ্ড!
প্রশ্ন হলো, “কে সেই হিপোক্রাইট?” যুক্তিবিদ্যায় এমন কোনো পন্থা কি আছে, যার মাধ্যমে প্রায় নিশ্চিতরূপেই অনুধাবন করা যায়, "কে সেই হিপোক্রাইট?" The Devil is in the Detail (পর্ব-১১৩)!
(চলবে)
তথ্যসূত্র ও পাদটীকা:
Narrated By 'Aisha: Fatima the daughter of the Prophet sent someone to Abu Bakr (when he was a caliph), asking for her inheritance of what Allah's Apostle had left of the property bestowed on him by Allah from the Fai (i.e. booty gained without fighting) in Medina, and Fadak, and what remained of the Khumus of the Khaibar booty. On that, Abu Bakr said, "Allah's Apostle said, "Our property is not inherited. Whatever we leave, is Sadaqa, but the family of (the Prophet) Muhammad can eat of this property.' By Allah, I will not make any change in the state of the Sadaqa of Allah's Apostle and will leave it as it was during the lifetime of Allah's Apostle, and will dispose of it as Allah's Apostle used to do." So Abu Bakr refused to give anything of that to Fatima. So she became angry with Abu Bakr and kept away from him, and did not task to him till she died. She remained alive for six months after the death of the Prophet. When she died, her husband 'Ali, buried her at night without informing Abu Bakr and he said the funeral prayer by himself.
When Fatima was alive, the people used to respect 'Ali much, but after her death, 'Ali noticed a change in the people's attitude towards him. So Ali sought reconciliation with Abu Bakr and gave him an oath of allegiance. 'Ali had not given the oath of allegiance during those months (i.e. the period between the Prophet's death and Fatima's death). 'Ali sent someone to Abu Bakr saying, "Come to us, but let nobody come with you," as he disliked that 'Umar should come, 'Umar said (to Abu Bakr), "No, by Allah, you shall not enter upon them alone " Abu Bakr said, "What do you think they will do to me? By Allah, I will go to them' So Abu Bakr entered upon them, and then 'Ali uttered Tashah-hud and said (to Abu Bakr), "We know well your superiority and what Allah has given you, and we are not jealous of the good what Allah has bestowed upon you, but you did not consult us in the question of the rule and we thought that we have got a right in it because of our near relationship to Allah's Apostle."
There upon Abu Bakr's eyes flowed with tears. And when Abu Bakr spoke, he said, "By Him in Whose Hand my soul is to keep good relations with the relatives of Allah's Apostle is dearer to me than to keep good relations with my own relatives. But as for the trouble which arose between me and you about his property, I will do my best to spend it according to what is good, and will not leave any rule or regulation which I saw Allah's Apostle following, in disposing of it, but I will follow." On that 'Ali said to Abu Bakr, "I promise to give you the oath of allegiance in this after noon." So when Abu Bakr had offered the Zuhr prayer, he ascended the pulpit and uttered the Tashah-hud and then mentioned the story of 'Ali and his failure to give the oath of allegiance, and excused him, accepting what excuses he had offered; Then 'Ali (got up) and praying (to Allah) for forgiveness, he uttered Tashah-hud, praised Abu Bakr's right, and said, that he had not done what he had done because of jealousy of Abu Bakr or as a protest of that Allah had favored him with. 'Ali added, "But we used to consider that we too had some right in this affair (of ruler ship) and that he (i.e. Abu Bakr) did not consult us in this matter, and therefore caused us to feel sorry." On that all the Muslims became happy and said, "You have done the right thing." The Muslims then became friendly with 'Ali as he returned to what the people had done (i.e. giving the oath of allegiance to Abu Bakr).
[2] সহি বুখারী: ভলুম ৪, বই ৫৩, হাদিস নম্বর ৩২৫ http://hadithcollection.com/sahihbukhari/86--sp-501/3941-sahih-bukhari-volume-004-book-053-hadith-number-325.html
[3] সহি বুখারী: ভলুম ৮, বই নম্বর৮০, হাদিস নম্বর ৭১৮ http://hadithcollection.com/sahihbukhari/113-sahih-bukhari-book-80-laws-of-inheritence-al-faraaid/6254-sahih-bukhari-volume-008-book-080-hadith-number-718.html
[4] সহি বুখারী: ভলুম ৫, বই ৫৯,হাদিস নম্বর ৩৬৮http://hadithcollection.com/sahihbukhari/92--sp-608/5687-sahih-bukhari-volume-005-book-059-hadith-number-368.html
[5] সহি বুখারী: ভলুম ৫, বই ৫৭,হাদিস নম্বর ৬০ http://hadithcollection.com/sahihbukhari/90/4467-sahih-bukhari-volume-005-book-057-hadith-number-060.html
[7] সুন্নাহ আবু দাউদ বই নম্বর ১৩,হাদিস নম্বর ২৯৬১http://hadithcollection.com/abudawud/245-Abu%20Dawud%20Book%2013.%20Tributes,%20Spoils%20And%20Rulership/17303-abu-dawud-book-013-hadith-number-2961.html
Narated By Umar ibn Abdul Aziz: Al-Mughirah (ibn Shu'bah) said: Umar ibn Abdul Aziz gathered the family of Marwan when he was made caliph, and he said: Fadak belonged to the Apostle of Allah (pbuh), and he made contributions from it, showing repeated kindness to the poor of the Banu Hashim from it, and supplying from it the cost of marriage for those who were unmarried. Fatimah asked him to give it to her, but he refused. ----
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন